somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফার ফ্রম দ্য ম্যাডিং ক্রাউড (বই পরিচিতি)

১৫ ই আগস্ট, ২০১০ দুপুর ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফার ফ্রম দ্য ম্যাডিং ক্রাউড

এক তরুন ফার্মার "গ্যাব্রিয়েল ওক" নিজের ভাগ্য পরিবর্তণের উদ্দেশ্যে তার সমস্ত সম্বল বিনিয়োগ করে ফার্মিংএ। তার পাশের এক ফার্মেই খালার কাছে বেড়াতে আসে অপরূপ রূপসী "বাথসেবা"। প্রথম দেখাতেই ওক মুগ্ধ হয়ে যায় বাথসেবার রূপে- ভালোবেসে ফেলে। একদিন ওক তার ভেড়া পালনের জন্য যে ছোট্ট কুটির তৈরি করেছে সেখানে অসুস্থ হয়ে পরে- ধুয়ায় আক্রান্ত হয়ে। মরমর অবস্থা থেকে তাকে বাঁচায় বাথসেবা। এর পরই ওক বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায় বাথসেবার খালার কাছে। কিন্তু সেখান থেকে তেমন কোনো সারা না পেয়ে যখন ভাঙ্গা মন নিয়ে ফিরে আসতে থাকে সেই সময়ই বাথসেবা ছুটতে ছুটতে আছে ওকের নিকট। কিছুটা আশার আলো দেখতে পায় ওক। কিন্তু সে আশার আলো নিভে যায় কদিন পরেই। কারণ এক দিন রাতে ভেড়া পালনে নবিশ এক কুকুরের ভুলে ওকের ২০০ গর্ভবতী ভেড়া মারা পরে। ফলে ওক-কে তার সমস্ত সম্পত্তি ও ফার্মটি বিক্রি করে ধার শোধ করতে হয়। বিবেচক ওক নিশ্চিত হয়ে যায় যে বাথসেবাকে বিয়ে করলে তাকে শুধু দুঃখ আর কষ্টের মাঝেই এনে ফেলা হবে।

অন্যদিকে, বাথসেবার এক বিড়াট ধনী চাচা মারা যাওয়াতে তার বিশাল ফার্ম আর যাবতীয় সম্পত্তি এসে পরে বাথসেবার হাতে। আর আমাদের ওক চাকুরির খোঁজে নিজের অজান্তেই এক সময় এসে পরে বাথসেবার র্ফামের নিকটে। তখন বেশ রাত, ওক দেখতে পায় একটু দূরেই কোনো এক গুদাম ঘরের চালায় আগুন লেগেছে। তখুনি সে ঝাপিয়ে পরে আগুন নেভানোর কাজে। ফার্মের হতোভম্ব কর্মিদের নেত্রীত্ব দিয়ে ধীরে ধীরে আগুন নিভাতে স্বক্ষম হয় সে। এর পরেই বাথসেবার ফার্মে চাকুরি হয় তার।

বাথসেবার ফার্মের পাশেই রয়েছে আরেক মাঝবয়সি ফার্মার মি. বোল্ডউড-এর বিশাল ফার্ম। তিনি যেমনি ধনী তেমনি রাশভারি গম্ভীর প্রকৃতির লোক আর অবিবাহীতও বটে। একদিন হাটে বাথসেবা তার উৎপাদিত গম বিক্রি করতে গিয়েছে অন্য সব ফার্মারের মতোই। সে লক্ষ্য করে যে, সকল ক্রেতা আর বিক্রেতাই ঘুরে ঘুরে তাকেই লক্ষ্য করছে শুধুমাত্র মি. বোল্ডউডই ব্যাতিক্রম। তাই মনে মনে কিছুটা রেগে যায় বাথসেবা।

ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষ্যে একটি কার্ড নিয়ে এসেছে বাথসেবা। কাকে দেবে ওক না মি. বোল্ডউড কে! টচে উঠে আশে মি. বোল্ডউড এর নাম। এবার বাথসেবা সেই কার্ডে লিখেছে " আমাকে বিয়ে করুন", আর পাঠিয়ে দিয়েছে মি. বোল্ডউড এর ঠিকানায়। শুধুমাত্র মজা করার জন্য কার্ডটি লিখে বাথসেবা, তাই কোনো নাম বা ঠিকানা দেয় না। কিন্তু ঘটনাচক্রে মি. বোল্ডউড ঠিকই জেনে যায় বাথসেবার কথা। একাচোরা ভদ্রলোক হঠাৎ করেই প্রেমে পরে যায় বাথসেবার। এদিকে বাথসেবা নিজেই বুঝতে পারেনা সে কাকে ভালোবাসে। এক দিকে আছে প্রথম প্রেম নিবেদন করা ওক, যে কিনা কঠোর পরিশ্রম করে আরো উন্নতি করে দিচ্ছে তার ফার্মকে, কিন্তু তার নিজের কিছুই নেই-একেবারেই দরিদ্র সহায় সম্বলহীন। আর ভ্যালেন্টাইন কার্ড পাওয়ার পর থেকেই মি. বোল্ডউড প্রেম নিবেদন করে যাচ্ছে বাথসেবার কাছে। কাকে বেছে নিবে সে! ওক-কে পছন্দ করে কিন্তু ঠিক ভালোবাসে না, আর মি. বোল্ডউড-কে ভালোবাসে না কিন্তু কার্ড পাঠিয়ে নিজেই তাকে উসকে দিয়েছে। কি করবে সে? আর সবচেয়ে বড় সমস্যা ওক এখন আর বাথসেবা-কে ভালোবাসার কথা বলে না, সাধারণ এক কর্মচারির মতোই কাজ করে যায় মনিবানির হুকুম মতো।

এই দিধা-দন্দের মাঝেই একদিন মি. বোল্ডউড-কে কথা দেয় তার প্রস্তাব ভেবে দেখবে। মি. বোল্ডউড ব্যবসার কাজে কয়েক সপ্তাহের জন্য চলেযান দূরে। কথা থাকে সেখান থেকে ফেরার পরেই পাকা কথা হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য মি. বোল্ডউডের, তিনি সফরে থাকা কালিন সময়েই বাথসেবার পরিচয় হয় এক তরুন সৈনিক সার্জেন্ট ট্রয় এর সাথে। নারী ঘেষা চরিত্রহীন ট্রয় তার মধুর কথায় ভুলিয়ে ফেলে বাথসেবাকে। ওক আর মি. বোল্ডউডকে ভুলে গিয়ে ট্রয়ের প্রেমে হাবুডুবু খেতে থাকে বাথসেবা। তার কানে ট্রয়ের চারিত্রিক দূর্বলতার কথা আসে টিকই কিন্তু প্রেমের মোহো আর ট্রয়ের মনভোলানো কথা সব ভুলিয়ে দেয় তাকে।

আরো কিছু ঘটনা প্রবাহের মাঝেই বিয়ে করে ফেলে ট্রয় আর বাথসেবা সকলের অগচোরে। কিন্তু কিছুদিন পরেই বাথসেবা কিছুটা হলেও তার ভুল বুঝতে পারে। ট্রয় ঘোড়ার রেসে অকাতরে হারতে থাকে ফার্মের প্রয়োজনীয় অর্থ। কিছুদিন পরেই সে জানতে পারে ট্রয়ের আসল রূপ, জানতে পারে ট্রয়ের আরেক প্রেমিকার কথা। ট্রয় এখন আর ভালোবাসেনা বাথসেবাকে, ফিরে যাবে তার আগের প্রেমিকার কাছে। কিন্তু মারা যায় ট্রয়ের সেই প্রেমিকা, সাথে তার বাঁচ্চাও। সবকিছু জানার পরেও ট্রয়ের জন্য মন কাঁদে বাথসেবার।

ট্রয় তার জামা কাপড় সাগর পারে রেখে সাঁতরাতে নামে সাগরে আর ভেসে যায় স্রোতের টানে। একটি জাহাজ তাকে উদ্ধার করে আর সে সেই জাহাজেই চাকুরি নিয়ে চলে যায় দুর দেশে। এদিকে এসব কথা কেউই জানতে পারে না, শুধু সাগর পারে ট্রয়ের জামাকাপড় দেখতে পেয়ে ও তার কোনো খোঁজ খবর না পেয়ে তাকে মৃত বলে ধরে নেয়া হয়।

