somewhere in... blog

খেলা হোক দেশ নিয়ে বিদ্বেষে নয়

২১ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারত শুরু থেকেই অসাধারণ নৈপুণ্যতা দেখিয়ে ফাইনালে উঠেছিল। কিন্তু কথায় বলে সব ভালো যার শেষ ভালো; ভারতের ক্ষেত্রে বহু প্রচলিত এই প্রবাদ কাজ করেনি। ফাইনালে সব বিভাগেই অস্ট্রেলিয়া নৈপুণ্যতা দেখিয়ে শিরোপা অর্জন করেছেন।ফলে কোটি কোটি ভারতবাসী ও ভারত প্রেমীদের অন্তরে প্রতিধ্বনিত হয় কাপ না প্রাপ্তির নিদারুণ হাহাকার।

খেলা মানে হার জিত থাকবেই। জিতলে মধুর লাগে হারলে পরাজয়ের গ্লানি অন্তরে কুঠারঘাত করতে থাকে। কিন্তু কোনো বিষাদ চিরস্থায়ী নয়। একটা নির্দিষ্ট সময় পর আবার আমরা স্বাভাবিক হয়ে উঠি। কাজেই আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা আবার বৈষয়িক বিষয়ে মেতে উঠবো।শুরু হবে ব্যস্ততাময় কর্মজীবন। কিন্তু গতদুদিনে ভারতের পরাজয়ের পর বাংলাদেশের বাঙালিদের একশ্রেণীর সমর্থক যেভাবে ভার্চুয়াল জগতে উল্লাসে ফেটে পড়ে ঈদ উৎসবে মেতে উঠেছেন সেটা দেখে একজন ক্রিকেটীয় ভক্ত, সচেতন নাগরিক হিসেবে যারপরনাই ব্যথিত ও আতঙ্কিত না হয়ে পারি না। হতে পারে সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার কিন্তু আমরা অস্বীকার করতে পারিনা বাংলাদেশের সঙ্গে এপার বাংলার মানুষের একটা আত্মীক টান বিদ্যমান।ভূয়া ভাই সুদূর লন্ডনে থাকলেও ওনার সঙ্গে আমার অন্তরের টান অস্বীকার করি কেমনে? কিংবা শায়মাপুর সঙ্গে সোহানী আপুর সুন্দর সুন্দর রেসিপি দেখে একবার সামনাসামনি পরোখ করার লোভ অস্বীকার করি কেমনে? আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে দু চারটি কথা...

ফিরে যাই আবার খেলার জগতে।গত পরশু সব বিভাগেই অস্ট্রেলিয়া অসাধারণ নৈপুণ্যতা দেখিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা সকল অস্ট্রেলিয় প্রেমীদের। বাংলাদেশী অস্ট্রেলীয় প্রেমীদের সরাসরি শুভেচ্ছা জানানোর সুযোগ থাকায় তাদের জানাই স্পেশাল হার্দিক শুভেচ্ছা।
কিন্তু একটা বিষয়ে অবাক হলাম ভার্চুয়াল জগতে বাংলাদেশের একশ্রেণীর বাঙালিদের প্রবল ভারত বিদ্বেষমূলক মনোভাব ভয়ানক পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমার কাছে সাপোর্ট যে কেউ তার পছন্দের দেশকে করতেই পারেন। আশা করি এটা নিয়ে কেউ দ্বিমত হবেন না। কাজেই সাপোর্টার হওয়া সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। এখন কথা হলো, বাংলাদেশী বাঙালিদের সাপোর্ট নিলে যে ভারত চ্যাম্পিয়ন হতো আর না পেলে যে হতো না এমনটা নয়।আর এমনটি যদি হতো তাহলে মাঠের লক্ষাধিক দর্শকের সমর্থন নিয়েই ভারত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেতো। কিন্তু বাস্তবে এই 'সমর্থন' তেমন কোনো কাজে আসে না।খেলার মাঠের মধ্যে বিশেষ করে বাইশ গজে একদল অপরকে টেক্কা দেবে খেলার বিভিন্ন দিকে- বলে, ব্যাটে ফিল্ডিংয়ে, মানসিক অদম্যমতায়, শারীরিক ভাষাতে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়ে।। এসবের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যারা এগিয়ে যাবে তারাই সাফল্য পাবে। কোনো দয়া দাক্ষিণ্যের স্থান এখানে নেই। অস্ট্রেলিয়া গতকাল দূরন্ত খেলে সব বিভাগেই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমান দিয়েছেন।যোগ্য দল হিসেবে তারা শিরোপা অর্জন করেছেন।
কিন্তু দূর্ভাগ্যের যে গত পরশু থেকে ভার্চুয়াল জগতে একের পর এক প্রবল ভারত বিদ্বেষমূলক পোস্ট ও কমেন্টগুলোকে একেবারেই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। ভয়ংকর একটা 'আমরা ওরা' বিভাজন তৈরি হয়েছে।দুটি প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের মধ্যে তাহলে কি ভয়ানক বিষ বৃক্ষ প্রবল আকার ধারণ করেছে?অর্থাৎ খেলাটা কি আর খেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই?

