১.
গত কয়েকদিন ধরে রুবেলের মাথায় একটা বাজে চিন্তা ঘুরঘুর করছে।
চিন্তাটা খুব আহামরি কিছু না। একজনকে খুন করার চিন্তা। খুন করবে ওর বৌকে। না, ওর বৌ ওর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। ও-ই করবে তার সাথে।
সহজ, সরল, নিষ্পাপ লক্ষী বৌ ওর। নাম সাবিনা। এরকম বৌ ভাগ্যে জোটায় নিয়মিত শোকরানা নামাজ পড়া খুব বাড়াবাড়ি কিছু হবে না।
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই চা, গোসল সারতেই নাস্তা, অফিসে যাওয়ার কাপড়, ওয়ালেট, রুমাল সব হাতের কাছে গোছানো। যাওয়ার সময় টিফিন বক্স রেডি। যত রাতেই ফেরা হোক হাসি মুখের অভ্যর্থনা, সন্ধার নাস্তা, মজাদার রাতের খাবার। ঘুমানোর আগে মাথা টিপে দেওয়া। সবচে বড় কথা হল কোন অভাব অভিযোগ, ঘ্যান ঘ্যান প্যান প্যান কিচ্ছু নেই। মাঝে মাঝে রুবেল নিজ উদ্যোগে যদি কিছু এনে দেয়, তা যত ছোটই হোক, সাবিনারর চেহারা দেখে মনে হয় যেন কোহিনূর এনে দেওয়া হয়েছে।
ওষুধের দোকানে সেলসম্যানগিরি করা রুবেলের স্বল্প বেতনেও তাই সব কিছুই ঠিকঠাক মতই চলছে। কিন্তু সুখে থাকলেই যে ভূতে কিলায়। লোভ নামক সেই ভূতের ছলনায় ভুলে খাটাশ রুবেলের মাথায় এখন চিন্তা বৌকে মেরে তার ভিতরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে দেয়া। তারপর সেই টাকায় নিজেই একটা ওষুধের দোকান দেবে।
অবশ্য লোভ রুবেলকে ধরবেই বা না কেন?
দরিদ্র পরিবারে জন্ম ওর। বাবা ছিলেন রিকশাচালক। বস্তিতেই জন্ম আর বেড়ে ওঠা। ফলে বখে যেতে সময় লাগেনি। কিন্তু ওর বাবার স্বপ্ন ছিল একমাত্র ছেলেকে বড় কিছু বানানোর। তাই তার কড়া শাসনে কিভাবে যেন ইণ্টার পাশ করে ফেলেছিল ও। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর আর পড়াশোনার পথ মাড়ায়নি। নানান ধান্দাবাজি করে বেড়াত। মায়ের মৃত্যুশয্যায় কথা দিয়েছিল যে ভালো হয়ে যাবে। তাই আপাতত একটা ওষুধের দোকানে থিতু হয়েছে।
এলাকার সবচে বড় দোকান। ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে। খাটুনিও অনেক। রুবেলের মনে তাই পুরোনো ধান্দাবাজি ফিরে আসতে সময় লাগেনি। তাছাড়া মা ও মারা গেছে অনেকদিন হল। তাকে দেওয়া কথার মূল্যও আর নেই ওর কাছে। তাই হাতের কাছেই যখন টাকা কামানোর একটা সহজ ধান্দা খুজে পেল, রুবেল আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।
২.
