somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাসিনার ভারত সফর: যৌথ ঘোষণা ও ভারতীয় কূটনীতি

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গুরুত্ত্বপূর্ণ এই ইস্যুতে আমি বোধহয় একটু দেরী করে ফেললাম নাকি জানি না। আসলে শীর্ষ বৈঠকের যৌথ ঘোষণা (Joint Communiqué) হাতে পেতে দেরি হলো। আর ওটা হাতে পাবার পর এই গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়ে মুখ খুলে সিরিয়াসনেস বজায় রাখতে চাই - এটাও একটা কারণ।

কথার শুরুতে, যৌথ ঘোষণা (Joint Communiqué) নিয়ে কিছু সাধারণ আলোচনা করে নিব। তবে মনে হচ্ছে আমাকে আর এক পর্বে এটা শেষ করতে হবে, দেখা যাক।

যে কোন উঠতি অর্থনীতির দেশ তা অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে উঠার ক্ষেত্রে অনেকে যেমন উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখতে পাবেন একই সঙ্গে অনুষঙ্গ হিসাবে ঐ দেশের চাপা দিয়ে বলপ্রয়োগে ফেলে রাখা বহু চাপা পড়া সমস্যা পেকে উঠবে, ফেটে বের হতে চাইবে, আশু নজর, সমাধান চাইবে - চাই কি অর্থনীতির গতিতে সরাসরি বাধা হয়ে দাঁড়াবে, সম্ভাব্য বড় বিপদ ঘন্টা হয়ে ঝুলে থাকবে -আমাদের অভিজ্ঞতায় আমরা এটা দেখেছি।
ভারতের দিক থেকে যদি দেখি, তার উঠতি অর্থনীতি একইসাথে কি কি উঠতি সমস্যা, বাধা, বিপদ ঘন্টা বাজিয়ে হাজির হচ্ছে সে সম্পর্কে আমাদের জানা নাই হয়ত, কিন্তু না থাকলেও যেন কোন অসুবিধা নাই; কারণ যৌথ ঘোষণা ভারতের সেই বিপদগুলো মাথায় গেথে নিয়ে ড্রাফট করা হয়েছে, প্রতি ছত্রে ছত্রে ভারতের স্বার্থের এই উদ্বিগ্নতাগুলো ফুটে বেরিয়েছে। সেই দিক থেকে বলা যায়, যৌথ ঘোষণা আসলে ভারতের স্বার্থের উদ্বিগ্নতাগুলোর দলিল; রক্ষকবজ এঁটে একে রক্ষা করার প্রচেষ্টা। তাই যদি হয় তবে "যৌথ ঘোষণা" হয় কিভাবে? আমাদের জন্য বিপদের দিক হলো এটাই নাকি আমাদেরও স্বার্থ -এই বলে আমাদের উপরে চেপে বসতে চাচ্ছে।
হাসিনার সফরকে কেন্দ্র করে এই যৌথ ঘোষণা থেকে ভারতের সমস্যা, বাধা, বিপদ ঘন্টার একটা পুরা তালিকায় বের করা সম্ভব; আরো স্পষ্ট করে বললে এই ঘোষণা ভারতের উঠতি অর্থনীতির উঠতি সমস্যা, বাধা অপসারণে বাংলাদেশকে কিভাবে ব্যবহার করে নেয়া যায় এরই দলিল। সাধারণভাবে বললে, এটা ভারত রাষ্ট্রের দেখা স্বার্থ, বা ভারতের শাসকের স্বার্থ - কোনগুলোকে সে তারা সমস্যা, বাধা মনে করছে বা করবে। এগুলোর একটা তালিকা তৈরি করছি এখানে,
ভারতের সিকিউরিটি: সে যেভাবে দেখার কারণে যাকে যাকে শত্রু বানিয়েছে, আমাদেরকেও সেভাবে দেখে ভারতের সিকিউরিটির উদ্বিগ্নতা দূর করতে হবে।
