somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নভূক

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।
নীলু জীবনে কতবার লিফটে চড়েছে তা আঙ্গুল দিয়ে গোনা যাবে।
ভয়ানক ক্লাস্ট্রোফোবিয়া আছে তার। একেবারে বমি টমি করে অস্থির হয়ে যায়। সারাজীবন তাই যতটা সম্ভব লিফট এড়িয়ে চলেছে।
কিন্তু আজ মনে হচ্ছে পারা যাবে না। ৩০ তলার উপরে উঠতে হবে। মেণ্টাল প্রিপারেশন ছিল যে হেটেই উঠবে, যত সময়ই লাগুক। কিন্তু হতচ্ছাড়া জ্যাম। আধাঘণ্টা আগে বেরিয়েও তাই এখন দেরি হওয়ার শঙ্কায় পড়ে গেছে ও।
নীলু এসেছে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে। চাকরিটা তার খুবই দরকার। নাহলে এতগুলো সিঁড়ি ঠেঙ্গাতে আসত না। আর চাকরি হলে অফিস এখানে করতে হবে না। এটা হেড অফিস। সেজন্যেই আসা।
বাস থেকে নেমে প্রায় দৌড়ে নীলু যখন বিল্ডিঙটায় ঢুকল তখন অলরেডি ১০ মিনিট দেরি হয়ে গেছে। আর উপায় নেই লিফটে উঠতেই হবে, যা আছে কপালে।
অনেকগুলো মানুষ ঢুকল একসাথে লিফটে। দরজা বন্ধ হতেই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল। এতোগুলো লোকের সামনে বমি হলে ব্যাপারটা কেমন বিচ্ছিরি হবে! নীলু আর ভাবতে পারে না। নাক মুখ কুচকে আল্লার নাম নিতে থাকে। একটাই দোয়া এতোগুলো লোকের সামনে যেন বেইজ্জতি না হয়।
দোয়ায় কাজ হয় না। মাথা ঘুরতেই থাকে, সেই সাথে দেখা দেয় ঘাম। নীলু মনযোগ লিফট থেকে অন্যদিকে সরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ঘুরে ফিরে লিফটেই ফিরে আসে ভাবনা। আর লিফটটাও যেন খুব ধীরে ধীরে চলছে।
আচ্ছা শেষ কবে লিফটে চড়েছিল? ঠিক মনে করতে পারে না। দশ বছরতো হবেই। ভার্সিটিতে থাকতে সম্ভবত। আরে সেবারেইতো প্রথম অনন্যর সাথে দেখা হয়েছিল।
পরীক্ষা ছিল সেদিন। নীলুর সীট পড়েছে সাততলায়। পরীক্ষা থাকায় কি মনে করে লিফটে উঠে পড়ে। উঠেই বোঝে ভুল হয়ে গেছে। চারতলা পেরুতেই পৃথিবীটা দুলে উঠল, কিন্তু পড়ে যাওয়ার আগেই কেউ একজন ধরে ফেলল ওকে। আর নীলু অকৃতজ্ঞের মত বমি করে ভাসিয়ে দিল তাকে। ছেলেটা ওকে ছেড়েতো দিলই না বরং মাথা চেপে ধরে আরো সহজে বমি করতে দিল। শেষে সাততলায় পৌঁছে ছেলেটাই দৌড়াদৌড়ি করে নীলুকে ধুইয়ে মুছিয়ে পরীক্ষার হলে দিয়ে এল। নিজের গায়ের নোংরার কথা তার খেয়াল ই নেই।
এই হল অনন্য।
এরপর নীলু আর কখনো লিফটে চড়েনি। ভাবতে ভাবতেই পেটটা মোচড় দেয়। আর পারবে না, লিফট থামলেই নেমে যাবে ও। কয়তলায় আসলো দেখার চেষ্টা করে। মাত্র দশতলা। ১২তলায় লিফট থামে। এগুতে যায় নীলু, কিন্তু মাথাটা বনবন করে ঘুরে ওঠে। কোনমতে দেয়াল ধরে সামলায়। জায়গা ছেড়ে নড়তে গেলেই বমি হবে বুঝতে পারে। দেয়ালের সাথে মাথা ঠেকিয়ে দাড়িয়ে থাকে জোর করে।
