পত্রিকাতে লেখালিখি করেন ।খাবার টেবিলেই কথা হচ্ছিলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কারিগরী শিক্ষার মান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে। সবার মত তিনিও হতাশ। হতাশা আমারও আছে ,তবে ধরনটা ঠিক আর সকলের মতো নয় সমস্যাটা এখানেই। আমার মূর্খতায় রাগান্বিত হয়ে বলেই ফেললেন যে দেশের শিক্ষার মান যদি এতই ভাল, তবে আজ পর্যন্ত তো শোনা গেলোনা দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবিষ্কৃত টেকনোলজি বা সফটওয়্যার সারা বিশ্বকে এই দেশ সর্ম্পকে নতুন করে মুল্যায়ন করতে বাধ্য করেছে বা বর্তমানে করছে ইত্যাদি ইত্যাদি ।
খুব ঢালাও একটা অভিযোগ । হরহামেশাই শোনা যায় বিভিন্ন জায়গায়, ভিন্ন ভিন্ন তরিকায়। মুখবন্ধের জন্য চরম দাওয়াই না হলেও একটা পর্যায় পর্যন্ত আমার মত দূর্বল প্রতিপক্ষকে কনফিউজড্ করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ।যাহোক, মেহ্মানকে জ্ঞান বিতরণ আমার দেশের কালচারে কোনদিনও শোভনীয় ছিলোনা, আজও নাই ।সুতরাং মাছের মাথাটা উনার প্লেটে তুলে দিয়ে মূল্যবান বক্তব্য শোনায় মন দিলাম ।
এরপরে অনেকদিন থেকেই সেই প্রশ্নে আলোচনার ইচ্ছা পোষন করে আসছি ।আজ প্রথম কিস্তিটা লিখে ফেললাম।কয়েকটি পর্বে এটা শেষ করার ইচ্ছা আছে।কারন মূলতঃ দুটি ।প্রথমত সময়ের অভাব আর দ্বিতীয়ত খুব লম্বা পোষ্ট পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটায়। তবে সকলের সুচিন্তিত মতামত পেলে মনে হয় আলোচনাটা ফলপ্রসূ হয়ে উঠতে পারে।আর সেই সঙ্গে সকলের সুচিন্তিত মতামতে আমারও অজানা অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলবে বলে আশা করি।
বিষয়বস্তু কারিগরী ও নিউটনিয়ান সায়েন্স এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যায়। পরে সময় সুযোগ মতো অন্য পাঠ্য বিষয়সমূহ ঢুকে পড়তে পারে, তবে এখন আপাতত না। আরেকটি কথা, কোন বিষয়ই সমসাময়িক ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বাইরে নয়, আলোচ্য বিষয়বস্তুতো নয়ই। তারপরেও উদ্দেশ্য থাকবে তৃতীয় বিশ্বের প্রচলিত দলীয় অস্থিরতার (রাজনৈতিক বলা হয়তো ভুল হবে) বাইরে গিয়ে আর কোন কোন মূল বিষয় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলিকে উল্লিখিত বিশ্বমানের আবিষ্কার বা মৌলিক চিন্তা থেকে দূরে ঠেলে রাখছে সেটা অনুধাবনের প্রচেষ্টা। প্রথমে এই চেষ্টার অংশ হিসাবে কিছু বিমূর্ত ধারণাকে আমাদের দৈনন্দিন ধরা-ছোঁয়ার মাঝে বোঝার কসরত করা যাক সংক্ষেপে ।
শিক্ষার মানটা কি?
যে শিক্ষার মান নিয়ে আমাদের প্রতিদিনের আক্ষেপ, সেই শিক্ষার মান টা আসলে কি? ঠিক কি কি বিষয়ের সমাহারে একটা শিক্ষাব্যবস্থা কুলীন হয়ে উঠতে পারে? এই একটি প্রশ্নেই কুতর্কের খাতা খুলে বসা যায়। তবে কুতর্কের খোয়ায়েশ যদি না থাকে তবে এদেশের পরিপ্রক্ষিতে ধরে নেয়া যায় যে একটা যুগপোযোগী সিলেবাশ, খুব অত্যাধুনিক না হলেও বেসিকটা হৃদয়ংগম করার উপোযোগী প্রয়োজণীয় সংখ্যক ল্যাবরেটরী ও অবকাঠামো আর এক ঝাঁক সত্যকার অর্থে সেই বিষয়ে উচ্চশিক্ষিত ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক এর প্রধান উপাদান।
বুঝলাম।তবে উচ্চশিক্ষিত শিক্ষক কারা?
যাদের আন্তর্জাতিক জার্নাল বা কম করে হলেও কনফারেন্স প্রসিডিং গুলিতে প্রধান অথর (কোঅথর নয়)হিসাবে বছরে একটি বা দুইটি প্রকাশনা প্রকাশিত হবে।হবে মানে হতে থাকবে। এক দশক বা এক যুগ পূর্বে কোন এক শুভলগনে পিএইচডির সময় দেশে বা দেশের বাইরে তাঁরা কি তাজমহল টা গড়েছিলেন সেটার পূণঃপুণঃ প্রকাশ বড়ই বিরক্তিদায়ক, এতে বর্তমানে শিক্ষার সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘদিনের বিচ্ছিন্নতা ও দৈনতাই প্রমাণ করবে।আপটুডেট গবেষনার সংগে জড়িত থাকলে খই ভাজার মতো গুরুত্বপূর্ন কর্মকান্ডের সময় না পাবারই কথা।এতে শিক্ষার্থীই উপকৃত হবে প্রত্যক্ষভাবে।
এ নিয়ে বক্তব্য দীর্ঘ না করি। এইতো গেল মূল বিষয়। উচ্চশিক্ষার জন্য আলোচিত উপাদান গুলি ছাড়া আরকি কিছুই লাগেনা?লাগে।নিঃসন্দেহে লাগে।কিন্তু আপাতত সেগুলি ইমপ্লায়েড বা অনুচ্চারিত মৌলিক প্রয়োজনের ঘরেই রাখলাম । বাঁচতে গেলে যে পানি আর বাতাসের প্রয়োজন সেই রকম অনুচ্চারিত কিছু সত্য। বারেবারে উল্লেখ করলে বেকুব মনে হয়, আলোচনা তার মূল গন্তব্য থেকে বিচ্যুত হয় ।
চলবে-
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৬