তার বিভিন্ন রাজ্যে অসম বিকাশজাত ক্ষোভ মিটাতে বিদ্রোহ দমন করতে ট্রানজিট দরকার, পূবের সাতবোন রাজ্যকে বাজার হিসাবে তার পাওয়া দরকার এজন্য ট্রানজিট দিতে হবে। আবার বাংলাদেশকে বাজার, বিনিয়োগের জায়গা হিসাবে পাওয়া দরকার, পূর্বের সাতবোন রাজ্যে ভারতের অন্য এলাকা থেকে পণ্য প্রবেশের তুলনায় যোগাযোগ সুবিধার কারণে বাংলাদেশের কিছু পণ্য সিমেন্ট, ব্যাটারি, সাবান টয়লেটারিজ ইত্যাদির একটা তুলনামূলক সুবিধা ছিল, সে সুযোগ পাওয়া শুরু হতেই নিজের অন্য অঞ্চলের বাজারকে একটা প্রটেকশনিষ্ট সুবিধা দিতে অশুল্ক বাধা আরোপ করেছে। বিপরীতে আমাদের উপর ট্রানজিটের জন্য চাপ দিচ্ছে যাতে সে নিজের পণ্য নিয়ে সাতবোন রাজ্যে হাজির হতে পারে।
আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘে স্হায়ী ও অস্হায়ী সদস্যপদে বা বিভিন্ন বহুজাতিক ফোরামে ভারতের স্বার্থকে আমাদের সমর্থন করতে হবে, চীন ইস্যুতে ভারতীয় স্বার্থজোটে পাশে থাকতে হবে, আমেরিকার সাথে তার আঁতাত, সামরিক স্বার্থ, যুদ্ধ-পররাষ্ট্রনীতিতে পাশে থাকতে হবে, আন্তর্জাতিকভাবে জলবায়ু, বাণিজ্য আলোচনা ইত্যাদিতে ভারতীয় স্বার্থের পাশে থাকতে হবে,
ভারতের জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহযোগীর ভুমিকায় হাজির হতে হবে,
ভারতের পানির চাহিদা মেটানোর পর যদি থাকে তবেই ভারতের উপর দিয়ে প্রবাহিত নদীর পানি আমরা পেতে পারি। বিভিন্ন বাধ দিতে চাইলেও আমাদের ওর মধ্যেই আমাদের সুবিধা আবিস্কার করতে হবে।
ভারত যেভাবে নিজের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য জিএম বা হাইব্রিড দিয়ে তার কৃষিকে ঢেলে সাজাতে চায় আমাদেরকে এর পাশে থাকতে হবে নিজেদের কৃষিকেও এভাবে বারোটা বাজাতে হবে।
এই তালিকাটা কেবল যৌথ ঘোষণা পড়ে তা থেকেই প্রস্তুত করা সম্ভব। এথেকে বুঝাও সম্ভব হাসিনার এই সফরে
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে আলাদা রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দিক থেকে প্রথমত, ভারতের সমস্যাকে নিজের সমস্যা মনে করার কোন কারণ নাই, এছাড়া কী স্বার্থে শর্তে কেন করব সেসব প্রশ্ন আছে, দ্বিতীয়ত, ভারত যেগুলোকে সমস্যা বাধা হিসাবে দেখছে, কেবল ইস্যু হিসাবে ওগুলোকে যদি ধরি তবুও তা দেখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ ও দেখার দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে তা ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। এমনকি কোন কোন ইস্যু তা একান্তই ভারতের উঠতি অর্থনীতির অনুসঙ্গ হবার কারণে বাংলাদেশের দিক থেকে তা ইনডিফারেন্ট, মাথা ঘামানোর বিষয় না, এই ধরণের হওয়াও স্বাভাবিক।
তবে তাগিদ যেহেতু ভারতের এবং সেকাজে বাংলাদেশের কাছ থেকে সহায়তা পেতে চাইলে বাংলাদেশকে সত্যিসত্যিই কোন বাড়তি সুবিধা দেবার বিনিময়ে ভারত কোন প্রস্তাব রাখতে পারে; যেখান থেকে সহায়তা বিনিময়ের কুটনীতি বাকচাতুরি চালু হতে পারে। বাংলাদেশ তাতে বিষয় স্বার্থ ওর মধ্যে দেখলে আগ্রহী হতে পারে নাও পারে, অপশনাল।