রুবেল যে দোকানে কাজ করে তা একটা সরকারি হাসপাতালের পাশেই। আশে পাশে আরো কয়েকটা দোকান আছে। দোকানের এক পাশেই হাসপাতালের মর্গ। নিয়মিত সেখান থেকে লাশ বেরোয়। মর্গের পিছনে নদী। রুবেলের সিগারেট খাওয়ার প্রিয় জায়গা। ওষুধের দোকানেতো আর সিগারেট খাওয়া যায় না।
সেদিন ছিল ওর নাইট ডিউটি। সিগারেটের তেষ্টা পাওয়ায় দোকানের ভীড় একটু কমার পর চলে গেল নদীর তীরে। শেষ করতেই ছোট টয়লেট চাপল। হাসপাতালের টয়লেটই ব্যবহার করা হয় কিন্তু অতদূর যাওয়ার ইচ্ছা হল না। তাই নদীর ধারেই বসে পড়ল। কাজ সেরে ফিরতেই দেখে মর্গের দরজা খোলা। এত রাতে কখনোই এই দরজা খোলা থাকে না। হঠাত একটা লোক ইতিউতি তাকিয়ে চোরের মত বেরিয়ে গেল। থাকতে না পেরে এগিয়ে গেল রুবেল।
ভিতরে একটা রুমে আলো জ্বলছে। একজন লোক একটা লাশের উপর ঝুকে কি যেন করছে। সামনে এগুতে গিয়েই দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেল ওর। কেউ মাথার পিছনে বাড়ি মেরেছে।
জ্ঞান ফিরতে নিজেকে মেঝেতেই আবিষ্কার করে রুবেল। মাথার ভিতরটা মনে হচ্ছে ফাকা। গায়েও শক্তি নাই। সেই লোকটা এখনো কাজ করছে। সাথে এখন আরেকটা লোক। চেনা চেনা লাগল ওর। মাথা তুলে দেখতে যেতেই ব্যথায় উফফ করে উঠল।
লোকদুটো ঘুরে তাকাল। একজনকে চেনা গেল, কাসেম চাচা। মর্গেই কাজ করে। পাশের লোকটা অপরিচিত। তার হাতে লাশটার হার্ট। মাত্রই বুক কেটে বের করা। তা দেখে রুবেলের হার্টটাও লাফ দিয়ে গলার কাছে চলে এলো।
হার্টটাকে একটা আইস ব্যাগে রেখে লোকটা এগিয়ে এল ওর দিকে।
‘ঐ লোকটা মরা, কিন্তু আমি চাইলে জ্যান্ত মানুষের বুক কেটেও হার্ট বের করতে পারি। তেমন কিছু করতে হবে নাকি?’ বলে লোকটা।
রুবেলের মুখ দিয়ে কথা সরে না।
‘যা দেখেছ ভুলে যাও। তোমাকে মেরে নদীতে ভাসিয়ে দিলে কেউ টের পাবে না। আর যদি মাথায় অন্য চিন্তা থাকে যে, পুলিশ টুলিশ ডাকবে সেটাও বাদ দিতে পারো। কিছুই প্রমাণ করতে পারবে না।’
কিছু না বলে ঢোক গেলে রুবেল। হাতের স্কালপেলটা ওর গলায় ঠেকায় লোকটা।
‘ভুলতে পারবে তো? নাকি ব্রেনে একটা ছোটখাট অপারেশন করে দেব ভোলার জন্য?’
বলে নিজেই হাসতে লাগল।
তারপর আবার এগিয়ে গেল লাশের কাছে। তারপর রুবেলর সামনেই আরো কি কি কেটেকুটে বের করে নিল।
সে রাতে কিভাবে যে ও বাড়ি ফিরেছিল তা মনে নেই। সকালেই জ্বর এল। তিনদিন ছিল সে জ্বর। সাবিনা রাত দিন খেটে সেবা করেছে। মূলত সে কারণেই এত দ্রুত জ্বরটা কাটে।
দোকানে ফিরতেই কাসেম চাচা এসে জোর করে ধরে নিয়ে গেল চা খাওয়াতে। লোকটাকে দেখেই ওর গা কেমন শিরশির করে উঠল। কিন্তু এড়িয়ে যেতে চাইলেও পারলো না।
চা খাওয়ার ফাকে কাসেম চাচা ইনিয়ে বিনিয়ে যা বলল, তার সারাংশ হল যে, এই কাজে তার কোনো হাত নাই। সবই কণ্ট্রোল করে ঐদিন দেখা লোকটা। এই হাসপাতালেরই ডাক্তার। কাসেম চাচার কাজ হল বেওয়ারিশ বা আত্মীয় স্বজন খুব গরীব এমন কোন লাশ যদি পাওয়া যায়, যেগুলো সরিয়ে তার থেকে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কেটে রাখলে কেউ কিছু মনে করবে না, তার খবর ঐ ডাক্তারকে পৌছে দেওয়া। তার বিনিময়ে সামান্য কিছু কাসেম চাচা পান।