অনন্যর কথা ভাবা যাক। তাতে যদি সময়টা কাটে।
সেদিন সব কিছু এত দ্রুত হয়ে গিয়েছিল যে মুখের ধন্যবাদটুকুও দেওয়া হয়নি অনন্যকে। পরীক্ষার ব্যস্ততায় আর খোজ ও নেওয়া হয়নি। পরীক্ষার শেষে ওকে খুজে বের করল নীলু। একই ইয়ারে পড়ে ওরা। সাবজেক্ট আলাদা।
জামা নষ্ট করার জরিমানা স্বরূপ সদ্য কেনা ফতুয়াটা ধরিয়ে দিয়ে ধন্যবাদ জানায়। সেই থেকেই বন্ধু দুজন।
আস্তে আস্তে আড্ডা, গল্প, ঘোরা, অবসর সব কিছুতেই জড়িয়ে যায় অনন্য। অবশ্য ও খুব চুপচাপ ছেলে ছিল। মুখের চেয়ে ওর চোখ কথা বলত বেশি। ওর সাথে থাকতে থাকতে নীলুও শিখে ফেলেছিল ওর চোখের ভাষা। বন্ধুদের তুমুল আড্ডায় ওরা দুজন চোখে চোখে আলাদা করে কথা বলত। কেউ টেরও পেত না।
সেটাই কাল হল নীলুর জন্য। আস্তে আস্তে চোখের মায়ায় জড়িয়ে গেল। মনে চাইল সারা জীবন এই মানুষটার চোখের দিকে তাকিয়ে পার করে দিতে। মানুষটা যে নীলুর অস্তিত্বের অংশ হয়ে গেছে কখন, তা ও নিজেও জানে না।
কিন্তু অনন্য? সে কি চায়?
অনন্যর চোখের দিকে তাকিয়ে সারাক্ষণ বুঝতে চাইত নীলু, ঐ চোখে তার ছায়া দেখা যায় কিনা। নীলুর চোখে যে স্বপ্ন, সে স্বপ্ন কি অনন্যর চোখেও দেখা যায়? অস্থিরতায় কাটে ওর দিনগুলো। অনন্যর চোখ যেন তালপুকুর। ডুব দিয়ে তল পায় না।
শেষমেশ থাকতে না পেরে বলেই দেয়, ‘অনন্য, তোর চোখের তারায় আমাকে জায়গা দিবি?’
না বুঝেই দুষ্টুমি করে অনন্য, ‘দিতে পারি, তবে ভাড়া দিতে হবে।’
‘কত দিতে হবে?’ অনন্য বোঝেনি দেখে খানিকটা মিইয়ে যায় নীলুর গলা।
‘প্রতিদিন ১০টা ক্লোজআপ মার্কা হাসি দিবি, সাথে আমার হাতের দুটো কানমলা খাবি।’
জবাব শুনে একটা শুকনো হাসি দেয় নীলু। মনকে স্বান্তনা দেয়, আজ বোঝেনিতো কি হয়েছে, আরেকদিন ঠিকই বুঝবে।
কিন্তু সেই আরেকদিন আর আসেনা। এদিকে ওদের পড়াশোনা শেষ পর্যায়ে। নীলুকে যখন বাসায় দেখতে এলো তখন আর ও থাকতে পারলো না। অনন্যকে ডেকে বলল, ‘আমাকে দেখতে এসেছিল। ওদের বোধহয় পছন্দ হয়েছে। আমাকে বিয়ে দিয়ে দেবে।’
খুশি হয় অনন্য, ‘সত্যি, ইশ! আঙ্কেলকে বিয়ের ডেটটা তাড়াতাড়ি ফেলতে বলিসতো। অনেকদিন বিয়ের দাওয়াত খাওয়া হয় না।’ বলে পেটে হাত বুলায় ও।
নীলুকে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে অবশ্য উৎসাহে ভাটা পড়ে ওর, ‘কিরে কি হল? বর পছন্দ হয়নি? মাথায় টাক নাকি?’
