somewhere in... blog

স্যরি ফর এভরিথিং...

২২ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রিয় নীলমেয়ে,
হয়ে যাইতে পারে এইটাই তোমারে লেখা আমার শেষ চিঠি। তাই যতোটুকু পারি একেবারে নিজের মতো কইরা লেখতে বসলাম। ভুল-টুল অবশ্যই হইবো, তবে আগাম ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি কামনা করার মতো বোকা এখনও আর আমি রই নাই। গত পাঁচদিনে আমার বয়স বাইড়া গেছে মোটামুটি পঁচিশ বছর। বর্তমান বয়সের সাথে আরো এই পঁচিশ যোগ করলে যা দাঁড়াইবো, তাতে তুমি আমারে নিশ্চিতভাবেই বুইড়া-টুইড়া বলা ডাকা শুরু কইরা দিবা। আমি জানি তো...

তোমার সাথে আমার পরিচয়টা খুব স্বাভাবিকভাবে। তুমি আমার বন্ধুর কোচিংমেট ছিলা। আমার না। আমার হইলেও প্রবলেম ছিলোনা। পরিচয় পর্বটা তবুও স্বাভাবিকই থাকতো। পরিচয়ের পরপরই তুমি আমি "লাভ এট ফার্স্ট সাইট" না কি যেনো আছে, সেটাতে মজি নাই। আমার স্পষ্ট খেয়াল আছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই তুমিই আমাকে ফার্স্ট আকর্ষণ করছিলা। তোমার আরেক কোচিংমেটের সাথে একটা ডুয়েট গান গাইছিলা তুমি। "আমার সারাটা দিন মেঘলা আকাশ/ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম... " শ্রীকান্তের এই গানটা।

আমার বন্ধুটা, যে তোমার কোচিংমেট। সে গানটা রেকর্ড করছিলো। রেকর্ড করা সেই গানটা শুনেই তোমার দিকে একটা অদ্ভুদ আকর্ষণ তৈরী হয়; যা শুধুই "মেয়েটাকে দেখতে চাই" এ সীমাবদ্ধ ছিলো। তখন আমি কোনোভাবেই মেয়ে কন্ঠের গান শুনতামনা। ভালোই লাগতো না। কিন্তু তুমি মেয়ের গানটা কেনো যেনো ভালো লেগে যায়। আসলে সবই কপালের খেলা...

একদিন তোমারে দেখলাম। সাদা সালোয়ার কামিজ পড়া ছিলা। চেহারায় স্পষ্ট আভিজাত্য। খুলে রাখা লম্বা চুল। যাতে আমার কোনোই আগ্রহ ছিলোনা। শুধু আমার মা চাইতো তার ছেলের বউয়ের যেনো লম্বা চুল থাকে। সেই সূত্রে তোমার লম্বা চুলও আমার ভালোই লাগলো। কপালে একটা বড় সড় সাইজের টিপ। কোনোদিনও যেই জিনিসটাকে পছন্দ করতে পারিনাই। তবুও সেদিন তোমার কপালে সেটা ভালো লাগলো। ভালো লাগার নিশ্চয় কোনো কারণ থাকে, আমার কারণ ছিলো- আমি আগেই তোমার দিকে আকর্ষিত হয়ে ছিলাম। সুতরাং তোমার যা যা দেখতে লাগলাম সবই মোটামুটি আমার পছন্দই হইলো।

তখনও আমার জানার কোনোই আগ্রহ নাই- তোমার একটা প্রেম আছে কিনা। তুমিও রাত জেগে জেগে ফোনের চার্জ খাও কিনা। কেনো সেই আগ্রহ জমে নাই- আমি জানিনা। আমার মতো একটা খুতখুতে মানুষ কিভাবে তখন তোমারে তোমার প্রেমের কথা জিজ্ঞেস করিনাই! এখনও ভাবলে চুল ছিড়তে ইচ্ছে করে।

