somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শৈশব গ্রাম্য

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোথাও কখনো রেল লাইন দেখলেই আমার মনে পড়ে যায় সেই যে সেই পথের প্যাচালীর অপু-দুর্গার বাছুর খোঁজার নাম করে হারিয়ে গিয়ে রেল লাইন দেখার গল্প।
.

অপু-দুর্গার মত আমারও শৈশব কালও রেললাইন খোঁজার এক করুন কেচ্ছায় অলংকৃত। তবে অপু-দুর্গার গল্পের সাথে আমার গল্পের অত মিল নেই । কিছু পার্থক্য আছে। প্রথম পার্থক্য হলো, আমার দুর্গা আমার বয়সে ছোট এবং তার নাম দুর্গা হওয়ারও কোন কারণ নাই। তার নাম রুনু।
.

রেল লাইন দেখার স্বপ্ন আমাদের টিভি দেখে। টিভির পর্দায় দেখা যায় আড়া-আড়ি বসানো গুড়ির উপর দিয়ে সমান্তরাল পাত বসানো সোজা রেল পথ, তার দুই পাশে সারি সারি গাছ। সাই সাই করে চলে যাওয়া রেল গাড়ির বাতাসে সারি সারি গাছ গুলো দুলে উঠে আর যেন আমাদেরকে ডেকে বলে “ওই তোরা কই? আমার কাছে চলে আয়, আয়না জলদি!......
.

টিভির পর্দায়, শিশু পাঠ বইয়ে অথবা আমাদের বাড়িতে আসার সময় মামার নিয়ে আসা ফলের খবরের কাগজের তৈরী প্যাকেটে যতবার রেল লাইনের ছবি দেখি, ততই আমাদের রেল লাইন দেখার স্বপ্ন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে।
.

শীতের প্রাক্কাল। মামাদের বাড়িতে বেড়াতে গেছি। এক-দুইদিন থাকার পর। সকালের রোদে আমি উঠানে বসে খেজুর রসের মুয়া খাচ্ছি। পাশে মা, নানী এবং মামীরা আছে। রুনুটা আমাদের সাথে নেই। একটু পর কোথা থেকে উদয় হয়ে সোজা এসে আমার প্রায় ঘাড়ের উপর বসার দসা। আমি কষে এক ধমক দিলাম। ধমকে তার কোন বিকার নাই। আমার পিছনে সরে বসে আমার ঘাড়ের উপর বার বার থুতনি ঠেকিয়ে ঠেকিয়ে বার বার শুধু বলছে “ভাইয়া!, ভাইয়া!!, ভাইয়া….!!!”
.

আর কোন কথা নাই। আমি আবার রেগে গিয়ে ধমক দিয়ে বললাম, ”ওই কি খালি বেইয়া বেইয়া করিস? কি বলবি বল?”
সে আর কোন কথা বলে না, চুপ। একটু পর আমার পিঠের জাপঠে পড়ে মাধার দুই পাশের দুই গোছা চুল দুই হাতে খামছে ধরে আমার চান্দির উপর থুতনিটা ঠেকিয়ে আবার বলে উঠল ”ভাইয়া”…!
এবার আর রাগ না করে আমি উহুহুহু…… শব্দ করে আমার চুল থেকে তার হাত ছাড়িয়ে নিলাম। হাত ধরে টেনে তাকে আমার পিঠের উপর তুলে জিজ্ঞাস করলাম ”কি বলবি রে?” সে তখন হাত-পা ছুড়তে ছুড়তে বলল ”এখন না, পরে বলব”
.

বড় হওয়ায় এই একটা সুববিধা বিশেষ করে পেয়েছি বোনের উপর। তার উপর রাগ করা বা তাকে ধমকানের বিষয়টাকে মুটামুটি একটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলাম। আত্নীয়-স্বজন বা পরিবার পরিজনের মধ্যে আমর কর্তৃক আমার অনুজকে ধমকাধমকির বিষয়টা নিয়ে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া ছিল না। আমি আমার ছোটবোন কে কারণে অকারণে রাগ দেখাবো, ধমকাধমকি করব এটা যেন আমার প্রকৃতি সিদ্ধ অধিকার। পরিবাবের এবং অবুঝ আমার- সকলের ধারণা ছিল এরকমই।
তবে আমার শত ধমক আর রাগ-গোস্বা হজম করেও সে ছিল সর্বদাই আমার সাথে। যত জুলুমই করি না কেন, পিছু বান্দা ছাড়বে কখনোও…
.