‘না, কিছু না’ নীলুর গলা আর্দ্র।
‘কিরে কি হয়েছে। বল আমাকে। তোর পছন্দ হয়নি ছেলে? সেরকম হলে বল, বিয়ে ভাঙ্গার ব্যবস্থা করি।’
‘সেরকম কিছু না।’
‘তো? তোকে দেখে মনে হচ্ছে কিছু বলবি।’
‘আমাকে বিয়ে কর অনন্য, আমি তোকে ভালবাসি।’ বলতে চাইল নীলু, কিন্তু মুখ দিয়ে বের হল, ‘তুই কবে বিয়ে করবি রে?’
‘আমি? আমার বিয়ের দেরি আছে। অনেক টাকা কামাতে হবে আমাকে। বাড়ি গাড়ি করার আগে বিয়ে করব না।’
‘আমাকে বিয়ে কর অনন্য, বাড়ি গাড়ি কিছুই লাগবে না। শুধু তুই হলেই চলবে।’ বলেই ফ্যালে শেষমেশ নীলু।
নীলুর আকুলতাকে উপেক্ষা করেই আশপাশ কাপিয়ে হেসে ওঠে অনন্য। ‘পাগল হয়েছিস তুই? তোকে বিয়ে করব?’
কান্না লুকাতে মুখটা নিচু হয়ে যায় নীলুর। ‘কেন, আমি কি খুব খারাপ?’
‘আরে না, তোকেতো আমি কখনোই ঐ দৃষ্টিতে দেখিনি।’
‘এখন থেকে দ্যাখ। তোকে অনেক ভালবাসব দেখিস।’
‘ভালবাসা দিয়ে আমি কি করব? আমি চাই টাকা কামাতে। আর তুই হচ্ছিস আবেগের খনি। এসব ফালতু আবেগে পা দিলে আজীবন ছাপোষা ই থেকে যেতে হবে আমাকে। প্রেম করতে চাইলে কি এতদিন বসে থাকতাম নাকি?’
‘প্লীজ অনন্য, একটু বুঝতে চেষ্টা কর। তোর টাকা কামানোতে আমিও সাহায্য করব। দুজনে মিলে সব করব। দেখিস আরো সহজ হবে সব কিছু।’
‘কিভাবে সাহায্য করবি? তোরতো টার্গেট সুগৃহিণী হওয়া। টাকা কামানো না। যৌতুক দিবি? তোর বাপের কি টাকা আছে? সেইতো ছাপোষা একজন।’
অনন্যর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে নীলু। এই অনন্যকে ও চেনে না। এই কি সেই অনন্য যে নিজের কথা ভুলে নীলুকে সাহায্য করেছিল। এই অনন্যই কি এতটা দিন নীলুর সব স্বপ্নগুলোকে রাঙ্গিয়ে রেখেছিল? এই অনন্যর চোখের দিকে নীলু আর তাকাতে পারে না।
অনন্যও অর এই দৃষ্টি দেখে থমকে যায়। নিজের ভুলটা ধরতে পারে, হাত ধরে বোঝাতে চায় নীলুকে, ‘আরে শোননা, আমার প্রতিষ্ঠিত হতে তো অনেক দেরি। তোর বাবা নিশ্চয়ই প্রতিষ্ঠিত কারো সাথেই তোর বিয়ে দেবে......’