শুনে তার প্রতি বিতৃষ্ণা আরো বাড়ল। কাসেম চাচাও সেটা টের পেয়ে যুক্তি দিলেন যে মানুষ মরে গেলেতো পচেই যাবে। তার দেহ দিয়ে সে কি করবে আর। এরচে অঙ্গগুলো কেটে রাখলে আরেকজন মানুষ ও বাঁচবে। সেই সাথে উনার মত গরিবের কিছুটা উপকার হয়।
এই যুক্তিটা খানিকটা রুবেলের মনে ধরল। হালকা কিছু কথা বার্তা বলে জেনে নিলো সবকিছু ঠিকমত বের করে বিক্রি করতে পারলে একটা লাশ থেকে ১০ লাখের মত টাকা ইনকাম করা সম্ভব। শুনে চোখ কপালে উঠল ওর। মাত্র তিন চার লাখ টাকা হলেই ও চমৎকার একটা দোকান দিতে পারে। বিরস মুখে চাচাকে বিদায় দিলেও, কথাটা মাথায় ঘুরতেই লাগল। ইশ! একটা মরা লাশ জোগাড় করতে পারলেই বাজিমাত। ওর নিজের একটা দোকান হবে।
কিন্তু লাশ পায় কোথায়? আর পেলেও কাটবে কে? বেচবেই বা কাকে? বার বার একথাই মাথায় ঘুরতে থাকলো। সেদিনতো গেলই, পরের কয়েকদিনও ভাবনাটা গেল না। আবার খুজে বের করল চাচাকে। এই সেই বলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এসব কথাই জিজ্ঞেস করতে লাগল বারবার। কথায় কথায় জেনে গেল ডাক্তার ব্যাটা অনেক কম টাকা দেয়। কাসেম চাচা ওকে দেখে দেখে সব শিখে ফেলেছে। তাছাড়া পার্টির সাথেও উনার যোগাযোগ আছে। তার ইচ্ছা একটা যুতসই লাশ পেলে নিজেই একটা দাও মারবেন। কথাটা শুনতেই রুবেলের মনের ভিতর লুকানো লোভ খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার জন্যে ছটফট করতে লাগলো। সেটাকে সামলে কৌশলে ও জেনে নিল কেউ যদি একটা লাশ জোগাড় করে দেয় তাহলে তিনি তাকে ভাগের অর্ধেক টাকা পর্যন্ত দিতে রাজী।
এটা শোনার পর থেকেই রুবেলের মাথায় একটাই চিন্তা লাশ। মাঝে মাঝেই হাসপাতালে গিয়ে খোজে বেওয়ারিশ লাশ পাওয়া যায় কিনা। অবস্থা খারাপ আত্মীয় স্বজন দেখলেই খোজ নেওয়ার চেষ্টা করে কেউ লাশটা দিতে রাজী হবে কিনা। কিন্তু কাউকেই পায় না।
লাশের ব্যবস্থা যে নিজেকেই করতে হবে সেটা বুঝে গেল রুবেল। কিন্তু কাকে মারবে? মেরে হাসপাতালে নেওয়া যাবে না। হাসপাতালেই মারতে হবে। সেটা তো অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু মাথা থেকে ভাবনা যায় না। এর মাঝেই একদিন চিন্তাটা মাথায় এলো। আরে সাবিনাইতো আছে। দুনিয়াতে ওর রুবেল বাদে কেউ নাই। ওর মতই এতিম। মামার বাসায় মানুষ। সেই মামাও মরে গেছে। মরার আগে মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতেই রুবেল ওকে বিয়ে করে। ওকে কৌশলে কিছু করতে পারলে দুনিয়ার কেউ কিছু টের পাবে না। তারপর থেকেই এই চিন্তা সাবিনাকে খুন করবে।
লোভের ঝলকে অন্ধ রুবেল ভাবলও না যে মরীচিকার পিছনে ছুটে সোনার ডিম পাড়া হাসের গলা-ই কাটতে চলেছে ও।
৩.
