somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: মানুষ যেখানে একেবারেই ফেলনা!

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
১৩৫০ একরের বিশাল সবুজ পাহাড়ী ক্যাম্পাস। আয়তনে দেশের বৃহত্তম বিদ্যাপীট। তবে অন্যান্য ছোট বড় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চবির বৈচিত্র্য অন্য যায়গায়। চিরহরিৎ- পত্রমোচী, অতিথি -দেশী, বেনথাম হুকারের শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী বিচিত্র সব উদ্ভিদে ঠাসা। আছে মেছোবাঘ, মায়া হরিণ, সজারু, ভালুক, খরগোশ, অজগর, অসংখ্য পাখি, সাপ ইত্যাদি। শেয়ালদের কথা নাইবা বললাম। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে এখানে জন্ম, বেড়ে উঠা, খাবার, বংশবৃদ্ধি করার সুব্যবস্থা থাকায় হুমকির মুখে থাকা অনেক বন্যপ্রাণির জন্যও চবি এক নিরাপদ আশ্রম।

তবে বোবা প্রাণিদের জন্য নিরাপদ আশ্রম হলেও বাকশক্তিসম্পন্ন মানুষ নামক ম্যামেলিয়া পরিবারের দ্বিপদী জন্তুটির জন্য এ ক্যাম্পাস চরম বৈরী। মনে আছে, হলে আমার জানালার পাশে প্রায়ই একজোড়া সাদা রংয়ের খরগোশ আসত। দুপুর ২ টা থেকে ৪ টা এরকম সময়ে। কুটকুট করে কচি ঘাস খেয়ে আবার পলায়ন! খালি পেলেই ডাইনিং এর চেয়ার, টেবিল, টিভি রুম, পেপার রুমে শালিক পাখির জমজমাট আড্ডা! বিস্ঠার অত্যাচার স্বত্তেও ওদেরকে কেউ কিছু বলতনা।

ফেলনা শুধু মানুষ!

আমরা ভর্তি হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরই সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ সালের কোন একদিন সা-কা চৌধুরী ছাত্রদলের প্রোগ্রামে অতিথি হয়ে আসেন। যথারীতি ছাত্রলীগ ও বামদল গুলো তা 'প্রতিহত' করতে মাঠে নামে। সন্ধ্যা নামার ঠিক আগে আগে অজ্ঞাতকারণে বিষয়টা লীগ-শিবির মারামারিতে গড়ায়। শিবির ১নং গেটের কাছে কটেজগুলোতে হামলা করে। গুলিতে মারা যায় আমিনুল ইসলাম বকুল (গণিত, ১ম বর্ষ)। ফলাফল- অনির্দিস্ট কাল বন্ধ, হলত্যাগ। ডিসেম্বরের শেষে আবার ক্যাম্পাস চালু হয়। ক্ষমতায় লীগ থাকলেও হলে তারা সেভাবে পজিশন নিতে পারেনি। তাই ফোঁসফাঁস চলছিল ভেতরে ভেতরে। এদিকে শিবিরেরও 'ছেড়ে দিব নাহি সুচাগ্র মেদিনী...' অবস্থান। এপ্রিল ১৯৯৮ র কোন এক প্রহরে শাটল ট্রেন, ট্রাক ভর্তি করে ২-৩ শ ভাড়া করা সন্ত্রাসী নিয়ে ক্যাম্পাস আক্রমন করে ছাত্রলীগ। অতর্কিত এ হামলায় কেউ মারা না গেলেও শিবির ভালো রকম মার খায়। তাদের সেক্রেটারী সহ অনেকেই মারাত্মক জখম হয়। বিতাড়িত হয় শাহজালাল ও শাহআমানত হল থেকে। পরদিন থেকেই এ ২টি হল, ১নং গেট তথা রেলস্টশন ও সংলগ্ন এলাকা এবং কটেজগুলো সহ সমগ্র দক্ষিন ক্যাম্পাস হয়ে যায় 'লীগের এলাকা।' আর সোহরাওয়ার্দী হলের পাশ্বস্থ খাল থেকে এফরহমান, আলাওল হল, ল'ফ্যাকাল্টি, রব হল, ২নং গেট তথা উত্তর ক্যাম্পাস হয়ে যায় 'শিবিরের এলাকা।' সাইন্স, আর্টস, লাইব্রেরী ও রেজিস্টার ভবন 'সবার' এলাকা। তবে এ এলাকার কর্মতৎপরতা সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ২ টা। তারপর পদার্থ বা রসায়নের 'ব্যবহারিকে'র চিপায় না পড়লে কেউ ওখানে থাকত না। এ এলাকাতেও ইন্টারেস্টিং একটা সীমানা ছিল। শিবিরের 'টহল' মূলত: রেজিস্টার বিল্ডিংয়ের সামনের মাঠ আর লীগের টহল ঝুপড়ি, চাকসু ক্যাফেটিরিয়া। শামসুন্নাহার, প্রীতিলতা হল এলাকা সংগত কারণেই ছাত্রলীগ অধ্যুষিত। ক্যাম্পাসের বাইরে ষোলশহর রেলস্টেশন এবং শাটল ট্রেনও ছিল লীগের দখলে। কিছু মাইনর চেন্জ ছাড়া ২০০১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত টানা সাড়ে ৩ বছর এ সীমানা নীতিমালা চবিতে বহাল ছিল!

