আমার বয়স তখন সম্ভবত ৬ বা ৭ বছর, তখন আমার দাদা আমার বাবাকে নির্দেশ দিলেন- "সারোয়ারের খতনা দেও, ওর বিয়া আমি দেখতে পারমুনা, মুসলমানি দেইখা যাই।" দাদার নির্দেশে আমার খতনা দেয়া হলো। খতনার সময় আমি প্রচন্ড কান্না করেছি। তখন হাজম দাদা আমাকে ধমক দিয়ে বলেছিলেন- "তোর বাপের মোসলমানী আমি দিছি, হেতো এতো কান্দে নাই, তুই কান্দস কেন?" ধুম করে খতনা হয়ে গেলো, ব্যথা খুব একটা পেলাম না। দাদা বললেন সারা এলাকার লোকদের খাওয়াতে হবে। বাজার করা হলো, গরু কেনা হলো, জ্বালানী কাঠের স্তুপ করা হলো। কিন্তু আমার দাদা হঠাত অসুস্থ হয়ে পড়লেন। দাদাকে হাসপাতালে ভর্তী করা হলো। দুই দিনেই প্রায় সুস্থ হয়ে গেলেন। পরদিন বাসায় নিয়ে আসা হবে। এদিকে বাড়িতে বিশাল অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। রাতে হাসপাতাল থেকে খবর এলো দাদা মারা গেছেন। রাতে নিজে নিজে হেঁটে ওয়াস রুমে গেছেন, কিন্ত সেখানেই সম্ভবত হার্ট এটাক হয়। রাতেই দাদাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসা হলো। টিনের ঘরের জানালায় বসে আমি দেখেছি দাদা শুয়ে আছে সাদা চাদরে ঢাকা। স্মৃতির এই আংশটুকু সত্যি নাকি আমার মস্তিষ্ক এই স্মৃতিটি আমার জন্য তৈরি করে দিয়েছে আমি ঠিক জানি না।
পরদিন সকালে দাদাকে কবর দেয়া হলো শাহজাদপুরে আমাদের এক পারিবারিক কবরস্থানে। ঐ করস্থানে কবর খুরলেই পানি উঠে। দাদার কবরেও পানি উঠলো। বালু ফেলে পানি শুকানোর ব্যবস্থা করে দাদাকে কবর দেয়া হলো। কবর দেয়া শেষে দাদীকে গিয়ে রিপোর্ট করলাম- দাদারে পানিতে শোয়াছে। দাদী কাঁদতে কাঁদতে বারবার বলতে লাগলেন- তোমার দাদারে পানিতে শোয়াছো!! তোমার দাদারে পানিতে শোয়াছো!!
আমার খতনার অনুষ্ঠানের জন্য যে আয়োজন করা হয়েছিলো সেই আয়োজনের সব কিছু ব্যবহার করে দাদার মৃত্যুর চার দিনের অনুষ্ঠান করা হলো। তাই আমার ছোট বেলায় খুব আপসুস ছিলো আমার খতনার কোনো অনুষ্ঠান করা হলো না, আমি কোনো উপহার পেলাম না। খনতার দাওয়াতে গেলে এই আপসুস আমার আরো বেড়ে যেতো। কি একটা মিস হয়ে গেলো!! তবে কোনো গিফ্ট আমি পাইনি তেমনটা না। আমার বড় বোন জামাই আমাকে একটি স্বর্ণের গলার চেন দিয়ে ছিলেন। আমার এক জেঠা আমাকে খুবই চমৎকার একটি বিদেশী সাইকেল কিনে দিয়েছিলেন।
=================================================================
দাদা কাহিনী (প্রথম পর্ব)
দাদা কাহিনী (দ্বিতীয় পর্ব)
দাদা কাহিনী (তৃতীয় পর্ব)
=================================================================
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২৪