somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমজাদ শেখ

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মজনু শেখের পোলা আমজাদ শেখ পড়ালেহা করছে ইন্টার পরযন্ত। এলাকার পাতি মাস্তান হে কহনোই আছিল না। উল্টা পাতি মাস্তানরাই হেরে উস্তাদ মানত। হে এক বাপের এক পোলা, বাপ মরার পর হের সংসার চলে পৈতৃক বাড়ির ভাড়া আর মোড়ের গ্যারেজের কামাইয়ে। ঐডা দিয়াই হের বিড়ি-সিগ্রেট, খাওন-দাওন, চ্যালা-চামুণ্ডার খরচ অয়।

আমজাদের বহুত বদনাম এলাকায়। তয় সরকারী দলের লগে উঠা-বওয়া করলেও হে আবার চাঁন্দাবাজি করে না, কারণ হের মায়ে হুকুম দিছে— "বাপ, যা-ই কর, হারাম রুজির ধারে-কাছে যাইস না!" কিন্তু হেরা কয়, মাস্তানের কাম চাঁদাবাজি ছাড়া জমে? তাই ভয় দেহানো, দুশমনরে পিটানি দেওয়া, রাস্তার মোড়ে চা খাইতে খাইতে মাইয়াগো টিজ করা—এইগুলা হের ডেলি রুটিন!

একদিন গ্যারেজের সামনে চায়ের দোকানে আমজাদ, জামাল, কুদ্দুস বইয়া আড্ডা মারতাছে। এমন টাইমে রাস্তা দিয়া এক বুরকা পরা মাইয়া হাইট্টা গেল।
আমজাদ জামালের কাধে ঠেলা দিয়া কইলো, "ঐ হালায় জামাইল্যা, ওই মাইয়াটারে চিনছ নাকি? গায়ের রং তো এক্কেরে পোলাওর চাইল দেহা যায়! চকচকা দুধআলতা রং, নওয়াব বাড়ির পরীরেও হে পিছে ফালায় দিবো!"
জামাল হাঁসতে হাঁসতে কইলো, "ভাইজান, বুরকা পরা মাইয়ার পিছে লাগলে, মোল্লারা তাগা বানাইয়া দিব!"
কুদ্দুস চুরুটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে কইলো, "হালায়, আমজাদ ভাইর তো এক্কেরে দিল ধরা দেহি! ...দাঁড়ান, তিন দিনে সব ডিটেল আইন্না দিমু!"

দুই দিন পর...
কুদ্দুস কইলো, "ভাইজান, খবর আনছি! মাইয়ার নাম চবুতরী বেগম, আগে বিয়া হইছিল একবার, জামাই মইরা গেছে, বাপ পুরান স্কুল মাস্টার, হের বাড়ি কাটপট্টির গলি।"
আমজাদ ফ্যালফ্যাল কইরা তাকাইয়া কইলো, "হুশ্... নামটাই যেন মিঠা! কাইলকাই অর বাপের কাছে বিয়ার পয়গাম পঠামু!"
কুদ্দুস পান ছিটাইয়া কইলো, "ভাইজান, আপনে মাস্তানের মুরুব্বি! ডাইরেক্ট মাইয়া তুইলা আনলেই তো কাম সারা!"
আমজাদ চেইত্যা গিয়া কইলো, "মর হালায়, প্রেমের খেলার তুই কি বুঝছ!"

চবুতরীর বাপের কাছে দূত গেলা। ফিরা আইসা...
আমজাদ কইলো, "কি কইলো ওই বুড়া?"
দূত মাথা চুলকাইয়া কইলো, "কয়, 'মাস্তানের হাতে মাইয়া দিমু না! তোগো লগে কথাও কইতে চাই না, যা ভাগ!'"
জামাল মুঠি পাকাইয়া কইলো, "হেই কয়! বুড়ার দাঁত ফালায় দিমু?"
আমজাদ একটু চুপ থাইকা কইলো, "না রে...এমনে হইব না, চল ইমাম সাবের দরগায়!"

মসজিদে ইমামের সামনে আমজাদ হাজির।
ইমাম সাব চশমার ফাঁক দিয়া তাকাইয়া কইলো, "ওমা, আমজাদ মিয়া নাকি! তা কি মনে কইরা?"
আমজাদ মাথা চুলকাইয়া কইলো, "হুজুর, ... চবুতরী বেগমরে বিয়া করমু। হের বাপ মানতাছে না। আপনে একটু মুরুব্বির মতো হের লগে কইতে পারেন না?"
ইমাম দাড়ি হাতাইয়া কইলো, "তুমি নামাজ পড়ো?"
"না।"
"সিগারেট ছাড়ো?"
"না।"
"রাজনীতি ছাড়ো?"
"হুজুর, এত কিছু ছাড়লে তো আমি খালি হাতে থাকুম!"
ইমাম হাসি দিয়া কইলো, "তাইলে বিয়া করতে চাও কেমনে? ঠিকঠাক মানুষ হও, তাইলে কথা কমু!"
আমজাদ দাঁত কামড়াইয়া কইলো, "পারুম! কইলাম, পারুম!"

