somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্ট : কামারুজ্জামান

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৫:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মোহাম্মদ কামারুজ্জামান জামাতে ইসলামী বাংলাদেশের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল। সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সম্পাদক, জামাতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের সাবেক নির্বাহী সম্পাদক। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কামারুজ্জামানের স্বাধীনতা বিরোধী তৎপরতা ও যুদ্ধাপরাধের বিবরণসমূহ তৎকালীন সংবাদপত্র, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ ও নির্যাতিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা গেছে। ‘৭১ সালে কামারুজ্জামান জামাতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের ময়মনসিংহ জেলার নেতা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামালপুরে প্রথম আলবদর বাহিনী গড়ে ওঠে যার প্রধান সংগঠক ছিলেন কামারুজ্জামান।

১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ২৫তম আজাদী দিবস উপলক্ষ্যে গত শনিবার মোমেনশাহী আলবদর বাহিনীর উদ্যোগে মিছিল ও সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় মুসলিম ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এই সিম্পোজিয়ামে সভাপতিত্ব করেন আলবদর বাহিনীর প্রধান সংগঠক জনাব কামারুজ্জামান। এক তারবার্তায় প্রকাশ সিম্পোজিয়ামে বিভিন্ন বক্তাগন দেশকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত দুশমনদের সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন।

জামালপুরে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী হিসেবে আলবদর গড়ে ওঠার সাথে সাথে জামাত নেতৃত্ব হৃদয়ঙ্গম করতে পারে যে ছাত্র সংঘকে তারা সশস্ত্র করে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী তৎপরতা ছাড়াও বুদ্ধিজীবি হত্যার জন্য বিশেষ স্কোয়াড হিসেব ব্যবহার করতে পারবে। প্রথমত পরীক্ষামূলকভাবে সারা ময়মনসিংহ জেলার ইসলামী ছাত্র সংঘের কর্মীদের আলবদর বাহিনী হিসেবে সংগঠিত করে সশস্ত্র ট্রেনিং দেওয়া হয়। এই সাংগঠনিক কার্যক্রমের পরিচালক ছিলেন কামারুজ্জামান। কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে মাসখানেকের মধ্যেই ময়মনসিংহ জেলার সমস্ত ছাত্র সংঘ কর্মীকে আলবদর বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় (তথ্যসূত্র : একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়, মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিকাশ কেন্দ্র, পৃ: ১১১-১১২)

শেরপুরের একজন শহীদের পিতা ফজলুল হক গণতদন্ত কমিশনকে জানিয়েছেন, তার ছেলে শহীদ বদিউজ্জামানকে মুক্তিযুদ্ধের সময় আষাঢ় মাসের একদিনে তার বেয়াইর বাড়ি থেকে কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে ১১ জনের একটি দল ধরে নিয়ে যায়। শহীদ বদিউজ্জামানকে আহমদ নগর পাকিস্তানী বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার পর শহীদের বড় ভাই হাসানুজ্জামান বাদী হয়ে নালিতাবাড়ি থানায় মামলা দায়ের করেন। এই মামলার ১৮জন আসামীর অন্যতম ছিলেন কামারুজ্জামান। মামলাটির নম্বর -২(৫)৭২। জিআর নং-২৫০(২)৭২।

