গল্পের প্রবাহ চলেছে একদম অজ পাড়াগাঁয়ে।একদম গ্রাম্য পরিবেশ নিজের রক্ত, মাটির সাথে না থাকলে এমনভাবে অবহেলিত একটি অঞ্চলের গল্প সহজে ফুটিয়ে তোলা যায় না।ইমদাদুল হক মিলনের কোন লেখা আগে তেমন না পড়লেও এই গল্পটি পরে তার প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গেল।
গ্রাম্য বাজারের আমিত্তির (মিষ্টি) এর দোকানদার লতিফের বর্ণনা দিয়ে কাহিনী এগোতে থাকলেও গল্পের মূল চরিত্র পবনা পাগলা।লতিফ দোকান দেয়ার আগে থেকেই দেখে আসতেছে পবনা এখানেই পরে থাকে।সারাদিন এর দোকান অর দোকান ঘুরে পেতের জ্বালা মেটায়।পবনার বন্ধু বলতে আছে একমাত্র নেড়ি কুত্তা টা।লতিফের মতে দুজনের ভিতরে কোন পার্থক্য খুজে পায় না।একি রকমের জীবন।
গল্প মুলত বেগ পায় পবনার একবার বসে আড়াই মন আমিত্তি খাবার আবদারের পর।আশে পাশের কেউ গুরুত্ব না দিলেও নতুন বিবাহিত আওয়াল,একজন হাসিখুশি দোকানদার রাজি হয়ে যায়।খেতে না পারলে বাজার থেকে চিরতরে চলে যেতে হবে আর খেতে পারলে পরের দিন থেকে পবানার থাকা খাওয়া সব কিছুর দায়িত্ব আওয়ালের।
পবনা খাওয়া শুরু করে।আর বাজারের দোকানদের সাথে চলে তার জীবনের গল্প।একের পর এক আমিত্তি খায় আর বলে চলে তার অতীত জীবন কাহিনী।টানটান উত্তেজনা কাজ করে সেসব পড়তে পড়তে।
এদিকে গল্প শুনতে শুনতে লতিফ মুলত ভাবে তার মিষ্টি বেঁচে লাভের কথা।হালকা হাসি ঠাট্টা করতে করতে পবনা বলতে থাকে তার বিখ্যাত ডাকাত বাপের গল্প,গর্বের সাথে।পাশে বসে নেড়িকুত্তা দেখে তার গুরু তাকে না দিয়ে এখাই খেয়ে যাচ্ছে সব আমিত্তি।
পবনার কথার ফাঁকে ফুটে উঠে তার জীবনের নানা দিক।ডাকাত বাপের ফিরে না আসা।মিষ্টির হাঁড়িতে করে বাপের কাটা মাথা বাড়িতে দিয়ে যাওয়া,বাপ মরার কয়েকদিনের ভিতরে মায়ের অন্য পুরুষের সাথে পলায়ন।দাইমার কাছে বড় হয় পবনা,সংসার বাধে দাইমার মেয়ে হরিদাসি সাথে।নতুন জীবনের পথে পবনা।পেটে সন্তান হরিদাসি।নিয়মিত আমিত্তি খাউয়া পবনা আমিত্তি খায় না সংসারের খরচের কথা ভেবে।সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেল হরিদাসি আর পবনার মাথা ঘুর খেল।টা আর ভালো ভালো হল না।তখন থেকেই সে পবনা পাগলা।
গল্প শেষে দেখে মাত্র একটা আমিত্তি বাকি।সেটি আর পবান্র খেতে ইচ্চা করে না,নেড়িকুত্তা কে দিতে ধরে কিন্তু সবার ধমকে সেটিও খায় পবনা কিন্তু তার ভিতরটা কেমন যেন ঘুরে উঠে।
সব্বাই বলে,সব্বাস পবনা,বাপের নাম রাখছস।দূরে পবনা শুনতে পায় এক অচিন পাখি ডাকছে কু কু,যে ডাকটা পবনা শুনেছিল,বাপ মরার সময়,মা চলে যাবার সময়,হরিদাসি মারা যাবার সময়।পবনা আর কিছুই শোনে না,অচিন শরীরকে টেনে টেনে হেঁটে চলে।
শেষ পর্যন্ত পবনার খোজ করে শুধু নেড়িকুত্তা,আর কেউ নাই।লেখকের ভাষায়,
“কুত্তাটা দেখে দু’খান নাওয়ের মাঝখানে মাটিতে,তার প্রভু পবন ঠাকুর হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে।দেখে কুত্তাটা দু’তিঙ্খান ঘেউ দেয়। পবন ঠাকুর আর নড়ে না।কুত্তাটা কি বোঝে কে জানে সে আর ঘেউ দেয় না।একটা নয়ের সামনে পা তুলে পেচ্ছাব করে”
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ প্রত্যেক বই পড়ার পর সখ করে এরকম হালকা ধারনা রিভিউ দেয়া শুরু করব ভাবতেছি।মানসম্পূর্ণ হবে টা তেমন হয়ত তবু লিখতে চাই এভাবে।যেকোনো সাজেশন গ্রহণযোগ্য।