রোদ একটু কড়া হয়ে আসলে উঠানে বসে থাকা সবাই যখন চলে গেল রুনু তখন আমার চার পাশে হাত-পা ছুড়াছুড়ি করে লাফিয়ে লাফিয়ে দুর্বোধ্য সুরে অস্পষ্ট গানের মত কি সব যেন গাইতে লাগল। তার লাফানোর গতি যেদিকেই থাক না কেন দৃষ্টি সর্বদাই ছিল আমার উপর। তার ছটফানি থেকে আমার মনে হচ্ছিল কি যেন সে বলতে চাচ্ছে…
.

কিছুক্ষণ লাফা-লাফি করে ক্লান্ত হয়ে আমার সামনে এসে বসে শীতের জামাটা উল্টে হাফ প্যান্টের কোচায় কিছু একটা গুজে বানানো পুটুলিটা আমাকে দেখাল।
.

আমি ”কি এটা” বলে ঝাপিয়ে পড়ে পুটুলিটা খুলে দেখলাম একটা পুরানো খবরের কাগজের টুকড়া। কাগজের টুকড়াটা আমি খুলতে গেলে সে লজ্জায় না “এটা আমার! দেখিও না…… দেখিও না…………!” বলে উঠানে ছড়িয়ে রাখা খড়ের উপর শুয়ে পড়ল আর না ছুই না ছুই করে মুড়ানো কাগজের টুকড়াটার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল।
.

আমি ঝাটকা মেরে আমার হাত সরিয়ে নিয়ে মুড়ানো কাগজটি খুলে দেখি তার এক পাশে একটা ছবি, যেখানে আমাদের বয়সি দুইটা ছেলে-মেয়ে রেল লাইনের দুই পাতের উপর দিয়ে হাত ধরা ধরি করে হাটছে।
ছবিটা আমি খুলে দেখে ফেলেছি ভেবে লজ্জায় সে আর চোখই খুলছে না।
.

আমি তার পিঠের উপর হাত রেখে বললাম “এইটা কোথায় পেলি রে”
সে কিছু বলে না। শুধু খিল খিল করে হাসে।
.

আমি ছবিটার দিকে তাকিয়ে বললাম “ইস, কি সুন্দর রে! আমরাও যদি রেল লাইনে যাইতে পারতাম, তাহলে এরকম হাত ধরাধরি করে হাটতে পারতাম! কত্ত মজা হইত……….!”
আমার কথা শুনে সে লজ্জা-শরম ঝেড়ে ফেলেদিয়ে উঠে বসে পড়ে বলল “চল, আমরা একদিন রেল লাইনে গিয়ে এইভাবে হাত ধরে হাটি……….”
.

রেল লাইন কোথায় পাব এই প্রশ্ন মাথায় আমার মাথায় আসল না। আমি তাকে বললাম, “অই……….!, এই ভাবে যে হাটবি, যদি রেল এসে আমাদের উপরে উঠে যায় তাহলে ত মরে যাব!”
রুনু বলল ” এ্য… রেল ত হুইসেল বাজিয়ে বাজিয়ে আসে…টিভিতে দেখ না? হুইসেল শুনলে আমরা রাস্তা থেকে সরে যাব তাহলে আর আমরা রেলে নিচে পড়ে মরব না……….”
তার বুদ্ধিটা বেশ চমৎকার লাগলো এবং ভয়টা কেটে গেল। মনে মনে ভাবতে লাগলাম খুব দ্রুতই তাহলে যেতে হবে রেল লাইন দেখতে………..।
.