এবার বাংলাদেশের অর্থনীতির দিক থেকে এমন কিছু কী আছে যা ভারতের কাছ থেকে পেলে আমাদের সুবিধা?
মৌলিক দিক থেকে বললে এমন কোন কিছু আসলে নাই, এখন দেখা যায় নাই, তৈরি হয় নাই; বরং যতটুকু আমরা পাচ্ছি তা নিজস্ব সক্ষমতার জোড়ে, বিজনেস এজ ইউজুয়ালের কারণে। কিন্তু অর্থনীতির বাইরে বাস্তবে আমরা দেখি কিছু একটা জানি আছে। হ্যা ভারতের কাছ থেকে পাওয়ার আছে কিন্তু সেগুলো ভারতের কাছ থেকে কোন বাড়তি সুবিধা তা নয়। এক কথায় বললে এগুলো পানি, সীমানা কেন্দ্রিক; যা বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যার ব্যাপার এবং এই ইস্যুতে আমাদের দাবি কোন বাড়তি পাবার আবদার নয়; এবং এজন্য মনে রাখতে হবে এর নেচার ভারতের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা পাওয়া ধরণের নয়।

তাহলে দেখা যাচ্ছে উপরে ভারতের যে বিশাল তালিকা দিলাম তুলনায় আমাদের ন্যায্য ছাড়া বাড়তি কিছু পাবার নাই।
এই বাস্তব পরিস্হিতিতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভারতের কুটনীতি সাজানো হয়েছে এমনভাবে, যেহেতু বাংলাদেশের ভারতের কাছ থেকে বাড়তি কোন সুবিধা পাবার নাই ফলে পানি, সীমানা প্রসঙ্গে যেগুলো বাংলাদেশের হিস্যা, আন্তর্জাতিক আইনের চোখেও যা হিস্যা, ন্যায্য অধিকার - সেসব ইস্যুগুলোকে এমন পরিস্হিতিতে নিয়ে যাওয়া যেন এক্ষেত্রে ভারত হলো দাতা এটা হাজির করা যায়। অথচ পানি, সীমানা প্রসঙ্গে ভারতের দাতা হবার প্রশ্নই উঠে না, পানি ভারতের উপর দিয়ে প্রভাবিত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে, ভারতের সাথে সীমান্তে ভুভাগ, নৌভাগ আছে বলে নিশ্চয় ভারত দাতা নয় - চাইলে এটা সহজেই আমরা বুঝতে পারি।
ভারতের কুটনীতি আমাদের ন্যায্য হিস্যাকে ভারতের দাতা হিসাবে হাজির করেও সাজিয়ে শেষ হলেও বোধহয় একটা মানে থাকত, কিন্তু তা এখানেই শেষ হয়নি। যেমন পানি প্রবাহ নিয়ে ঝগড়া সৃষ্টির ইস্যু করেই এটা থামেনি। তাদের প্রয়োজন মেটানোর পরে যদি যদি কিছু থাকে তবে সেটা বাংলাদেশ পায় কীনা তা দেখা যেতে পারে- এই হলো তাদের পররাষ্ট্র নীতি। পানি নিয়ে আন্তর্রাষ্টীয় বিবাদ অনেক আছে এমনকি ভারতের মধ্যেই আন্তরাজ্যেও তা আছে; এগুলো যেন যুদ্ধ পর্যন্ত না গড়ায় সে জন্য আন্তর্জাতিক বহু আইন, নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে যার মূল কথা হলো, পানি উৎসমুখ থেকে সমুদ্রে গিয়ে শেষ হওয়া পর্যন্ত একটা একক, এটা উজানে যে যে দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আসছে তাদের ঐ পানির প্রয়োজন কতটা অথবা আগে তাদের প্রয়োজন মেটানোটা প্রায়রিটি - এমন কোন ভিত্তি ভাবনা সেখানে নাই। ভারতের এই প্রয়োজন কথাটার কোন সীমা-পরিসীমা নাই বরং একেবারে এন্ডলেস; খাল কেটে বা বাধ দিয়ে নদী প্রবাহ ডাইভার্ট করে দেওয়া থেকে শুরু করে, দুই নদীর মাঝে কৃত্রিম খাল কেটে দুটোকে যুক্ত করা, বন্দর বাঁচানোর অজুহাতে পানি টেনে নিয়ে যাওয়া সব সেখানে জায়েজ। আবার এসব অর্বাচীন কান্ড করার ফলেই বাংলাদেশ পানি পাচ্ছে না একথা বললে ভারতের এক অদ্ভুত যুক্তি আছে, বলে আজকাল প্রকৃতি পানি কম দিলে তারা কী করতে পারে? এনিয়ে এই যৌথ ঘোষণায় ২৭ নম্বর পয়েন্টে এনিয়ে আরও অনেক মজার ভাবনা আমরা দেখব, পরে আসছি সে প্রসঙ্গে।
আবার বর্ডারের কথাই যদি ধরি, নির্বিচারে বাংলাদেশী মানুষ মারার নীতি নিয়েছে; অর্থাৎ বর্ডার নিয়ে যেসব অমীমাংসিত বিষয় জিইয়ে রাখা হয়েছে সেসব তো আছেই বরং তাতে নতুন এক মাত্রা যোগ করেছে ভারত। যাতে মনে হয় এখন এই নতুন ইস্যুতেও ভারত দাতা। বেশি আগের কথা না হয় বাদ দিলাম, মানবাধিকার সংগঠনগুলো হিসাব দিয়ে বলছে শেখ হাসিনার এক বছরে ৯৬ জন মানুষ এভাবে নির্বিচারে মারা হয়েছে। এমনকি শেখ হাসিনার সফরের দিনেও নির্বিকারে লোক মারা হয়েছে। এঘটনাগুলো নিয়েও ভারতের একটা আজীব ব্যাখ্যা আছে, cross border crimes, অর্থাৎ ক্রীমিনালদের সীমা পার হওয়া সংক্রান্ত অপরাধ এগুলো। এই আজিব ব্যাখ্যার তোড়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি হাসিনা কিংকর্তব্যবিমুঢ হয়ে এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে ভুলে গেছে যে প্রথমত, ওরা যে ক্রিমিনাল এটা আগে প্রমাণ হতে হবে, দ্বিতীয়ত ক্রিমিনাল মনে করে নিয়েই তাকে গুলি করে মারা আর একটা অপরাধ। এছাড়া ধরে নিয়ে নির্যাতন করে, হাতের তালুতে বৈদুতিক শক দিয়ে নির্মমভাবে মেরে ফেলার ঘটনাও আছে, পত্রিকায় সে ছবি আমরা দেখেছি। এই প্রসঙ্গে যৌথ ঘোষণায় ১৮ নম্বর পয়েন্টে মজার পর্যবেক্ষণ আমরা দেখতে পাব। পরে আসব।

