আমার এখনো মনে পড়ে,এম.আই.এস.টির ক্লাস শেষে যখন সবুজ ক্যাম্পাস দিয়ে আমি,রেজোয়ান,ফয়সাল,সজীব ক্লান্ত পায়ে হেঁটে যেতাম প্রায় সময় বিশিষ্ট আতেঁলদের মত করে ভাবতাম কালকের ক্লাস টেস্টে কোন জায়গা থেকে স্যার প্রশ্ন করতে পারে,সামনের মিডটার্মে কি কি পড়বো,আজকের টেস্টে কোথায় কি ভুল হয়েছে।জিপিএ থিসিস প্রজেক্ট এসবের মধ্যেই অনুচ্ছল জীবনের চিন্তাভাবনাগুলো ঘুরপাক খেত।কড়া আইনকানুন আর আটটি টার্মে যে অসহনীয় বাঁশের উপর থাকতাম তার জন্যই হয়তো আমরা অনেকে ভুলেই যেতাম ভার্সিটি জীবন কতটা স্বাধীন ছন্নছাড়া হতে পারে।আমার স্কুল কলেজের বন্ধু-বান্ধব বেশিরভাগ পড়েছিলো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় আর মেডিকেলে।তাই ওই এলাকাতে প্রায়ই যাওয়া হতো।সেখানে ওদের দেখে একটা কথা বেশ মনে হতো -কি চমৎকার পাখির মত স্বাধীন জীবন তাদের।পড়াশোনার মাঝেও অনেক সৃষ্টিশীল কাজে এরা চমৎকার ভাবে অংশগ্রহণ করে।আমরা টানা সকাল আটটা থেকে দুপুর আড়াইটা কখনো সাড়ে তিনটা পর্যন্ত(মাঝে একটা ৪০ মিনিটের ব্রেক থাকে) ক্লাশ করার পর মনে হত কখন বাসায় যাবো একটু বিশ্রামের জন্য।এর মাঝেও কিভাবে যেনো আমরা বেশ অসাধারণ একটা ডিপার্টমেন্টাল ডে আয়োজন করে ফেলেছিলাম ২০০৬ সালে(এর পরে আর এমন জমকালো আয়োজন করার অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ!!!)।একই সাথে পত্রিকা,কনসার্টের জন্য স্পন্সরশীপের টাকার ব্যবস্থা...বহু ঝামেলা করে অবশেষে মাইলসের সাফিনের সাথে স্টেজে উঠে গান গাওয়া,ছবি তোলা।ওইদিন ভোলার মত নয়।যাই হোক অনেক অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা বলে ফেললাম।আসল কথায় আসি।
আমরা বন্ধুবান্ধব সপ্তাহ শেষে যখন হোস্টেলে বা অন্য কোথাও আড্ডা দিতাম তখন প্রায় সময় একে অপরকে জিজ্ঞেস করতাম,পাশ করে কি করবো।আমরা আলোচনা করতাম আমাদের সিনিয়ররা এখন কে কোথায় কি করছে।আমাদের আগে বের হওয়া মাত্র দুটি ব্যাচের এখন প্রায় অনেকে স্কলারশীপ,ওয়েভার নিয়ে দেশের বাহিরে আছে।যারা দেশে আছে তাদের বেশিরভাগ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াচ্ছেন।কিন্তু আমাদের কারো কাছেই মনে হতোনা ওই পর্যায়ে যাওয়া সম্ভব কারণ খুব ভালো জিপিএ কারো ছিলোনা।আমরা হতাশ এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে বিষমমাত্রায় চিন্তায় ছিলাম।এক ভাইয়ার সাথে কথা হলো লেভেল থ্রিতে থাকার সময়।উনি ৪-৫ মাস হলো চাকরী বাজারে বিচরণ করছেন।উনার থেকে চাকরী বাজারের বেশ ভয়াবহ কিছু অভিজ্ঞতার কথা শুনতে হলো।