আজ এমন কিছু হাদীস নিয়ে আলোচনা করব যেগুলো বিশ্বাস করলে উম্মুল মুমীনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা) সম্পর্কে অত্যন্ত খারাপ ধারণা সৃষ্টি হয়। আর এই হাদীসগুলো বিশ্বাস না করলে বলতে হয় সহিহ বুখারী/মুসলিম মোটেই সহিহ গ্রন্থ নয়, জাল হাদীস এখানেও অনেক আছে। যাই হোক, প্রথমে কিছু তথ্য দিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক।
হযরত আবু হুদায়ফা ছিলেন আল্লাহর রাসূলের (সা) সাহাবী যিনি বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি আজাদ হওয়া গোলাম সালিম কে পালক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। আবু হুদায়ফা স্ত্রী সাহালা ও পালক পুত্র সালিমকে নিয়ে এক কক্ষ বিশিষ্ট একটি ঘরে বাস করতেন। এবার নিচের আশ্চর্যজনক হাদীসটি দেখা যাকঃ
আবু সালামা তনয়া জয়নব কর্তৃক বর্ণিত, '' আমি আল্লাহর রাসূল (সা) এর বিবি উম্মে সালামাকে আয়েশার প্রতি বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর কসম, আমি এমন কোন যুবক ছেলের দৃষ্টিগোচর হতে চাইনা যে দুগ্ধপোষ্য বয়স পার করে ফেলেছে, তখন তিনি (আয়েশা) বললেনঃ তা কেন? সুহেইল এর কণ্যা সাহালা আল্লাহর রাসূলের (সা) কাছে এসে বলেছিলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সা), আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি সালিম যখন (ঘরে) প্রবেশ করে তখন আমি আবু হুদায়ফার মুখে (অসন্তোষ এর মনোভাব) দেখি, তখন রাসূল (সা) বললেনঃ তাকে স্তন চোষাও (Suckle him)। তিনি (সাহালা বিন্তে সুহেইল) বললেনঃ তার দাঁড়ি আছে। কিন্তু তিনি আবার বললেনঃ তাকে স্তন চোষাও, এটা আবু হুদায়ফার মুখ থেকে যা আছে (অসন্তোষ এর মনোভাব) তা দূর করবে। তিনি (সাহালা) বললেনঃ (আমি এটা করেছিলাম) এবং আল্লাহর কসম, আমি আবু হুদায়ফার মুখে (অসন্তোষ এর মনোভাব) দেখিনি।'' --- সহিহ মুসলিম, বুক ৮, হাদীস ৩৪২৮
এখানে suckle এর অনুবাদ স্তন চোষা না হয়ে স্তন্যদান হতে পারে। কিন্তু বুখারী ও মুসলিম শরীফ এর শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকারক ইমাম আসকালানী ও ইমাম নববীর কথা অনুযায়ী Suckle এর অনুবাদ দুধ চোষা হতেই হবে, অন্যথায় এটা বৈধ ফস্টারেজ হবেনা। ইমাম আসকালানী তার ইসাবা গ্রন্থে উপরের হাদীসটির ব্যাখ্যায় বলেন সাহালা বাটিতে দুধ দিয়েছিল যা সালিম বাটি থেকে পান করেছিল। যদিও এভাবে পান করলে ফস্টারেজ বৈধ হয়না তাই সম্ভবত এটা ছিল শুধুমাত্র সালিমের জন্য একটা ব্যতিক্রম।
তবে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে হযরত আয়েশা সালিমের ঘটনাকে ব্যতিক্রম হিসেবে মনে করতেন না। ইসলাম এডাল্ট সাকলিং এর বৈধতা না দিলেও হযরত আয়েশা এডাল্ট সাকলিং এর পক্ষে যুক্তি দিতেন। হযরত আয়েশা যখন সাকলিং এর এই নিয়মের কথা হযরত উম্মে সালামাকে বলেছিলেন তখন উম্মে সালামা সহ নবীর সকল বিবি এই নিয়ম প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। প্রমাণ হিসেবে চলুন নিচের হাদীসটি দেখা যাকঃ
