somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ৫ মাসে ২০ ছাত্রী উত্ত্যক্ত, প্রতিবাদ করলে মারধর

২২ শে মে, ২০১১ রাত ২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাঁচ মাস হলো ক্যাম্পাসে এসেছি। এর মধ্যেই ১০-১৫ বার উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছি। গত ১৪ মে আমার এক ফুফাতো ভাই বেড়াতে এলে ক্যাম্পাসে আসার অপরাধে তাঁকে মারধর করে সাত-আটজন। ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয় দিয়ে তারা ভাইয়াকে ক্যাম্পাসে না আসার নির্দেশ দেয়।’
কথাগুলো বলছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী। ওই ছাত্রী বলেন, ক্যাম্পাসে আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের এক ছাত্রের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ছাত্র ও তাঁর সহযোগীরা তাঁকে নিয়মিত উত্ত্যক্ত করতেন এবং ১৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুন্নি চত্বরে ফুপাতো ভাইকে রক্তাক্ত করেন।
শুধু বাংলা বিভাগের ওই ছাত্রীই নন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের একাধিক ছাত্রীর অভিযোগ, বখাটে ছাত্রদের হাতে অসহায় হয়ে পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। প্রতিনিয়ত উত্ত্যক্তের শিকার হচ্ছেন তাঁরা। গত পাঁচ মাসে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ২০ ছাত্রী উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছেন। ওই সব ঘটনায় নির্যাতিত ছাত্রীরা বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাদের কাছে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করেছেন।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর আরজু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, উত্ত্যক্ত করার কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় ইতিমধ্যে দুই ছাত্রকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নির্যাতিত ছাত্রী ও উত্ত্যক্তের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বখাটে কর্মীরা প্রথমে ছাত্রীদের প্রেমের প্রস্তাব দেন। প্রত্যাখ্যান করলে তাঁরা অশ্লীল মন্তব্যসহ তাঁদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করেন। উত্ত্যক্তকারীদের বেশির ভাগই প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আর নির্যাতিতদের বেশির ভাগই প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
গত ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের সামনে তিন ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করেন মওলানা ভাসানী হলের ছাত্র ফেরদৌস রহমান ও জাহাঙ্গীর আলমসহ সাত-আটজন। সেখানে উপস্থিত সাধারণ ছাত্ররা এর প্রতিবাদও করেন। তখন ওই তিন ছাত্রী প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু বললে ক্যাম্পাসে থাকতে পারব না।’ অভিযোগ অস্বীকার করে ফেরদৌস ও জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ওই তিন ছাত্রীর সঙ্গে বাগিবতণ্ডা হয়েছিল। উত্ত্যক্তের ঘটনা ঘটেনি।’
একই মাসের ২১ তারিখে পুরোনো কলাভবন চত্বরে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পাঁচ ছাত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও তাঁদের উদ্দেশে অশ্লীল মন্তব্য করেন আ ফ ম কামাল হলের ছাত্র মিরাজুল ইসলাম ও নুরুন্নবী নবীন। পরে ওই ছাত্রীরা ঘটনার বিচার দাবি করে কলা ও মানবিক অনুষদের ডিনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
দীর্ঘদিন ধরে মুঠোফোনে উত্ত্যক্ত করার পর ১৪ জানুয়ারি ক্যাফেটেরিয়া চত্বরে এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্র মমিন উদ্দিন। প্রত্যক্ষদর্শীরা তখন মমিনকে ধরে প্রক্টরের কার্যালয়ে নিয়ে যান। পরে প্রক্টরের সামনে মমিন ওই ছাত্রীর কাছে ক্ষমা চান এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ না করার অঙ্গীকার করেন।
রসায়ন বিভাগের ছাত্র জিকুর নেতৃত্বে অনিক সরকার, সাইফুল ইসলামসহ সাত-আটজন দীর্ঘ দিন ধরে একই বিভাগের সাত ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করছিলেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি অনিক বিভাগের সামনে এক ছাত্রীর ওড়না ধরে টান দেন। ওই ছাত্রী এর প্রতিবাদ করলে অনিক তাঁকে থাপড় মারেন। পরে ওই ছাত্রীরা বিভাগের সভাপতি জসীম উদ্দিনের কাছে অভিযোগ করেন।
শুধু স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রীরাই নন, বখাটেদের কাছ থেকে স্নাতকোত্তর শ্রেণীর ছাত্রীরাও রেহাই পাচ্ছেন না। বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর এক ছাত্রী জানান, গত ২১ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ওই হলের চার-পাঁচজন ছাত্র অশ্লীল মন্তব্য করেন। এ সময় ওই ছাত্রী তাঁদের পরিচয় জানতে চাইলে তাঁরা তাঁকে হলের নাম, মুঠোফোন ও রুম নম্বর দিতে বলেন এবং কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত করেন। পরে ওই ছাত্রী সংশ্লিষ্ট হলের ছাত্রলীগের নেতাদের বিষয়টি জানিয়ে সমাধানের অনুরোধ জানান।
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রলীগের নেতা এস এম শামীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে হলের ছাত্রদের বিরুদ্ধে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ এলে আমি তাদের শাসন করে দিই। অনেক সময় শাসন করলে তারা আমাদের নেতৃত্বে রাজনীতি করবে না বলেও হুমকি দেয়।’
এ ছাড়া একই হলের রাব্বি হাসান দর্শন বিভাগের এক ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর নানাভাবে উত্ত্যক্ত করছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রীর সহপাঠীরা। গত বৃহস্পতিবার তাঁরা ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মীদের কাছে বিষয়টি সমাধানের অনুরোধ করেন। অভিযোগ অস্বীকার করে রাব্বি বলেন, ‘আমি জীবনে কোনো মেয়েকে উত্ত্যক্ত করিনি।’
উত্ত্যক্তের হাত থেকে রেহাই পেতে গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টর বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী। আবেদনে বলা হয়েছে, আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের ছাত্র মো. আশিকুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে মুঠোফোনে এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ওই ছাত্রীকে অপ্রীতিকর কথা বলে উত্ত্যক্ত করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এই উত্ত্যক্ত করার বিষয়গুলো নিয়ে কথা বললে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, উত্ত্যক্ত বন্ধ করতে হলে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা সব শিক্ষার্থীর সামনে তুলে ধরতে হবে এবং এ ঘটনায় শাস্তির বিষয়টিও সবাইকে জানাতে হবে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বখাটেদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নেয়ামুল পারভেজ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে, তারা ছাত্রলীগের কেউ নয়। আমাদের কাছে অভিযোগ আসা মাত্রই প্রতিটি ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ছাত্রদের শাসন করা হয়েছে।’
প্রক্টর অধ্যাপক আরজু মিয়া বলেন, ‘কোনো ছাত্রী যদি সুনির্দিষ্টভাবে কারও বিরুদ্ধে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ করে, তবে অবশ্যই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে এবং তদন্ত করে বখাটেদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে শ্লোগান কোলাজঃ