স্কলারশীপের রাস্তা শুনলাম প্রায় বন্ধ।ডিপ্রেশন চলছে সবজায়গায়।ইউ.এস.এর আশা করা খুব কঠিন,কানাডা কিছু দিচ্ছে কিন্তু স্কোর ভালো থাকতে হবে আন্ডারগ্র্যাডে।আমার কুখ্যাত ইউনির টিচাররা জিপিএ জিনিসটাকে নিজেদের পকেটের টাকা মনে করেন।তড়িৎ প্রকৌশলে জিপিএ এমনিতেই অন্যান্য বিভাগ থেকে বেশি উঠে বলেই জানি।কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য,বিভাগের শিক্ষকরা এই মতবাদটাকে কিভাবে ভুল প্রমাণ করা যায় সেটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো।তাই সাড়ে তিন জিপিএ নিয়ে বের হওয়া ছাত্র শতকরায় ৩৩ ভাগ মাত্র!অথচ এই ছেলেগুলা এস.এস.সি, এইচ.এস.সিতে ডাবল ফাইভ নিয়ে এইখানে ভর্তি পরীক্ষা দিতে সুযোগ পাইছিলো।স্যাররা একবারও ভাবতেন না আমরা সামনে যেয়ে কি করবো এই খারাপ ফলাফল নিয়ে।তবুও আশার ব্যাপার হলো,কিছু স্যার অনেক লিবারেল ছিলো।একটা ঘটনা না বলে পারছিনা।পাওয়ার ইলেকট্রনিক্স কোর্স নিয়েছিলেন আমাদের এক কুখ্যাত স্যার।ফাইনালে আমরা দেখতে পাই স্যার তার সেকশনের চার সেটের এক সেট সিলেবাস বহির্ভুত দিয়েছেন।পরে কেউ জিজ্ঞেস করার সাহস না পেলেও আমি একদিন উনাকে ব্যাপারটা মিনমিন করে বললাম, "স্যার ডিসি টু ডিসি কনভার্টারের এই জায়গাতো বাদ দিতে বলছিলেন।"স্যার তার দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে বলেছিলো, "বইয়ে তো হালকা পাতলা থিওরী দেয়া আছে।পাশ করতে হলে তো পুরা বই পড়তে হবে,নাহলে তো কচুর ইঞ্জিনিয়ার হবা।এইখানকার নাম খারাপ করবা।"দুঃখের ব্যাপার তার পরের টার্মে আমরা আবার উনাকে পেয়েছিলাম এবং উনি একই ভাবে আরো কঠিন করে প্রশ্ন করে পরবর্তীতে আমাদের দুই একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন পরীক্ষা কেমন দিয়েছি।এমন কিছু শিক্ষকের সাথে কোর্স করলে অবশ্যই আপনাকে ভাবতে হবে পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন কি না!বুয়েটের লেকচারার কিছু অসাধারণ শিক্ষক যেমন মাহবুব স্যার,জালাল স্যার এবং আমার অতি প্রিয় মিখাইল ও রেজোয়ান স্যার ছিলো বলে বেঁচে গেছি।তাদের সাথে আনন্দদায়ক কোর্স করে ভালোমানের জিপিএ তুলতে পেরেছিলাম নাহলে অবশ্যই টারজান ভাইয়ের আদর্শ অনুকরণ করতাম।
