somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তগদ্য : অনঙ্গ শৃঙ্গার

০৫ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাত্রির চক্রে কোনো মন্ত্রধ্বনির দিকে অবাক তাকিয়ে থাকে পৃথিবী। আর তুমি চিরদিন গীতবিতান, একটি গানের ভিতর থেকে তাকিয়ে আছো ঘরজুড়ে, একটি সতর্কবার্তার মুখোমুখি যেনো বা একটি প্রার্থনার রূপ, অনুরূপ তুমি বুঝতে চাইলে নিজের বাইরে একটি বাতাস গাছ উপড়ে এলোমেলো করে ঘর। এবং আরো প্রলোভনসঙ্কুল দৃষ্টিতে অব্যাহত থাকে। আমিই সেই এলোমেলো বিবাগী ঘর।

তোমার চিত্রাঙ্গদাপর্বে আমি একটা জিরাফ এঁকে দিই। কালো রঙে। তুমি মধ্যে মধ্যে এমন কিছুর সন্ধান দাও যা আর কেউ পারে না। ওপরে ওঠতে ওঠতে, মেঘের ভিতর দিয়ে যেতে যেতে, পাশে পাহাড়ের খাঁজে, মাথায়, বুকের ভাঁজে মেঘের শৃঙ্গার দেখতে দেখতে আমার প্রথমেই যে কথাটা মনে হলো, এমন সুন্দরকে তোমার সঙ্গে বসে না দেখলে কখনো পূর্ণতা পাবে না। আমার মনে হলো বৃদ্ধ বয়সে হলেও একবার তোমার সঙ্গে যাবো আবার সেইসব সুন্দরের পেটের ভিতর। পরদিন মনে হলো, আমার আর কারো কথা কেনো মনে হলো না? উত্তর পাইনি। নিজের কাছে আশ্চর্য লাগছে নিজেকে। আসলে তুমিই আমার নারীসত্তা।

তোমার কণ্ঠ নীল, একটি চিৎকার ছুঁয়ে তীব্র কালশিটে দাগ বেরিয়ে চিত্রাভ শরীর থেকে। জল থেকে অপহৃত বাতাস যেমন পাতলা ঘনত্বের মধ্যে তার নখ ও নখরে চিরে দেয় বনান্তরের অনুভূতিকে, ঠিক তেমনিভাবে তোমার শরীরের সঙ্গে বেজে ওঠে আনন্দগান। এই গানের মুক্তি এই জগতে, তার ঠান্ডা পায়ের নিচে আশ্রয় নেয়, যেখানে সঙ্কুচিত নীল মাথা ঢাকবার জন্য একটি জাল আছে। প্রতিটি নৌকা একই সঙ্গে দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য। আমি তোমার পা ছুঁয়ে দিই আমার বরফহাতে।

তারপর মুখভঙ্গি খেলাচ্ছলে তুমি শোনালে বন্ধবাতাস এবং তার হৃদয়ের কম্পনের ইতিকথা। তার তীরে অদ্ভুত দূরবর্তী সুন্দর ভাঁজ খোলে, যেন এটা একটি প্রাচীন মানচিত্র, নিজেই নিজের মধ্যে অধিষ্ঠিত। তোমার নীল শিরা, নীল চোখ, চোখের পাপড়ি সকল অসুন্দরকে গ্রাস করে।

তোমার পূজাপর্ব থেকে বের হয়ে আসো, তুমি দুইচোখ বুজে আমার রক্তের ভিতর ঢুকে যাও। দেখো, কেমন করে তৈরি হয় গানের কথা। গানের কথাগুলি কাক হয়ে যায়। আমি তো কাকতাড়ুয়া নই। আমি নিজেই কাক। চলো, চিড়িয়াখানার জিরাফগুলোকে বের করে নিয়ে আসি। তারপর আসো তোমার সঙ্গে ঘুরি। আর আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামুক। ঝড়ে ভেঙে পড়ুক শিরীষগাছের শুকনো ডাল। আর তুমি আমার হাত ধরে ফুটপাথ থেকে রাস্তায় নামিয়ে নাও। আর নীরবে হেসে যায় তিনটি জিরাফ।

যে অজাত নোনা পৃথিবীর এত গভীর প্রণয়, আকাঙ্ক্ষা যেমন অনুভূত হবে তা থেকে অপহৃত রাস্তার আলো, মানে সোডিয়াম লাইটের অধীনে নীল ছায়া হাতাহাতি করে। মেঘ আর চাঁদ ভিড় করে।তুমি কার মুখ বহন করে দাঁড়িয়ে থাকো উত্তরের রাস্তায় প্রশ্নের আকরে? একটি মধ্যরাত্রির পুকুর, জবুথবু ফিরে আসে যে প্রথম বাড়ি ছেড়ে জলাশয়ে নেমে গিয়েছিলো রাত্রিপাওয়া সেইসব জিরাফের মতো।