লিখেছেন জুল ভার্ন, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৩৬

জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে শ্লোগান কোলাজঃ

* ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’
* ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর।’
* ‘নাটক কম করো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসসালামু আলাইকুম। ইদ মোবারক।

লিখেছেন রাজীব নুর, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:১৯



ঈদ এখন এক নিরানন্দময় উপলক্ষ্য।
কিতাবে আছে ধনী-গরীব অবিভাজনের কথা বরং এদিন আরো প্রকটতা নিয়ে প্রস্ফুটিত হয় বিভেদরেখা কেননা আমরা আমাদের রাষ্ট্র- সমাজব্যবস্থা ও জনগণকে সেভাবে দিয়েছি ঘিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈদের শুভেচ্ছা: দূর থেকে হৃদয়ের কাছ

লিখেছেন আমিই সাইফুল, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:০৩

আসসালামু আলাইকুম,
আজ ঈদের দিন। চারদিকে উৎসবের আমেজ, হাসি-খুশি, নতুন জামা আর মিষ্টি মুখের আদান-প্রদান। আমি ইউরোপে আমার পরিবারের সাথে এই আনন্দের মুহূর্ত কাটাচ্ছি। কিন্তু আমার হৃদয়ের একটা কোণে একটা ফাঁকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ও মোর রমজানেরও রোজার শেষে......

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪০


বাংলা গানের ভাণ্ডারে কাজী নজরুল ইসলাম এক অনন্য নাম। তিনি বাংলা সাহিত্যে ইসলামী সংগীতের এক শক্তিশালী ধারা তৈরি করেছেন। তারই লেখা কালজয়ী গজল "ও মোর রমজানেরও রোজার শেষে এলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেই যে আমার নানা রঙের ঈদগুলি ......

লিখেছেন অপ্‌সরা, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৪২


পেছনে ফিরে তাকালে আমি সবার প্রথমে যে ঈদটার কথা স্মরন করতে পারি সেই ঈদটায় আমি পরেছিলাম আমব্রেলা কাট নীলচে বলবল রং একটা জামা এবং জামাটা বানিয়ে দিয়েছিলেন আমার মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×