বাংলাদেশের খেলার টিকেট নিয়ে সবসময় সেরকম ভিড়ে দাড়ানোর অভিজ্ঞতা ছিলো। আবার এই অভিজ্ঞতাটা হলো চোরাবালি মুভির টিকেট কাটার সময়। ১দিন আগে বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সে গিয়ে দেখি বিশাল লাইন! বিকালে দেখার পরিকল্পনা থাকলেও টিকেট না পাওয়াতে আজকে ছুটির দিন সাতসকালে ১১টায় ছুটতে হয়েছিলো মুভিটা দেখতে। তারপরও বলি মুভি দেখার টিকেট কাটার জন্য এই ভিড়/লাইনের ব্যাপারটা দারুণ এনজয় করার মতো।
টিভি নির্মাতা হিসেবে রেদোয়ান রনি বেশ পরিচিত এবং জনপ্রিয় নাম। বেশ কিছু আলোচিত নাটক/টেলিফিল্ম আছে এই পরিচালকের। তো সেই পরিচালক যখন “চোরাবালি” মুভিটি নির্মানের ঘোষণা দিলেন তখন থেকেই সবাই বেশ আগ্রহ নিয়েই অপেক্ষায় ছিলো মুভিটির জন্য। আমার মতো অনেকের মনেও একটা ভয় ছিলো যে রনি কি পারবেন সবার এই প্রতীক্ষা এবং আগ্রহের সঠিক মূল্য দিতে ? আজ মুভিটি দেখে যা মনে হলো দর্শকরা সবাই যে আশাটা নিয়ে মুভিটি দেখতে যাবে দেখার পর সেই আশা ১০০% আবার অনেকের বেলায় ১১০% পূর্ণ হবে। রেদোয়ান রনি হতাশ করেননি কাউকে। সবার আশা পূর্ণ করেছেন এবং বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য সম্ভাবনাময় এক নতুন বছরের যাত্রাও শুরু করে দিয়েছেন আমাদের দূর্দান্ত একটি মুভি উপহার দিয়ে। বাংলাদেশে আগেও বেশ কয়েকটি আন্ডারওয়ার্ল্ডের গল্প নিয়ে একশন/থ্রিলার মুভি নির্মিত হয়েছিলো। তবে সেগুলোর মানকে আমি ভালো বলতে পারবো না। কিন্তু চোরাবালি মুভিটিকে এই জেনারে বাংলাদেশে নির্মিত সবচেয়ে সফল মুভি হিসেবে যেই দেখবে সেই মেনে নিতে বাধ্য হবে।
চোরবালি মুভিটি শুরু থেকেই কিন্তু দারুণ এনগেজিং। পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক ধারার একশন/থ্রিলার বেজড মুভি। মুভিটির মূল থিম ছিলো আন্ডারওয়ার্ল্ডের ভিতরের গল্প নিয়ে। দেখতে পাবেন এর কুৎসিত রূপ। তার মাঝেই দেয়াল হিসেবে পাবেন একটি ভালোবাসার গল্প। এদের সাথেই মিলে মুভিটির চলা। একজন পেশাদার খুনী। তার কাজ কি ? তার কাজই হলো কখনো টাকার বিনিময়ে বা কখনো উপরের নির্দেশে মানুষ খুন করা। কিন্তু হঠাৎ করেই দেখা যাবে সে খুন করতে পারছে না। মুভিটির আসল পয়েন্ট এইটাই। এখান থেকেই চোরাবালির সাথে হারিয়ে যাওয়া। থ্রিল আর সাসপেন্সের ছোয়া পাবেন কিছু সময় পরপরই। মুভিটির কাহিনী নিয়ে কিছু বলা যাবে না। সত্যি বলছি সেটা হলে গিয়ে দেখলেই বুঝতে পারবেন কারণটা। কারো কোন মজা কোন কারণেই নষ্ট করতে চাচ্ছি না। কিছু মনস্তাত্ত্বিক সিচুয়েশন আছে মুভিতে। কথা দিলাম মুভিটি দেখে আপনি হতাশ হবেন না একদমই।
মুভিটির অন্যতম চরিত্র পেশাদার খুনি সুমনের চরিত্রে যখন কলকাতার অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তকে নেয়া হয়েছিলো তখন থেকেই এই সিদ্ধান্তটি নিয়ে কিছু মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিলো। তবে মুভিটি দেখুন। ইন্দ্রনীলকে দেখুন। নিজের চরিত্রের সাথে দারুণভাবে মানিয়ে গিয়ে অভিনয় করেছেন এই অভিনেতা। আর জয়া আহসানের অভিনয় নিয়ে কোন সংশয় কেউ কখনো করে নি। নির্ভীক সাংবাদিক নবনীর চরিত্রে এই অভিনেত্রী বরাবরের মতোই তার প্রতিভার