যাই হোক বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কথামালা শেষ করে চাকরীর ব্যাপারে আসি।পাশ করে টানা দুইমাস থিসিস নিয়ে কুকুরপাগলের মত খেটে সিরিয়াসলি ভাবতে শুরু করলাম কি করবো।বন্ধুরা অনেকেই IELTS,GRE এর জন্য কোচিং করছে।বড়ভাই যারা বাহিরে পড়ছেন তাদের সাথে কথা বললাম।ইউকের কুইন মেরীর এক ভাই বললেন,আর যাই করো ইউকেতে ফান্ডিং আশা করোনা।কানাডা,ইউএসএ ভাইয়েরাও একই কথা বললো,স্কলারশীপ এখন শুধু স্বপ্নে পাওয়া যায়।তাদের কথাবার্তা শুনে ভাবলাম আপাতত বাদ দেই।পরে একেবারে না পাইলে আরব দেশের কিং ফয়সাল ইউনির কথা ভাবা যাবে।শুনেছিলাম বার্কলির মত জায়গার প্রফেসররা নাকি ক্লাস নেয়।এখন আপাতত একটি চাকরীর কথাই নাহয় ভাবা যাক।তাই বড় ভাইদের থেকে সাহায্য নিয়ে একটা সুন্দর(?!) জীবন বৃত্তান্ত বানিয়ে ফেললাম।ঘাটাঘাটি শুরু করলাম বিডিজবস,প্রথম আলোজবস।অনেকের থেকে জানলাম এইসব সাইট ভুয়া,এখান থেকে কোন চাকরী হবেনা(উল্লেখ্য আমি চাকরী কিন্তু সেখান থেকেই পেয়েছি)।পারলে লিঙ্ক ধরো।এই একটা ব্যাপারে আমার একটু এলার্জী আছে।আমার আম্মা আমাকে পাশ করার পর লজ্জা দিয়ে একদিন বলেছিলেন,পাশ করার পর নিজের যোগ্যতা থাকলে যেন ওটা দেখায় চাকরী নেই।তাই লিঙ্কচিন্তা বাদ দিয়ে আমি একের পর এক চাকরীর জন্য সিভি পাঠানো শুরু করি।ফলাফল প্রায় শূন্য।বন্ধুবান্ধবের অবস্থায়ও একইরকম।তবে ক্লাসের তিন পোলাপাইন কিভাবে যেন ইউকের একটা স্কলারশীপ ম্যানেজ করে ফেলে।আমার এক কাছের বন্ধু পোল্যান্ডে চলে যায় ট্রেনিং নিতে।জিপিএ খুব ভালো ছেলেপেলে সাউথইস্ট,প্রাইম এশিয়া এমন আরো কিছু জায়গায় পড়াতে চলে যায়।কিন্তু বেশিরভাগ পোলাপাইনের অবস্থা আমার মত।লিঙ্ক নাই,মামা চাচার জোর নাই।এর মধ্যেও দুই একজনের টেলিকমে কিভাবে যেন হয়ে যায়(লিঙ্ক ছাড়া ওইখানে আজকাল শুনছি ডাকটাও দেয়না)।আমি এবং আমার কাছের বন্ধুবান্ধব চাকরী তো দূরের কথা,ডাকটাও পাইনা।যারা গত এক দুই বছরের মধ্যে প্রকৌশল পাশ করেছে তারা বেশ ভালো করেই জানেন চাকরী বাজার কতটা জঘন্য এবং করুণ।এই মন্দার সময়েও আমি ফেব্রুয়ারীতে পাশ করার পর থেকে এখনো পর্যন্ত্ গুণে গুণে সাতটি জায়াগায় ডাক পেয়েছিলাম(একটিতে আমি ইনশাল্লাহ চাকরী করতে যাচ্ছি সামনে)।সৌভাগ্যক্রমে সাতটি ছিলো বেশ ভালো প্রতিষ্ঠান,কিন্তু সেখানে যে অভিজ্ঞতাগুলো হয়েছে তা নিতান্তই দুঃখজনক।কয়েকটির অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করা দরকার।ফারহান ভাইয়ের এই সংক্রান্ত একটি লিখা দেখেই মূলতঃ এই ব্লগটি আমার লিখা হলো।আসুন দু একটা শুনা যাক।
