আমার আব্বা ছিলেন আটরশির মুরিদ। বাবার সাথে সাথে আমিও অনেক বার গেছি আটরশির উরসে। আমার আটরশিতে যাওয়ার মূল আকর্ষণ ছিলো ভ্রমণ। ভ্রমণ বলতে এখানে বুঝতে হবে বাসে করে আটরশি যাওয়া আসে, মাঝখানে ফেরিতে পদ্মা পারি দেয়া। আর ছিলো আটরশিতে উরসের সময় বিশাল মেলা। হেনো কিছু নাই যা সেখানে পাওয়া যেতো না। আমি মেলা থেকে কিনতাম টেমটেমি, হাতলওয়ালা হেলিকপ্টার, জলে চালানো যায় এমন খেলনা লঞ্চ, এই সব। এগুলি সহিসালামতে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসাটা ছিলো বিরাট চ্যালেঞ্জের বিষয়। আরেকটা জিনিস আমাকে খুব টানতো। উরসে যে খাবারের ব্যবস্থা থাকতো সেটি। মাটির সানকিতে ভাত, আলু আর গোস্তের ঘনো তরকারি, সেই সাথে মাষকলাইয়ের ডাল। যাইহক আজকে বিষয় ঐটা না। মূল বিষয়টায় আসি।
তখন সম্ভবতো স্কুলের উঁচুর দিকের কোন এক ক্লাসের ছাত্র আমি। একবার আব্বার সাথে এমনি ভাবে যাচ্ছি আটরশির উরসে। মাঝে ফেরিতে পদ্মা পারি দেয়ার সময় আমার ক্ষুধা লেগে গেলো। আমি চলে গেলাম ফেরির উপরের অংশে যেখানে খাবারের রেস্টুরেন্ট আছে। তখনকার সময় পেটচুক্তি খাবার ছিল (এখনও আছে কিনা জানি না)। সম্ভবতো ৫০ এবং ৭০ টাকায় একবাটি মাছ অথবা গোস্ত, সাথে আনলিমিটেড ভাত আর ডাল। এই ছিলো পেট চুক্তির খাবার মেনু।
আমি একবাটি মুরগির গোস্ত নিয়ে খেতে বসলাম। আমার টেবিলেই সামনে বসে তখন আরেক জন খাবার খাচ্ছে। তার প্লেটে ডাল আর ভাত। আমি খাওয়া শুর করার আগে থেকেই তিনি খাচ্ছেন বুঝা গেলো। আমি আধা প্লেট খাবার খাওয়ার মাঝে তিনি আরো একবার ভাত ডাল নিয়েছেন, এখন আবার নিবেন।
আমি মোটামুটি দ্রুত খাই। উনার খাওয়ার পরিমান আর গতি দেখে আমি আমার খাওয়ার গতি কমিয়ে দিলাম। উনি মোটামুটি তুফান মেল চালিয়ে দিয়েছেন। ধীর গতিতে আমার খাওয়া শেষ হলো। উনি তখনও চালাচ্ছেন। আমি উঠে হাত ধুয়ে এসে আগের যায়গায় বসলাম। এক সময় উনার খাওয়া শেষ হলো। উনি খাওয়া শেষ করে হাত ধয়ে এসে নিজের আসনে বসে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলেন "কেমন টানলাম?"
আমি তখন কিংকর্তব্যবিমুখ, কোনো রকমে এক পাশে ঘাড় কাত করতে পারলাম।
উৎসর্গ: শেরজা তপন
উনার লেখা - গোয়ালন্দী জাহাজের 'মুরগির ঝোল' পোস্টটি পড়ে এই ঘটনার কথাটি মনে পড়লো।
ছবি সূত্র : মেলা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি′ | বিশ্ব | DW | 18.10.2017
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০২১ রাত ১০:৫৩