উথলে ওঠা কান্নাটাকে হাত চাপা দিয়ে ছুটে যায় নীলু। অনন্য ওর পিছনে দৌড়ে গেলেও ধরতে পারে না ওকে।
তারপরেই ভার্সিটিতে অনিয়মিত হয়ে যায় নীলু। অনন্য ওকে অনেকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু সব কিছুর জবাবে নিরুত্তরই থেকে গেছে ও। কিছুদিন পরেই বিয়ে হয়ে যায় ওর। এরপর ফাইনাল পরীক্ষার সময়ে ছাড়া আর ভার্সিটিতে যাওয়া হয়নি, সাবজেক্ট আলাদা হওয়ায় অনন্যর সাথেও আর দেখা হয়নি।
অনন্যর স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে সম্ভবত। সব না জানলেও অনন্য যে দেশের সবচে তরুন আর সম্ভাবনাময় উঠতি শিল্পপতি, এই খবরটুকু জানে নীলু। আর ও নিজে? ভাবতেই লিফটটা থেমে যায়। একুশ তলা। শেষ লোকটাও নেমে গেল বোধহয়। নীলু চেষ্টা করে এগুতে। কিন্তু পারে না। তারপর ও দাতে দাত চেপে এগোয় ও। কিন্তু দরজা পর্যন্ত যাওয়ার আগেই লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। লিফটে কি আর কেউ নেই নাকি? ও একা? তাহলে নিশ্চিত আজ মারা পড়বে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে যায় কেউ আছে কিনা। কিন্তু তার আগেই দুনিয়াটা ঝাপসা হয়ে আসে, জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ার আগেই শক্ত দুটো হাত তাকে জড়িয়ে নেয়। ঝাপসা দৃষ্টির আড়ালেও লোকটার চোখ দুটো তার খুব চেনা মনে হয়।

২।
না, নীলুর চোখ ভুল দ্যাখেনি। ওটা অনন্যরই চোখ। ওর কোম্পানিতেই ইণ্টারভিউ দিতে এসেছে নীলু। এই মুহুর্তে অনন্যর অফিসেই বসে আছে ও। সামনেই অনন্য। সেক্রেটারিয়েট টেবিলের অপর প্রান্তে না বসে নীলুর মুখোমুখিই বসেছে ও। চোখে কৌতুক। প্রাথমিক কুশল বিনিময় শেষে রুমে এখন অস্বস্তিকর নীরবতা। কত কথাই মনে আসছে কিন্তু কেউ কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারছে না।
অনন্যই মুখ খোলে, ‘তোর হঠাত চাকরি করার শখ হল যে? আমিতো জানতাম গৃহিণী হওয়াই তোর জীবনের লক্ষ্য!’
‘জীবনের লক্ষ্যে পৌছাতে পারে কজন?’
‘হেয়ালি রাখ। জরুরি না হলে তুই এই ত্রিশ তলা বাইতে আসতি না আমি জানি।’
‘জরুরিই বটে, বাচতে হবে না?’
‘মানে? তোর হাজব্যাণ্ডের কি হল?’
‘হাজব্যাণ্ড থাকলে কি চাকরি করা মানা?’
‘উহু, যেচে চাকরি করার মেয়ে তুই না। কি হয়েছে বল?’
চুপ থেকে এড়িয়ে যেতে চায় প্রশ্নটা। কিন্তু অনন্য আরো চেপে ধরে।
‘ওর একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়েছিল। মারা গেছে।’
‘মাই গড। কিভাবে?’
‘আমাদের বাসার কন্সট্রাকশন করতে গিয়ে। ইটে বেধে দোতলার ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছিল।’
‘সো স্যাড! তাইতো বলি আমার ঘরপাগল বান্ধবি বাইরে কেন? বাচ্চা-কাচ্চা হয়েছিল?’
‘একটা ছেলে আছে আমার।’
‘সো সুইট। শোন তোকে এই ইণ্টারভিউ দিতে হবে না। এরচে ভালো পোষ্টের চাকরি আমি দেবো।’
মাথা নাড়ে নীলু, ‘না রে! আমি তোর এখানে চাকরি করব না।’
‘কেন? চাকরিতো তোর দরকার।’
‘দরকার জোগাড় করে নেব।’
‘আরে কি দরকার। এখানে আমিতো ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সব সুযোগ সুবিধা পাবি। সবচে বড় কথা আবার আমরা একসাথে থাকতে পারব।’
‘এই কারণেই চাকরিটা চাচ্ছি না আমি?’
‘মানে? তুই এখনো আমার উপর রাগ করে আছিস? সেতো সেই দশ বছর আগের কথা।’
‘আরে ওসব কিছু না।’
‘তাহলে?’
‘কিছু না। আমার কথা বাদ দে। তোর কথা বল। বিয়ে করিসনি?’