প্রথমবারে ডাক পেয়েছিলাম একটি বিখ্যাত ইলেক্ট্রো-মেকানিক্যাল কোম্পানিতে যাদের IPS আমরা প্রায়ই ব্যবহার করি।জানলাম আমার একটা লিখিত পরীক্ষা নেবেন তারা।গেলাম পরীক্ষা দিতে।আগেরদিন বেশ কিছু পড়াশোনা করে গেছিলাম।তারপরো আমি বেশ দ্বন্দে ছিলাম কারণ আমাদের একেবারে পাশাপাশি বুয়েটের একটি ব্যাচ বের হয়েছে যারা আবার আমাদের থেকে এক বছর সিনিয়র।উনাদের সাথে কম্পিট করে চাকরী পাওয়াটা খুব সহজ ছিলোনা।এছাড়াও আই.ইউ.টি,কুয়েটের ছিলো যারা আমাদের কিছুদিন আগে বের হয়েছিলো।জীবনে প্রথম চাকরী বাজারে পদক্ষেপ এবং সেখানে গিয়ে দেখলাম সব ইউনির থেকেই কম বেশি এসেছে।বুয়েটের এক ভাইয়ার সাথে বসে পরীক্ষা দিলাম,বেশ খাতির হলো।কিন্তু আমি পরীক্ষাটি দিয়েছিলাম MBA Admission Test এর অনুরুপ একটি প্রশ্নে।আমি জানিনা কোম্পানীগুলো ইঞ্জিনিয়ার চাইলে সেই যোগ্যতা না দেখে ইংরেজী ভাষার পরীক্ষা নেন কেন?আমি সেখান থেকে ডাক পাই আবার ১০ দিন পর।মোট দশজনকে ডাকা হয় ভাইভাতে এবং আমার সাথের যারা তারা সবাই আমার থেকে কমপক্ষে এক বছরের সিনিয়র ব্যাচ।আমি অবশ্যই ঘাবড়ে গেছিলাম এবং ভাইভা খুব সুবিধার না হলেও খারাপ দেয়নি হয়তো।তবুও ভাইভা দিয়ে বেশ মন খারাপ,কারণ আশানুরুপ হয়নাই।এর আরো ১০ দিন পর বুয়েটের সেই ভাই আমাকে ফোন করে জানায়,কোম্পানী নাকি সেকেন্ড ইন্টারভিউ কল করছে এবং এইবার সে ডাক পেয়েছে।আমি বুঝে নিলাম ফাস্ট ব্যাচের থেকে মনে হয় কাউকেই পছন্দ হয়নাই।কিন্তু না!ধারনা ভুল,পরে জানতে পাই যাদের প্রথম বার ডাকা হয়েছিলো তাদের থেকেই শুধু দুইজন নেয়া হয়।একজন ছিলো চুয়েটের আরেকজন আহসানুল্লাহর।আসল ব্যাপারটি এখন বলা দরকার।চাকরী বাজারে কতটা দুর্নীতি হয় তা আগে শুনে এসেছিলাম।হাতে নাতে ভাইভা দেয়ার পর বুঝেছিলাম।আমি যখন ভাইভার জন্য ডাক পাই তখন চুয়েটের যিনি সিলেক্ট হয়েছিলেন উনি ভাইভা দেয়ার আগে হাতে শুধু মাত্র একটি বই নিয়ে অত্যন্ত হাসিমুখে পড়ছিলেন।বইটি ছিলো হারুনুর রশীদ স্যারের পাওয়ার ইলেক্ট্রনিকস।উল্লেখ্য যে ভাইভাতে যিনি প্রধান প্রশ্নকর্তা ছিলেন তিনি আমাকে ইন্টারভিউতে সরাসরি বলেছিলেন,"আপনাকে আমি হারুনুর রশীদের পাওয়ার ইলেক্ট্রনিকস থেকে প্রশ্ন করছি,সব উত্তর তো পারা উচিত।"হয়তো ব্যাপারটা একটি কাকতাল মাত্র।
এরপর আরেকটি বিখ্যাত কোম্পানীতে ডাক পেলাম।ভাইভাতে আমাকে যিনি প্রশ্ন করছিলেন উনি আমার সামনেই দেখলাম উনার অধস্তন এক কর্মচারীতে গাধা,গরু বলে গালি দিচ্ছেন।পরে জানলাম সেই কোম্পানীতে ১২-১৪ ঘন্টা গরুর মত খাটতে হবে আর বেতন দেবে ১০হাজার টাকা।দুই ব্যাচে ভাগ করে পরে উনারা লিখিত পরীক্ষা নিয়েছিলো যার একটি ব্যাচে আমার ইউনির বন্ধু ছিলো তিনজন।আর একটি ব্যাচে ছিলেন আমি আর আমার খুব ক্লোজ এক বড় ভাই যিনি আমাদের সাথেই বুয়েট থেকে পাশ করেছিলেন।