রূপগন্জের ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখা এক ব্লগারের ব্লগ এবং তাতে বেশ কিছু মন্তব্য নিয়ে আমার আজকের লেখার সূত্রপাত।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে সেনাবাহিনীর জন্ম। আমাদের মধ্যে কয়জন আছে যারা মুক্তিযুদ্ধকে সামরিক দিক থেকে বিশ্লেষন করতে জানি? যদি জানতাম তাহলে বুঝতে পারতাম মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সেনাবাহিনীর ভূমিকা গেরিলাদের থেকে কত আলাদা ছিল এবং এর গুরুত্ব কেমন ছিল। যাই হোক মুক্তিযুদ্ধতো অনেক আগেই শেষ তাই এটা নিয়া আর কথা বলব না। আমার ধারনা আমাদের দেশে সেনাবাহিনী নিয়ে যত বিদ্বেষ,যত ঘৃনা পৃথিবী্র আর কোথাও এমনটি নেই। এত ঘৃনা কেন? কেনই বা এত রাগ? একটা কারণ হতে পারে, অনেকেই মনে করেন সেনাবাহিনী বসে বসে দেশের সম্পদ ধ্বংস করছে। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন দেশে যুদ্ধ নেই জন্যেই আপনারা যদি এই কথা বলে থাকেন তাহলে বলুন যুদ্ধ না হলে সেনাবাহিনীর কি দোষ? সেনাবাহিনীকে যখন যেখানে নিয়োগ করা হয়েছে তারা কি যায় নি? আপনারা কি জানেন স্বাধীনতার পরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেনাসদস্য তাদের বীরত্বের জন্য বীর উত্তম, বীর বিক্রম, বীর প্রতিক ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন? পার্বত্য এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনেককে নিজের জীবন বিষর্জন দিতে হয়েছে? আমি জানি দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ এ সব তথয় জানে না, কারন আমাদের সেনাবাহিনীর প্রচার বিমুখতা এবং আমাদের মিডিয়ার সেনাবিদ্বেষী মনোভাব। অথচ দেখুন ভারতে যখন হোটেল তাজ-এ অপারেশন পরিচালনা করতে গিয়ে একজন অফিসার প্রাণ হারালেন তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছিল।
বিডিআর বিদ্রোহের সময় সেনাবাহিনী সম্পর্কে আমাদের মানুষজনের মনোভাব বিশেষকরে মিডিয়ার মনোভাব সুস্পস্ট হয়। কোন কিছু না জেনে, সামরিক নিয়ম কানুন সম্পর্কে না জেনে একদল লোক টকশোতে বসে গিয়েছিল। বিডিআর বিদ্রোহের সময় সেনাবাহিনীকে নিজেদের আবেগ কে নিয়ন্ত্রন করতে বলা হল, সেনাবাহিনী তাই করল। কিন্তু কেউ এটাকে বড় করে দেখল না। অথচ এই বাংলাদেশেই রাস্তায় দূর্ঘটনায় কেউ আহত হলেই ব্যাপক ভাংচুর হয়। আর সেখানে উচ্চপদস্থ এত গুলো অফিসার শহীদ হওয়ার পরও শুধুমাত্র একটি নির্বাচিত সরকারের আদেশ পালন করতে গিয়ে সেনাবাহিনী কোন এ্যাকশনে যায় নি। ঐ দিন সেনাবাহিনী যদি সামরিক শাসন জারি করতে চাইতো তাহলে সেনাবাহিনীর মধ্যে মতৈক্যের কোন অভাব হত না।