সাবিনাকে কিভাবে মারাবে ঠিক করতে পেরেছে রুবেল।
খুবই প্রাচীন উপায়ে ধীরে ধীরে আমি সাবিনাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে ও। উপায়টা হল আর্সেনিক। গত কয়েকদিন রুবেল বিষ নিয়ে বেশ পড়াশোনা করেছে। তাতে মনে হয়েছে আর্সেনিকই ওর কাজের জন্যে সবচে উপযুক্ত। জীবনে এই প্রথম পড়াশোনা করাটা কাজের জিনিস মনে হয়েছে ওর। জোর করে পড়ানোর জন্যে মনে মনে মরা বাপকে হাজার ধন্যবাদ দিল তাই। দোকানের প্যাডে মালিকের সই নকল করে সহজেই একটা কেমিক্যালের দোকান থেকে আর্সেনিক কিনে এনেছে। সাবিনাকে প্রথম ডোজ খাইয়েও দিয়েছে।
ও যদি সাবিনাকে এটা হাতে তুলে দিয়ে বলত তুমি খাও, সাবিনা বিনা বাক্যব্যায়ে খেয়ে নিত। তাও একটু চালাকি করল। সাবিনার জন্যে এক বয়াম হরলিক্স কিনে এনেছে। ওটা পেয়ে বাচ্চাদের মত খুশি সাবিনা। বলা মাত্রই দুই মগ বানিয়ে নিয়ে আসলো। বিস্কুট আনার ছুতোয় রান্নাঘরে পাঠিয়ে দ্রুত খানিক আর্সেনিক গুলে দিল সাবিনার মগে। খুব তৃপ্তি সহকারে সাবিনা হরলিক্স খেয়ে নিল। তা দেখে সাবিনার চেয়ে রুবেল তৃপ্তি পেল আরো বেশি।
মাসখানেকের মাঝেই সাবিনার ক্রমাগত পাতলা পায়খানা শুরু হয়ে গেল। তখন কলেরার মৌসুম। ডাক্তার ভেবেছে সেরকমই কিছু। শুধু রুবেলই জানে যে এটা আর্সেনিকের ফলাফল। হাসপাতালেও সাবিনাকে আর্সেনিক দেওয়া বন্ধ হল না। ফলে ডাক্তারদের সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হতে লাগল।
এদিকে রুবেল কাসেম চাচার সাথে কথা বলে এসেছে যে অচিরেই একটা লাশ জোগাড় করে দিতে পারবে। লাশটা যে ওর বৌয়ের সেটা বলেনি। কাসেম চাচাও পার্টির সাথে কথা বলে সব ফাইনাল করে ফেলেছেন। লাশ দেখে এক লাখ দেবে ওরা। পরে সব বিক্রি করার পর আরো পাচ লাখ। আধাআধি ভাগ হবে কাসেম চাচা আর ওর মধ্যে। উনার উপর খুব খুশি রুবেল। ভালো লোক। কথা দিয়ে কথা রাখছেন। এমনকি পার্টির সাথে কথা বলার সময় রুবেলকে সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন। এখন শুধু সাবিনা মরার অপেক্ষা।
এক সপ্তাহের মাথাতেই সাবিনা মারা গেল।
মাঝরাতে। যাকে বলে একেবারে পারফেক্ট টাইমিং। ডিউটি ডাক্তার ঘুম ঘুম চোখে ডেথ সার্টিফিকেট লিখে বললেন চাইলেই ডেডবডি বাড়ি নিয়ে যেতে পারবে রুবেল। কাসেম চাচাকে ফোন দিল রুবেল। উনি জানালেন সব রেডিই আছে, এক্ষুনি আসছেন। উনি আসলে ধরাধরি করে লাশটাকে মর্গে নিয়ে গেল ওরা।
মর্গে রুবেলকে রেখে কাসেম চাচা কি কি আনতে যেন বাইরে গেলেন। রুবেলের অবস্থা তখন বর্ণনাতীত । উত্তেজনার চরম সীমায় ও। এপাশ ওপাশ করতে করতে টাকা দিয়ে কি করবে তা ই শুধু ঘুরছে মাথায়। তাছাড়া আরো একটা নতুন চিন্তা মাথায় এসেছে। ভাবছে আজ কাসেম চাচাকে দেখে সব শিখে রাখবে ও। এরপর থেকে নিজেই লাশ জোগাড় করে নিজেই বিক্রি করবে। পার্টির সাথে পরিচয়তো এখন আছেই। ভাবনার গভীরে থাকায় টের পেল না কাসেম চাচা কখন ওর পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন। তারপর প্রথমদিনের মত আবারো মাথার পিছনে বাড়ি দিয়ে রুবেলকে ধরাশায়ী করলেন।
লোভের ফাঁদে রুবেল একা পড়েনি। কাসেম চাচাও পড়েছেন। বহু আগেই। যুতসই মওকা পেয়েছেন আজ। রুবেল একটা লাশ জোগাড় করেছে। আর উনি এখন রুবেলকে লাশ বানাবেন। সিরিঞ্জে ওষুধ আছে। পুশ করলেই রুবেলের হার্ট বন্ধ হয়ে যাবে ভিতরের কোন অঙ্গের ক্ষতি করা ছাড়াই। দুটো লাশে বারো লাখ। চওড়া হাসি ফোটে কাসেম চাচার মুখে।
৪.