চোখের সামনে ভেসে উঠল আমরা দুই ভাই-বোন হাত ধরা ধরি করে রেল লাইনের উপর দিয়ে হাটছি…আমি মুচকি মুচকি হাসছি….রুনু হাসছে খিল খিল করে…….. শব্দ করে...আমি হাটছি আস্তে আর রুনু হাটছে লাফিয়ে লাফিয়ে...আমি রুনুকে ধমক দিয়ে বলছি….”এ্য…আস্তে হাট….পড়ে গেলে দাঁত ভাঙবে কিন্ত….সে কোন কথা শুনছে না….হাসছে আর লাফাচ্ছে….
.

এর পর সিদ্ধান্ত হলো এবার মামা বাড়ি থেকে বাড়ি ফিরে গিয়েই আমরা রেল লাইনের খোঁজে বের হব। হারিয়ে যাওয়ার ভয় আমার কিছুটা থাকলেও রুনুর তখনোও “হরিয়ে যাওয়া” বিষয়টা বোঝার বয়স হয়নি।
.

আমি হারিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটা একবার তুললেও রুনুর কাছে তা পাত্তা পায়নি এবং কল্পিত আনন্দ টুকুর কাছে হারিয়ে যাওয়ার আশংকাটা নিতান্তই তুচ্ছ লেগেছে।
সেবার বাড়ি গিয়ে একদিন সকালের খাওয়া-শেষ করে মা যখন হাড়ি-পাতিল গোছাচ্ছেন, আমারা তখন রেল লাইন দেখার অদম্য আগ্রহ নিয়ে ঘর থেকে বের হলাম।
.

আমাদের মনে তখন না আছে রেল লাইন খুজে না পাওয়ার অনিশ্চয়তা, না আছে ঘরে ফিরা পথ হারানোর আশংকা, না আছে হারিয়ে যাওয়ার ভয়….আছে শুধু হাত ধরে রেল লাইনের দুই পাতের উপর ভাই-বোনের হাত ধরে হেলে-দুলে হাটার অদম্য স্বপ্ন।
এক দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় উঠে গেলাম। শীত কালের গ্রামের রাস্তা। প্রচুর ধুলা। আমরা হাত ধরে ধুলা উড়িয়ে ছুটে চললাম রেল লাইনের খোঁজে।
.

মাঝে মাঝে রাস্তার দুই পাশে ঘন গজারির বন। নির্জন রাস্তা। বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার যায়গা চলে এসেছি কিন্তু রাস্তায় একজনও মানুষের সাথে দেখা হয়নি। আমাদের বাড়ি থেকে এককিলোমিটার দুরে তখন আমরা। গজারি বনের ভিতর দিয়ে রাস্তা। গজারি বনের ঘনত্বের কারণে সুর্যের আলো তেমন পড়েনি বলে বেশ ঘুট ঘুটে লাগছে যায়গাটা। আমরা দৌড়াচ্ছি তো দৌড়াচ্ছিই। হঠাৎ দেখতে পেলাম আমাদের বিপরীত দিক থেকে একটা কুকুর ধেয়ে আসছে।
.

কুকুরটা দেখে ভয়ে আমাদের কলিজা শুকিয়ে গেল। আশে পাশে কেউ নেই। দুজনেই ভয়ে প্রায় যাই যাই দশা। দুর থেকে কুকুরটাকে দেখেই আমরা রাস্তার এক পাশে একটা গাছের গোড়ায় গুটিসুটি মেরে দাঁড়ালাম। রুনু আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আমাকে জাপটে ধরে আমার ঘারের সাথে থুতনি ঠেকিয়ে ঠক ঠক করে কাপছে আর ফিস ফিস করে বলছে “ভাইয়া, কুকুরটা যদি কামড়ে দেয়!”
আমি নিজে ভয়ে দিশে হারা হয়ে গেলেও রুনুকে আশ্বাস দিলাম ”এত ভয় পাস কেন? আমি আছি না? আমি থাকতেই কুকুর তোকে কামড়াবে?”
.