বন্ধুর কাছ থেইকা তোমার ফোন নাম্বার নিলাম। তার আগে কোনোদিনও কোনো মেয়ের সাথে ২০ মিনিটের বেশি কথা বলিনাই। আর তোমার আগে আমার প্রেম বলতে কিছু ছিলোনা। তবে একজনের প্রতি একটু দূর্বল ছিলাম। যা তাকে বলার প্রয়োজন মনি করি নাই কোনোদিন। যা হোক, ফোন নাম্বার নিয়া তোমার ফোন দিলাম। তোমারে দেয়ার মতো কোনো পরিচয় সেদিন আমার ছিলোনা। দিলামও না। খালি বললাম- আপনার একটা গান শুইনা খুব পছন্দ হইছে। তাই কষ্ট কইরা আপনার নাম্বার কালেক্ট কইরা আপনার গলাটা একটু শোনার জন্য এই কাম করা। তোমার সাথে আমার প্রথম কলের সময়ের হিসাব হইলো ৫৫ মিনিট। সেই শুরু করলা আমারে দিয়ে কথা বলানি- আজও থামতে পারলাম না।

প্রথম কথায় কী কী বলছিলাম তোমারে, ঠিক মনে নাই। প্রেম ভালোবাসাজনিত কিছুই না- এইটা ঠিক মনে আছে। তোমাকে খুব স্পেশাল কিছু মনে হলোনা। জাস্ট এলাইক আদারস। তবে খুব খুব মুডি। বিশেষত প্রশংসা করার পরপর। তিনদিন গেলো। তোমার গলার আওয়াজও মোটামুটি ভুলার মতো অবস্থা। ঠিক তখনই তোমার একটা মিসড পাইলাম। খুব খুব স্বাভাবিকভাবে আমি তোমারে ফোন দিলাম। তোমার তখন খুব মন খারাপ। কারণ- তুমি নতুন জায়গায় ভর্তি হইছো। নার্সিংয়ে। মাথায় হালকা পাতলা একটা বাজ পড়লো। আমি তো আমার বউরে জব করামু না। বংশের মান ইজ্জত পুরাপুরি যাইতে আরো দুই তিন পুরুষ লাগবো। আমি একাই যদি সব শেষ করি, তবে ভবিষ্যত প্রজন্ম আমারে মাফ করবোনা। যা হোক, তোমার তখন মন খারাপ। শান্তনার বাণীর বই খুলে দিলাম- আরে, ব্যাপার না। নতুন জায়গা। সব ঠিক হয়ে যাবে। প্রথমে তোমার কন্ঠে জড়তা। তুমি আমার সাথে কথা বললে তোমার ভালোই লাগে। আমারও লাগে। তখন আমি তোমার প্রেমে ঠিক না পড়লেও তোমার সাথে কথা বলতে আমার ভালোই লাগে। সাবেক ওয়ারিদ, বর্তমান এয়ারটেল দিয়া তোমার ফোন দেই। তোমার জিপি। আমার ১.২০টাকা কইরা কাটে।

তোমার মন খারাপের দিনগুলোকে ভালো করতে করতে আমার দিন যায়। তখনও আমি জানিনা তোমার প্রেম আছে কিনা। একদিন তোমার মন প্রচন্ড খারাপ। কারণ জানতে বললা- সে তোমারে ফোন দেয় নাই। ইচ্ছে করলেই এখান দিয়ে তোমার সাথে দেখা করে যেতে পারে কিন্তু করে নাই...
আমি চুপ করে থাকলাম।

০২
মাত্রই ছয় মাসের প্রেম তোমার। প্রেমটা সত্যিকারের একটা সম্পর্কের দিকে যাচ্ছিলো। না, সেটা বিয়ে না। ভালোবাসা। তখন সেই তোমার তার জন্য তোমার সে কি অস্থিরতা। সব তুমি আমার সাথে শেয়ার করো। আমি না পারি তা শুনতে, না পারি ফোন রেখে দিতে। অদ্ভুদ এক মায়াটানে থুবড়ে পড়ে থাকি। না পারি তোমারে আমার দিকে টানতে, না পারি তার দিকে ঠেলে দিতে। নিছক ভদ্রতার খাতিরে আমি তোমার বোঝাই- আরে ব্যাপারনা, হয়তো ব্যস্ত সে। সময় হলেও তোমার কাছে আসবে।