আমার বন্ধুরা বললো তাদের পরীক্ষা খারাপ হয়নাই।প্রশ্ন ভালোই হয়েছে।কিন্তু আমাদের প্রশ্ন অত্যন্ত বাজে হয়েছিলো।তড়িৎ প্রকৌশলী নেয়ার জন্য উনারা যে প্রশ্ন বানিয়েছিলেন তাতে যন্ত্রকৌশলের উপাদান ছিলো বেশি।আমার ওই বড় ভাই পরে বলেছিলেন উনি ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং করে এসেছেন বলে উত্তর করতে পেরেছেন।আমি কষ্ট পাইনি পরীক্ষা ভালো হয়নি বলে কারন এখানে বেতন আর খাটুনির কথা শুনে সিরিয়াসলি পরীক্ষাই দেয়নি।আর তাছাড়া তখন কোম্পানী বলেছিলো ১০০ জন নাকি ইঞ্জিনিয়ার লাগবে।এজন্য আমি ভেবেছিলাম কোথাও না হলে এখানে তো হচ্ছেই।মজার ব্যাপার কোম্পানী পরে পরীক্ষা দিতে আসা ৫০-৬০ জনের মধ্যে মাত্র ৪ জন নিয়েছিলো,যার তিনজন আমার বন্ধুরা ছিলো আর একজন ওই বড় ভাই।আরো মজার হলো ওই পরীক্ষায় সর্বাধিক নম্বর পেয়েছিলো আমার এক বন্ধু যার জিপিএ ছিলো সবচেয়ে কম ক্লাসে।মারহাবা! চাকরীক্ষেত্র আসলেও অনেক বিচিত্র এবং কঠিন এক জায়গা।
এর বহুদিন পরে একটি বায়োমেডিকেল কোম্পানীতে ডাক পাই।সেখানে লিখিত পরীক্ষায় বেশ ভালো ভাবেই টিকে যাই।এরপর যখন ভাইভাতে ডাকা হয় তখন আমাকে নিম্নোক্ত শর্তসমূহ দেয়া হয়ঃ
১.ছয় বছরের কন্ট্রাক্ট করতে হবে।
২.তাদের নিকট আমাকে ৫ লাখ টাকার একটি চেক লিখে দিতে হবে।যদি কোম্পানী ছেড়ে যাই তাহলে তারা সেই চেক দেখায় আমাকে আদর করে ফেরত নিয়ে আসবে অথবা শ্বশুরবাড়ি পাঠাবে।
৩.বেতন বেশি না।৮-১০ দিতে পারি।আরো কমও দিতে পারি।বছর শেষে ১০০০ টাকা বেড়ে যাবে।
এই বায়োমেডিকেল কোম্পানীতে ডাকার আগে আমার আরেকটি জায়গায় ইন্টারভিউ হয়েছিলো যেখানে কোম্পানীর ভিপি একজন চাইনিজ আমার ইন্টারভিউ নিয়েছিলো।ওখান থেকে আমি বেশ ভালো ইন্টারভিউ দিয়ে আশাবাদী হয়েছিলাম আবার ডাক পাবো।কিন্তু আমি মে মাসে দেয়া ইন্টারভিউতে দুই মাস কেটে গেলেও আর ডাক পাইনি।পরে আমাকে ডাকা হয় বায়োমেডিকেল আর চাইনিজ কোম্পানী দুটো থেকেই একসাথে।চাইনিজে যখন ডাক পাই তখন মনে হচ্ছিলো হয়তো আমার ওখানে হয়ে গেছে।তাই ভাবলাম বায়োমেডিকেল কোম্পানীতে একটু মজা করা যায়।সেখানে আমি সহ ফাইনালী সিলেক্টেড তিনজন মিলে লাস্ট ইন্টারভিউতে বেশ মজা করে সালাম দিয়ে চলে এসেছিলাম।এই কোম্পানী আমাদের প্রতিবার ইন্টারভিউতে ডাক দিয়ে ২-৩ ঘন্টা বসিয়ে রাখতো(আমাদেরকে অবশ্য এনার্জী বিস্কিট খাওয়ানো হয়েছিলো)।