‘নাহ’
‘কেন?’
‘তোর মত কাউকে পাইনি বলে।’
‘ফাজলামি না। কাহিনী কি?’
‘কাহিনী কিছু না। সময় পাইনি তাই।’
‘কবে হবে সময়?’
‘এইতো আর কিছুদিনের মধ্যেই।’
‘কর তাড়াতাড়ি। অনেকদিন কোন বিয়ের দাওয়াত খাই না।’
ঠোট বাকিয়ে শুকনো হাসি হাসে অনন্য। কিছু বলে না। আবারো নীরবতা নামে ঘরে। নীলু উঠে দাড়ায়
‘যাই রে, তোকে দেখে অনেক ভালো লাগল। তোরতো ইণ্টারভিউ নিতে হবে। যা।’
অনন্য নিরুত্তর, নীলু দরজার কাছে পৌছতে ওর কথা ফোটে
‘নীলু...’
‘হুম?’ ঘুরে দাড়ায় ও। অনন্য ওর মুখোমুখি গিয়ে দাড়ায়।
‘একদিন তুই আমার চোখে জায়গা চেয়েছিলি। সেদিন বুঝিনি। তখন মনে হয়েছিল এসব ঠুনকো আবেগ। ব্যবসার কাজে কত জমি লীজ নিলাম-দিলাম। আজ মনে হচ্ছে আসল জায়গাটাই কাউকে লীজ দেওয়া হল না। আমি জানি অনেক দেরি হয়ে গেছে কিন্তু এ সুযোগ আমি ছাড়তে চাই না। ..............................তুই আমার চোখের তারা হবি?’
শুনে নিষ্প্রাণ একটা হাসি দেয় নীলু। হাত বাড়িয়ে অনন্যর কপালের চুল ঠিক করে দেয়।
‘তুই আগের মতই আছিস। কিন্তু না রে। এটা আর সম্ভব না।’
‘কেন না?’ নীলুর দুই বাহু আঁকড়ে ধরে অনন্য। ‘তুইতো আমাকে নিয়েই স্বপ্ন দেখেছিলি। আজ সুযোগ পেয়েও তা পূরণ করবি না?’
‘উহু। স্বপ্নটাকে ভালবেসেছিলাম বলেই তোর সাথে থকা আর সম্ভব না।’
‘এসব হাই থটের কথা রাখ। আমি এসব বুঝিনা। আমি স্বীকার করছি আমি ভুল করেছিলাম। কিন্তু আমি আরেকটা সুযোগ কি পেতে পারি না?’
চুপ হয়ে যায় নীলু। কি বলবে ভেবে পায় না।
‘কথা বলিস না কেন? আমিতো তোকে জোর করে কারো কাছ থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছি না। ভাগ্যের ফেরে তুই আবার একা। তো আমাকে গ্রহণ করতে সমস্যা কোথায়?’
‘অনন্য, আমাদের দোতলা বাড়িটার জানালায় গ্রিল নাই জানিস। ওর অ্যাকসিডেন্টের খরচ মেটাতে গিয়ে বাড়িটা কমপ্লিট করা যায়নি। প্রতি রাতে বাবুকে ঘুম পাড়িয়ে নিজে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত আমি খোলা জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকি। আর জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি। একটা সুন্দর সাজানো সংসারের স্বপ্ন। বলতে লজ্জা নেই, সেই স্বপ্নের তুইই থাকিস। বাবুর বাবাকে আমি ভালোবাসার চেষ্টা করেছি। কিন্তু লোকটাকে ঠিকমত চেনার আগেই টুপ করে মরে গেলো। তাই তার জায়গায় আবার তুই চলে এলি। তোকে নিয়ে আমি কত্ত জায়গায় ঘুরি, মজা করি, তোর চোখে চোখ রেখে আমার নির্ঘুম রাত পার করি। কিন্তু তোকে আমি আর চাই না।’
‘কেন? তোর ছেলের জন্য? তোর ছেলের বাবা আমি হব। ওর আসল বাবারচে কম যাব না আমি, প্রমিজ। প্লীজ তুই একবার ভেবে দ্যাখ।’
‘ভাবাভাবির সময় অনেক আগেই চলে গেছে অনন্য। তোর আমার পথ এখন আলাদা।’
‘প্লীজ নীলু। তোর সব স্বপ্ন আমি পূরণ করব। তুই যেখানে যেতে চাস নিয়ে যাব। যা চাস তা ই এনে দেব। স্বপ্নে আমাকে রাখতে পারলে বাস্তবে কেন পারবি না?’
