বৃষ্টি, আরো বৃষ্টি...
বছরের প্রথম বৃষ্টি নেমেছে ঢাকায়; ইমেইল, ফেইসবুক হয়ে ব্লগেও ছুঁয়ে গেছে অবিশ্রান্ত ধারাপাত; টুপটাপ, ঝিরঝির ঝুপঝুপ ঝমঝম। বৃষ্টিপ্রিয়তা আমাদের কোষেকোষে রন্ধ্রেরন্ধ্রে; একটুখানি উস্কে দিলেই বাদলাহাওয়া ভেজামাটি সোঁদাগন্ধ সপসপে-জুতো স্রোতনামা-ছাতারা কেবলই মন ভেজায়, চোখে বাষ্প জমায়। অন্য গোলার্ধে অন্য জলহাওয়া; তবু দেখতে পাচ্ছি, শুনতে পাচ্ছি, ভিজে যাচ্ছি, ভিজে যাচ্ছি, মন ভাল হয়ে যাচ্ছে, মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে...........
বর্ষা আমার চোখের প্রিয় ঋতু, তবু ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁয়োনা। এমন দিনে তারে বলা যায়।
আসে হেমন্ত জীবনানন্দে...

আবহাওয়া দফতরের হিসেবমতো গ্রীষ্ম শেষ হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। এখন অটাম; গোড়াতে যদিও সামারেরই এক্সটেনশান; কিছুদিন যাবার পর শরৎ এলো কিনা বোঝার আগেই ঊষাগোধূলিতে হেমন্তের হিম। পথের ধারে বছরব্যাপী নির্লিপ্ত ঘনসবুজ গাছের সারি এই সময়টাতে এসে গোলাপি-বেগুনীর কণা ঝরিয়ে চলছে অবিরাম। আদুরে কোন নাম হয়তোবা আছে তার, কেউ মনে রাখেনা। হে-ফিভার-ফ্লাওয়ার বদনামটাই জুড়ে বসে গেছে কোমল পলকা রেণুকণায়। কঠিনপ্রাণ ড্যান্ডেলিয়নের দীর্ঘ আয়ুও ফুরিয়ে এলো বলে; আরো বেশী স্থায়িত্বের নিশ্চয়তা পেতে হলদে পাপড়ির ডগা শুকিয়ে তুলো উড়িয়ে কাঁটাময় বীজে সবান্ধব বসতি গড়ছে সে।


আছিগো মা বিপদে...
-ঘটনা কী? ফোন ধরোনা, জিটকে আসোনা, ফেইসবুকে লালবাতি
-হে হে হে, বাত্তি নাইগো কব্বরে...
-এইসব বাদ দাও। পয়লাবৈশাখ সামনে মনে আছে?
-নাহ্ নাই, মনে রাইখা ফায়দা কী!
-ঢং কর, না? শোন, এইবার আর ওপেন প্রোগ্রাম হবেনা, বুঝছ তো সময় খারাপ, স্পন্সর পাওয়া যায়না... টিকেট কাটা লাগবে... দেশ থেকে শিবলিনীপা আসবে তো, আর নাটক...
-তাতে আপ্নের কী?
-আমার কী মানে! আমি গান গাইবোনা? তুমি তো আমার সাথে বাজাবাই, আর...
-আপ্নে গান, নাচেন, নাটক করেন যা খুশি করেন। এই বান্দীর চিত্তে এত সুখ নাইগো সুন্দরী খাতুন
-হিহিহিহি, তুমি একটা লেডি কমেডিয়ান...
এইখানটায় এসে ব্যাখ্যাতীত কোন কারণে ব্লগের কোনও "লেডি"র কথা মনে পড়ে যায় আমার। আরেকটা উইন্ডো খুলে সেখানে ঢুকে পড়ি, চলতি জাগতিক জটিলতার ভয়াবহ দিশাহীনতার কার্যকারণ শহরের সুনামী সুকণ্ঠীকে বোঝানো হয়না আর।
বড় মায়া হে...
ঘরে পোষা পশুপাখির হাতবদলের সময় পুরনো মালিক চোখ মোছেন; ছোটবেলায় এদৃশ্য অনেকবার দেখেছি। অপরাহ'র টকশোতে মনোবিদ উপায় বাতলান স্মৃতিকাতরতার বোঝাক্রান্তকে; পূর্বপুরুষ থেকে উত্তরপুরুষের তুচ্ছাতিতুচ্ছ বস্তুগত স্মৃতির কোন নমুনাই ফেলতে না পেরে বোঝাই-ঘরে যিনি নিজেই জায়গা পাচ্ছেন না। সেই তিনিও শেষ পর্যন্ত ডাম্পিং গ্রাউন্ডের ধারে জঞ্জালমুক্তির আনন্দে কিংবা বেদনায় অশ্রুসিক্ত হন। নতুন সঙ্গী এসেছে আমার; কন্যার আক্রমণে জর্জরিত প্রায়-অকেজো প্রাচীন সঙ্গীকে ছাড়তে পারছিনা তারপরও। থাকুক সে এককোণে পড়ে, চোখের আড়ালে, তবুও থাকুক। আমার কাছে থাকুক, তবু আমার কাছে থাকুক।

ধরো বন্ধু আমার কেহ নাই...
শিশুর মুখে আধোআধো বোলে কতকিছুই না ফোটে। শব্দের ছোট্ট ভাণ্ডারটি বাক্যে গাঁথার আগেই মায়ের মুখে শোনা ঘুমপাড়ানি গানের সুর ভাঁজে সে। অল্পপ্রাণ-মহাপ্রাণের ঝামেলায় না গিয়ে নিজস্ব-সৃজনের সংক্ষিপ্ত বর্ণমালায় কতোকি ছড়া কাটে চাঁদের কণা। তারপরও এই সুর, এই ছড়া সব মা সময়মতো শুনতে পায় না; কারও অপেক্ষার পালা কখনওবা শেষ হয়; বাকীরা হয়তো একসময় অপেক্ষা করতেও ভুলে যায়।
চাঁদের কণার মুখে একচিলতে ছড়া বা একটুখানি গানের আশা করতে করতে কত কতো দিন গেছে আমার। কতবার মনে হয়েছে, এবার আশা ছাড়ি। অবশেষে কাল রাতে প্রথম সুর ভাঁজল সে, দ্বিধাজড়ানো স্বরে, অস্ফুট উচ্চারণে। তারপরও বুঝতে অসুবিধা হলোনা কী গাইছে সে, "ধরো বন্ধু আমার কেহ নাই... "। বুকে চেপে ধরি আকাশ থেকে নেমে আসা চাঁদটাকে।
সেই থেকে এই গান-- বাবু, চঞ্চল, বা কৃষ্ণকলির নয়, আমার ছোট্ট অপনার গান হয়ে-- বুকের গভীরে বেজে চলেছে, বেজেই চলেছে; তার কিংবা আমার এক পৃথিবী দীর্ঘশ্বাসের সমান দৈর্ঘ্যের অসহায়ত্ব নিয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ২:১৩