ক্যারিয়ারের শুরুতেই এতো বড় হাসপাতালে কাজ করতে পেরে দিপু খুব উচ্ছ্বসিত। আরো উচ্ছ্বসিত এখানকার কাজের ধারা দেখে। সবকিছুতেই আন্তর্জাতিক মানের ছাপ রাখার প্রচেষ্টা আছে। এই তো, কয়েকদিন আগে একটি নিয়ম ঘোষণা করা হয়েছে- কোনো রোগী আইসিইউ ছাড়া অন্য কোনো ওয়ার্ড বা কেবিনে মারা যাবে না! প্রথমটায় দিপু খুব অবাক হয়েছিলো। পরে বুঝতে পারলো, রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে গেলে যেনো দ্রুত আইসিইউতে নিয়ে গিয়ে সর্বশেষ চিকিৎসা দেওয়া যায়, যাতে কোনো রকম বিলম্বতার কারণে রোগীর জীবন প্রদীপ নিভে না যায় সেজন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দিপুর এই নিয়মটা খুব পছন্দ হয়েছে। এই নিয়মের জন্য কোন রোগীর ক্ষেত্রে অরেঞ্জ কোড ডাকতে হবে আর কোন রোগীর ক্ষেত্রে ব্লু কোড ডাকতে হবে- সেটা নিয়ে আর ঝামেলা পোহাতে হয় না।
অবশেষে হাসপাতালের কাছে এসে বাস থেকে নামতে পারলো দিপু। বাস স্টপ থেকে হাসপাতালে রিকশায় যেতে পাঁচ মিনিটের মতো লাগে, হেঁটে গেলে আরেকটু বেশি। দিপু সাধারণত রিকশাতেই যায়। কিন্তু আজকের রাতটা পূর্ণিমা মনে হচ্ছে, মৃদু মন্দ হাওয়াও বইছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত আটটা বেজে গেছে। রাতের ডিউটি আওয়ার শুরু হয়ে গিয়েছে। তবুও রিকশায় না উঠে দিপু হাঁটা শুরু করলো। ভালোই লাগছিলো আনমনে হেঁটে যেতে। এই সময়টাতে অনেককিছুই চিন্তা করা যায় আর প্রকৃতির নির্মল হাওয়াও উপভোগ করা যায়।
প্রকৃতির নির্মল হাওয়া যে সবসময় উপভোগ করা ভালো নয়, সেটা দিপু বুঝতে পারলো ইভিনিং ডিউটির ডাক্তারের কাছ হতে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার সময়। নির্ধারিত সময় থেকে দশ মিনিট দেরী হবার জন্য প্রথমেই কিছুক্ষণ কথা শুনতে হলো। অথচ দিপুর মনে আছে, গত সপ্তাহে এই ডাক্তার যখন রাতের ডিউটিতে প্রায় আধা ঘন্টা দেরী করে এসেছিলো, তার কথায় মনে হয়েছিলো এটি একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। আজ গনেশ উল্টে গেলো! তাই যখন দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছিলো, অভিমানে যেনো কানে কোনো কিছুই ঢুকছিলো না! হঠাৎ করেই যেনো শুনতে পেলো, ইভিনিং ডাক্তার বলছে, “২০৫ নম্বর কেবিনে ভিআইপি রোগী আছে। সবার আগে উনাকে ফলোআপ দিবে। আর ২০৬ নম্বর কেবিনের রোগীটা সন্ধ্যা থেকেই ঘুমিয়ে আছে, তাই আমি সন্ধ্যার ফলোআপ দিই নি। তুমি এই রোগীটাও আগে আগে দেখে নিও”।