কিন্তু না, তোমার সে তোমাকে পাত্তা দেয়না। আমি তোমাকে প্রতিদিনই কাদতে শুনি। নিজের জন্য তোমার মতো অস্থির একজনকে মনে মনে কল্পণা করি। একটা সময় তার সাথে অভিমানী হও তুমি। সে তো লা-পাত্তাই। তোমার সরল মনে দাগ ফেলে সে তার পথে। তুমি আমারে বলছিলা- তার সাথে গভীর সম্পর্ক ছিলো তোমার। যতোটা বাস্তবে, তারচেয়ে বহুগুণ বেশি অন্তরে। তারে তুমি খুবই ফিল করতা। তার জন্য কাদতা পর্যন্ত।

তার সাথে তোমার দূরন্ত বাড়তেই থাকলো। একটা সময় এক সপ্তাহ, পনের দিন পর্যন্ত তার সাথে তোমার যোগাযোগ হয়না। আমি সেধেই জিজ্ঞেস করি, সে ফোন করছিলো কিনা। তুমি রাইগা যাও। বলতেই দাও না তার কথা। আমি কিছুই মনে করিনা। আমাদের কথা চলতেই থাকে। এর মধ্যে তুমি তোমার কাছে থাকা একটা এয়ারটেল সিম চালানো শুরু করো। আমার এক টাকা বিশ পয়সার কলরেট নেমে উনত্রিশ পয়সায় আসে।

একদিন আমার বাসা ভর্তি মেহমান। আব্বার ছোটবেলার বন্ধু এসেছেন। সাথে তার স্ত্রী মা এবং দুই সন্তান। এক সন্তান আবার মেয়ে। ইন্টার দিবে না দিয়েছে, এমন বয়সের। আমারে নিয়া তার সাথে আমার খালা মা আর ফুপু ফিসফাস করে। আমার তাতে ঘোরতোর আপত্তি। তারা তবুও করে। রাগ করে রাতে বাসা থেকে বের হয়ে ফুপুর টেইলার্সে গিয়ে শুইলাম। শুয়ে শুয়ে তোমার সাথে অনেক কথা বললাম। কথা বলতে বলতে কিছু খাচ্ছিলাম বোধহয়। তুমি বললা- আমি কী খাই। কিছু না ভেবেই আমি বললাম- লাভ ইউ চানাচুর। তুমি হাসলা। তারপরও অনেক কথা বলে ঘুমাইলাম দোকানে।

সেদিন গভীর রাতে আগুন আগুন চিৎকার শুনে আমার ঘুম ভাঙে। ভয়ে ভয়ে উঠে দেখি- আমাদের পাশের পাড়ার বাজারে বিরাট আগুন। পাড়ার লোকদের সাথে মিশে আগুন নেভাতে অনেক দৌড়াদৌড়ি করলাম। ফিরা আইসা আবার শোয়ার আগে তোমার ফোন দিলাম। তুমি বললা- বাইরে টাইরে যাতে না যাই। কথা বলতে বলতে তোমারে কিভাবে যেনো বললাম- সম্ভব হলে তোমার সাথে প্রেম করতাম। আমি তোমার প্রতি কিছুটা দূর্বল।

তারপর থেকে তুমি আমারে "আপনি" থেকে তুমিতে আসার জন্য পীড়াপিড়ি করা শুরু করলা। আমি গেলাম না। তোমার একটা সম্পর্ক আছে তখন। আমি কেনো তাতে ঝামেলা পাকাবো? কিছুদিন গেলো। কথা চলছেই আমাদের। তুমি এখন তার কথা আর বলোনা। আমি বলতে চাইলে রাগারাগি করো। হঠাৎ একদিন এসএমএস দিলা- হঠাৎ আমার কী যে হলো জীবন খাতার পৃষ্ঠাটা যে উল্টে গেলো।