যদি একটু সাইডে তাকাই তাহলে চোখে পড়বে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর।দুটি দেশ নানা বিষয়ে একে অন্যের উপর নির্ভরশীল।হতে পারে সব চাওয়া পাওয়া পূর্ণ হচ্ছে না। যেমনটা হয় না আমাদের নিজস্ব ব্যক্তি জীবনের সমস্ত স্বপ্ন পূরণ। কিন্তু যা হচ্ছে সেটাও কম নয়। ছোট্ট একটি উদাহরণ দেই, কলকাতা সহ ভারতে বাংলাদেশী নাগরিকরা চিকিৎসা পরিসেবা নিতে বছরভর আসেন। অস্বীকার করার উপায় নেই যে এখানে উভয় পক্ষই উপকৃত হন না। যদিও সেখানে নানান প্রতিবন্ধকতা আছে। ব্লগিং করার সৌজন্যে ব্লগার মা. হাসান ভাইয়ের কাছ থেকে জেনেছি দুরারোগ্য ব্যাধির মতো ক্রনিক ডিজিজের ক্ষেত্রে এদেশের চিকিৎসা ওনাদের কাছে বেশ সাশ্রয়ী বটে। ভারতে সরকারী হাসপাতালেও ভারতীয়দের সঙ্গে একাসনে চিকিৎসা সুবিধা যে কোনো বিদেশি সহ বাংলাদেশীদের দেওয়া হয়। কিন্তু কম সময়ে আসায় তারা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা সেবা নিতেই পছন্দ করেন। জনপ্রিয় ব্লগার কবি প্রমানিক ভাই নিজে বা ছবি আপু দুলাভাইকে ভারতে চিকিৎসা করিয়ে উপরওয়ালার ইচ্ছায় সুস্থ হয়ে দেশে ফিরেছেন। এরকম হাজার হাজার বাঙালি ভারত থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়ে উপকৃত হচ্ছেন ।হ্যাঁ রাষ্ট্রনৈতিক বা কূটনৈতিক সম্পর্ককে বাংলাদেশের সরকারের অহেতুক ভারত নির্ভরতার জন্য জনমানসে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বা হবাটা স্বাভাবিক হতে পারে। এখানে মোদিজী যেমন আমার অপছন্দের। কিন্তু সেই অপছন্দের বিরোধিতা করার উপায়টা গনতান্ত্রিক পথেই হওয়াটা বাঞ্ছনীয়। অশালীন ব্যক্তি আক্রমণের মধ্যে নয়। বাংলাদেশী বাঙালিদের তেমন সরকারের উপর ক্ষোভ থাকতেই পারে। কিন্তু সেই দায় সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের উপর দেওয়াটা বাঞ্ছনীয় ছিল। অনুকরণ হিসেবে তারা মালদ্বীপের পথে হেঁটে মসনদে এমন কোনো সরকারকে বসাতেই পারেন যারা ভারতের মুখাপেক্ষী হবেন না।