যাই হোক,ইতোমধ্যে চাইনিজ কোম্পানীর ইন্টারভিউ দুইবার পেছালো,কারণ চায়না ভিপি খুব ব্যস্ত।তবে শেষে ঠিকই হয় এবং জানতে পারি আমি তাদের সাথে কাজ করার জন্য নির্বাচিত হয়েছি।কোম্পানীর ভিপি আমার সাথে কিছুক্ষন চমৎকার ইংরেজীতে(অনেকে বলেন চাইনীজরা ইংরেজী ভালো বলতে পারেন না,কিন্তু উনি এবং কোম্পানীর বাকী চাইনীজরা কিন্তু বেশ শুদ্ধভাবে বলতে পারেন আমার দেখা অনুযায়ী) তার কোম্পানীর কথা বললেন।দেরী করে ডেকেছেন বলে দুঃখিত বললেন।করমর্দন করে বিদায় নেওয়ার পর যখন গুলশানের রাস্তায় তখন তেমন কোন আনন্দ অনুভূতি হচ্ছিলোনা।হয়তো এম.আই.এস.টির যান্ত্রিক জীবনের সাথে মিশতে গিয়ে নিজেও তেমন হয়ে গেছি,অথবা পাশ করার পর জীবনের আসল ও বাস্তব রুপ দেখে আমি এখন অনুভূতিহীন।
আমি চাকরীক্ষেত্রে আসার পর যে জিনিসটি খুব ভালো ভাবে শিখতে পাই তা হলো,কে কোথায় কোন ইউনিতে পড়েছে তা হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানী ছাড়া কোথাও গুরুত্ব পায়না।লিখিত পরীক্ষাগুলো আপনার নিজের যোগ্যতা দিয়ে দিতে হবে।এই ব্লগে অনেক সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বিতর্ক এসেছে।কিন্তু বাস্তবে চাকরী জীবনে এসব কিন্তু খুব একটা প্রভাব পায়না।সবচেয়ে বড় ব্যাপার চাচা-মামা।তারপরও যেসব প্রতিষ্ঠান সৎভাবে কর্মী নেয় তারা নীতিবোধ জিনিসটা বেশ প্রাধান্য দেয়।আমাদের এই ছোট্ট দেশে অনেক বড় বড় দুর্নীতি হয়।আমরা তাই যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখন পাশ করছি তারা যদি সেই দুর্নীতি আর দুর্নীতিবাজদের মুখে লাথি মেরে সৎ উপায়ে চাকরী করতে নামি তাহলে মনে করতে পারেন আপনি দেশকে এক পা এগিয়ে নিয়ে গেলেন।আমি আজ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি,আমি কোন দুই নাম্বারী করে,বন্ধুবান্ধব অথবা মামা চাচা দিয়ে চাকরী পাইনি,নিজের যোগ্যতা দিয়ে পেয়েছি।আমাদের সবার মনে যদি এই প্রতিজ্ঞা থাকে অবশ্যই দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাবে।এই ব্লগ থেকে একটি জিনিস আমি শিখতে পেরেছি,যে যাই বলুক,আমাদের বেশিরভাগের মনে দেশপ্রেম ভালোভাবে বিদ্যমান।তাই আমরা যারা ভবিষ্যতে চাকরী ক্ষেত্রে যাবো তারা নিজেদের কাছে নিজেরাই প্রতিজ্ঞা করি,অন্তত এক্ষেত্রে আমরা এক নাম্বার হয়ে থাকবো।আগে নিজেকে বদলাতে হবে,তাই না?
[লিখা বড় হয়ে গেছে বেশ।আমি সেজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।আমি সব লিখাতেই বলি,লেখক হওয়ার মত গুণ আমার নেই।তাই গুছিয়ে ছোট করে লিখা সম্ভব হয়নি।তবে বিশ্বাস করতে পারেন যা অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে তার সামান্যই লিখেছি।লিখায় আঘাত প্রাপ্ত হলে অগ্রিম দুঃখ প্রকাশ করছি।]