এসএমএসটা সিরিয়াসলী নিলাম না। তোমার আরো এসএমএস আসলো। আসতেই থাকলো। আমি সব ভুলে গেলাম। আজন্ম মুখচোরা আমি তোমাতে মজেই গেলাম। কিন্তু বললাম না কিছুই।

তুমি ক্লাসে যাওয়ার আগে আমার সাথে কথা বলো। ক্লাস থেকে এসে কথা বলো। ক্লাসে থাকতে থাকতে এসএমএস দাও। তোমার এসএমএসে আমার ফোনের মেমোরী ভরে যায়। এসএমএসগুলো আমি আমার পিসিতে টাইপ করে রাখি।
একদিন কী এক কারণে তোমার সাথে খুব ঝগড়া হয়। তুমি খুব ভয় পেয়ে যাও, আমার চলে যাওয়ার ভয়। তোমার একটা এসএমএস আসে তখন- শায়ের, তুমি কী চলে যাবা? তোমার তো যাবার কথানা।

এসএমএসটা ছিড়ে ফেললো কলিজা। ছেড়া কলিজার ফাঁক গলে তুমি কলিজায় ঢুকে গেলা...

০৩
১৫ জুন ২০১০, সব কিছু হয়ে গেলো। কী হলো? তা কি এখানে লেখবো? নাহ, লেখবো না...

খেয়াল করলাম আমি পারফেক্ট একটা মানুষ পেয়েছি। দিন যেতে থাকলো একেবারে আমাদের মতো করে। একেবারে আমাদের মতো। হঠাৎ ঝড় আসলো। বাবা মায়ের বড় সন্তান তুমি। বাবা রিটায়ার্ড হলে তোমাকেই বইতে হবে সংসারের বোঝা। আস্তে আস্তে তুমি আমার থেকে সরে পড়তে লাগলে...

অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী তোমার চাচাতো বড় ভাই তোমাকে তার কাছে নিতে চাইছে। সে স্ত্রী সন্তান নিয়ে সেখানেই থাকে। তোমার তাতে সম্মতি। তোমার ভাই তোমাকে বলেছে- আইইএলটিএস করতে। তুমি আমার কথা ভাবার সময় পেলেনা একটু আধটু জানিয়েই খোজ নেয়া শুরু করলে ঢাকায় কোথায় ভালোভাবে আইইএলটিএস করা যায়। আমি বিভিন্নভাবে বোঝাতে লাগলাম- না, আমি চাইনা তুমি বাইরে যাও। যা পারো দেশেই করো। আর আমি তো তোমার সাথেই আছি। তুমি চালাক হয়ে গেলে। আমার চেনা জানা সহজ সরল তুমি বদলে যেতে শুরু করলে। নিজে নিজেই খোজ নেয়া শুরু করলে তোমার জেলা শহর চাদপুরে। অবশ্য আমি তখনও জানিনা।

২০১১ এর ফেব্রুয়ারীতে আমি তোমার কাছে গেলাম। চাদপুরে। ১৫ জুন ২০১০ পর থেকে তোমার সাথে দুইবার দেখা হয়েছে মাত্র তখন। তোমার কাছে গিয়ে এক স্টাইলিশ তোমাকে আবিস্কার করলাম। তোমাকে আমি বোরকা পড়তে বলতাম। তুমি পড়তে। সেদিন তোমাকে আবিস্কার করলাম বোরকা ছাড়া। খুব স্টাইলিশাভাবে। এখানে একটা কথা বলা দরকার। বোরকা না পড়াটা অপরাধ নয়। কিন্তু আমি বড় হয়েছি রক্ষণশীল ধার্মিক পরিবারে। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই আমি চাইতাম আমার স্ত্রীও বোরকা পড়ুক। যা হোক, রাতে আমি চাদপুর পৌছলাম। রাতে আর তোমার সাথে দেখা হলোনা। কথাও হলোনা। চাদপুর এসে তোমার কাছে যে উম্মাদনা আশা করেছিলাম তার কিছুই পেলাম না। সারাটা রাত হোটেল তাজের রুমে শুয়ে শুয়ে কাদলাম আমি। তুমি তখন ঘুমে বিভোর...