গ্যারেজে ফিরা গ্যাংয়ের মিটিং ডাকলো।
কুদ্দুস হাঁসতে হাঁসতে কইলো, "ভাইজান, সিগারেট ছাইড়া দিবেন? আর নেশা করার কি হইব?"
জামাল পান মুখে দিয়া কইলো, "রাজনীতি ছাড়লে ট্যাকার লাইন কই?"
আমজাদ চায়ের কাপ ঠুকাইয়া কইলো, "চুপ চান্ডার দল! ঐ মাইয়ার লাইগ্যা সব ছাড়তে হইব!"

পরেরদিন ফজরের নামাজে হাজির আমজাদ।
ইমাম তাকাইয়া কইলো, "দেহি তুমার জিদ কতদিন!"
আমজাদ কাতারে দাঁড়াইয়া কইলো, "হুজুর, সুরা ফাতিহা কইতে গেলে ঠ্যাং কাঁপে!"

দুই সপ্তাহ পর আমজাদরে দেইখা এলাকার মানুষ হাসে। মোড়ের দোকানের লতিফ কাকা পর্যন্ত কইলো, "এইডা যে হেই আমজাদ, বিশ্বাস অয় না রে! মাস্তান আছিল, আর এখন এক্কেরে নামাজি ভাই হইয়া গেছে!"
গ্যাংয়ের পুরান বন্ধু কাইয়ুম একদিন থাইমা কইলো, "ভাইজান, ফজরে গিয়া কাম অয়? আগে বিয়া করন লাগে, বউরে ঘরে নেন, নামাজ পরে!"
আমজাদ দাঁত কামড়াইয়া সব সহ্য করে, মনে মনে কয়, "একদিন তোমরা বুইঝা যাইবা, আমি ঠিকই পারুম!"

মাসখানেক পর চবুতরীর বাড়ির দরজায় আমজাদ, হাতে ফলের ঝুড়ি।
চবুতরীর বাপ দরজা ফাঁক কইরা কইলো, "কি চাও?"
আমজাদ মাথা নিচু কইরা কইলো, "স্যার, আমি বদলাইছি...এহন আর মাস্তানি করি না!"
চবুতরী দরজার আড়াল থেইকা কইলো, "আপনের মাস্তান গ্যাং কই?"
আমজাদ শুকনা হাসি দিয়া কইলো, "গ্যাং থাউক... আমি এহন ইমাম সাবের ছাত্র!"
চবুতরী দরজার আড়াল থেকে আমজাদের দিকে তাকাইলো। দুধে-আলতা রঙের মুখখানায় এক রকমের অবাক ভাব, একটু যেন বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের মাঝামাঝি।
চবুতরীর বাবা দরজা ধাক্কা দিয়ে কইলো, "আমার মাইয়া তোমার মতন মাস্তানের লগে কথা কইবো না! যাও গিয়া!"
আমজাদ দাঁড়াই রইলো। চবুতরীও আর কিছু কইল না। দরজা বন্ধ হইলো।

সেইদিন রাইতে আমজাদ হের গ্যারেজে চুপচাপ বইয়া রইল। হের গ্যাংয়ের কেউ সামনে আইতে সাহস করলো না। পুরা এলাকা জানল, আমজাদ শেখ জীবনে এই প্ররথম বারের মতো হাইরা গেছে।

পরের দিন শেষ রাইত
মসজিদের ইমাম সাব তহন তাহাজ্জুদের নামাজ শেষ কইরা তসবিহ পড়েন, হঠাৎ দেখলেন আমজাদ শেখ দরজার সামনে খাড়ায় আছে।
ইমাম সাব কইলেন, "কি খবর আমজাদ মিয়া, এই এত রাইতে?"
আমজাদ মাথা নিচু কইরা কইলো, "হুজুর, আপনে কইছিলেন বদলাইতে। বদলাইছি। কিন্তু, হেরা তো বিশ্বাসই করে না!"
ইমাম সাব হাইসা কইলেন, "বিশ্বাস করাই দেওন আমার কাম না, তোমার কাম। তুমি সত্যি বদলাইলে একদিন হেরা বুঝব।"
আমজাদ ধীরে কইলো, "কিন্তু চবুতরী..."
ইমাম সাব কাঁন্ধে হাত দিয়ে কইলেন, "হে যদি তোমার কপালে থাকে, আল্লাহ পাক এমনেই ব্যবস্থা করবো। তুমি তোমার কাম চালায় যাও।"

ছয় মাস পর
শহরে গুজব ছড়াইলো—আগের মাস্তান আমজাদ শেখ এখন পুরা বদলাই গেছে। মাস্তানি নাই, মাইরপিট নাই, গলির মোড়ে বইয়া থাকার বদলে মসজিদে যায়, গ্যারেজের কাম করে, মায়ের খেদমত করে।