তাহলে এখনকার মুল কথা হলো, ভারতীয় কূটনীতির সাধারণ ধারাকে চেনা; সেটা হলো, বাংলাদেশের স্বার্থের সাথে সম্পর্কহীন অথচ ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিতে যা তার স্বার্থ মনে করে - এই বিষয়ে সব (বাড়তি) আবদার (সময়ে তা অন্যায় আবদারও বটে) আদায় করতে পানি বা বর্ডার ইস্যুতে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রসঙ্গে নিজেকে দাতার ইচ্ছার ভূমিকায় হাজির করা, চাপ সৃষ্টি করা।
আবার চাপ সৃষ্টি করেই শেষ হয়না। বিনিময়ের কোন যৌথ ঘোষণায় বাধ্য হয়ে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা যদি স্বীকার করতে হয় কখনও তবে একে কাগুজে ঘোষণায় পরিণত করা, কাগজের লেখা কাগজে থাক আর তারা যে কুটনীতিতে যেভাবে যা করছিল একটুকু না বদলে তাই চালাতে থাকা। শেখ মুজিবের আমল থেকে আমরা এটাই দেখে আসছি। যৌথ ঘোষণার টিপাইমুখ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলছেন, আমাকে এই প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করা ছাড়া কি করার আছে। বিশ্বাস আর মিথ্যা প্রতিশ্রুতিই যদি আমাদের ভরসা হয়, আমরা যদি এটা বুঝে থাকি তবে তা যৌথ ঘোযণার কাগজে আসার দরকার কেন? বরং ওতে ভারতীয় সফল কুটনীতি - টিপাইমুখ বাঁধ যে তারা করবেনই প্রকারন্তরে এটাই হাসিনাকে দিয়ে স্বীকার করিয়ে নিয়েছেন - সে হুশ হাসিনার নাই।