শেরপুর জেলার শহীদ গোলাম মোস্তফার চাচাত ভাই শাহজাহান তালুকদার জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের ২৪ আগস্ট আলবদররা গোলাম মোস্তফাকে শেরপুর শহরের সড়ক থেকে ধরে বলপূর্বক তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। শেরপুর শহরের সুরেন্দ্রমোহন সাহার বাড়িটি দখল করে আলবদররা তাদের ক্যাম্প বানিয়েছিল। সে ক্যাম্পে গোলাম মোস্তফাকে ধরে নিয়ে আলবদররা তার গায়ের মাংস ও রগ কেটে, হাত বেধে হাটিয়ে নিয়ে যায় শেরী ব্রিজের নিচে। সেখানে তারা গুলি করে হত্যা করে গোলাম মোস্তফাকে। কামারুজ্জামানের প্রত্যক্ষ নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল। শহীদ গোলাম মোস্তফার হত্যাকাণ্ড যে কামারুজ্জামানের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল এই তথ্য শেরপুরের আরো অনেকেই দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শেরপুর জেলা শাখার সাবেক সভাপতি শহীদ পিতার সন্তান তাপস সাহা জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় কামারুজ্জামান ও তার সহযোগীরা শেরপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আলবদর ক্যাম্পে নারী-পুরুষ-যুবক ধরে নিয়ে তাদের উপর অত্যাচার চালাত। আলবদররা তাদের চাবুক দিয়ে পেটাতো। কামারুজ্জামান বাহিনী শেরপুর পৌরসভার সাবেক কমিশনার মজিদকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল টর্চার ক্যাম্পে। সকালে ধরে নিয়ে পুরোদিন তাকে টর্চার ক্যাম্পের অন্ধকার কূপে আটকে রাখে।

১৯৭১ সালের মে মাসের মাঝামাঝি এক দুপুরে শেরপুর কলেজের তৎকালীন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ আবদুল হান্নানকে খোলা গায়ে, মাথা ন্যাড়া করে, গায়ে মুখে চুনকালি মাখিয়ে, গলায় জুতার মালা পড়িয়ে প্রায় উলঙ্গ অবস্থায় চাবুক দিয়ে পেটাতে পেটাতে কামারুজ্জামান ও তার সহযোগীরা শেরপুর শহর প্রদক্ষিন করায়।

শেরপুর জেলার আওয়ামী লিগের সাবেক নেতা জিয়াউল হক জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের ২২ আগস্ট বিকেল ৫টায় কামাড়িচরে তার নিজের বাড়ি থেকে গাজির খামারে যাবার সময় ৩জন সশস্ত্র আলবদর তাকে ধরে নিয়ে শেরপুর শহরে আলবদর টর্চার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। তিনি সেই ক্যাম্পে কামারুজ্জামানসহ তার সহযোগীদের দেখেন। তারা জিয়াউল হককে দুদিন টর্চার ক্যাম্পের অন্ধকার কূপে আটকে রাখে। এরপর শেরপুর ছেড়ে যাবার শর্তে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্যথায় তারা তাকে হত্যার হুমকি দেয়।

শেরপুর জাতীয় পার্টির নেতা মুক্তিযোদ্ধা এমদাদুল হক হীরা জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকেই কামারুজ্জামানের সহায়তায় পাকিস্তানীরা তার বাড়ীঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল। সেখানে তারা পাঁচটি বাঙ্কার করেছিল। তার বাড়ির লিচুগাছের নিচে মানুষ ধরে এনে হত্যা করেছে।
অপর একজন প্রত্যক্ষদর্শী বর্তমানে শেরপুরের নকলার হাজী জালমামুদ কলেজের শিক্ষক মুসফিকুজ্জামান জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় তিন আনি বাজারস্থ বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি লুট করা হয়েছিল কামারুজ্জামানের নির্দেশে ও উপস্থিতিতে।

শেরপুরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী, রাজাকার ও আলবদর কর্তৃক নিরীহ লোকজনদের ধরে আনা এবং তাদের লাশ বহন করার জন্য ব্যবহৃত ট্রাকগুলোর একজন ড্রাইভার জানিয়েছেন কামারুজ্জামান নকলার মুক্তিযোদ্ধা হন্তার বাড়ি পোড়ানোর জন্য পাকিস্তানী বাহিনীকে রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে যান। তখন হন্তার বাড়ি থেকে কামারুজ্জামান প্রায় ১০০ মন চালও লুট করে। এছাড়াও কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে আলবদররা সাধারণ মানুষের গরু-ছাগল ধরেন নিয়ে আসত এবং পরিত্যক্ত সম্পত্তিসহ অন্যান্য জমি সম্পত্তি জোর করে দখল করে নিত বলে জানিয়েছেন এই ট্রাক ড্রাইভার। কামারুজ্জামানের নেতৃত্ব সে সময় ডাকাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ২:৩০
১০টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×