আজকে এমন এক জায়গার কথা বলবো, যেখানে কোনো দুটি ব্যক্তির মধ্যে ঝগড়া হলে, সেখানের বাকি লোকেরা তাদের ঘাড় ধরে নিয়ে গিয়ে একটা জনমানব শূন্য দ্বীপে ছেড়ে আসে। যুযুধান দুই ব্যক্তিকে সেই দ্বীপে ততক্ষণ আটকে রাখা হয় যতক্ষণ না তারা নিজেদের বিবাদ নিজেরাই মিটিয়ে নেয়।
হাসছেন? ভাবছেন এরকম আবার হয় নাকি?! হাসির কথা নয়, শেখার জিনিস; যা আজকের সবজান্তা যুগের আগের যুগের লোকেরা মানতেন। এটা কতটা কার্যকরী তা একটা পরিসংখ্যান থেকে পরিষ্কার হবে - গত ১৫০০ বছরে, ঐ অঞ্চলে বিবাদের জেরে মাত্র ১টি খুন হয়েছে! আশাকরি এবারে একটু নড়েচড়ে বসেছেন! চলুন শোনা যাক সেই দেশের গল্প।
প্রথমে একটু প্রেক্ষিতটা পড়ে নেওয়া যাক।
স্কটল্যান্ড - নামটা শুনলে প্রথমেই মনে পড়ে স্কচ হুইস্কি আর ব্রেভহার্ট (Braveheart) সিনেমার কথা। কিন্তু দেশটার আরো অনেক বৈশিষ্ট্য আছে। দেশ বলছি কারণ স্কটল্যান্ড যুক্তরাজ্যের অন্তর্গত হলেও অনেকাংশেই স্বয়ংসম্পূর্ণ (ষেমন, ওদের নিজস্ব পতাকা আছে, নিজস্ব সংসদ আছে, অনেকটা প্রধানমন্ত্রীর মতো - ফার্স্ট মিনিস্টার পদ আছে, নিজস্ব টাঁকশাল আছে ইত্যাদি।)
স্কটল্যান্ড হল বিভিন্ন মানব গোষ্ঠীর (clan) বা বংশের সমাহার। ব্রেভহার্ট বা উইলিয়াম ওয়ালেস এরকম ওয়ালেস গোষ্ঠীর সবচেয়ে খ্যাতনামা সদস্য। এই গোষ্ঠীগুলি স্কটল্যান্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে যূথবদ্ধভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বসবাস করে এসেছে। এই গোষ্ঠীগুলি পরিচালিত হয় গোষ্ঠীপতির কড়া অনুশাসনে যা যুগের নিয়মে আজ অনেকটাই শিথিল। তবু এখনো গোষ্ঠীপতিরা নিজ নিজ গোষ্ঠীর কাছে আজও ভীষণ সম্মানীয়। এই গোষ্ঠীগুলির মধ্যে রেষারেষিও হামেশাই দেখা যেত। এমনকি এও শোনা যায়, ইংল্যান্ডের কাছে সামগ্রিক পরাজয়ের কারণ হিসাবে স্কটল্যান্ড মনে করে এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
এবার, স্কটল্যান্ডের ভৌগলিক গঠনের দিকে দৃষ্টি ফেরানো যাক। প্রচুর প্রাকৃতিক হ্রদ আর খাড়া পাহাড়ের সমাবেশ দেখা যায় এই অঞ্চলে। বিখ্যাত হ্রদ লক্ নেস (এদেশে হ্রদ বা লেক কে লক্ বলে) এই দেশেই আছে। এই হ্রদে নাকি প্রকান্ড এক ভয়াবহ জীবের বাস (সে আর এক গল্প, হবে না হয় আর এক দিন।)।
আজ আমরা কথা বলবো স্কটল্যান্ডের পশ্চিম উপকূলের এক খাঁড়ির কথা, - লক্ লেভেন। যদিও ভৌগলিক গঠনে এটি একটি সামুদ্রিক খাঁড়ি, কিন্তু স্কটল্যান্ডের প্রথানুসারে এটিও হ্রদ নামে পরিচিত। এই লক লেভেনের একটি ছোট্ট দ্বীপ হল আলোচনার দ্বীপ যার স্থানীয় নাম, - Eilean a’ Chombraidh।
এই অঞ্চলটি ম্যাকডোনাল্ড গোষ্ঠীর এলাকা। এই অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকশত বছরের রীতি হল, - কোনো দুই ব্যক্তির মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হলে যুযুধান দুই পক্ষকে নৌকায় চাপিয়ে ছেড়ে দিয়ে আসা হতো ঐ দ্বীপে। সঙ্গে খাদ্য হিসাবে দেওয়া হতো কেক বা চিজ ও পর্যাপ্ত পরিমান হুইস্কি (অবশ্যই স্কচ; বলার অপেক্ষা রাখে না)। উদ্দেশ্য হল ঐ দুই ব্যক্তি ঐ দ্বীপে নির্জনে থেকে আলোচনা করে নিজেদের সমস্যা নিজেরাই মিটাবে। যখন দুইজনই ঐক্যমত্যে পৌঁছাবে, একমাত্র তখনই তারা দ্বীপে আগুন জ্বেলে সংকেত করবে। তারপর, তীর থেকে কেউ সেই আগুন দেখে নৌকা নিয়ে গিয়ে তাদের নিয়ে যাবে নিকটবর্তী চুক্তির দ্বীপে (Isle of Covenant বা Eilean na Bainne)। একেবারে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে তবে দুজনে ছাড়া পাবে।
কালের নিয়মে আজকাল আর এ সব কেউ করে না। আমার খালি দুটি প্রশ্ন, -
১) এই ভাবে সমস্যার সমাধান কি স্বামী-স্ত্রীর বিবাদের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ হত? ভাবতেই ভয় লাগছে ঐ ১০০বর্গমিটারের মত দ্বীপে কোনো কলহমান দম্পতিকে পাঠিয়ে দিলে কি অবস্থা হত!!
২) মদ তো শোনা যায় মানুষের বিচারবুদ্ধি নাশ করে। সেখানে এঁরা মদ নিয়ে বসে সমস্যার সমাধান করতেন!!?
কি বলেন আপনারা!?