ট্রেন থেকে নেমে আশু ভাবল, "আচ্ছা! এটার নাম তাহলে ঢাকা শহর?"
রাতের ট্রেন সকালে এসে থামে নাই, ট্রেন একদম ঠিকঠাক সময়েই ছিল। সিলেটের দিকের ট্রেনগুলা খুব লক্করঝক্কর মার্কা, ঠিক সময় পৌছাবে ব্যাপারটা পুরাই অলীক। বরং আশুর বাবা আশরাফ ইসলাম বেশ হিসাব কষে বের করেছিলেন যেহেতু ভোর ৬টায় পৌছাবার কথা কম বেশি সাড়ে আটটা বাজবে তখন ট্যাক্সি পাওয়া সুবিধাই হবে। কিন্তু বিধিবাম।
আশুর মা মাহমুদা জিনিশপত্র এক নজর দেখে নিয়ে আশুর কপালে হাত রাখলেন। তিনি খুব স্বাভাবিক ভাবেই জানেন আশুর মাথা গরম থাকার কোনই কারণ নেই কিন্তু এটা সম্ভবত তার অনেক পুরানো অভ্যাস। আশুর মুখের ভঙ্গিতে কোন পরিবর্তন আসলো না, সে যেভাবে সকাল দেখছিলো সেভাবেই দেখতে থাকল।
ধানমন্ডিতে একটা লজ অথবা হোটেল গোছের কিছু ঠিক করা ছিল। সেটায় না গিয়ে আশরাফ সাহেব সরাসরি হাসপাতালেই গেলেন। আশু ক্যাব থেকে নামতে গেলেই তিনি হা হা করে উঠলেন, "না না তুই গাড়িতেই থাক আমি দেখে আসছি" ছোটবাচ্চারা যখন খুব ছোট্ট কোন কাজ একা একা করে ফেলে তখন তাদের বাবারা যেমন "বাহ তুমি তো অনেক বড় হয়ে গেছো" টাইপের একটা প্রশ্রয়ের হাসি দেয় আশু বাবার দিকে তাকিয়ে ঠিক তেমন একটা হাসি দিয়ে বলল, "আচ্ছা বাবা তুমি কী ভুলে যাচ্ছো আমি যে মেডিক্যাল স্টুডেন্ট?"
রিসিপশনে জানালো ডাক্তার আসেন নি, এত সকালে তার আসারও কথা না। কিন্তু আশু জানে সে একটা মিস কল দিলেও ডাঃ আমিন সাবেত এক্ষনি যোগাযোগ করবেন। সে মোবাইল হাতে নিয়ে বসে রইল। তার কোন তাড়া নেই।
অপারেশন টেবিলে ডাঃ আমিন সাবেত আশুকে বললেন, "বাবা তুমি কী জানো তুমি রিকভার নাও করতে পারো?" জবাবে আশু শুধুই হাসল। ইদানিং সে মোটামুটি সব কাজই হাসি দিয়ে চালিয়ে দেয়। জিনিশটা ভাল। কোন শব্দ নেই কিন্তু সব বলে ফেলা যায়।
"এ্যাইই..... শোন তুমি আমার কথায় জবাব দাও না কেন? আমি এত এত কথা বলি তুমি আমার কথা শুনে মজাও পাও না। জানো আমার বান্ধবীরা আমার কথায় হেসে কুটপাট হয়? আমার সিনিয়ার এক আপু একবার আমাকে গাছের সাথে বেঁধে রেখেছিল জানো? তার পরীক্ষা ছিলো আর আমার কথা শুনে সবাই এত হিহি করছিলো যে সে পড়তেই পারছিলো না। আর তুমি আমার কথায় একটুও হাসো না।"
শেষ বাক্যটা বলে সিথি ঠোট ফুলায়। ফোনে বেশ বোঝা যায়। ওর অনুভুতি খুব চড়া তালের। প্রতিটি সুর আলাদা করে বুঝা যায়। খুব দ্রুত সুর বদলায় কিন্তু কী সুন্দর একটার সাথে আরেকটা রাগ মিলিয়ে একটা সঙ্গীত করে ফেলে। সেটা ঝংকারের মত অশুর বুকে বাজে। সে শুধু জবাব দেয়, "কই হাসি তো!!"
সিথি তেড়ে উঠে, "মিথ্যা কথা! হাসো তো শব্দ কই?"
"শব্দ? শব্দ যে নাই!!!" আশু খুব হতাশ হবার ভঙ্গি করে।
সিথি খুব আদুরে হয়ে উঠে "অ্যাইই......শোন না!!! তোমার হাসির একটা ছবি পাঠাও আমি তোমার হাসির ছবি দেখব!!!"
আশু ছবি এমএমএস করে। সিথি সাথে সাথেই এসএমএস করে "আমি হাসিটা ছুঁয়ে দেখব, তুমি কবে ঢাকা আসবে? "
শপাং করে একটা চাবুক পড়ে পিঠে। শিরদাঁড় বেয়ে নেমে যায়। মেডিক্যাল সাইন্সের ক্যাচক্যাচানি তার বহু শোনা। ডাঃ আমিন সাবেত বলেছেন, ড. ফিলিপ কোনি বলেছেন, যতরকম জার্নাল ছিল সব আশু নিজে ঘেঁটে ঘেঁটে পড়ে দেখছে। সমস্যাটা জন্মগত। ক্ষয় আজ হলেও হত কাল হলেও হত আবার নাও হতে পারত। যেমন সে ঢাকা আজ আসলেও আসলো, আগে আসলেও হত আবার না আসলেই বা কী হত?
কথার সুর তালের মত সিথির চাওয়া পাওয়াও খুব মোটা দাগের ছিল।
"আমার আর তোমাকে ভাল লাগছে না আশু" একথাটা বলতে সিথি মুহূর্ত দ্বিধা করে নি। রাতের ডিউটি ছিল, আশুর ভোরের দিকে চোখ লেগে আসছিল। প্রথমে বুঝতে পারে নি কী হচ্ছে। "আমি তোমার জীবনে আর থাকতে চাচ্ছি না আশু" কেটে গেল ফোনটা। চিরজীবনের জন্য।
শাপাং শাপাং করে পরপর চাবুক পড়ছে শিড়দাঁড় বেয়ে, এমন তো হবার কথা না। এ্যানেস্থেসিয়া কি কাজ শুরু করে নি এখনও? ডাঃ সাবেত কী এই কারণেই কথা বার্তা বলে সময় পার করছেন?
সিথি নম্বর বদলে ফেলেছে। কয়েক দফা, কয়েকবার। পোশাক-আশাকের মত করে সিম আর ছেলে বন্ধু বদলানো সিথির স্বভাব। আশুর কানে সব খবরই আসে, আশু দাঁতে দাঁত চেপে রাখে।
চাইলেই নম্বরটা পাওয়া যেত, দুটো কথাও বলা যেত।থাক। কী দরকার!
আশু হালকা করে একটা হাসি দেয়, জ্ঞান হারাবার আগে মনে মনে একটা এসএমএস পাঠায় "এ্যাইই... আমি ঢাকায়, হাসিটা ছুঁয়ে দাও না"
(অনেক দিন লিখি না। হাতে ভালই জং ধরেছে)