রামদায় রেখে দিয়েছি নুনের ঘ্রাণ। ধবধবে হাতে কলমের ডগা ফেটে কালি লেপ্টে গেলে এক বিকেলের গল্প নোনতা লাগে আর পাখিভুলের পাপখাতায় লেখা হয়ে যায় অনবদ্য সন্ধ্যার ভেতর উড়তে থাকা এক ভাঙা আলোর খোলনলচে। এভাবেই কেউ কেউ রাতে ফেরে ঘরে আর গেলাসে তুলে রাখে রোদখুলি। উল্টো করে আঁকলেই সন্ধ্যাগুলো দুপুর হয়ে যায় আর করোটিতে হাতছাপ রেখে যায় বালিশছাপা ঘুম। অথচ ফসল ছিলো এবঙ কোথাও কোনো শস্যচাহিদা ছিলো না।
রোদখুলির বিবিধ পাঠের আগে আমরা উঠে পড়ি অভিলম্ব বরাবর ছুটে চলা ট্রেনে। দীর্ঘকাল আমরা কেউই ছিলাম না একা একঘরে। ভেতরে কেউ জেগে উঠে টেনে রাখে মাতালের প্রলাপ আর মধ্যবর্তী দূরত্ব পার হয়ে যেতে চায়। অথচ ভেবেছিলাম ভেতরে এখন আর কেউ নেই। আমরা এখনো কি সহসা ভুল হয়ে যাই!
কোনো কোনো ধারালো অস্ত্রে,যেমন রামদা কিংবা অন্যান্য, কোনো কোনো ধারালো রামদায় রোদ লেগে ঝিক করে উঠে আর স্থির প্রতিচ্ছবি হয়ে যায় কবিদেএ আলোকযন্ত্রে। আর অন্যদিকে পুরোনো নদীর ভেতর অজস্র মাছেরা মিছিল করে। মাছেদের সংসারে এখন ফেরারি হিসাব। পায়ে পায়ে লেখা হতে থাকে পুরোনো সব পাপখাতা। অথচ তোমার চিনিগুড়া চালের ভাতে বাষ্প জমে উঠেনি আর মাষকলাই ডালে পড়েনি রসুনের স্বাদ।
আমার ট্রেন এইসব বাষ্প কিংবা বিভ্রান্ত শব্দের ভেতর বাড়ি ফিরে গেছে সকালের সব রোদ ভেঙেচুরে , বাসের চাকায় দুমড়ে মুচড়ে গেছে বেওয়ারিশ কল্পনার নিষিদ্ধপুরাণ। নুনসমগ্র তাই তোমার আমার দীর্ঘ পরিচয়ের সমাপ্তি হয়ে যায়। দীর্ঘ উপন্যাসের সমাপ্তি, যার আর শেষ নেই। কোথাও কেউ আর লিখে রাখবে না বর্ষার হিসাব, চাদরের উত্তাপ আর কুয়াশা বৃত্তান্ত। বরঙ রঙের বাজারে আমাদের হাতের ভেতর বেড়ে উঠে নতজানু সংসারের ছবি অথবা অফসলের তীব্র যন্ত্রণা। রোদখুলির গায়ে ধারালো রামদা আঁচড় কেটে গেছে কবে কখন, জানি না।
জানি না কীভাবে হাতপাখাগুলো পাখি হয়ে গেলে ঘুমের সড়কে সমুদ্র নামে আর তোমার গহীনে স্রোত কেটে যায়। এভাবেই এখানে জমে উঠে নিস্তব্ধ দুপুরের ঘ্রাণ, করোটিতে। আর এভাবেই তুমি মিলিয়ে নিতে পারো রোদখুলিতে অজস্র রামদার হিসাব।
অথচ আমি কখনোই ভাবিনি, গোলাপও একদিন বিক্রি হবে সস্তায়, নামহীন কোনো গলি অথবা বিচ্ছিরি রাস্তায়।