(মালদ্বীপের রাজধানী মালে)
বোট থেকে নেমেই দেখি জেটিতে কয়েকজন বাংলাদেশী চা সিগারেটের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আমাকে দেখে কৌতুহলী হয়ে পরিচয় জেনে খুব খাতির করতে চাইলো। ওদের সাথে বসতে বলল। কিন্তু অফিসে জলদি রিপোর্ট করতে হবে। ওদেরকে বিনয়ের সাথে না করে ট্যাক্সী খুজতে থাকি। পরে ট্যাক্সীতে আমার প্রায় ২৫ কেজি ওজনের লাগেজ উঠানোর সময় আমাকে ধরতে না দিয়ে একজন দৌড়ে এসে উঠিয়ে দেয়।
মালেতে ছিলাম মাত্র ৪ দিন। সকাল থেকে কোন কাজ ছাড়াই অফিসে বসে বসে সারাদিন কাটাতে হতো। বিকেলে বের হয়ে পুরো মালে চষে বেড়াতাম।
মালের প্রায় সবগুলো রাস্তাই এরকম টালী বিছানো।
সরু রাস্তার একপাশে সারি সারি বাইক পার্ক করা থাকে। পিছনে দেখুন মালের আগোরা
আর্টিফিশিয়াল বিচ। আমার কলিগের কাছে এই বিচের কথা শুনেছিলাম। পরে যেই গেস্টহাউসে ছিলাম, ঐটার রিসিপশনে বসা মালদিভিয়ান ছেলেটাকে জিগেস করলাম, বিচটা কোন দিকে , কিভাবে যাবো?
ছেলেটা বলল , অনেক দূর ,ট্যাক্সি নিতে হবে।
ভাবলাম , মালে তো দৈর্ঘ্যে ২ কিমিও না। ঐ বিচ আর কতদূর হবে । পরে দোকানে ঘুরে ঘুরে মাত্র কয়েকমিনিট হেটেই বিচে পৌছে যাই।
সুলতান মসজিদ। মালের সবচেয়ে বড় এবং জাকজমকপূর্ণ। এখানকার বাংলাদেশীরা অবশ্য একে কবুতর মসজিদ বলে। ভিতরে খুবই সুন্দর। একটা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারও আছে। ও হ্যা , মসজিদটা হো. মো. এরশাদের বানানো।
মালে তে একটা খোলা চত্ত্বর। যেই ৪ দিন ছিলাম, আকাশ সারাক্ষণই মেঘলা ছিল । তাই ছবিগুলাও অন্ধকার হইছে।
জেটী। যে কোন একটা সোজা রাস্তা ধরে হাটতে থাকলে কয়েক মিনিটেই সমুদ্রে...
মালেতে রাস্তার দুপাশে প্রচুর দোকানপাট। বিদেশী পর্যটকদের আশাব্যাঞ্জক উপস্থিতির কারণে অনেক স্যুভেনিরের দোকান দেখা যায়।
এসব দোকানে খুব সুন্দর আর দূর্লভ জিনিসপত্র পাওয়া যায়
তবে স্যুভেনির/গিফটশপ গুলোতে জিনিসের দাম দেখলে মাথা নষ্ট হবার যোগাড়
দোকানে ঘুরে ঘুরে শেষমেষ কিছু প্রসাধনী, এক জোড়া জুতো আর অনেক চকলেট কিনলাম
এই দোকানে শুধু ছোট বড় এমনকি বিশাল বিশাল সামুদ্রিক মাছ আর ছোট ছোট টিন জাত মাছ ছিল
এত সুন্দর চিংড়ী দেখে কি আর খেতে ইচ্ছে করে
এখানে এক বাংলাদেশী ভাইয়ের সাথে আগে থেকেই পরিচয় ছিল। ভদ্রলোক ব্যাবসা করেন, অনেক বছর ধরে মালে তে আছেন। তার ব্যস্ততার মাঝেও আমাকে যথেষ্ট সময় দিয়েছিলেন। একদিন দুপুরে তার বাসায় নিয়ে যান। ভাবীর সাথে ঐদিনই পরিচয়। খাবার টেবিলে বসে অনেকদিন পরে, দেশী রান্না (ভাত, গরুর মাংশ, ডাল, শুটকি ভর্তা, আরো অনেক কিছু....) দেখে অনেক খুশী হয়ে যাই। আর ভাবীর রান্নাও ছিল অসাধারণ। তাই খেতে খেতে যখন দেশী স্টাইলে রান্না করা ডালের প্রশংসা করছি, তখন ভদ্রলোক হঠাৎ জিগেস করলেন,
-আপনার ভাবী কোন্ দেশী ?
~কেন , কোন দেশী মানে, বাংলাদেশী
-না, আপনার ভাবী দিবাহী (মালদিভিয়ান)
শুনে তো পুরাই টাশকি খাই, এতক্ষণ যিনি পরিষ্কার বাংলায় কথা বললেন এমনকি পুরাই দেশী স্টাইলে রান্না করে রেখেছেন, উনি নাকি ...
আমার টাশকি খাওয়া দেখে উনারা অনেক মজা পান।
যাই হোক, মালেতে অন্যান্য দিন গুলোয় বাইরেই খেলাম। হোটেলগুলোতেও বাংলাদেশী কর্মচারী ভরা।
এইটা স্পেন-নেদারল্যান্ডসের ফাইনাল খেলার দিন গেস্ট হাউসের রুমে বসে অর্ডার দেই। খেলা দেখতে দেখতে পুরাটাই শেষ করে ফেলি
অনেক কেনা কাটা করে আমার ২টা লাগেজের ওজন ৩০ কেজি ছাড়িয়ে যায়। তাই খানিকটা চিন্তিত ছিলাম। অবশেষে যেদিন কলম্বোতে ফেরার কথা , ঐদিনই আমার সাইট থেকে এক ওয়ার্কার মালে তে আসে। লোকটার মা মারা গেছেন বলে জরুরী ভিত্তিতে দেশে ফিরতেছে। লোকটার জন্য আমার ফ্লাইটেইই সিট বুকিং করা হয়। তাই লাগেজের বাড়তি ওজন নিয়ে নিশ্চিন্ত হই।
এয়ারপোর্টের অবস্থান অন্য আইল্যান্ডে। ঐখানে আবার বোটে করে যেতে হয়। অফিসের সব ঝামেলা শেষ করে বিকেলেই জেটীতে চলে আসি।
বোটে এসে বসার সাথে সাথেই বোট ছাড়ে। অথচ তখন এত বড় বোটে মাত্র ৬ জন যাত্রী ছিল। ছবিতে আস্তে আস্তে বোট মালে ছেড়ে যাচ্ছে।
বোট গুলো পুরাই বাসের মত লাগতেছিল। সামনে চালকের আসন, আর একজন ক্রু যাত্রীদের ভাড়া সংগ্রহ করছিল
এয়ারপোর্টের জেটীতে বোটের প্রবেশ...
এখনই ভিড়বে...
হাতে অনেক সময় থাকায় দোকান গুলোতে একটু ঢু মারি...
রাত ৮.৩০ বাজে প্লেন মালে ছেড়ে কলোম্বর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়...
আগের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ সকাল ১১:২৬