সাক্ষর দেখিয়ে গেছেন। আর মুভিতে ইন্দ্রনীল এবং জয়ার বোঝাপড়ার দৃশ্যগুলোও চমৎকার। তবে চোরাবালি মুভিতে আমার কাছে সবচেয়ে দারুণ লেগেছে গডফাদার চরিত্রে শহীদুজ্জমান সেলিমের অভিনয়। এই চরিত্রটি করার কথা ছিলো লিজেন্ড অভিনেতা হুমায়ূন ফরিদী এর। তবে অসুস্থতার কারণে উনার বদলে আসেন সেলিম। এই মুভির আসল আকর্ষনের একটি ছিলো এই শহীদুজ্জামান সেলিমের দূর্দান্ত অভিনয় দেখার অভিজ্ঞতা। ব্রাভো ম্যান। তারকাবহুল এই মুভিতে নানা চরিত্রে আরো ছিলেন সোহেল রানা, এটিএম শামসুজ্জামান, ইরেশ যাকের, হিল্লোলসহ আরো অনেকে। প্রত্যেকেই ভালো অভিনয় করে গেছেন। আসল কথাই বলতে ভুলে গেলাম। মুভিটিতে একটি আইটেম সং আছে। সেটাতে ছিলেন সিন্ডি রোলিং। মুভির অনেক আকর্ষনের মাঝে এটিও একটি। সুন্দর কোরিওগ্রাফীতে করা উপভোগ্য এই আইটেম সংটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হবার সম্ভাবনা থাকলেও আমার কাছে ভালো লেগেছে।
যেকোন মুভির মেকিং নিয়ে আমার বিদ্যার বহর অনেক কম। পারিই না বলতে পারেন। তারপরও যতটুকু পারি বলার চেষ্টা করছি। মুভির চিত্রনাট্য ছিলো বেশ স্পিডি। আর এডিটিং করা হয়েছে দূর্দান্তভাবে। কোনভাবেই কারো কাছে খাপছাড়া মনে হবে না। শুরু থেকেই দর্শকরা জমে যাবেন মুভিটির সাথে। আর ডায়লগগুলোও ছিলো বেশ উপভোগ্য। বেশ কয়েকটি গান ছিলো মুভিটিতে। মুভিতে সেই গানগুলোর ব্যবহার সবার কাছেই ভালো লাগবে। মুভির আবহ সংগীতের কথা আলাদাভাবে বলতেই হবে। মুভিটির অন্যতম প্রধান শক্তিও বলা যায় একে। আর সবার শেষে বলি পরিচালক রেদোয়ান রনির কথা। একইসাথে মুভির কাহিনী এবং চিত্রনাট্যও উনারই লেখা। জীবনের প্রথম ছবিতেই তিনি নিজের জাত চিনিয়ে দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন তিনি প্রস্তুতি নিয়ে অনেকদিন থাকতেই এসেছেন চলচ্চিত্রে। উনাকে আলাদা করে একটা ধন্যবাদ দিয়েই রাখলাম এরকম চমৎকার একটি মুভি আমাদের সবাইকে উপহার দেয়ার জন্য। আশা করছি সামনে উনার কাছে থেকে এরকম বা এর থেকেও দূর্দান্ত মুভি আমরা উপহার পাবো।
যাইহোক সবাইকে একটা অনুরোধ করছি চোরাবালি মুভিটি হলে গিয়ে দেখার জন্য। ডিভিডির আশায় বসে থেকে ভুল করবেন। এই মুভি সবাই দলবেধে হলে গিয়ে দেখার মতো মুভি। আপনাকে দারুণভাবে মাতিয়ে রাখবে এই মুভি পুরোটো সময় জুড়ে। হলে গিয়ে মুভির দেখার আসল মজা দিতে পারবে এই মুভি। চোরাবালি টিমকে অনেক ধন্যবাদ দারুণ এই ভিজ্যুয়াল ট্রিট উপহার দয়ার জন্য। এই মুভি সুপারহিট হবেই।
** আমার সাথে আজকে এই মুভিটা দেখার সময় কলকাতা থেকে আসা আমার একজন বন্ধু ছিলো। সে এই মুভি দেখে বেশ খুশি এবং অনেক প্রসংশা করলো। আমাকে ধন্যবাদও দিলো এরকম দারুণ মুভি তাকে দেখানোর জন্য। সাথে এও বললো যে তাদের দেশের বর্তমানের মেইনস্ট্রিম মুভিগুলো থেকে “চোরাবালি” মুভিটির মান অনেক ভালো।
চোরাবালি মুভিটি নিয়ে দারাশিকো ভাই এবং ওয়াহিদ সুজন ভাই উনাদের নিজেদের সাইটে চমৎকার ২টি রিভিউ প্রকাশ করেছেন..........লিংকগুলো দিয়ে দিলাম........
দারাশিকো : ‘চোরাবালি’ থেকে মুক্তি
ওয়াহিদ সুজন : চোরাবালি: মুভিটি হিট হোক
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১১:২১