(পরিচ্ছেদ ১)
(পরিচ্ছেদ ২)
প্রথম তীরটা কে ছুঁড়বে? সবারই তীরন্দাজীতে শিক্ষানবিশী মাত্র একবছর। কারো তীরই গুরুমশায়ের সামনে অনুশীলন চলাকালীন লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি। কিন্তু শিকারে এসে তো আর হাত গুটিয়ে বসে থাকা যায় না! বিশেষ করে, যেখানে সামনেই একটা সিংহ মাথা দোলাচ্ছে।
সবাই বেশ অবজ্ঞাভরে, এ-ওর দিকে তাকাতে শুরু করল। ভাবখানা এই, - "আমি তো এক তীরেই সিংহ বাবাজীকে কাবু করতে পারি। তোরা তো এখনও শিক্ষানবীশ; আগে তোরাই চেষ্টা কর। না পারলে আমি তো আছিই।" আসলে কিন্তু সবার মনেই ভয়, - "আমি কি একটা ইয়ে নাকি? আগে তীর ছুঁড়ে ফস্কালে তো সবাই মিলে দুয়ো দিয়ে পাগোল করে দেবে!! হুঁ হুঁ বাবা, অমন বান্দাই আমি নই।" কিছুক্ষণ এরকম চলার পর, মন্ত্রীপুত্র বুদ্ধি খাটিয়ে বলল, "সেনাপতিপুত্র, বাপের সুপুত্তুর, সিংহটাকে তোরই মারা উচিত।" সেনাপতিপুত্র মনে মনে ভাবল, "বাঃ ভালই তো বিপদে পড়া গেল।" মুখে বলল,"আমি ভাবছিলাম কোটালপুত্ররই এই সুযোগটা পাওয়া উচিত। হাজার হোক সিংহ শিকারের সৌভাগ্য তো আর ও রোজ রোজ পাবে না!"
পরিকল্পনাটা ভেস্তে যাচ্ছে দেখে মন্ত্রীপুত্র সাততাড়াতাড়ি এই প্রস্তাব সমর্থন করল। ফেঁসে গেল বেচারা কোটালপুত্র!!
অগত্যা, সে ধনুকে বাণ সংযোজন করল। প্রথম তীর সিংহ অবধি পৌঁছালোই না। আস্তে ছুঁড়েছিল। দ্বিতীয় তীর সিংহের মাথার বাঁদিকে অনেকটা দূর দিয়ে বেরিয়ে গেল। সিংহের মাথা নাড়ায় কোনো বিরাম নেই। সিংহটা ভ্রুক্ষেপই করছে না। তিন নম্বর তীরেরও একই অবস্থা বাঁদিক দিয়েই সাঁ করে বেরিয়ে গেল তবে আর একটু কাছ দিয়ে, এই যা। কোটালপুত্র ভেবেছিল সবাই খুব দুয়ো দেবে। কিন্তু দুয়ো দেবে কি! মন্ত্রীপুত্র আর সেনাপতিপুত্রতো ঘাবড়ে গিয়ে এতটাই ভেবলে গেছিল যে হাসতেই ভুলে গেছিল।
এতসব দেখে সেনাপতিপুত্র আর কোনো ঝুঁকি না নিয়ে বলল,"মন্ত্রীপুত্র, দেখাই যাচ্ছে আমরা যে এখনো বেঁচে আছি, মানে সিংহ যে এখনো আমাদের আক্রমণ করেনি, সে নেহাতই বরাত জোর। এবার তুমিই তীর ছোঁড়ো, যদি ফস্কায় আর যদি সিংহটা আমাদের আক্রমণ করে তাহলে তোমরা পালালেও আমি তো সেনাপতিপুত্র, আমি আমৃত্যু যুদ্ধ করব।" সেনাপতিপুত্রের এই বীরত্বপূর্ণ কথা শুনে মন্ত্রীপুত্র কিছুটা আস্বস্ত হল। সত্যিই তো কোটালপুত্রের তিন-তিনটে তীর ছোঁড়ার পরেও সিংহ যে আক্রমণ করেনি সেটাই আশ্চর্য্য!! তাই কথা না বাড়িয়ে সে শরসন্ধান করল, এবং, স্বাভাবিক ভাবেই, একটা তীরও সিংহ পর্যন্তই পৌঁছাল না।
"মন্ত্রীর গায়ে কি আর জোর থাকে, তার হল মগজাস্ত্র... হেঁ, হেঁ।", মন্ত্রীপুত্র অজুহাত দেবার একটা বৃথা চেষ্টা করল। সেনাপতিপুত্র, রাগত চক্ষে একবার মন্ত্রীপুত্রের দিকে তাকিয়ে সিংহের দিকে ধনুক তুলল। এবার তো তার পালা।
কিন্তু, অনভ্যাসের টিকা কপালে চড়চড় করে। সেনাপতিপুত্রও ব্যর্থ হল। তবে সেই ব্যর্থতার বিরক্তিতে সে একটু জোরেই হয়ত "ধুত্তোর!!!" বলে উঠেছিল। আর তাতেই রাজপুত্র ধড়মড় করে জেগে উঠল।
এখন উপায়?
(শেষ পরিচ্ছেদ)