somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

প্রকৃতির তুলনা শুধুই প্রকৃতি

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মাঝে মাঝে সময় ফিরে আসে। দুই হাজার তের সালে তারিখটা ছিল চব্বিশে ডিসেম্বর। ক্রিসমাসের আগের দিন ক্রিসমাস ঈভ। খ্রিস্টানদের আনন্দ উৎসবের সময় আমাদের ছুটি ছিল। পারিবারিকভাবে সবাই মিলে মজা করছিলাম। টিভিতে মুভি দেখতে দেখতে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল। আসবে আসবে করে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরে বিদ্যুৎ না আসায়, আমরা সবাই ঘুমাতে গেলাম।ডিসেম্বর মাসের শীতে হিটিং ছাড়া ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল বাড়িঘর। রাত শেষ হওয়ার পরে দেখলাম সারা শহর জুড়ে এক তছনছ অবস্থা। বৃষ্টির জল জমে গাছের ডাল পালাগুলো ভারি হয়ে ভেঙ্গে পড়েছে, ঝুলে পরেছে মাটিতে বিদ্যুতের তার। শহর অন্ধকার ছিল সে সময় তিন চারদিন। জলের এমন আগ্রাসন, মানুষের দুরবস্থা করতে পারে আগে কখনো দেখিনি। প্রচুর তুষারপাত দেখা হয়েছিল। বন্যা, ঝড় অনেক কিছু দেখেছিলাম। সেবার ফ্রিজিং রেইনের ভয়াবহতায় চেনা হয়েছিল।
অনেক বছর পর এবার বসন্ত শুরু হওয়ার পর সেই ভয়াবহ ফ্রিজিং রেইনস্ট্রম আবার জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলল। সময়টা এবার ঈদের আগের রাত্রে। সকাল থেকে শহরে ঘুরছিলাম কাজে। কিন্তু এবার আবহাওয়া বারতায় ফ্রিজিং রেইন শুরু হবে সন্ধ্যা থেকে জানা থাকার জন্য। শহরে কারো বাড়িতে না গিয়ে সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরে এলাম। সাথে নিয়ে আসলাম অনেক বাজার সদাই।
রাত এগারোটার পর থেকে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ আসা যাওয়ার ঝিলিক দিতে শুরু করল। বাইরে তাকিয়ে দেখলাম তুমুল বৃষ্টিপাত। ধীরে ধীরে ভারী বৃষ্টিপাতে গাছগুলো বরফের আস্তরণে ঢাকা পড়ে যাচ্ছিল। ডালে ডালে ঘষা লেগে করকড়াৎ শব্দ করছিল
। ঘরে বসে নানা রকম শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম বাইরে থেকে। বিদ্যুৎ আসা যাওয়া এবং লাফ ঝাপের মাঝে একেবারেই চলে গেল রাত একটার সময়। নিকষ অন্ধকারে নীলাভ আলোর ঝিলিক খেল ছিল আকাশ জুড়ে। যা বজ্র বিদ্যুৎ মনে হলো না। বরং মানুষের তৈরি কোন যন্ত্র স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে নিভে গেল একবারে। বিদ্যুৎ আসবে আসবে অপেক্ষা করে দুই দিন কেটে গেল।
যদিও সেবারের মতো শীত নেই এখন। কিন্তু বিদ্যুৎ বিহীন সময় কোন কিছুই করার উপায় নেই এই সময়ে। আড়াই দিন চলছে বিদ্যুৎ বিহীন রান্না খাওয়া করতে পারলাম কিন্তু ধরে রাখা পানি, ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ ছাড়া পানির পাম্প কাজ করছে না। দোকানপাট বন্ধ বিদ্যুৎ না থাকায়। পানির বোতল কেনার উপায় নেই। ফ্রিজ বিদ্যুৎ বিহীনভাবে খাবার ভালো রাখার কোন উপায় নেই। দুই লক্ষের উপর মানুষ বিদ্যুৎ বিহীন প্রভিন্স জুড়ে । বিদ্যুৎ কর্মীরা দিনরাত্রি কাজ করছে। কিন্তু যে বিশাল এরিয়া জুড়ে, বিপুল পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সবটুকু সারিয়ে তুলতে কয়েকদিন সময় লাগবে। আরো তিনদিন পরে আমার এলাকায় বিদ্যুৎ আসার সময় দিয়েছে। হয়তো কিছুটা আগে আসতেও পারে তবে আজ বা কাল নয়। ক্রমাগত ফোন করে তিনদিন পর আজ ওদের সাথে কথা বলতে পারলাম। আর তিন দিন পরের সময়টা জানালো বিদ্যুৎ আসার। যা আমি অনলাইনেও দেখতে পাচ্ছিলাম। কিনে আনা সমস্ত খাবার নিয়ে এখন আবার ছুটতে হবে অন্য বাসায়, যেখানে বিদ্যুৎ আছে। তিনদিন পর্যন্ত এভাবে থাকা যাবে না। ঠান্ডা যা মনে হয় বসন্ত এসেছে বলে কমে গেছে তাও কিন্তু নেমে যাচ্ছে মাঝে মাঝেই মাইনাসের ঘরে সর্বোচ্চ সাত। এমনটাই থাকবে আরো দেঢ় মাস। আমি না হয় অন্য বাড়িতে গিয়ে, কাটিয়ে দিব আরামে। কিন্তু আমার ঘরের গাছগুলো তারা আর তিন দিন ঠান্ডায় কাটাতে পারবে তো! কত যত্নে তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখি আলো, উত্তাপ,জল এবং খাবার দিয়ে। মাত্র তিন দিনে তারা দুর্বল হয়ে যাবে না তো।
গতকাল অনেকটা দূর ড্রাইভ করে গিয়েছিলাম। ট্রাফিক লাইট গুলো জ্বলছিল না। রাস্তার দুপাশে ভাঙ্গা গাছের সারি। কোথাও কোথাও গাছ পড়ে গেছে মানুষের বাড়ির উপরে,গাড়ির উপরে। কোন বাড়ি একটুর জন্য বেঁচে গেছে।