আজকাল অনেকেই ১/১১ এবং তার পরবর্তি সময় নিয়ে অনেক কথা বলেন। আমার মনে হয় এখানে সেনাবাহিনী একটা ভুলই করেছিল তখনকার ঐ তত্বাবধায়ক সরকারকে সরিয়ে নতুন তত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে। কেননা আমরা তো আসলে ঐ রকম রাজনীতি-ই চাই যেখানে দলবাজি হবে, টাকা দিয়ে ভোট কেনা হবে, হরতাল হবে, অবোরোধ হবে,জ্বালাও-পোড়াও হবে, এসব না হলে তো আমাদের ভাল লাগে না। এখন তো আমরা ভালই আছি আবার জ্বালাও-পোড়াও হচ্ছে কিছুদিন পর যখন আবার হরতাল শুরু হবে তখন আমাদের আনন্দের কোন সীমা থাকবে না । একটা কথা বলি সেনাবাহিনীকে যে ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তার কোনরূপ পূর্বঅভিজ্ঞতা সেনাবাহিনীর ছিল না এবং এ ধরনের কোন প্রশিক্ষন কিন্তু সেনাবাহিনীতে দেওয়া হয় না। আর আশ্রয়ন প্রকল্প, খাবার পানি সরবরাহ, বিভিন্ন প্রাকিতিক দুর্যোগে ত্রাণ কার্যক্রমে অংশগ্রহনের কথা ভুলে গেলেও আমাদের চলবে না।
যারা সেনাকল্যান সংস্থা এবং আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট নিয়ে কথা তুলছেন তাদের বলছি.....আপনাদের কি কোন ধারনা আছে এসব টাকা কোত্থেকে আসে? বাঙালির সভাব-ই হল জানি আর না জানি নিজেকে পন্ডিত হিসেবে উপস্থাপন করা। যদি দেশের প্রচলিত নিয়মের মধ্যে থেকে কোন ফান্ড তাদের অর্থ বৃদ্ধির জন্য অন্য কোন খাতে বিনিয়োগ করে তাহলে সমস্যা কোথায়? আর বি এম টি এফ এর কথা বলছেন? আমরা মনে হয় ভুলে গেছি যে একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বি এম টি এফ কে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল, আর এখন এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। আর অনেকের-ই জানা প্রয়োজন এই লাভের টাকার এক কানাকড়িও সেনাবাহিনীর কোন সদস্যের বেতনের সাথে যোগ হয়না। আর আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট থেকে অর্জিত টাকাও কোন সেনাসদস্যকে বেতন হিসবে দেওয়া হয় না।
কেউ কেউ বাধ্যতামূলক ট্রেনিং এর কথা বলেন, ভাল, আমিও তাই চাই। আর এটা যেন বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে দুই বছরের জন্য হয়। এখন সমস্যা হচ্ছে এই একাডেমিতে এত বিপুল লোকের প্রশিক্ষন সুবিধা নেই তাই আমার প্রস্তাব হচ্ছে যারা মনে করে সেনাবাহিনীর লোকজন কিছু না করে বসে বসে খায় তাদের যেন অগ্রাধীকার ভিত্তিতে পাঠানো হয়। বেশি না,আমার ধারনা মাত্র ৭ দিন থাকলেই তারা বুঝতে পারবেন আর্মি লাইফ কত কঠিন হতে পারে।
সেনা সদস্যরা ভাল করেই জানে জনগনের টাকায় তাদের অন্যসংস্থান হয়।সেনাবাহিনীতে সরকারি সম্পদ যেভাবে রক্ষা করা হয়,দেশের আর কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানে এমন করা হয় কিনা আমার জানা নাই।
আর সবশেষে একটা কথা বলব, রূপগন্জের ঘটনা নিয়ে আগবাড়িয়ে কিছু ভাববেন না। বিডিআর এর ঘটনায়-ও কিন্তু প্রথমে না জেনে একেকজন একেক মন্তব্য করেছিলেন। এটা আমাদের-ই সেনাবাহিনী, দেশের প্রয়োজনে তারা কখনো কোথাও যেতে পিছপা হয়নি, আশাকরি ভবিষ্যতেও হবে না। আমাদের মনে রাখা উচিত দেশে যদি কখনো যুদ্ধ হয় তাহলে এই লোকগুলোই কিন্তু সবার আগে এগিয়ে যাবে, এই দেশ, দেশের জনগন তাদের সাধ্যানুযায়ী যা দিয়েছে তাই নিয়ে।