এদিকে বছর খানেক পার হয়ে যাবার পরে মি. বোল্ডউড আবারো বাথসেবাকে প্রেম নিবেদন করে জানায় বিয়ে করতে চায় তাকে। বাথসেবা সময় নেয়। বাথসেবা আর মি. বোল্ডউড যায় একটি সার্কাস দেখতে পাশের এক অঞ্চলে। সেই সার্কাসেই ট্রয় খেলা দেখায় ঘোড়সাওয়ারের। দূর থেকে ট্রয় ঠিকই চিনতে পারে বাথসেবা আর মি. বোল্ডউড কে। কিছুদিন পরেই ট্রয় সার্কাসের চাকুরি ছেড়ে চলে আসে বাথসেবার ফার্মে। সেদিনই মি. বোল্ডউড এর বাড়িতে একটি অনুষ্ঠান ছিলো, উপস্থিত ছিলো সকলেই সেখানে। মি. বোল্ডউড বাথসেবাকে আংটি পড়াই আর তার পরেই সেখানে উপস্থিত হয় ট্রয়। মি. বোল্ডউড রাগে আর দুঃখে গুলি করে ট্রয়কে, মারা যায় ট্রয়। গ্রেফতার হন মি. বোল্ডউড হত্যার দায়ে।

এই ঘটনার অনেক দিন পর, উকিলের পরামর্শে ওক মি. বোল্ডউড-এর ফার্ম লিজ নিয়ে নেয়। তারপর এক দিন বেথসেবার সাথে আলাপ কালে দুজনেরই আবার মনে পরেযায় পুরনো দিনের ভালোলাগার কথা। মুখে আর ভালোবাসার কথা বলেনা কেউ কাউকেই, কিন্তু মনে মনে জানে দুজনেই দুজনার ভালোবাসার কথা। বিয়ে আর অপুরন্ত ভালোবাসার মধ্যদিয়ে শেষ হয় এই কাহীনি।

সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত টমাজ হার্ডির-র লেখা এই বইটি অনুবাদ করেছেন কজী শাহনূর হোসেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:২৮
৪৫৬ বার পঠিত
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চাই সরাসরি দুইস্তর বিশিস্ট প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন: নতুন বাংলাদেশের অঙ্গীকার

লিখেছেন বিদ্রোহী ভৃগু, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৪

ভূমিকাঃ

ছাত্র-জনতার সফল জুলাই বিপ্লবের পর আজ বাংলাদেশ গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার, আইনের শাসন ও প্রকৃত উন্নয়নের এক নতুন পথে যাত্র শুরু করেছে। নোবেল লরিয়েট ড। ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=শোকর গুজার প্রভুর তরে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:১৪



প্রভু তোমার দয়ার কথা, বলে হয় না শেষ তো
কত রিযিক আহার দিয়ে, রাখছো মোদের বেশ তো!
তোমার সৃষ্টির কেরামতি, নেই কো বুঝার সাধ্য
তোমার বান্দা তোমার গোলাম, শুধু তোমার বাধ্য!

গাছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সুপার সানডে : সংঘর্ষ ও নৈরাজ্যের পথে বাংলাদেশ!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪৭


আজকের দিনটি বাংলাদেশের সচেতন মানুষের দীর্ঘদিন মনে থাকবে। এত সংঘর্ষ ও মারামারি অনেকদিন পর ঢাকাবাসী প্রত্যক্ষ করলো। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে মানুষ আগে থেকেই উদ্বিগ্ন তার উপর বিভিন্ন অবরোধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভয়েস অব আমেরিকার জরিপে সংস্কার শেষে ভোটের পক্ষে রায় দিয়েছে ৬৫.৯ % মানুষ

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


পাগল ও নিজের ভালো বুঝে ,কখনো শুনেছেন পাগল পানিতে ডুবে মারা গেছে কিংবা আগুনে পুড়ে মারা গেছে ? মানসিক ভারসাম্য না থাকলেও মানুষের অবচেতন মন ঠিকই বুঝে আগুন ও পানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনূস সরকার নিজেই নিজের চাপ তৈরি করছে

লিখেছেন রাকু হাসান, ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩


ইউনূস সরকার সব সংস্কার কিংবা কাজ করতে পারবে না ,সেটা নিয়মিতর নিয়ম মেনে নিতে হবে । রাজনৈতিক দলগুলো , যে কালচার তৈরি করে গেছে সেটা এই সরকার আমূলে বদলে দিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×