তুমি জগতের সকল পুষ্পভার আমার হাতে দিয়ে হাসো। তোমার চোখের প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকে আমার রঙিন দীর্ঘশ্বাস। তোমাকে বুঝতে দিই না। বুঝতে না দেয়ার মধ্যে একধরনের আনন্দময় যন্ত্রণা আছে। সেটা সুন্দর। এবং তা থেকে সৃষ্টি হয়। কিন্তু আমি মনে মনে চেয়েছি। আমি মনে মনে চাইলে হয়, তুমি আমার হাত ধরো। এই আনন্দ আমি লুকিয়ে রাখি আমি আমার দীর্ঘশ্বাসের ভিতর।

তুমি কি দেখতে পাচ্ছ একটি শস্য অথবা একটি তৃণভূমিকে নদী ভিতর দিয়ে হেঁটে যেতে? ধানের মধ্যে বায়ুর মধ্যে তুমি তোমার হাত ঘষা পাতার মর্মরধ্বনি শুনতে নেচে বেড়াচ্ছো তোমার মতো। আমি সেইদিন সন্ধ্যায় ব্রিজের ধারে দাঁড়িয়ে তোমার জন্য একজোড়া ঘুঙুর কিনতে চেয়েছিলাম, জানো!

তোমার গুনগুন করা গান আমার বুকের ভিতর ঢুকে পড়ে। তোমার গানের ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকি তারপর। একটি বারান্দায় প্রাচীন এক কণ্টক দিয়ে গেঁথে রাখি উড়ুক্কু মৃত্যুসমগ্র। একটি নির্জন ফুল সেই মৃত্যুর পাশে বেড়ে ওঠে। আর রং বদল করে প্রতিদিন। প্রতিদিন বদলে যায় তার আলো ও অন্ধকার। প্রতিদিন বিভাবরী রাত আসে তোমার পায়ের পাশে নক্ষত্রের রূপ ধরে। সেইসব রাতের সৌম্য উপস্থিতি আমি ভালোবাসি। আমি দুঃখ ও আনন্দের ভিতর তোমার মুখ মনে করি।

আমি তোমার নারীসত্তা। আমি একটি ভাঙা হাসি ও হাজার স্মৃতির শিয়রে মধ্যরাত্রির হাওয়াকে আপন করে তোমাকে যাচনা করি। জলসংগীতে নৌকাবন্ধ ঘাট, পাখি ছেড়ে যায় সন্ধ্যার আকাশ। তারা একটি জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চেহারাহীন ওড়ে ওড়ে করে অর্থহীন ক্রন্দন। বিন্দু নেই, কাউকে স্মরণ করতে যে আকাঙ্ক্ষা লাগে তা তোমার ছোট রাত মনোমোহন কান্নার অখণ্ডতা থেকে উত্থিত। তুমি তো সেইই গীতবিতান যে আমার এই ভাঙাজগতের চিরবাহন, অনঙ্গ শৃঙ্গার।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১:৪০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন: প্রতারকদের ভীড়ে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রকৃত ভুক্তভোগীদের সহায়তা কার্যক্রম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৪


জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত হওয়ার ভুয়া দাবি করে সহায়তার টাকা নিতে গিয়ে ফাঁস হয়েছেন মামি-ভাগনে ফারহানা ইসলাম ও মহিউদ্দিন সরকার। তাঁদের জমা দেওয়া এক্স-রে রিপোর্ট যাচাই করে দেখা যায়, দুটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামনে বিপুল, বিশাল চ্যালেঞ্জঃ মোকাবেলায় কতটুকু সক্ষম বিএনপি?

লিখেছেন শেহজাদ আমান, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



১. ভুল রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, দূরদর্শিতার অভাব

বিএনপি বাংলাদেরশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। লোকবল ও জনপ্রিয়তায় তাঁর ধারেকাছেও নেই অন্যকোনো রাজনৈতিক দল। মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক ধারায় আছে বলেই বাংলাদেশের মধপন্থী ও উদারপন্থী... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ বিশ্বাস

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:০৮




সূরাঃ ৫৭ হাদীদ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩।তিনি প্রথম, তিনি শেষ, তিনি প্রকাশ্য, তিনি গোপন এবং তিনি সব কিছু জানেন।

সূরাঃ ১১২ ইখলাস, ১ নং আয়াতের অনুবাদ-
১।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চিঠি।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৩০



চিঠি: এক হারিয়ে যাওয়া অনুভূতির নাম

চিঠি—শুধু একটুকরো কাগজ নয়, এটি আবেগের স্পর্শ, অপেক্ষার মধুরতা, ভালোবাসার নিঃশব্দ উচ্চারণ। এক সময় মানুষের ভাব বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম ছিল এই চিঠি। স্বামী লিখতেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমা করবেন আরেফিন সিদ্দিক স্যার..

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৪ ই মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:৩৭


আরেফিন সিদ্দিক স্যারের লাশটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দিচ্ছে না। ক্যাম্পাসের সাথেই সংযুক্ত হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্সে লাশ রাখা। শহীদ মিনারেও শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দেবে না, ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদে হবে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×