আমার বাড়ির চারপাশে অনেক গাছ পরিষ্কার করে ফেলার পরেও শেষ রক্ষা হলো না। রাস্তায় কোথাও ছিঁড়ে পড়ে গেছে বিদ্যুতের তার। গতকাল এমন বিদ্যুতের শুয়ে পড়া তার অনেক দেখেছি রাস্তার পাশে।
ঘনবসতি শহর অঞ্চলের কাজগুলো শেষ হলে,বিরল মানুষের গ্রামাঞ্চলের দিকে বিদ্যুৎ কর্মী এগুচ্ছে ধীরে ধীরে। ততক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায়।
সময়টা নিত্যদিনের পরিচিত জীবন যাপনের চেয়ে আলাদা। কিন্তু চোখের মধ্যে যে সৌন্দর্যটা রেখে গেল এই ভয়ানক ঝড় তা মনে থাকবে অনেকদিন এই সৌন্দর্যের কোন তুলনা নেই। অদ্ভুত সাদা ক্রিস্টাল মোড়ানো গাছের ডালগুলো, বৈদ্যুতিক তার গুলো, ঘরের চালায় ক্রিস্টাল স্টিক যেন ঝুলে আছে। গাড়িটা বরফের আবরণে ঢেকে আছে তার মধ্যে বরফের ঝালর ঝুলানো অপূর্ব সুন্দর। কিছু কিছু গাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছিল জলের ভারে, দেখে মনে হয়েছিল এরা আর কখনোই উঠে দাঁড়াবে না। অথচ উত্তাপ বাড়তেই বরফের আবরণ খুলে গেলো গাছের ডাল থেকে, গাছগুলো মাথা তুলে আবার দাঁড়িয়ে গেল যেমন তারা দাঁড়িয়ে থাকে প্রতিনিয়ত। এবছরের শীত একদম অন্যরকম কেমন প্রচন্ড তুষার ঝড় হল এখন ফ্রিজিং রেইন, তুমুল ঠান্ডা ছিল এবার। গত কয়েক বছর ঠান্ডা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। আবার চট করে সমস্ত বরফ গলে,বরফ গলা নদী হয়েছিল চারপাশে গত সপ্তাহে মনে হয়েছিল বসন্ত এসেই গেল। সেখান থেকে চট করে আবার উত্তাপ হিমাঙ্কের নিচে নেমে বরফ বৃষ্টিতে এলোমেলো করে দিল চারপাশ। যে গাছগুলো শীতকালটা কাটিয়ে দিল, শৈত্য প্রবাহ আর তুমুল বাতাসের গঞ্জনা সয়ে আর কদিন পর ফুলে, পাতায় সেজে উঠতো। তাদেরকে ভেঙ্গে চুরে তছনছ করে দিল। প্রকৃতি বড়ই অদ্ভুত নিজের নিয়মে চলছে আপন মনে। আজ সাড়ে পাঁচদিন চলছে বিদ্যৎ বিহীন সময়। দুই দিন বিদ্যুৎ ছাড়া কাটিয়ে বাড়ি রেখে চলে আসলাম অন্য বাসায়। গতকাল বিদ্যুৎ আসার সময় ছিল সন্ধ্যায় কিন্তু কাজ শেষ হয়নি এবং আবারো বরফ এবং তুষারপাত হওয়ার সংকেত দুদিন ধরে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ ঠিক হবার কাজ আবার পিছিয়ে গেলো।
কবে বিদ্যুৎ আসবে এবং বাড়ি ফিরব ঠিক নাই।আশা রাখি দ্রুত কাজ শেষ করবে বিদ্যুৎ কর্মিরা সব দূর্যোগ মাথায় করে যারা চব্বিশ ঘন্টা কাজ করে যাচ্ছে।