১৯৯৮-২০০০। শিবির অবরোধ ডাকে। অবরোধ লংঘন করে ক্যাম্পাসের শিক্ষক বাস শহরে যাবার পথে শিবিরের বোমা বা গুলির শিকার হয়। মারা যায় অধ্যাপক নুরুন্নবীর ছেলে মুশফিক (চমেক ছাত্র)। শাহআমানত হলে নিহত হয় জনৈক বহিরাগত যুবক আইয়ুব আলী (ধারনা করা হয় সে ছাত্রলীগের হয়ে হল দখল বজায় রাখতে এখানে আসে)। ছাত্রলীগের বেপরোয়া গুলিবর্ষনে নিহত হয় শিবিরের রহিম (জুলজি) ও মাহমুদ (ইংরেজী)। এর আগে বা পরে অপহরনের পর খুন করা হয় শিবিরের জুবায়ের (অর্থনীতি)কে। ক্যাম্পাসের বাইরে বটতলী রেলস্টেশনে ছাত্রলীগ শাটল ট্রেনের বডিতে মাথা থেতঁলিয়ে শিবির সন্দেহে হত্যা করে ছাত্রইউনিয়নের সন্জয় তলাপাত্রকে (চারুকলা)। এছাড়াও চবি সংক্রান্ত ঘটনায় ছাত্রলীগের জনৈক ঠিকাদার খুন হয় নিকটস্থ মদনহাটে।

৪-বছর মেয়াদী স্নাতক কোর্স পাশ করতে করতে আমাদের চেনাজানা পরিমন্ডলে খুন হয় ৮ জন মানুষ! কি তুচ্ছ এক প্রাণি ছিলাম আমরা!! জানামতে মামলা হয়েছে অনেক। কিন্তু কোন ক্রিমিনালের ১ দিনের জেলও হয়নি। ইনফ্যাক্ট মামলাগুলো অতদুর গড়াওনি হয়তবা!

সময় থেমে থাকেনি। সতীর্থদের লাশের উপর পা মাড়িয়ে আমাদের ডিগ্রী অর্জন, চাকুরী, প্রমোশন সবই হয়েছে। ছাত্রশিবির, ছাত্রলীগ, সাদা বা হলুদ শিক্ষক, ভিসি, প্রোভিসি, প্রক্টর সবারই জীবন এগিয়ে গেছে যার যার তালে। শুধু অপেক্ষায় অপেক্ষায় সেসব মা'দের চোখ ধূসর হয়ে গিয়েছে- যার বুকের ধন এতকাল পরও স্নাতক হতে পারেনি। সেসব বাবা যারা হয়ত: আত্নভোলা মনে এখনো কৌতুহলী হন- আচ্ছা এতদিন ধরে খোকা টাকা চেয়ে পত্র পাঠায়না কেন?

বি:দ্র: গতকালও চবিতে ২জন ছাত্র নিহত হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৪১
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×