সকালে তোমার সাথে দেখা হলো। আমাকে নিয়ে তুমি তোমার ছোটবোন বিজলীর কলেজে যেতে চাইলে রাজি হলাম। হেটে হেটে গেলাম তোমার সাথে। তখন তোমার হাত ধরে হাটতে চাইলাম আমি। তুমি হাত দিলেনা। প্রথমবার একটা হোচট খেলাম। কলেজে গিয়ে হোচট খেলাম আরো। ছোটবোনের বান্ধবীদের সামনে তুমি আমার পরিচয়টা দিতে পারলেনা। কাজিন-টাজিন কি যেনো বলে কোনো মতে আমার অস্তিত্বটাকে একটা পরিচয় করিয়ে দিলে। আমার তখন পাথর হওয়ার শুরু...

তারপর তোমার দুই বান্ধবী, তুমি আর বিজলীকে নিয়ে ঘুরলাম দুপুর পর্যন্ত। মেঘনার বুকে নৌকায় চড়ে কিছুটা সময় গেলো। দুপুরের পর ফেরার পালা। শহরে ফয়সার শপিং কম্প্লেক্সের নিচ তলায় তোমার সাথে দাড়িয়ে কথা বলছি আমি। হঠাৎ তোমার একটা ফোন এলো। ধরেই তুমি বললে- হ্যা, জিনিয়া- আমি তো বাস স্টান্ডে। দাড়া আসতেছি।

আমি তবদা খেলাম। জিনিয়ার ফোনটা তো তখন ছিলো বিজলীর কাছে। আর সে তখন তার হোস্টেলে। জিনিয়া জিনিয়ার হোস্টেলে। ফোনটা তবে কে দিলো? প্রথমবার তোমারে আমার সন্দেহ হইলো। সন্দেহ বলতে- তুমি আমার কাছ থেকে লুকাও- এই সন্দেহ। আমি তোমারে জিজ্ঞেস করলাম কার ফোন? তুমি বললে জিনিয়ার। জিনিয়ার ফোনটা যে বিজলীর কাছে, যখন আমি ধরিয়ে দিলাম। তুমি বললে- ঝুমু ফোন করছিলো। তোমার ভাইয়ের ফ্রেন্ড। কেনো? চাদপুরে ভালো আইইএলটিএস শেখা যায় কই, জানার জন্য তুমি তারে এসাইনমেন্ট দিছিলা; সেইটা জানানোর জন্য ফোন দিছে সে। আচ্ছা, সেদিন তো শুক্রবার ছিলো। তোমার কি বিকেলে তার সাথে ঘুরে বেড়াবার কোনো পরিকল্পণা ছিলো? না হলে আমি কিছুই জানিনাই কেনো?

নাহ, সেদিন তোমার সাথে যে ঝামেলা হইছিলো তা এখানে লেখা সম্ভব না। চাদপুরে হাসিমুখ রাইখা আমি কাদতে কাদতে চইলা আসলাম। আসার আগে তোমার যে এয়ারটেল সিমটা ছিলো তা তোমার আগের প্রেমিকের দেয়া- এটা জানলাম। সেটা দাত দিয়ে কামড় দিয়ে ভেঙ্গে দিয়ে আসলাম। কিছুদিন পর আমার নামের সাথে মিলায়া একটু নতুন সিম কিনে দিলাম তোমারে।