কুকুর ততক্ষণে আমাদের কাছে চলে এসেছে। আমি ভেবেছি যে কুকুরটা আমাদেরকে না দেখেই সে তার পথে চলে যাবে। সেটা ভেবেই তো বোন কে অভয় দেয়া। অসভ্য কুকুর চলে না গিয়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো…রুনু প্রায় চিৎকার করে ফেলে অবস্থা। কুকুরটা আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে মাথাটা উচু করে দুইবার খ্যাক খ্যাক শব্দ করে আবার তার পথে চলে যেতে শুরু করল।
কুকুরটা বেশ খানিক দুর চলে যাবার পর আমরা গাছের গোড়া থেকে সরলাম আর আমি রুনুকে বললাম, দেখলি, আমি বলেছিলাম না কুকুর কিছু বলবে না, তুই খালি খালি ভয় পাস।
.

ভয়-ডর কাটিয়ে আবার দৌড়াতে শুরু করলাম। আরেকটু যাবার পরে বেশ দুরে একটা গরুর গাড়ি দেখা গেল। আমরা যেদিক থেকে আসছি তার উল্টো দিক থেকে আমাদের দিকে আসছে।
গাড়িটা দেখেতে পেয়ে রুনু ডাক দেয়ার ভান করে হাত উচিয়ে বলল “এই যে গরুর গাড়ি……………! আমাদের একটু রেল লাইন পর্যন্ত দিয়া আসবেন নাকি গো……….!
বলেই হাসতে হাসতে মাটিতে গড়িয়ে পড়ল। আমার হাত ওর হাতে ধরা থাকায় ও আচমকা শুয়ে পড়ল বলে আমিও মাটিতে পড়ে গেলাম।
.

পড়া থেকে উঠে রাগে গজ গজ করে ধুলা ঝাড়তে ঝাড়তে বললাম, আর এরকম ফাজলামি করলে তোকে ফেলে আমি একাই রেললাইন দেখতে চলে যাব।
সে আমার হুমকিতে ভয় পেল কিনা জানিনা, তবে আর এরকম করবে না বলে আমাকে আশ্বস্ত করল।
আমরা গাড়িটির কাছা-কাছি চলে আসলাম। গাড়িকে আমরা গাড়িই ভেবেছিলাম। গাড়ির চালক যে একজন মানুষ, সেই বিষয়টা তখন আমাদের স্বপ্নাতুর মনে মোটেও দাগ কাটতে পারে নি। গাড়িতে বসা মানুষটির উপরও আমাদের দৃষ্টি পড়েনি।
আমাদের সামনে এসে গাড়িটি দাঁড়িয়ে গেল। গাড়ির চালকটি লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে একেবারে আমাদের পথ আগলে দাঁড়িয়ে বলল…..
.

”এই রুনু…শিমুল….তোমরা এতদূর কার সাথে আসছ?”
ততক্ষণে আমরা বুঝলাম গাড়ি শুধু গাড়ি নয়, গাড়িতে একটা মানুষ আছে এবং সে মানুষটা আমার ঘরের পাশের ঘরের চাচা। এবং এটাও বোধ হচ্ছিল যে গাড়িটা দেখে না পালিয়ে জীবণের দুইটা বড় ভুলের এটা করে ফেলেছি।
.

আমরা চাচার প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে মুখে আঙ্গুল নিয়ে চুষতে লাগলাম। তার ধমকের মুখে রুনু ফট করে বলে ফেলল “আমরা রেল লাইন দেখতে যাচ্ছি।”
.
শুনে চাচা যা বুঝার বুঝে নিলেন। দুইজনকে বগলদাবা করে এক লাফে গাড়িতে উঠে গরু ছুটিয়ে দিলে।
রুনু গলা ফাটিয়ে কান্না শুরু দিল…….ও ভাইয়া আমি রেললাইনে যাব….আমি বাড়িতে যাব না…. আমাকে রেললাইনে নিয়া চল….
আমি কিছু না বলাতে বা কান্না না করাতে চাচা আমাকে বগলদাবা দশা থেকে ছেড়েদিল। রুনু চাচার বগলের নিচে চাপা পড়ে গলা ফাটিয়ে “ও ভাইয়া আমাকে ছাড়াও….আমাকে রেললাইনে নিয়া চল….” বলে কাঁদতে থাকল আর সজোড়ে হাত-পা ছুড়াছুড়ি করতে লাগল।
.

কোন ভাবেই আর রুনুর কান্না থামানো যাচ্ছিল না। চাচাও অনেক বাহানা বলতে লাগল আমিও অনেক কথা বুঝালাম। কিছুতেই থামছে না।
.