ব্যক্তিগত ভাবে এবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের খারাপ পারফরম্যান্স আমাকে কষ্ট দিয়েছে।এর আগের বিশ্বকাপে তারা যথেষ্ট ভালো পারফরমেন্স করলেও এবার আশানুরূপ ফল করতে পারে নি।ফলে আমার মতো সেদেশের হাজার হাজার ভক্তের বাংলাদেশী ক্রিকেট দলের উপর ক্ষোভ হওয়াটা স্বাভাবিক।উল্টে কয়েকদিন আগে অধিনায়ক সাকিবকে শাসক দলের সাংসদ প্রার্থীর টিকিট কাটতে দেখে অবাক হয়েছি। রাজনীতি রাজনীতিকদের সাজে ঠিক যেমন খেলোয়াড়দের জায়গা খেলার মাঠ। সাকিব একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে রাজনীতি করার নিজস্ব অধিকার ওনার আছে ঠিকই। কিন্তু যে কাজ যার মানায়। আজকে যদি দেখি বিরাট কোহলি বা তেন্ডুলকর ক্রিকেট কোচিং বাদ দিয়ে ভাজপার প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়ান বা রাজনীতির ময়দানে অংশ নেন তাহলে ব্যক্তি হিসেবে উনি নিজের অধিকার ভোগ করলেও ক্রিকেটের পক্ষে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বিষয়টি সুখকর হবে না। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান যদি ট্রাক পরিবর্তন করেন তাতে ক্রিকেটের উন্নতির সম্ভাবনা বিনষ্ট হতে বাধ্য।

যাইহোক সবশেষে আবার বলবো, খেলা থাকুক খেলাতেই।দুই দেশের মধ্যে একটু একাত্মতা অনুভব করি; পরিহার করি হিংসা বিদ্বেষের। দুই বাংলার বাঙালিদের মধ্যে বন্ধন অটুট থাকুক। পাশাপাশি আরেকটু চেষ্টা করি ভার্চুয়াল জগতে একে অপরের প্রতি আরেকটু সৌজন্যশীল হয়ে উঠার।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৩২
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনূস বিদেশে দেশকে করছেন অপমান-অপদস্থ

লিখেছেন sabbir2cool, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৪৬


দুর্নীতির কারণে তার যাওয়ার কথা ছিল জেলে, গেছেন তিনি বঙ্গভবনে প্রধান উপদেষ্টার শপথ নিতে। এটা খোদ মুহাম্মদ ইউনূসের স্বীকারোক্তি ছিল। তার দেশশাসনের আট মাসে বিদেশে যখন গেছেন তিনি, তখন স্বীকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈদের বাড়ি

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:২৭


রোজার ঈদে মাকে খুঁজতে যাব
পাঁচ হাজার টাকা রেখে দিয়েছি-
সিঁলিকের শাড়ি কিনবে বলে;
বাবা আর বিড়ি খাওয়া দায়ে
আমাকে নাক সেছুর দিবে না
কোন কোরবানী ঈদে-কোন
পথে যাবো- কোন ঈদ আসবে!
আর অপেক্ষা করতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এখানে আর নিরাপত্তা কই!=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:১৩


কোন সে উন্নয়নের পথে হাঁটছি বলো
এই গিঞ্জি শহর কি বাসের অযোগ্য নয়?
শূন্যে ভাসমান রাস্তা-নিচে রাজপথ
তবু কি থেমে আছে যানজট কিংবা দুর্ঘটনা?

দৌঁড়ের জীবন-
টেক্কা দিতে গিয়ে ওরা কেড়ে নেয় রোজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই শহর আমার নয়

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:০২




এই শহর আমার নয়
ধুলিমলিন, পোড়া ধোঁয়ায় ঘেরা
ধূসর এক স্বপ্নহীন চেহারা।
এই শহর, আমার নয়।

ঘোলাটে চোখে জমে হাহাকার,
চেনা মুখেও অচেনার ছাপ।
পথে পথে স্বপ্নরা পোড়ে,
আলোর ছায়ায় খেলে আঁধার।

এই শহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

টিউবওয়েলটির গল্প

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৪



এটা একটি টিউবওয়েল।

২০০৯ সালে, যখন আমি নানী বাড়ি থেকে লেখাপড়া করতাম, তখন প্রতিদিন এই টিউবওয়েল দিয়েই গোসল করতাম। স্কুল শেষে ক্লান্ত, ঘামাক্ত শরীর নিয়ে যখন ঠান্ডা পানির ঝাপটায় নিজেকে স্নান... ...বাকিটুকু পড়ুন

×