০৪
দিনে দিনে দিনগুলো খারাপ হতে লাগলো। এর মধ্যে তোমার ছোটবোন একটা ভাই বানাইলো- মামুন নাম। কেমন ভাই তোমারে আমি জিগাইলে বললা- ভাই, এমনিই ভাই। সে বিজলীকে ছোটবোন মনে করে। তুমিও খুব সুন্দর ভাইয়া ভাইয়া বলা শুরু করলা। একদিন ভোরে তোমারে ওয়েটিংয়ে পাইলাম অনেকক্ষণ। জিগাইলাম কার সাথে বললা ভাইয়ার সাথে। একদিন সন্ধ্যায় তোমার ওয়েটিং ছোটেই না। জিগাইলাম কার সাথে। এবার মামার সাথে। দুইদিন পর আবিস্কার করলাম- ভোরের ভাইয়া আর সন্ধ্যার মামা দুইজনই একজন! আর সে তোমার পুরনো প্রেমিক!!!

তোমারে অকথ্য ভাসায় গালাগালি করলাম। আমি জীবনেও যে সব শব্দ উচ্চারণ করিনাই, তাই তোমারে বললাম। "কঠিন বচন শুনায়ে তোমারে আপন মর্মে জ্বলি..." আমার তখন খুব খারাপ দিন। তুমি সিদ্ধান্ত নিলা আমার সাথে থাকবা না। খুব বুঝাইলাম। তোমার ভুল ছিলো। তাই রাগারাগি করছি। তোমার মারাত্মক ভুল ছিলো। তুমি কিছুই মানলানা। আমার থেকে চলেই যেতে চাইলা। যন্ত্রণায় তোমার কাছে খুব কান্নাকাটি করলাম। তোমার মা বললো- আমার মায়াকান্নায় কান না দিতে...

আমার বিশ্বাসের প্রাচীর ভেঙ্গেচূড়ে মরুভূমীর বালু হয়ে গেলো। তোমার সাথে কাটানো রাতগুলোকে অসহ্য স্মৃতি মনে হতে লাগলো। তবুও দাতে দাত চেপে ধৈর্য ধরলাম। সাত সাতটা দিন আমার মৃত অবস্থায় গেলো।
তারপর তোমার মনে হইলো আমারে ছাড়া তুমি পারবানা বাচতে। তুমি ফিরা আসলা।

তোমারে খুব করে বুঝাইলাম তোমার ভুল হইছে। তুমিও মানলা। আমার বাড়ীতে, আমার ঘরে আইসা আমাকে ঝড়ায়া ধইরা খুব কান্নাকাটি কইরা ক্ষমা চাইলা। আমি ভুইলা গেলাম। আবার ভালো দিন আসলো। কিন্তু, বিশ্বাসের ভাঙ্গা প্রাচীর বড়ই নড়বড়ে হয়ে গেলো। তোমার ফোন ওয়েটিঙয়ে পাইলেও আমার সন্দেহ হইতো। বলে বোঝাতে পারবোনা নিজের স্ত্রীকে সন্দেহ করার চেয়ে লজ্জা ও যন্ত্রণার কাজ পৃথিবীতে আছে কিনা!

এর মধ্যে আমি বাসায় সব জানিয়ে দিছি। আব্বা মা খুব কষ্ট পাইলেও আমারে কেউ কিছু বললোনা। আব্বা শুধু বললো- মেয়ের পড়ালেখা কতোটুকু বাকি। আমি বললাম দুই বছর। আব্বা চুপ। দুই বছরের অপেক্ষায় বসলো।

০৫
এখন দুই বছর শেষের পথে। তোমার সাথে ১০ থেকে ১৫ বার দেখা হইছে আমার। এই তো রোজার কিছু দিন আগে থেকে তোমার সাথে সম্পর্কটা ভয়ানক খারাপ হয়ে গেছে। বারবার চাইছি সম্পর্কের কথাটা তোমার গার্ডিয়ানদের জানাতে তুমি রাজি হওনি। তোমার মা জানেন যে, আমার সাথে সম্পর্ক আছে। এমনকি তুমি ঢাকা এসে আমার সাথে থেকে যাও, তাও তিনি জানেন। তবুও তিনি কেনো আর কিছু জানতে চান না, তা আমি বুঝিনা।

ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়ে তুমি আমার সাথে কথাই বলোনা। জানতে চাইলে বলো ব্যস্ত। কথা না বলতে পারার যন্ত্রণায় আমি কেদে দিলাম সে দিন রাতে। তুমি আমাকে একটা কল ব্যাক করে শান্তনাটা পর্যন্ত দিলেনা। পরের দিনও না। ঈদের দিন রাগ করে ফোন বন্ধ রাখলাম। বিকেলে তুমি ফুপুর ফোনে কল দিয়ে আমাকে বললে শুধুমাত্র মানবতাবোধ থেকে আমাকে কল করেছো...!! একদম বোকা হয়ে গেলাম।

ঈদের আগের দিন, ঈদের দিন তুমি তোমার স্কুলবন্ধু সজিবের সাথে কথা বললে। নিজে ফোন করেই বললে- জানতে চাইলাম কেনো, তার সাথে কী কথা? তুমি বললা- এটা তোমার পার্সোনাল মেটার... থ হয়ে রইলাম। আর এখন তোমার ফোন বন্ধ। যদিও তোমার মা বললো- ফোন তো তোমার সাথেই। নতুন সিম কিনেছো নাকি?

ভাবতেও অবাক লাগে- এই তুমিই এক সময় শুধুমাত্র আমি বসে থাকতে বলছি বলেই বসে থাকত। কোনোদিন জিজ্ঞেসও করতানা কেনো বসে থাকতে বললাম...

০৬
একটা কঠিন সিদ্ধান্তে আমাকে আসতেই হচ্ছে। আমি তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসি। বারবার তোমার কাছে বিভিন্নভাবে অপমানিত হওয়ার পরও তোমার থেকে দূরে সরে যেতে পারিনি। তোমাকে আমার চাই ই চাই। আর এই তীব্র চাওয়া থেকেই একটা রিস্ক নিচ্ছি... হয়তো পাবো, নয়তো চিরতরে হারাবো। তবু এমন ঝুলন্ত জীবন ভালো লাগছেনা...

স্যরি ফর এভরিথিং...

৪৫৬ বার পঠিত
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এক্স লইয়া কি করিব

লিখেছেন আনু মোল্লাহ, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫১

যাচ্ছিলাম সেগুনবাগিচা। রিকশাওয়ালার সিট কভারটা খুব চমৎকার। হাতে সেলাইকরা কাঁথা মোড়ানো। সুন্দর নকশা-টকশা করা। নর্মালি এররকম দেখা যায় না। শৈল্পিক একটা ব্যাপার। শুধু সিটকভার দেইখাই তার-সাথে কোন দামাদামি না কইরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইলিশনামা~ ১

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


১৯৮৫ সালে ডক্টর মোকাম্মেল হোসাইন ‘ ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে যেই রিসার্চ পেপারটা( থিসিস – এম এস এর জন্য) জমা দিয়েছিলেন সেটা এখানে মিলবে;
[link|https://open.library.ubc.ca/cIRcle/collections/ubctheses/831/items/1.0096089|Spawning times and early life history of... ...বাকিটুকু পড়ুন

৯০% মুসলমানের এই দেশ? ভারতে কতগুলো মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির করা হয়েছে? গতকালও ভারতে মসজিদের পক্ষে থাকায় ৩ জন মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৪২

সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার | SAD

লিখেছেন আজব লিংকন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৩



শীতকালীন সর্দি-কাশি, জ্বর, হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, কনজাংকটিভাটিস, নিউমোনিয়া কিংবা খুশকি মতো কমন রোগের কথা আমরা জানি। উইন্টার ডিসঅর্ডার বা শীতকালীন হতাশা নামক রোগের কথা কখনো শুনেছেন? যে ডিসঅর্ডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্টগ্রাম আদালত চত্বরের একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি

লিখেছেন শান্তনু চৌধুরী শান্তু, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮



আজ চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তা নানান গুজব ও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা এড়াতে প্রকৃত ঘটনাটি নিরপেক্ষভাবে একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×