অবশেষে আমি তারা মাথায় হাত রেখে বললাম, আপু আমার! আমার কান্না করিও না। বাড়িতে গিয়ে আব্বাকে রেললাইন দেখার কথা বলব। আব্বা আমাদেরকে নিয়ে যাবে।
.
এই কথা শুনে ম্যাজিকের মত কান্না থেমে গেল। আমার আত্মবিশ্বাষী কথায় সে খুব ভরসা পেল এবং বিশ্বাস পেল যে সত্যি আব্বা আমাদেরকে রেল লাইন দেখাতে নিয়ে যাবে। সে এতই ভরসা পেল আমার কথায় যে কান্না থামিয়ে বলে ফেলল, ”আচ্ছা, রেললাইনে গিয়ে আমি কিন্তু আব্বার হাত ধরব না, আমি কিন্তু তোমার হাত ধরে হাটব, ঠিক আছে?
.

বাড়ি পর্যন্ত আসতে আর কোন কথা হল না। কান্না থামার পর চাচা রুনুকে বগলদাবা থেকে ছেড়ে কোলের উপর বসিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন আর আমি চাচার কোমর ঘেসে বসে আছি।
রুনু থেকে থেকে কান্নার ঢেকুর তুলছে। কান্না থামলেও কানার প্রভাব শেষ হয়নি।
.

গড়িটা বাড়ির সামনে আসা মাত্র মা দৌড়ে এসে বলল, ”ছালাম ভাই, তুমি আমার পুলাপানগুলা কোত্থকে কুড়িয়ে নিয়ে আসলা?
চাচা আমাদের কোলে তুলে গাড়ি থেকে নামাচ্ছেন আর মাকে ভর্ৎসনা করে বলছেন “বাচ্চা-কাচ্চা দেখে রাখতে পারনা তাহলে মা হইছ কেন, ভাবী বলত দেখি। তোমার বাচ্চা গুলা রেললাইন দেখতে বের হইছে, সেই খবর কি জান?”
.

সংবাদে বেশ তুলকালাম হল এবং এতে আমাদের রেললাইনে হাত ধরে দুলে দুলে হাটার স্বপ্ন নিজেই ঘুমিয়ে গেল।
.

পথের প্যাচালী গল্পের অপুর দুর্গার সাথে আমার দুর্গার সবচেয়ে বড় পার্থক্য এখানে, আমার দুর্গা অপুর দুর্গার মত অকালে গল্প থেকে হারিয়ে যায়নি।
.

আমার দুর্গার সাথে এখন আমার বছরে বা ছয়মাসে একবার দেখা হয়। এখন আর সে রেল লাইনে ভাইয়ের হাত ধরে হেলে দুলে হাটার স্বপ্ন দেখে না। দেখা হলে এখন সে কেবলই তার ছেলে মেয়ের গল্প করে। ছেলে মেয়ের গল্প থেকে ভুল করে কখনোও বের হয়ে যদিবা আমার কথা কিছু বলে তাহলে শুধু একটাই কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলে “দেখেছ, আমি তোমার দুই বছরের ছোট আর আমার মেয়েটা প্রায় তোমার সমান হয়ে গেছে। আর তুমি এখনোও বিয়েই করনা, কেন?
.

আমি বলি “এ্যহ…..পাশাপাশি দাড়ালে কে বলবে তুই আমার দুই বছরের ছোট? মানুষ ত বলবে তুই আমার দশ বছরের বড় আপু!”
ও তখন বসা থেকে দাঁড়িয়ে মাথার উপর তুলে দেয়া শাড়ির আচলটা ডান হাতে টেনে ধরে মাথাটা দুলিয়ে দুলিয়ে সেই হারিয়ে যাওয়ার বোধ বিহীন অবুঝ বালিকার মত মুখটি করে বলবে “আচ্ছা আমাকে যেহেতু তোমার চেয়ে বড়ই দেখায় …. তাহলে….তাহলে তুমি এখন থেকে আমাকে আপু বলেই ডাকবা…….ঠিক আছে?............
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×