মুক্ত চিন্তার নামে অসুস্থ চিন্তার বহিঃপ্রকাশ কোন সুফল বয়ে আনছে কি? শার্লি হেবদোর ঘটনায় বিশ্ব যখন মুক্তচিন্তার জন্য লড়ছে, তখন আমরা কি ভাবছি? অথবা আঘাতটা যখন আমাদের উপর, তখন আমাদের করনীয় কি?
মুক্তচিন্তা করবার সময় স্বাধীনতা থাকা উচিত। কিন্তু সেই মুক্তচিন্তাটা যখন আমি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাইবো, তখন আমাকে অনেক সাবধানী হতে হবে। আমার একটা বক্তব্য যদি একটা জনগোষ্ঠীকে আঘাত করে, সেই বক্তব্যের ব্যাপারে একটু ভাবা উচিত। আমি অনেক কিছুই বিশ্বাস করতে পারি, ভাবতে পারি। তা অন্যকে বিশ্বাস করিয়ে ফেলতেই হবে, এমন চিন্তার নাম আর যাই হোক মুক্তচিন্তা নয়। কারণ মুক্তচিন্তায় অন্যের চিন্তা-ভাবনার প্রতি সম্মানবোধ থাকতেই হবে। ধরুন, নিজের স্বাধীন মত জানাতে গিয়ে, কারো মাকে আমি সবার সামনে বেশ্যা বলে ফেললাম। তাহলে সেটাকে আপনি মুক্তচিন্তার বহিঃপ্রকাশ বলে আমার পিঠ চাপড়ে দেবেন? দিতেও পারেন হয়তো। কিন্তু যদি আপনার মাকে বলি?
একজন মনিষীর বানী পড়েছিলাম ছোটবেলায়। উনি বলেছিলেন, "কারো উপর প্রতিশোধ নেবার সবচেয়ে নিকৃষ্টতম পন্থা হচ্ছে, তাকে হাস্যষ্পদ বানিয়ে ফেলার চেষ্টা।" আজকাল রম্য কার্টুনিষ্টরা, যাকে-তাকে নিয়ে কার্টুন আঁকছে। তারা ভাবছে তাদের স্বাধীনতা আছে। তাই তারা ধর্মীয় আইকনদের নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন এঁকে প্রকাশ করছে। আবার ধর্মীয় উগ্র গোষ্ঠী তাদের মুক্তচিন্তায় এইসব কার্টুনিষ্টদের মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং মেরে ফেলছে। এটাকে কি দুইপক্ষেরই নোংরা খেলা মনে হয়না? যে পত্রিকার মালিক তার পত্রিকার কাটতি বাড়ানোর জন্য এই খেলা খেলছেন, তার নাগাল কে পায়? অথবা যেই উগ্রবাদী ধর্মীয় নেতার জন্য জীবন দিচ্ছে তার অনুসারীরা, উনি কই? এই ২০১৫ সালে এসেও যদি এই খেলা না বুঝে আমরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ি, এটা আমাদের চিন্তাশক্তির অসাড়তা ছাড়া আর কিছুই নয়।
আজ রানার নামে একটি অনলাইন পত্রিকায় বিবিসির সূত্র উল্ল্যেখ করে দেয়া ফরাসী শার্লি হেবদো ব্যাঙ্গাত্মক পত্রিকায় বাংলাদেশ খবরটি পড়ে চমকে উঠলাম। কি রসিকতাই না হলো, আমার এই বাংলাদেশকে নিয়ে। সেখানে লেখা, "ফরাসী শার্লি হেবদো ব্যাঙ্গাত্মক পত্রিকায় বাংলাদেশ নিয়ে একটি কার্টুন প্রকাশিত হয়েছে। কার্টুনের শিরোনামে বলা হচ্ছে ‘Pendant ce temps, au Bangladesh’ – যার অর্থ অনেকটা “অন্যদিকে দেখুন বাংলাদেশে কি হচ্ছে..”বাংলাদেশকে নিয়ে করা কার্টুনটিতে বাংলাদেশের রফতানীমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়। এতে দেখা যাচ্ছে একটি পোশাকের কারখানায় খালি গায়ে এবং ছেঁড়া প্যান্ট পরা কয়েকজন লোক টি-শার্ট সেলাই করছে।"
আপনি বলতেই পারেন, এটা তাদের মুক্তচিন্তার স্বাধীনতা। অনেকেই আবার এই কার্টুনকে পজিটিভ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করে বলবেন, অবহেলিত পোশাক শ্রমিকদের পক্ষ থেকে এটা প্রতিবাদ। কিন্তু কেউ ভাববেন না, এই ধরনের ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রতি কতবড় হুমকি! কিভাবে? উত্তর সহজ। একটু ভাবুন। ভেবে বলুন। না ভাবতে চাইলে অতি উত্তম ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন হয়েছে ভেবে একচোট হেসে নিন। নইলে অতি বাজে কাজ হয়েছে ভেবে, শার্লি হেবদোর পিন্ডি চটকান।
ভাবার চাইতে পক্ষে-বিপক্ষে ভাগ হয়ে পড়াটাই আজকাল সহজ!
আমি শার্লি হেবদোর উস্কানিমূলক কার্টুন এবং সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদ জানাই।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৬:৪৬