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:২৬
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

"মা বড় নাকি বউ বড়", প্রসঙ্গ এএসপি পলাশ সাহার মৃত্যু

লিখেছেন সোহানী, ১০ ই মে, ২০২৫ সকাল ৭:৫৮



এএসপি পলাশ সাহার আত্মহত্যা নিয়ে অনলাইন গরম। কেউ মা'কে দোষারোপ করছে কেউ বউকে। আর কেউ অভাগা পলাশকে দোষ দিচ্ছে। অনেকটা শাবানা জসিমের বাংলা ছবির মতো, "মা বড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সেই এফ-১৬

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:১৪





শর্ত ছিল, আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকায় সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযানের জন্যই ব্যবহার করা যাবে। পাক বাহিনীর এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলির উপর নিয়মিত নজরদারির বন্দোবস্তও ছিল চুক্তিতে। কিন্তু তা ফাঁকি দিয়েই ভারতের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেন আমি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চাই....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১০ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:৪৮


কেন আমি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চাই....


ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার বিগত ১৬ বছরে কয়েক হাজার মানুষকে গুম-খুন করেছে, লাখ লাখ মানুষকে নিপীড়ন করেছে। সারাদেশে তুমুল বেগে লুটপাট চালিয়েছে এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

অদৃষ্ট (ছোটগল্প)

লিখেছেন বোকা মানুষ বলতে চায়, ১০ ই মে, ২০২৫ দুপুর ২:১৯



বাসা থেকে বের হওয়ার সময়ই আব্বার সাথে দেখা। আমাদের পুরাতন ঢাকার এই জীর্ণ পুরাতন বাড়ির একটাই ভালো দিক, মাঝখানে একটা পেয়ারা গাছ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল উঠান। পেয়ারা গাছের নীচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যত কি?

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১০ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৯

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি নামে যে দল গঠন করেছিলেন, তা থেকে বিএনপির অবস্থান যোজন যোজন দুরত্বে। তবে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে সুশাষন প্রতিষ্ঠিত না করলেও বিএনপির বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×