somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আধুনিক গবেষনায় দেশের সায়েন্স ও টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় গুলির দীর্ঘ ব্যর্থতা।মূল কারনটা কোথায়?যোগ্যতা-প্রতিভার অভাব না অন্যকিছু? কিস্তি-২

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৭:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিস্তি-১

ছোট একটা গল্প বলি। আইনস্টাইন তখন খ্যাতির শীর্ষে। প্রায়ই দেশে-বিদেশে যেতে হয়। থিওরি অব রিলেটিভিটি হাতেগোনা কয় ডজন বিজ্ঞানি ছাড়া কারো মাথায় ঢোকেনা। তারপরেও উনাকে একপলক দেখতে, বক্তৃতা শুনতে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই বেচাইন। বিশ্ব জুড়ে আইনস্টাইন ক্রেজ। এমনি এক সভায় সংবাদিক প্রশ্ন করলেন, আপনার মতো স্বনামধন্য বিজ্ঞানীর গবেষনাগার বা ল্যাবরেটরী সম্পর্কে আমরা দুটো কথা শুনতে চাই। উত্তরে তিনি বললেন, আমার গবেষনাগারে গুরুত্বপূর্ন দুটি যন্ত্র আছে। এ দুটি আমার নিত্য সঙ্গী। সভায় পিনপতন নীরবতা… । একটি হচ্ছে আমার এই কলম, আরেকটি হচ্ছে এই কাগজ । এরপর নিজের মাথায় টোকা দিয়ে বলেছিলেন, আর এইটি হচ্ছে আমার সেই ল্যাবরেটরী যেটা আমি সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়াই। গল্পের মোজেযাটা পরে বলি, তার আগে সংক্ষেপে একটু পেছনে ফিরে দেখি।

দেশে এখন পর্যন্ত সর্বমোট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩১ । অনেকগুলি ৫০ থেকে ৯০ বৎসরের পুরনো আবার অনেকগুলির যাত্রা সবেমাত্র শুরু। ১৯২১ সালে অনেক প্রতিকূলতা ও ষড়যন্ত্র অতিক্রম করে শুরু হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা। ১৯৫৩ তে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৬১ এ ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৬৬ তে চিটাগাং, ১৯৭০ এ জাহাঙ্গিরনগর এরপর একে একে বাকিগুলি।বর্তমানের মূলধারার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের পত্তনটা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় নাম নিয়ে শুরু হয়নি। যেমন ১৯৪৮ তে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হিসাবে বুয়েট আর ১৯৬৪ তে রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হিসাবে রুয়েট এর যাত্রা শুরু। কেন্দ্রে অবস্থানের কারনে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে কিংবা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় কোনটি একটু আগে, আবার কোনটি বেশ দেরিতে ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ট কমিশনের তালিকাভুক্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে নুতন নাম ধারণ করেছে । তবে যাইহোক, আর্কিটেকচারাল বিউটি, স্থানের প্রাচূর্য, অবকাঠামো, আবাসিক সুবিধা,পাঠ্যক্রম, কিংবা অরগানোগ্রাম কোনো দিক দিয়েই এই সব প্রাচীন প্রতিষ্ঠানগুলি বিশ্বের সমসায়িক অন্যসকল প্রতিষ্ঠানের থেকে পিছিয়ে ছিলোনা।

বেসিক সায়েন্স অর্থাৎ ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি কিংবা জীববিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলি আমাদের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বরাবরই পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ছিল ও আছে।একটা কথা বলার লোভ সামলাতে পারছিনা। জানামতে সেই পঞ্চাশ,ষাট এমনকি সত্তর এর দশকেও মেধাবী ছাত্রদের একটা বিরাট অংশের স্বপ্ন থাকতো ফিজিক্স পড়ার। লক্ষ্য একটাই, ভবিষ্যতে নাসাতে(NASA)গবেষক হিসাবে কাজে যোগদান করা। নাসাতে সত্যই তখন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এদেশীয় গবেষক কর্মরত ছিলেন। উল্লেখ্য যে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর আব্দুস সালামেরও সম্পৃক্ততা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স বিভাগের সঙ্গে। আর সত্যন্দ্রনাথ বোস এর নাম কে না জানে। যে নামটি জড়িয়ে আছে স্বয়ং আইন্সটাইনের সঙ্গে, বোস-আইন্সটাইন থিওরী নামে। ১৯২১ সালে তিনি যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

একটু ফিরে যাই প্রকৌশল শিক্ষায়।ষাট এর দশক থেকে এইচ,এস,সি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের প্রকৌশল শিক্ষার জন্য মূলতঃ যে চারটি প্রতিষ্ঠানে ভর্ত্তি হতে হয় সেই বুয়েট, রুয়েট, চুয়েট ও কুয়েট এর যাত্রা যথাক্রমে ৪৮,৬৪,৬৮ এবং ৬৯ তে । প্রতিষ্ঠানগুলি প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল যথাক্রমে দেশের মধ্য, উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিন অংশের সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসাবে ভূমিকা রাখবে। মানে স্বস্ব অঞ্চলের ভারী শিল্পকারখানার বিকাশ, তার জন্য প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি সরবরাহ, তদ্‌সংক্রান্ত গবেষণা ও দিক্‌নির্দেশনা প্রদান করে তারা চালকের ভূমিকা পালন করবে।