আল্লাহর রাসূল (সা) এর বিবি উম্মে সালামা বলতেন যে আল্লাহর রাসূলের (সা) সকল বিবিগণ এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন যে কারো এই ধরনের দুধমা সম্পর্ক তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, আর আয়েশাকে বলেছিলেনঃ আল্লাহর কসম, আমরা এখানে আল্লাহর রাসূলের (সা) তরফ থেকে শুধুমাত্র সালিম এর জন্য বিষেষভাবে দেয়া (সুবিধা) ছাড়া অন্য কিছু পাচ্ছিনা, এবং কেউ এধরনের দুধমা সম্পর্ক দিয়ে (আমাদের) গৃহে প্রবেশের অনুমতি পাবেনা আর আমরা এই দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করিনা। --- সহিহ মুসলিম, বুক ৮, হাদীস ৩৪২৯
নবীর (সা) অন্যান্য বিবিগণ এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করলেও হযরত আয়েশা এটাকে বৈধ বলে মনে করার পাশাপাশি এটাও দাবী করতেন যে এডাল্ট সাকলিং এর বিষয়টি কুরআনের আয়াত হিসেবে নাজিল হয়েছিল। নিচের হাদীস দুটি দেখলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হবেঃ
আয়েশা বর্ণনা করেন যে পবিত্র কুরআনে নাজিল হয়েছিল যে দশ বারের নিখাদ স্তনচোষণ (Suckling)) একটি বিয়েকে অবৈধ করে ফেলে, পরে এটা পাঁচ বার দ্বারা বাতিল (এবং প্রতিস্থাপিত) হয় এবং আল্লাহর রাসূল (সা) মৃত্যুবরণ করেন আর তার আগে এটা কুরআনে ছিল। ---সহিহ মুসলিম, বুক ৮, হাদীস ৩৪২১
আয়েশা কর্তৃক বর্ণিত, '' পাথর নিক্ষেপ এবং একজন পূর্ণবয়ষ্ক মানুষকে দশবার স্তনচোষন (Suckling) এর আয়াত নাজিল হয়েছিল এবং সেগুলো একটা কাগজে (লিখিত) ছিল আর আমার বালিশের নিচে রাখা হয়েছিল। যখন রাসূল (সা) ইন্তেকাল করলেন আর আমরা তাঁর মৃত্যু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম তখন একটি ছাগল ঢুকে কাগজটি খেয়ে ফেলেছিল।'' --- সুনান ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৯৪৪
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সাকলিং নিয়ে হযরত আয়েশার ধারণা যে ভুল তা নিচের হাদীসটি দিয়ে প্রতীয়মান হয়ঃ
আয়েশা বর্ননা করেনঃ একদা নবী (সা) আমার নিকট আসলেন যখন একজন লোক আমার ঘরে ছিল। তিনি বললেন, ''ও আয়েশা! এটা কে?'' আমি জবাব দিলাম, ''আমার দুধভাই'' তিনি বললেন, ''ও আয়েশা! তোমার দুধভাইদের সম্পর্কে নিশ্চিত হও, যেহেতু দুধের সম্পর্ক শুধু তখনই বৈধ হয় যদি এটা দুগ্ধপোষ্য সময়ে (দুই বছর বয়স পর্যন্ত) ঘটে থাকে।'' --- সহিহ বুখারী, বুক ৪৮, হাদীস ৮১৫
এ থেকে কি বুঝা গেল না যে হযরত আয়েশা নবীর (সা) কথা বুঝতেন না? উপরের হাদীস থেকে এটা পরিষ্কার যে প্রাপ্তবয়ষ্ক কারো জন্য স্তন স্পর্শ বা চোষন করে দুধমা বানানো ইসলাম সমর্থন করেনা। ইমাম আসকালানীর সূত্রে জানলাম সালিম নিজেও স্তন স্পর্শ বা চোষন করেনাই, সে বাটিতে দুধ নিয়ে তা পান করেছিল। কিন্তু হযরত আয়েশা কেন এই সহজ কথাটা বুঝতেন না? নবী (সা) আয়েশাকে পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দেয়ার পরেও কেন তিনি এডাল্ট সাকলিং এর পক্ষে ছিলেন? তাহলে এমন অবুঝ আয়েশার বলা অন্যান্য হাদীস বিশ্বাস করাটা কতটা যুক্তিযুক্ত?নবী পরিষ্কার বুঝিয়ে দেয়ার পরেও তিনি কিভাবে এডাল্ট সাকলিং এর ধারণা বৈধ বলে মনে করতেন? আমার ব্যক্তিগত ধারণা উম্মুল মুমীনিন জীবনেও এমন কথা বলতে পারেন না। এটা তাঁর নামে মিথ্যাচার, অন্য কথায় এটা একটা জাল হাদীস।
এই হাদীসটি অনেক দুষ্ট আলেম অনেক দুষ্টামীর জন্য ব্যবহার করেছেন। সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আ'লা মওদুদী। এই ভদ্রলোক এডাল্ট সাকলিং এর কড়া সমর্থক ও প্রচারক ছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২৩