রুবেলের জ্ঞান ফিরলো হাতে সূচ ফোটার যন্ত্রনায়। ও পড়ে আছে সাবিনার লাশের ট্রলির পায়ের কাছে। কাসেম চাচা উবু হয়ে ওর হাতে কি একটা ইনজেকশন দিচ্ছেন। ইনজেকশনে যে ভালো কিছু নেই তা কাসেম চাচার মুখ দেখেই বুঝে গেল ও। ওর যে জ্ঞান ফিরেছে কাসেম চাচা তা এখনো টের পায়নি। শক্ত কিছুর আশায় আশে পাশে তাকায় রুবেল। হাতের কাছেই একটা স্কালপেল পড়ে আছে। জ্ঞান হারানোর সময় ধাক্কা লেগে পড়েছে। বা হাতেই সেটা তুলে সোজা কাসেম চাচার উরুসন্ধি বরাবর চালিয়ে দেয় ও। জান্তব একটা আওয়াজ ছেড়ে পিছিয়ে যান উনি। চোখে তীব্র অবিশ্বাস।
সিরিঞ্জটা টেনে খোলে রুবেল। পুরো ওষুধটুকু ঢোকেনি এখনো। চোখে তীব্র জিঘাংসা নিয়ে কাসেম চাচার দিকে এগোয় ও। কি একটা বলতে চান চাচা। তার আগেই গলাটা দুই ফাক করে দেয় রুবেল।
লাথি দিয়ে কাসেম চাচার লাশটাকে দূরে ঠেলে দেয় রুবেল। এখানে আর থাকা যাবে না। সাবিনার লাশটাকে বাসায় নিয়ে যেতে হবে। কোরবানীর সময় বহুবার গরু কেটে কলিজা, নাড়ি ভুঁড়ি বের করেছে। সাবিনারটাও পারবে। বের করে পার্টিকে দিতে পারলেই হবে। কাসেম চাচা দিল নাকি ও দিল সেটা পার্টির বিষয় না।
বেরুতেই সি এন জি পেয়ে গেল। রাতের আধারে ওর গায়ে লাগা রক্ত দেখা যাচ্ছে না। আর হাসপাতাল থেকে এত রাতে লাশ বের হয়, তাই সিন এন জি ওয়ালাও অন্য কিছু চিন্তা করল না।
রুবেলদের বাসার গলিটা খুব সরু। সি এন জি ঢুকল না। লাশটা তাই ওকে কোলে করেই নিয়ে আসতে হল। সি এন জি ওয়ালা সাহায্য করতে চেয়েছিল, স্বাভাবিক কারনেই রুবেল নেয়নি।
গলিটা ছোট, সাবিনার ওজনও অনেক কম কিন্তু এইটুক আসতেই রুবেল ঘেমে নেয়ে একাকার। সি এন জি থেকেই অবশ্য খারাপ লাগা শুরু হয়েছিল। সাবিনার লাশটা বিছানায় রাখতে না রাখতেই সারা দুনিয়াটা দুলতে লাগলো ওর। খুব বমি বমি লাগছে।
কাসেম চাচার সিরিঞ্জটাতে যা ছিল তা কাজ করা শুরু করেছে, বুঝল ও। কিন্তু ততক্ষনে আর কিছুই করার নেই। এক ঘণ্টায় দ্বিতীয়বারের মত ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’ প্রবাদটি প্রমাণ করে সাবিনার লাশের ওপরেই আছড়ে পড়ল রুবেল।
পরদিন পত্রিকায় রিপোর্ট বেরুলঃ
কঠিন প্রেমঃ স্ত্রীর মৃত্যু শোক সহ্য না করতে
পেরে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেলেন স্বামী।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৪ দুপুর ১:০২