দায়িত্ব বুঝে নিয়ে দিপু প্রথমেই চিন্তা করলো ২০৬ নম্বর কেবিনে যাবে। বৃদ্ধ মানুষ! দুই দিন ধরে আছে- এওরটিক এনিউরিজমের রোগী। দুই একদিনের ভিতরেই বোধহয় অপারেশন হবে। মানুষটিকে দেখতে আসা লোকের সংখ্যা নেই বললেই চলে। গত দুই দিনে তেমন কাউকে আসতে দেখেনি দিপু। ওরই বয়সী এক মেয়ে সবসময় থাকে। আলাপ করে জানতে পেরেছিলো মেয়েটি হচ্ছে বৃদ্ধ মানুষটির নাতনী। তার একমাত্র ছেলে দেশের বাইরে থাকেন, আরো সুস্পষ্ট করে বললে আমেরিকায় থাকেন, নাতনী দেশে ছুটি কাটাতে এসেছে। কয়েকদিন পর চলে যাবে, তার আগেই দাদার শরীর খারাপ! দেশে তেমন কাউকে সে চিনে না, খবরও দিতে পারে নি, অবশ্য নবনীতার দাদাও চায়নি কাউকে খবর দিতে। হ্যাঁ, মেয়েটির নাম নবনীতা। গতকালকে দিপুকে জানিয়েছিলো- ওর বাবা দুই-এক দিনের মধ্যেই দেশে চলে আসবেন, এরপর দাদার অপারেশন শেষ করেই একসাথে বাবা আর মেয়ে আমেরিকায় ফিরে যাবে।
নবনীতাকে দিপুর খুব ভালো লাগে। আরো ভালো লাগে ওর সাথে কথা বলতে। গত দুই দিনে ইভিনিং ডিউটি থাকাতে যদিও খুব একটা কথা বলা যায় নি, কিন্তু আজ রাতের ডিউটি! সময় আছে অনেক, গল্পও করা যাবে অনেক! একজন নার্সকে নিয়ে ২০৬ নম্বর কেবিনে ঢুকে দিপু দেখলো – রোগী এখনো ঘুমুচ্ছেন। নবনীতাও নেই। দিপু রোগীকে আর জাগাতে চাইলো না, ঠিক করলো সবগুলো কেবিনের ফলোআপ দিয়ে আবার এই কেবিনে আসবে। ততক্ষণে হয়তোবা নবনীতাও বাইরে কোথাও গিয়ে থাকলে, চলে আসবে।
প্রায় ঘন্টা খানেকের মতো লাগলো সব রোগী ফলোআপ দিতে। নার্সকে জিজ্ঞেস করলো, ২০৬ নম্বরের রোগীর এটেন্ডেন্ট এসেছে কি না। ঠিক এই সময়েই দিপুর মোবাইল ফোন বেজে উঠলো। স্ক্রীনে তাকিয়ে দেখলো নবনীতা! গতকালকেই নবনীতা দিপুর নম্বর নিয়েছিলো। কেনো জানি ওর ধারণা হয়েছে, এখানে ডাক্তাররা রোগী সম্পর্কে সব কথা খুলে বলে না। তাই ওর যখনই প্রয়োজন হবে, দিপুকে ফোন দিবে এবং দিপুও রোগী সম্পর্কে যতটুকু জানে সব বলবে, কিছু গোপন করবে না!
“হাই দিপু! কেমন আছো তুমি?” ফোনের অপরপ্রান্তে নবনীতার মিষ্টি রিনরিনে কন্ঠস্বর শুনে দিপুর খুব ভালোই লাগলো। এক ঘন্টা যাবত রোগী দেখার ক্লান্তি নিমিষেই যেনো উবে গেলো। “ভালো, তুমি কি কেবিনে আছ? আমি আসছি এখনই,” দিপুর যেনো এখন একমাত্র কাজ ২০৬ নম্বর কেবিনের রোগী দেখা!
- না, আমি কেবিনে নেই। গত দুইদিন ধরে হাসপাতালে আছি বলে বিকেলের দিকে দাদা জোর করে বাসায় পাঠিয়ে দিলেন। বললেন, এখানে নার্স, ডাক্তার – সবাই আছেন, কোনো সমস্যা হবে না। আমি তাই চলে এলাম, আগামীকাল সকালে আবার আসবো। আমার মনে আছে, তুমি গতকাল বলেছিলে, আজ তুমি রাতে থাকবে। দাদাকে দেখেছ?
