ছোটবেলাই গান শিখতাম। আমার গানের স্যার শহরে আমাদের শিখাতেন, আর গ্রামে সপ্তাহে একদিন ওই খানের ছেলে মেয়েদের শিখাতেন.। স্যার এর সাথে একজন তবলা বাদকও থাকতেন। স্যার এর এক ছাত্রী ওই তবলা বাদক এর প্রেম এ পরে, কিন্তু পরিবার মেনে না নেওয়াই সে বাড়ি থেকে কিছু দূরে পুকুরপাড়ে গাছের সাথে ওড়না পেছিয়ে সুইসাইড করে.।
আমদের গ্রাম সম্পর্কে একটু বলি.। এখনো ওই খানের বাড়ি গুলোতে কারেন্ট পৌছাই নি, রাতের বেলা শিয়ালের ঘুরা ঘুরি, ঝিঝি পোকার ডাকাডাকি, নির্জন, নিঝুম পরিবেশ.। সমস্যা শুরু হই মেয়েটা মরার পর থেকে.। রাত হলেই ওই পথে গানের শব্দ শুনা যেত.। মেয়েটা কান্না করতে করতে ওই খানে গান করত.। মাঝে মাঝে ওকে গাছের উপরে বসে থাকতে দেখা যেত.।ধীরে ধীরে ওই পথে রাতের বেলা মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যাই.।।
আমরা ছোট বেলা থেকেই শহরে থাকতাম। গ্রামে যেতাম বছরে একবার.। এই কাহিনিও আগে থেকে জানতাম না.। পরীক্ষার ছুটিতে সবাই মিলে গ্রামে গেলাম.। প্রথম ২ দিন ভালই মজা করলাম.।। তৃতীয় দিন ঘটলো আসল ঘটনা.। রাতের বেলা আমি এবং আমার এক মামা বাজার এ গেছি সিগারেট খেতে.। বাজার থেকে যখন ফিরছিলাম তখন রাত প্রায় ১১ টা, গ্রামের হিসেবে অনেক রাত.। বলে রাখি বাজারের এই পথেই সেই যেই পথটা পরে.। বাজার থেকে আমাদের বাড়ির রাস্তাটি গ্রাম্য মেঠো পথ, মাঝে একটা বিল, বিলের পরে আবার রাস্তা। বিলের পাশে একটি পুকুর.। হেটে হেটে যখন বিল পর্যন্ত আসি তখন দেখি বিলের মাঝে একটি মেয়ে হাঁটছে, সাদা কাপড় পরা, মেয়েটার লম্বা জামার কিছু অংশ মাটিতেও গড়াগড়ি খাচ্ছিল.।। আমরা মেয়েটাকে দেখছিলাম পিছন দিক থেকে.। উদাস ভঙ্গিতে হাটতে হাঁটতে মেয়েটাকে দেখলাম পুকুরের পানিতে নেমে যেতে.। কিন্তু মেয়েটি পানিতে ডুবল না.। পানির উপরেই হাঁটা শুরু করল.। হাঁটতে হাঁটতে মেয়েটা পুকুরের অন্য পাড়ে পৌছার একটু আগে হাত দুইটা উপরের দিকে তুলে কোথাই জানি মিলিয়ে গেল.।।
এই জিনিশ দেখার পরে দুই জন মিলে দিলাম দৌড়.। ভয়ে হাত, পা সব কাঁপছিল.।। পথেই আমার মামা অজ্ঞান হয়ে পরে গেলো.। আমার তখন নিজের জীবন নিয়েই টানাটানি, মামার চিন্তা পরে.। মামাকে ওই খানে ফেলে রেখেই আমি বাড়ি চলে আসলাম.। পরে গ্রামের লোকজন গিয়ে মামাকে ওই খান থেকে তুলে নিয়ে আসে.।। ৭ দিন উনি হসপিটালেই ছিলেন.। বাড়িতে এসে শুনলাম মেয়েটার কাহিনী.। ওই রাস্তা দিয়ে যেই যাই , রাতের বেলা তাকেই নাকি ভয় দেখাই.।।
ঘটনাটি আজ থেকে ১০ বছর আগের.। এখন আমি মেডিকেল এ পড়ি.। মেডিকেল এর ভাষাই এর নাম হেলুসিনেসান.। মাঝে মাঝে ভাবি, দুই জনের তো এক সাথে ভুল দেখার কথা না.।। একজনের হেলুসিনেসান হতে পারে, দুই জনের এক সাথে হেলুসিনেসান হই না.।।