যৌথ ঘোষণা মনোযোগ দিয়ে পড়ে, ওর শব্দ চয়ন, উপস্হাপন দেখে আমার বিশ্বাস জন্মেছে এর ড্রাফ্টসহ সবটাই ভারতীয় সাউথ ব্লকের করা, এমনকি আমাদের সচিব মিজারুল কায়েস বা আমাদের কোন পেশাদার কুটনীতিকেরও ঐ ড্রাফ্টের পরে কোন অবদান আছে কিনা আমার প্রবল সন্দেহ আছে; অর্থাৎ বাংলাদেশের অবদানের পুরাটাই শেখ হাসিনাসহ রাজনৈতিক নেতৃত্ত্বের। যেকেউ এই যৌথ ঘোষণা পড়লে বুঝতে পারবেন এই ভাষা, শব্দ, বাক্য গঠন বাংলাদেশের নয়, কোন পেশাদার কুটনৈতিকেরও নয়। আমরা কেবল ঐ দাসখতে সাক্ষর করেছি - এটাই অবদান।

মোট ৫১টা পয়েন্ট আকারে যৌথ ঘোষণাটি গঠিত হয়েছে, যার মধ্য প্রথম নয়টা আর শেষের দুটো - প্রসঙ্গে ঢুকা আর বের হওয়ার বলে - বাদ দিলে বাকি ৪০টা হলো শীর্ষ প্রধানদের মনোভাব ও কেবল দেয়া বা তথাকথিত দেয়ানেয়ার বিষয়ে আসল প্রসঙ্গ।

কোন যৌথ ঘোষণায় উভয় দেশের শীর্ষ ব্যক্তির যৌথ অভিব্যক্তিতেই তা ভারাক্রান্ত থাকে, এটাই স্বাভাবিক। এই ৪০ প্রসঙ্গের মধ্যে ৩০টাই two Prime Ministers agreed, Both Prime Ministers agreed অর্থাৎ Both agreed জাতীয়। বাকী থাকে দশটা যা কোন এক Prime Minister একা agree করছেন অথবা কোন একজনের স্মরণ বা recall ধরণের।

এমনই একটা হলো, ১১ নম্বর পয়েন্ট, শেখ হাসিনা recall করছেন।

"11. The Bangladesh Prime Minister recalled the shared bonds of
history, culture and aspirations that bind Bangladesh and India, and
paid tribute to the sacred memory of the lives sacrificed for the
freedom and independence of the two countries. She called for
rededicating efforts to establish a society free from ignorance, fear
and want."

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের নেতা হিসাবে শেখ হাসিনার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গর্ব, গভীর আবেগ থাকাটাই স্বাভাবিক। বরং না থাকাটাই অস্বাভাবিক। কিন্তু দুই দেশের freedom and independence নিয়ে এই ১১ নম্বর পয়েন্টেটায় শেখ হাসিনা of the two countries বলে শেয়ার করছেন, দেখতে পাই। অর্থাৎ স্মরণ শেখ হাসিনার কিন্তু স্মরণ করছেন দুই দেশের মূক্তি ও স্বাধীনতার যুদ্ধকে, ওতে lives sacrificed নিয়ে। lives sacrificed এর দিক থেকে ভারতের স্বাধীনতা কোন যুদ্ধই নয় তবে তা আন্দোলন সংগ্রাম অবশ্যই; ফলে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের lives sacrificed দিক থেকে ওর তুলনা করা যায় না, করলে তা আতিশর্য হবে; হয়ে গেছেও তাই।
আসলে সম্ভবত ভারতীয় কূটনীতিক ড্রাফ্টস-পারশন শেখ হাসিনাকে দিয়ে স্মরণ করিয়ে নিতে চাইছিলেন, ১৯৭১ সালে ভারতের সহযোগিতার কথা। কিন্তু freedom and independence of the two countries কথা লাগায়ে এর উপর আবার lives sacrificed এর কথা দিয়ে পোক্ত করতে গিয়ে একটা অশ্বডিম্ব প্রসব করে বসেছেন। মনে রাখতে হবে এই পয়েন্ট একা শেখ হাসিনা স্মরণের পয়েন্ট, যৌথ নয়। শুরুতে তিনি স্মরণ করতে বলছেন, shared bonds of history, culture and aspirations that bind Bangladesh and India, কিন্তু দুই দেশেরই স্বাধীনতা যুদ্ধ আর lives sacrificed এর কথা কইয়া একেবারে ভজকট লাগিয়ে ফেলাইছেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে এটা বাংলাদেশের কোন মানুষের করা ড্রাফ্ট এমন হবে না, হয় না। হলে শেখ হাসিনার আমলে সেক্ষেত্রে, আমরা হয়ত দেখতাম তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের শহীদদের আত্মত্যাগ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছেন এবং একই সঙ্গে ভারতের সহযোগিতা ও আত্মত্যাগের প্রতিও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছেন।

