মাহমুদুল হক ১৯৪০ সালে পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতে জন্ম গ্রহণ। ১৯৪৭ এর দেশ ভাগের সময় পর তার পরিবার পুরনো ঢাকার গেন্ডারিয়ায় বসবাস শুরু করেন। তার পিতা সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ছয় ভাই চার বোনের মধ্যে চতুর্থ ছিলেন। পঞ্চাশের দশকে স্কুলে থাকাকালীনই লেখালেখি শুরু করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে জগন্নাথ কলেজ (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে লেখক হিসেবে মাহমুদুল হকের রাজসিক আবির্ভাব ঘটে।যে দুটি বই তাঁর ললাটে সাহিত্যিকের জয়তিলক এঁকে দেয় তা হলো, খঞ্জনা পাখী এবং নিরাপদ তন্দ্রা। বই দুটো অনেকটা ব্যক্তিগতভাবে বন্ধুমহলের উদ্যোগে প্রকাশিত হয়, লেখকেরও ছিল এতে সম্পৃক্তি।
প্রখর রুচিবোধের অধিকারী ছিলেন মাহমুদুল হক, ছিলেন খুঁতখুঁতে এবং বই প্রকাশের সবকটি ধাপ সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত কেবল নন, সেখানে রুচি ও বৈদগ্ধের পরিচয় ফুটিয়ে তুলতেও সমর্থ এবং প্রকাশনার সঙ্গে থাকেন নিবিড়ভাবে যুক্ত।
প্রবলভাবে জীবনবাদী মানুষটির আগ্রহ ও উৎসাহের ক্ষেত্র ছিল বিচিত্র, জীবনাভিজ্ঞতাও বিপুল, তাঁর পঠন-পাঠনের অবলম্বনও ছিল নানান বিষয়।
তার কিছু সাড়া জাগানো উপন্যাসের মধ্যে :
খেলাঘর(১৯৮৮)-(চলচ্চিত্ররূপ২০০৬ ), জীবন আমার বোন(১৯৭৬), নিরাপদ তন্দ্রা(১৯৭৪), কালো বরফ, অনুর পাঠশালা(১৯৭৩), মাটির জাহাজ, অশরীরী প্রভৃতি উল্লেখ্যযোগ্য।
আর ‘কালো মাফলার’, ‘প্রতিদিনি একটি রুমাল’, ‘হৈরব ও ভৈরব’ প্রভৃতি গল্পের অমর স্রষ্টা আমাদের বটু ভাই।
তিনি শিশুদের কাগজ আলাপনী, শাহীন সেতারা প্রভৃতি পত্রিকায়ও নিয়মিত লিখতেন।
কিন্তু তিনি ১৯৮২ সালের পর আর লেখেননি।অনেকটা নিভৃতে জীবন কাটিয়েছিলেন তিনি।
এই সম্পর্কে তিনি "আহমাদ মোস্তফা কামাল"কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন "আমি শুধুমাত্র সাহিত্য জগতের ভণ্ডামি দেখে লেখালেখি থেকে দূরে সরে এসেছি, সেটা বলা ঠিক হবে না। এটা একটা কারণ ছিলো বটে, তবে আরও কারণ নিশ্চয়ই আছে। আগেই তো তোমাকে বলেছি, আমি শেষের দিকে এসে একঘেঁয়েমিতে ভুগছিলাম।"
২১শে জুলাই, ২০০৮ রোববার গভীর রাতে রাজধানীর লালবাগে মারা যান নিভৃতচারী এ কৃতী লেখক।