- তোমার দাদা ঘুমুচ্ছেন। তাই আমি আর ডিস্টার্ব করিনি। তবে এখন যেহেতু সব রোগী দেখা শেষ, এবার ঘুমুলেও আর রেহাই নেই! ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেখবো! সমস্যা নেই, তুমি চিন্তা করো না। আগামীকালও আমার রাতের ডিউটি- দেখা হবে নিশ্চয়ই।
দিপু আজ নবনীতাকে দেখতে না পেয়ে অনেকখানি হতাশ হলো। ২০৬ নম্বর কেবিনের দিকে এগোতে গিয়ে হেসে উঠলো দিপু। ডাক্তারের সাথে রোগীর নাতনীর প্রেম!
বৃদ্ধ মানুষটি এখনো ঘুমিয়ে আছেন! দিপু কাছে গিয়ে মৃদুভাবে ডাকলো। মানুষটি এখনো ঘুমিয়ে আছেন! শরীরের উপর দেওয়া চাদরটি সরিয়ে হাত দিতেই চমকে উঠলো দিপু। শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে! রাইগর মর্টিস শুরু হয়ে গেছে! হতভম্বের মতো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো দিপু। সম্বিত ফিরে পেতেই কেবিনের বাইরে এসে দ্রুত ইভিনিং ডাক্তারকে ফোন করলো, “ভাইয়া, আপনি ২০৬ নম্বর কেবিনের রোগীকে শেষ কখন দেখেছেন?” “বিকাল পাঁচটার দিকে উনার নাতনী যখন চলে যায়, তখন শেষবার দেখেছিলাম। ছয়টার সময় ফলোআপে গিয়ে দেখি ঘুমুচ্ছেন, তাই উনাকে আর জাগাই নি। এরপর আর সময় পাইনি। কেনো, কি হয়েছে?” “কিছু না!” অস্ফুট স্বরে বলে ফোন রেখে দিলো দিপু। কেবিনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্সকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো নাইট ডিউটিতে আসার পর ২০৬ এর রোগীকে দেখা হয়েছে কি না।
“আমি তিনটি কেবিনের দায়িত্বে। রাত আটটায় এসে উনার কেবিনে গিয়ে দেখি ঘুমুচ্ছেন। উনি রাতে কোনো ঔষুধও পান না। তাই আর ডিস্টার্ব করিনি, ভেবেছিলাম আপনি যখন দেখবেন- তখন আমিও আমার ফলোআপ দিবো”, আমতা আমতা করে জবাব দিলো নার্স। “তারমানে আপনি ডিউটিতে আসার পর এই দুই ঘন্টায় উনাকে একবারো দেখেন নি!”, চিৎকার করে উঠলো দিপু।
“আপনিও দেখেননি!” নার্সের কথায় যেনো পরক্ষণেই চুপসে গেলো দিপু। ধাতস্থ হয়ে ইভিনিং নার্সকে ফোন করে জানতে চাইলো রোগীর সাথে কখন শেষ কথা হয়েছে। ইভিনিং নার্সও ইভিনিং ডাক্তারের মতো একই জবাব দিলেন। বিকাল পাঁচটার সময় নবনীতা হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার সময়ই বৃদ্ধ মানুষটিকে দেখেছিলেন নার্স। এরপর আরো দুইবার কেবিনে এসেছিলেন, ঘুমাচ্ছে দেখে একবারো জাগান নি! দিপু হিসেব করে দেখলো প্রায় চার- পাঁচ ঘন্টার কোনো ফলোআপ নেই। এতো বড় এক হাসপাতালের এই অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো দিপু। আবার দৌড়ে কেবিনে ঢুকে বৃদ্ধ মানুষটিকে দেখলো। শান্ত সৌম্য চেহারা নিয়ে শুয়ে আছেন তিনি, ঘুমের মধ্যেই মারা গেছেন। রাইগর মর্টিস দেখে মনে হচ্ছে চার- পাঁচ ঘন্টা হবেই, নার্স এবং ইভিনিং ডাক্তারের সাথে কথা বলেও মনে হচ্ছে তাই।
দিপু প্রফেসরকে ফোন দিলো।
- স্যার, ২০৬ নম্বর কেবিনের রোগী মারা গেছেন! দেখে মনে হচ্ছে চার পাঁচ ঘন্টা আগেই মারা গেছেন!