‘না রে পাগল। তা হবে কেন? আমার ভয় অন্য জায়গায়।’
‘কোনো ভয় নেই নীলু। এবার তুই যা চাস তা-ই হবে। কিন্তু ভুল শোধরানোর সুযোগটা তুই আমায় দে।’
দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীলু। ‘প্রথমবার যখন তোকে আমি হারালাম, তখন খুব কষ্ট হয়েছিল জানিস? সারাদিন শুধু তোকেই ভাবতাম। খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে কিছুরই ঠিক ছিল না। ভেবেছিলাম মরেই যাব। কিন্তু কিভাবে যেন বেচে গেলাম। নিজেই খুব অবাক হয়েছিলাম কিভাবে বেচে আছি ভেবে। আসলে কি জানিস, আমার পূরণ না হওয়া স্বপ্নটাই আমাকে বাচিয়ে রেখেছিল। তোকে পাওয়ার স্বপ্নভঙ্গ আমার ভিতর হাজারো স্বপ্নের, হাজারো আশার জন্ম দিয়েছিল। কোনো একদিন তোকে পাব, এই আশাটাই আমাকে বাচিয়ে রেখেছিল। কিন্তু আজ যখন তুই আমার সামনে, আমি আমার স্বপ্ন পূরণের দ্বার প্রান্তে, তখন আমি খুব ভয় পাচ্ছি। ভয় পাচ্ছি তুই যদি আমার প্রতিদিন দেখা স্বপ্নের মত না হোস, তাহলে যে আবারো আমি খুব কষ্ট পাবো রে। এখন তুই নেই কিন্তু তোকে ঘিরে আমার সুখস্বপ্ন গুলো বেচে আছে। তোকে পাওয়ার পর যদি স্বপ্নগুলো না মেলে? তাহলেতো আমার বেচে থাকার কিছু থাকবে না। একবার হারিয়ে আবার নতুন করে পেয়েছি তোকে। আরেকবার যে হারাতে পারবো না।’
‘তাহলে অন্তত চাকরিটা নে। সরাসরি না পারি, তোর দুর্দিনে এইটুকতো করি।’
‘না। তোর কাছে থাকলে তোকে পাওয়ার লোভ আমি সামলাতে পারব না।’
‘এটা পুরো পাগলামি। এর কোনো মানে নেই।’
‘তুইতো একটা পাগল। আর পাগলের সাথেতো পাগলামিই করতে হয়।’
‘পাগল আমি না তুই।’
‘কে জানে। পাগল বলেই হয়তো বেচে আছি।’
‘বুঝতে চেষ্টা কর নীলু। তোর আমার প্রথম দেখার কথা মনে আছে? সেবারো লিফটে। আবারো আমরা একইভাবে দেখা পেলাম। ভাগ্যই হয়তো চায় আমরা আবার নতুন করে শুরু করি।’
‘না।’ বেশ জোরালো শোনায় নীলুর গলা। ‘নিজেকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে একবার ঠকেছি। আর না। ভালো থাকিস। ভাগ্যের ফেরেই হয়তো আবার কোনোদিন দেখা হয়ে যাবে।’
বিমূঢ় অনন্যকে রেখে ছুটে যায় নীলু।
আট বছর আগের অনন্য নীলুর পিছনে দৌড়েছিল কিন্তু ফেরায়নি, কারণ তখন প্রয়োজন মনে হয়নি। আজ নীলুকে ফেরানো খুব প্রয়োজন। কিন্তু আজকের অনন্য একজন পরাজিত সৈনিকের মতই ক্লান্ত, আজ আর তার পাদুটো সরে না।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×