গতকাল থেকে ঠান্ডা, সর্দী-কাশী। একদিনেই বেশ কাবু করে ফেলেছে। আসলে শুরু হয়েছে ৩ তারিখ থেকে, তারপর একটু একটু করে বেড়ে গতকাল আসল রূপে দেখা দিয়েছে।
আগেই প্লান করা ছিলো আজ যাবো নাগরির আমাদের আশ্রমে। এটি একটি ফ্রেন্ডস এ্যাণ্ড ফ্যামেলি ট্রিপ। সদস্য সংখ্যা বাচ্চা কাচ্চা সহ ২০জন। সকালে বাজার-সদাই করে প্রথমে সকলে চলে গেছি বেরাইদ ঘাটে। সেখান থেকে দারদাম করে একটি ট্রলার রিজার্ভ করেছি সারা দিনের জন্য। রিজার্ভ ট্রলার আমাদের নিয়ে নামিয়ে দেয় উলুখোলা ব্রীজের পাশে। সেখান থেকে ইজি বাইকে করে আমার পৌছে গেছি আশ্রমে। ফেরার সময় একই পথে ফিরেছি।
আশ্রমে গিয়ে রান্না শুরু করার সময় দেখা গেলো চাল-তেল-গরম মশলা যে ব্যাগে ছিলো সেটি মিসিং। আবার লোক পাঠিয়ে পাশের করান বাজার থেকে সেগুলি কিনে আনা হলো। ফলে রান্না হতে হতে একটু দেড়ি হয়ে গেলো। বাচ্চারা খুবই আনন্দে ছিলো। মাঠে দৌড়-ঝাপ করলো, দোলনায় দুললো। ওদের দুই ফুপা আমাদের পুকুর ময়ূরাক্ষীতে নেমে সাঁতার কাটছে। সেটা দেখতে বাচ্চারা সবাই ভির করলো পুকুর পারে। দুপুরের কড়া রোদে ছাতা মাথায় দিয়ে পা ভিজিয়ে বসলো সবাই পুকুরের জলে।
ভাগনি আর বোন কয়েকজন চলে গেছে পাশের বাসার নিঃসঙ্গ আমগাছ থেকে আম চুরি করতে। বাচ্চারাও তাদের সাথে যোগ দিয়েছে। বাড়িতে এখন কেউ থাকে না। যে মহিলার বাড়ি তাকে আমরা দিদি বলে ডাকি। আমাদের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক। তিনি ফিরে এলে আমের মূল্য দিয়ে দিবো। তো সেই আম ছিলে কুচি-কিচু করে কেটে কাঁচামরিচ আর লবন দিয়ে মাখিয়ে হলো আম ভর্তা, কাঁচা আমের টক-ঝাল ভর্তা। দুপুরের রোদে চোখের নিমিশেই শেষ হয়ে গেলো তাল গাছের সারির নিচে পাতা দোলনা আর চেয়ারে বসে।
আমি দেখলাম পশ্চিম আকাশে মেঘ জমেছে কালো হয়ে। ঘোষণা দিলাম আধা ঘন্টার মধ্যে বৃষ্টি আসবে। আমার কথা মতোই আধাঘন্টা পরেই বৃষ্টি এলো আকাশ আরো কালো করে। প্যান্ট-শাট খুলে লুঙ্গি পড়ে আমি নেমে গেলাম বৃষ্টিতে। এদিকে রান্নার যায়গাটার অবস্থা বেহাল। সেখানে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে গিয়ে চুলায় ঢুকছে। তখন মুরগি রান্না শেষ হয়ে গেছে। চুলা আছে পোলাও। চাল ভেজে মাত্রই জল ঢালা হয়েছে। নতুন করে চুলা তৈরি করে সেটা সরানো সম্ভব না। নানান রকমে চেষ্টা করে কোনো রকমে শেষ হয়েছিলো রান্না।
আমি বৃষ্টিতে ভিজেছি একটানা প্রায় পৌনে দুই ঘন্টা। যতক্ষণ বৃষ্টি ছিলো ততোক্ষণই ভিজেছি আমি। আমার দেখা দেখি আধঘন্টা পরে বৃষ্টিতে নেমেছে আমার ছোট বোন জামাই ফালগুন। বেচারা প্রথমে পুকুরে গোছল করেছে, পরে কলের শীতল জলে। কিন্তু আমাকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে আর লোভ সামলাতে না পেরে শেষে নেমেছে বৃষ্টিতেও। এখন অসুস্থ না হলেই হয়।
আমার ইচ্ছে ছিলো বৃষ্টিতে পুকুরের জলে ডুব দিয়ে রিমঝিম শব্দ শুনবো। এই শব্দ যে না শুনেছে তাকে কোনো ভাবেই বুঝানো সম্ভবনা সেটিতে কি মেশানো থাকে। নেশার মতো হয়ে যায়। বৃষ্টি যতক্ষণ থাকে ততোক্ষণই ডুব দিতে হয় বারবার। কিন্তু বিধিবাম। পশ্চিম থেকে বয়ে আসা বাতাসে পুকুরের কচুরিপানা গুলি পূর্বপাশে এসে সবটা যায়গা দখল করে নিয়েছে। ডুব দেয়ার আর কোনো যায়গা নেই। আর পশ্চিপ পাশে আমার ঠাঁই নেই। সাঁতার জানা নেই, তাই সেইপাশটা আমার জন্য নিষিধ্য। আবার কোনো দিন বৃষ্টিতে ডুবদিবো পুকুরের জলে, এই আশায় এই বর্ষায় আবার বারবার যাবো আশ্রমে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০২২ রাত ১১:০৭