- কি বলছ তুমি? উনি মারা যেতেই পারেন, এওরটিক এনিউরিজম সম্ভবত রাপচার হয়ে ব্লিডিং হয়েছিলো। কিন্তু এতো দেরীতে ব্যাপারটা ধরা পরলো কেনো?
- স্যার, পাঁচটার পর থেকে উনি ঘুমুচ্ছিলেন বলে কেউ আর উনাকে ডিস্টার্ব করেন নি। আমি এখন ফলোআপ দিতে গিয়ে এই অবস্থা দেখি।
- এখনতো রাত দশটার উপরে বাজে। তোমার ডিউটিতো শুরু রাত আটটায়। ফলোআপ দিতে এতো দেরী হলো কেনো?
- আমিও উনি ঘুমুচ্ছিলেন দেখে প্রথমবার দিইনি।
- ঠিক আছে। এখন কিছুই করার নেই। রোগীর এটেন্ডেন্টও টের পায় নি?
- স্যার, পাঁচটা থেকে রোগীর এটেন্ডেন্ট হাসপাতালে নেই, আজ বাসায় চলে গিয়েছেন। এখনও রোগীর সাথে কেউ নেই।
- তাই! তুমি এক কাজ করো- দ্রুত আইসিইউ এর ডাক্তারের সাথে কথা বলে রোগীকে আইসিইউতে ট্রান্সফার করো, রোগীর ফাইলে বিকাল পাঁচটার পর আরো দুইটি ফলোআপ দিয়ে দাও আর রোগীর এটেন্ডেন্টকে ফোন করে জানিয়ে দাও রোগীর অবস্থা খুব খারাপ, আমরা আইসিইউতে ট্রান্সফার করছি। কোনো অবস্থাতেই যেনো সে জানতে না পারে, রোগী পাঁচ ঘন্টা আগেই মারা গেছে।
- স্যার, এ আপনি কি বলছেন? মৃত ব্যক্তিকে কিভাবে আইসিইউতে ট্রান্সফার করবো? আর তাছাড়া আইসিইউ-এর ডাক্তারই বা কেনো মৃত রোগী গ্রহন করবে? আর রোগীর ফাইলে অতিরিক্ত ফলোআপ কিভাবে লিখব?
- মাত্র পাশ করেছ? রোগীর ফাইলে অতিরিক্ত ফলোআপ লিখবে, কারণ তা না হলে তোমারই সমস্যা হবে। ডিউটিতে আসার পর দুই ঘন্টা পার হয়ে গেছে- এখনো ফলোআপ দাওনি কেনো- এ প্রশ্নের কি জবাব দিবে? আর হাসপাতালের নিয়ম জানো না? কোনো রোগীর ডেথ ডিক্লেয়ার আইসিইউ ছাড়া অন্য কোথাও হবে না! যেভাবে বলছি সেভাবে কাজ কর।
রুক্ষ স্বরে কথাটা বলেই প্রফেসর ফোনের লাইন কেটে দিলেন। দিপু ঘোরের মধ্যে আইসিইউ-এর মেডিকেল অফিসারকে ফোন করে সব কথা জানিয়ে ডেথ বডি নিয়ে আইসিইউ-এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো। যাওয়ার আগে নার্সকে বলে গেলো রোগীর এটেনডেন্টকে ফোন করে যেনো জানিয়ে দেয় রোগীর অবস্থা হঠাৎ করেই খুব খারাপ হয়ে গেছে, তাই আইসিইউ-তে ট্রান্সফার করা হয়েছে। দিপুর নিজের সাহস হলো না নবনীতার সাথে কথা বলার!