তবে ঘটনা এখানেই শেষ নয়। এই একই পয়েন্টের শেষ বাক্য এখনও বলা হয় নাই। শেষ বাক্যটা দেখুন, "She called for rededicating efforts to establish a society free from ignorance, fear and want" - এখানে ignorance শব্দটা বোল্ড করেছি আমি নিজে। সারকথায় শেখ হাসিনা কি কি থেকে মুক্ত সমাজ দেশ চান তাই লেখা হয়েছে। তা ভালো কথা। ভয় ও অভাব (fear and want) মুক্ত সমাজ চাওয়ার কথা শুনেছি, বুঝিও বোধহয় কিন্তু ignorance কথাটা আমাকে মহা ভেজালে ফেলায় দিছে; আমার অজ্ঞতার জন্য পাঠক মাফ করবেন, কখনও ignorance অর্থাৎ অজ্ঞতা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য কামনা - না কুটনৈতিক ভাষায় না অন্য কোথাও - আমার জিন্দেগিতে দেখি নাই। ভারতসহ আমেরিকা ইত্যাদি অনেককে নিয়ে আমাদের ভয় আছে জানি, দেশে অভাব আছে তাও বুঝি কিন্তু, সারা অঙ্গে অজ্ঞতা নিয়ে বসে আছি এটা তো জানি না। আর এই অজ্ঞতা কি থেকে, কি অজ্ঞতা আমাদের?
আমাদের মানুষ মুসলমান বলে, ইসলামের গন্ধ আছে বলে, নাকি মুসলমান হয়েও ইসলাম বুঝি না বলে, নাকি ভারত আমাদের দেশ স্বাধীন করে হাতে তুলে দিয়ে গেছে তা থেকে অজ্ঞ, না তাও মিলে না কারণ ঐ শব্দটাতো অকৃতজ্ঞতা বলে জানি, আর অজ্ঞ না থেকে জেনে শুনেও তা করা যায় কোন সমস্যা নাই; আচ্ছা তাহলে কী এটা ধর্মীয় কূপমন্ডুকতার ইংরাজী ignorance সেই রকম কোন অর্থে, সেটা তো পিছিয়ে পড়া, মধ্যযুগীয় গেরাইমা, অনাধুনিক এসব দিয়ে বলতে শুনেছি। পাঠক ভাইবোন বুদ্ধি দিয়া বাচান, আমার মাথায় আর কুলায় না। আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম।
এছাড়া কোন জাতি কী নিজে নিজেরে অজ্ঞ বলে আমি দেখিনি, জানা নাই। তবে কোন বাংলাদেশী বা বাঙালী এইভাবে কোন ড্রাফট লিখতে পারে আমি বিশ্বাস করি না।

আরও আছে আপাতত এটুকু উদাহরণে আনলাম, বলার চেষ্টা করলাম ড্রাফট কর্তার ব্যাপারে কেন আমার মনে সন্দেহ হয়েছে। পরের পর্বে দেখা হবে।
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×