একদিন বিকালে চবুতরীর বাবা মসজিদে আইলেন। নামাজ শেষে ইমাম সাহেবের কাছে বইলেন।
"হুজুর, একটা কথা জিগাইতে আইছি।"
"জিগান, মাস্টার সাব।"
"ঐ আমজাদ শেখ আসলে বদলাইছে?"
ইমাম সাব কইলেন, "জিগায়া দেহেন। ছয় মাস হইলো একখান সিগারেটও খায় নাই, এক ফোঁটা মাস্তানি করে নাই। আপনে কি মনে করেন, এইরম নাটক করা যায়?"
মাস্টার সাব চুপ কইরা থাকলেন।

আরেক সপ্তাহ পর
একদিন সকালে আমজাদ গ্যারেজের কামে ব্যস্ত, এমন সময় জামাল দৌঁড়াইয়া আইলো।
"ভাইজান! ভাইজান! ব্রেকিং নিউজ!"
"কি হইছে?"
"চবুতরীর বাপ তোমারে ডাইকা পাঠাইছে!"
আমজাদের হাত থরথর কইরা কাঁপতেছিল। বিশ্বাস করতে পারতেছিল না।
চবুতরীর বাড়ির সামনে গিয়া দাঁড়াইলো, বুকের ভিত্রে ঢোলের মতো বাজতে লাগলো। দরজা খুললো চবুতরীর বাবা, পিছনে দাঁড়াইছিল চবুতরী, ঘোমটার আড়ালে।
চবুতরীর বাবা কইল, "তোমার ব্যাপারে অনেক খোঁজ খবর নিছি, আমজাদ। যদি সত্যিই বদলাই থাকো, আমার মাইয়ারে তোমার হাতে দিতে রাজি আছি।"

আমজাদ এক সেকেন্ডও দেরি না কইরা হাঁটু গাইড়া বইসা পরলো, "আলহামদুলিল্লাহ!"
পিছনে জামাল আর কুদ্দুস গগনবিদারী চিৎকার দিল, "আমজাদ ভাইয়ের মেহেন্দি আইতাছে রে!"

আর চবুতরী, হালকা ঘোমটার আড়ালে মুচকি হাসছিল। এই প্ররথম আমজাদ শেখ হারতে হারতে জিতা গেলো।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:০৯
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইলো আইলো আইলোরে, রঙ্গে ভরা বৈশাখ আবার আইলো রে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:৪৮


ভোরের আলোয় রঙিন হওয়ার দিন
পহেলা বৈশাখ এসেছে বাংলার দোরগোড়ায়—রাঙা চেলি কাপড়ে মোড়া এক সকাল, যার হাত ধরে ফিরে আসে প্রাণের ছন্দ। আকাশে লাল সূর্যের আভা, হাওয়ায় মিষ্টি কাঁচা আমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামী শরীয়া মোতাবেক সংক্ষেপে তালাক দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:২০

ইসলামী শরীয়া মোতাবেক সংক্ষেপে তালাক দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি

ছবি: অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

তালাক হচ্ছে সবচেয়ে ঘৃণিত হালাল কাজগুলোর একটি। পারিবারিক জীবনে বিশেষ অবস্থায় কখনও কখনও তালাকের প্রয়োজনীয়তা এড়ানো যায় না বিধায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

কবিতাঃ ঈশান কোনে ঝড়

লিখেছেন ইসিয়াক, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:০৪


মেঘ গুড়গুড় মেঘ গুড়গুড়

ঈশান কোনে ঝড়।

বাতাস তোড়ে ঘূর্ণিপাকে

ধুলো মাটি খড়।

পাখপাখালি ব্যস্ত চোখে

খুঁজছে আশ্রয়।

বিপদাপন্নর চোখে মুখে

অজানা শঙ্কার ভয়।

কড়কড়াকড় বাজ পড়ছে

আলোর ঝিলিকে।

প্রলয় কান্ড ঘটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৪৩২ বয়স!

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:৩৪



বাংলা নববর্ষ নিয়ে অতি উচ্ছ্বাস -
উন্মাদনা বিশেষত যারা একদিনের জন্য নিখাঁদ বাঙালি হয়ে 'মাথায় মাল' তুলে রীতিমতো উত্তেজনায় তড়পাতে থাকেন তাকে খাস বাংলায় বলে ভণ্ডামি!

বাংলা বর্ষপঞ্জিকা আমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-বাংলাদেশে আলাদা দিনে বাংলা নববর্ষ কেন?

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৪

ভারত-বাংলাদেশে আলাদা দিনে বাংলা নববর্ষ কেন?


বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ আসে ইংরেজি মাসের ১৪ এপ্রিল। অন্যদিকে পশ্চিম বাংলায় ১৫ এপ্রিল উদযাপন করা হয় উৎসবটি। যদিও ১৯৫২ সন পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×