আইসিইউতে নিয়ে যাওয়ার পর একপাশে সরে গিয়ে দিপু আইসিইউ-এর ডাক্তারদের কাজ দেখতে লাগলো। মৃত ব্যক্তিকে ভেন্টিলেটরের সাথে সংযোগ করে দেওয়া হলো। দেওয়া হলো সিভি লাইন। তারপর চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা হলো পুরো শরীর, শুধুমাত্র গ্রীবা থেকে মাথা পর্যন্ত উন্মুক্ত। দিপু এগুলো দেখতে দেখতে যেনো অসুস্থ হয়ে পড়ছিলো। মনে পড়ে গেলো মেডিকেলে ভর্তির প্রথম দিনের শপথ নেওয়ার কথা। মনে পড়ে গেলো লেকচার ক্লাসে প্রফেসরদের বাহারী নীতি কথা। মনে পড়ে গেলো সেইসব রোগীদের কথা যারা চিকিৎসা নিতে এসে ঈশ্বরের পর ডাক্তারদেরকেই দ্বিতীয় ঈশ্বর মনে করে! এমন সময় ফোনের রিং টোনের শব্দে বাস্তবে ফিরে এলো দিপু। স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে দেখে নবনীতা নামটি উঠানামা করছে। ফোনের সংযোগ কেটে মোবাইল সুইচড অফ করে দিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল দিপু! নার্সেস স্টেশনে বসে নবনীতার দাদার ফাইলে দুটি অতিরিক্ত ফলোআপ লিখতে বসলো।
নার্সেস স্টেশনের একটি চেয়ারে চুপচাপ বসে আছে দিপু। পাশে আইসিইউ-এর ডাক্তাররা গল্প করছে। শুনছে, একজন ডাক্তার অন্য একজনকে বলছে, রোগীর এটেন্ডেন্ট আসলে প্রথমে বলতে হবে- অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল। এখন দেখা যাবে না। রোগীকে কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাস যন্ত্রের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। রোগীকে বাঁচানোর জন্য খুব চেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু আশা না করাই ভালো! এরপর সিদ্ধান্ত হলো, প্রথমবার কথা বলার আধা ঘন্টা পরেই ডেথ ডিক্লেয়ার দেওয়া হবে। কথা বলবে না বলবে না করেও দিপু জানতে চাইলো, “এইসব এক্টিভিটির কি বিল ধরা হবে?” “কেনো নয়? রোগীর জন্য অক্সিজেন খরচ হচ্ছে না? মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে না? আইসিইউ-এর একটি বেড ব্যবহার করা হচ্ছে না?” অবাক হয়ে আইসিইউ-এর সবচেয়ে বয়স্ক ডাক্তারটি পাল্টা প্রশ্ন করলেন দিপুকে! দিপু কোনো উত্তর দিতে না পেরে নিচের দিকে তাকিয়ে অনবরত হাতের নখ খুঁটতে লাগলো।
একসময় খবর এলো রোগীর এটেন্ডেন্ট এসেছে। আইসিইউ থেকে একজন ডাক্তার বের হয়ে কিছু সময় পর আবার ভিতরে এলেন। হাসতে হাসতে অন্য ডাক্তারদের বলতে লাগলেন, “দেশী মেয়ে, আমেরিকা প্রবাসী। দেখতেও সুন্দর! বুঝিয়ে এসেছি। আধা ঘন্টা পরে গিয়ে আবার দেখা করে আসবো!”
দিপুর আর কিছু ভালো লাগছিলো না। দম বন্ধ অবস্থায় আইসিইউ থেকে বের হয়ে এলো। বের হয়েই নবনীতার মুখোমুখি!
“আমি তোমাকে ফোন দিতে দিতে অস্থির হয়ে গেছি! তোমার মোবাইল সুইচড অফ কেনো? আমার দাদা কেমন আছেন?” উদ্বিগ্ন কন্ঠে জানতে চাইলো নবনীতা। নবনীতার দিকে তাকিয়ে এক কাষ্ঠ হাসি দিলো দিপু। অতি কষ্টে বলতে পারলো, “তোমাকে একটু আগে আইসিইউ-এর ডাক্তার সবকিছু বলে গেছেন। আমারো সেই একই কথা। তুমি বরঞ্চ ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করো তোমার দাদাকে যেনো তিনি আর বেশীক্ষন কষ্টে না রাখেন!” কথাটা শেষ করেই দিপু আর একমুহূর্ত দাঁড়ালো না। দ্রুত সেখানে থেকে চলে আসার চেষ্টা করতে লাগলো, চোখ কেনো যেনো আদ্র হয়ে উঠলো। একটিবার তখন পিছনে ফিরে তাকালে দেখতে পেতো, ওর দিকে তাকিয়ে থাকা নবনীতার বোবা চাহনি!