কেন সেই লক্ষ্য অর্জিত হয়নি সেই প্রশ্নটা আপাততঃ শিকেয় তুলে রাখি, নয়তো কোন মূর্খ -‘কোথায় আদমজী, প্লাটিনাম-জুবলী? কোথায় সেই কর্নফুলি আর দর্শণা চিনিকল?’ বলে উলটো প্রশ্ন করে বসতে পারে। খুব বাজে প্রশ্ন এটি। তারচেয়ে বরং দেখি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি শত বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে এখনও আধুনিক গবেষনায় অবদান রাখার মতো অবস্থায় আছে কিনা। যেটা আমাদের এই আলোচনার বিষয়বস্তু।

ল্যাবরেটরীগুলি কি প্রকৌশলী-বিজ্ঞানী তৈরীর জন্য যথেষ্ঠ?

অনেক প্রকার অভাব অভিযোগের পরেও বলবো যে হ্যাঁ যথেষ্ঠ। আসলে নিজের দেশ সম্পর্কে এক ধরনের হীনমন্যতাবোধ আমাদের ভেতরে এমনভাবে প্রবেশ করানো হয়েছে যে আমাদের যেটুকু ভাল সেটাও মেরুদন্ড শক্ত করে বলার মতো নৈতিক সাহস আমরা হারিয়ে ফেলেছি। বলা তো অনেক দুরের কথা, মর্মটুকু বুঝার মানসিক শক্তি আর সময়টা আমাদের কোথায়? আমাদের ধারনা বিদেশের ল্যাবগুলি শুধু জেমসবন্ড-০০৭ মার্কা আধুনিক যন্ত্রপাতিতে ঠাসা। সেখানের ছাত্রগুলি এই সকল যন্ত্রপাতি নিয়ে করে নিত্য নাড়াচাড়া, আর বানায় আয়রনম্যান মার্কা হলিউড মুভির আদলে সব তাকলাগানো কলকব্জা। আসলে কি তাই?

ছিলিমে টান না দিয়ে কিংবা সস্তা কোন আবেগের ধার না ধরেও বলা যায়- এটম ভাঙ্গার মত জটিল সব প্রযুক্তি আমাদের না থাকলেও পাঠ্যবিষয়ের বেসিকটা হৃদয়ঙ্গম করার জন্য ল্যাবগুলি যথেষ্ঠই বলা চলে। ল্যাবগুলি শুধু শিক্ষার্থির শিক্ষার কাজেই নয়, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বিভিন্ন কারিগরী টেস্টিং এর প্রয়োজনে হামেশাই ব্যাবহৃত হচ্ছে বহু পূর্ব থেকেই। শুধু প্রয়োজন আন্তরিকতা ও সতর্কতার সংগে এর সর্বত্তম ব্যবহার আর সঠিক রক্ষনাবেক্ষণ।

যাবতীয় গবেষনার জন্যই যে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দামের জটিল সব যন্ত্রপাতি অপরিহার্য, এই চিন্তাটা থেকেও বের হয়ে আসা খুব জরুরী। ফেলে দেয়া চা-চামচের উলটো দিকটাও যে স্ক্রু ড্রাইভারের বিকল্প হতে পারে সেটা আবিষ্কারের জন্যে নিজের মতো করে ভাববার স্পর্ধা দরকার প্রথমে। আর দরকার চিন্তার শক্তিমত্তা। ওই যে উপরের অংশে বললাম, গবেষনার যন্ত্র যাঁর সাকুল্যে দুটি, একটা কলম আর একটা কাগজ, সেরকম। বর্তমানে আধুনিক গবেষনার একটা বিশাল অংশ শুধু এই দুটি মূল যন্ত্রকে ব্যবহার করেই উত্তরোত্তর এগিয়ে চলছে। উন্নত বিশ্ব বলতে আমরা যাদের বুঝি, মানে সেই সাদাদের দেশ, সেখানেও গবেষককের টেবিলে দেখা যায় হার্বাটশিল্ডের একটা সি++ বই, আইনস্টাইনের সেই অঙ্ক কষার খাতাকলম আর একটা লিনাক্স টারমিনাল। ব্যাস। এই তিনটা বস্তুকে সম্বল করেই তারা জগতকে উপহার দিয়ে চলছেন আগামীদিনের প্রযুক্তি, নিত্য নুতন চিন্তা ।

চলবে-


সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১০ দুপুর ২:৩২
২৮টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×