আজ বিকাল চারটার সময় মতলব আইসিডিডিআর,বি-তে আমরা যখন তিন মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করছিলাম, তখনই চিন্তা করিনি একটু পরেই এক অদ্ভূত ঘটনা ঘটবে! নিরবতা পালন শেষে যখন হাসপাতালে ঢুকবো, এক অজানা নম্বর থেকে এক ফোন এলো। "হ্যালো" বলার পর অপর প্রান্ত থেকে একজন মধ্য বয়স্ক কন্ঠের এক পুরুষ জানতে চাইলেন আমি ডাঃ নিয়াজ কি না!
যখন তিনি নিশ্চিত হলেন, আমিই ডাঃ নিয়াজ, উনি বললেন, "আমি শেখ ফজল, জামালপুর থেকে বলছি। আমি প্রজন্ম চত্বর নিয়ে একটি কবিতা লিখেছি। আপনি কি এই কবিতাটি সেখানে আবৃত্তি করানোর ব্যবস্থা করতে পারবেন?" আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না! হতভম্ব ভাবটা কাটিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম- আমার কথা কে বললো বা আমার ফোন নম্বর কোথায় পেলেন? জানতে পারলাম, নেটে আমার সুড়ঙ্গ ব্লগ থেকে আমার সম্পর্কে জেনেছেন এবং সেখানে আমার ফোন নম্বর পেয়েছেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম, "আমি আসলে এই ব্যাপারে যোগ্য ব্যক্তি নই। তবে আপনি আমার কাছে মেইলে কবিতাটি পাঠিয়ে দিতে পারেন, আমি ফেসবুকে শেয়ার করতে পারি। সেই রকম কারো চোখে যদি পড়ে, তাঁর যদি ভালো লাগে- তাহলে আপনার আবেগ দিয়ে লেখা এই কবিতাটি উনি প্রজন্ম চত্বরে পড়তেও পারেন। আর যদি না আবৃত্তি করা হয়, আমায় ক্ষমা করবেন"।
তিনি আমাকে কবিতাটি পাঠিয়েছেন। আমি হুবুহু তুলে দিলাম--
তুমিই একমাত্র পার
-----শেখ ফজল
উৎসর্গ: প্রজন্ম চত্ত্বর সমীপে
ওগো, জন্মভূমি মা আমার,
আমরা তোমার সন্তান সন্ততিরা-
মহা ঘোরকাল অতিক্রম করছি!
পৃথিবীর জাতি গোষ্ঠিতে যখন
বাঙ্গাল বলে পরিচিত ছিলাম,
ধর্মভাইদের লম্বাহাত থেকে-জাতিগত পরিচয়ের
সনাক্তচিহ্ন-মাতৃভাষাটুকু রক্ষা করতে
কতই না নির্যাতন-অপমান,প্রাণসংহার,
সরিষাভূতের ষড়যন্ত্র সহ্য করতে হয়েছে।
সেই সব নির্মম, নিষ্ঠুর, নিপীড়নই-শিক্ষা দিয়েছে আজ-
আত্মমর্যাদা, আত্মধিকার এবং স্বাধীনতার মূলমন্ত্র।
মাগো, একাত্তরের সেই ১১ সেক্টরের বীরচিত যুদ্ধ-
হিমালয় সমান, জগদ্দল অগ্নিযুগের মর্ম ব্যথা-
মরুভূমির লু-হাওয়াসম শোক-বিরহের হাহাকার-
মেঘে ঢাকা চাঁদের মত অম্লান কলঙ্ক-
কত বধ্যভূমিতে বুদ্ধিজীবিগণের প্রাণ উৎসর্গ ।
কত যুদ্ধশিশুর উদাস চাওনির অসহায়ত্ব-
কত বঙ্গমাতার-লাজে নত ঘোমটার অশ্রুরুদ্ধ অভিমান-
কত শহীদানের বীরচিত আত্মদানের মহিমা-
মা-তোমাকে করেছে আজ গরীয়ান গরীয়সী।
তুমি স্বগর্বে পৃথিবীতে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছো।
সবুজ আচল বিছিয়ে দিয়েছো তোমার পরিসীমায়।
তুমি আজ বিশ্ব দরবারে বাংলা ভাষার গরীয়সী জন্মদাত্রী।
আজ তোমার সন্তানেরা বিন্দু বিন্দু ঐশ্বর্য সঞ্চয় করে,
তোমাকে ঐশ্বর্যবান করে তুলেছে।
আজ তোমার সন্তানেরা নিজ পায়ে দাঁড়িয়ে-
আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখছে।
আজ তোমার সন্তানের আঁধার ঘোচাতে
সূর্যটাকে ধারণ করেছে বক্ষে।
আজ তোমার সন্তানেরা ন্যায়ের যুদ্ধে
আপোষহীন কলম নিয়েছে হাতে।
আজ তারা-দূরদর্শী প্রতিবাদ তুলে নিয়েছে কন্ঠে।
এ হেন সোনালি সকালে-
কারা এল কপাল ঢাকতে,তোমার কালো নেকাবে?
কারা এল কালো চশমা পড়াতে,তোমার চোখে?
কারা এল আফগানিস্তানের মত-বোলচাল মতলব নিয়ে?
কারা এল বিজয়ধব্জাধারীদের ধরাশায়ীর ধ্যানজ্ঞান নিয়ে?
লাল সূর্যটাকে ছিনিয়ে নিয়ে
চাঁদ-তারা বসনোর কূট-কূটার্থের কৌশল নিয়ে?
ওগো জন্মভূমি মা আমার-
তুমিই একমাত্র পারো,
তোমার সন্তানদেরকে সঠিক সুনির্দিষ্ট পথে চালাতে।
পারো নতুন প্রজন্মকে উদ্দাম উদ্দীপিত করতে।
তারাই পারে প্রজন্ম চত্ত্বরে যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির মঞ্চ গড়তে।
তারাই পারে সকল দুরভিসন্ধি উচ্ছেদ করতে।
তাদের সামনে প্রশ্ন আজ-
মাতৃভাষায় সংবিধান থাকবে কী না!
না কি, জাতীয় সঙগীত হবে-
“পাক সার জমিন সাদ বাদ”?
কবি পরিচিতিঃ
নাম- শেখ ফজল
পিতাঃ মৃত শেখ আজিজ মিছির
গ্রামঃ মহিরামকুল, পোস্টঃ ভাঙ্গুনীডাঙ্গা, উপজেলাঃ মেলান্দহ, জেলাঃ জামালপুর
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থঃ ১) প্রিয় ভালোবাসা তোমাকে দিলাম, ২) মায়ের আশা মায়ের ভাষা, ৩) অধরা মাধুরী, ৪) ভালোবাসার তিন রং, ৫) প্রাণের দামে কেনা এই লাল সবুজের দেশ (পান্ডুলিপি প্রস্তুত)
শেখ ফজল ভাই আমাকে ঠিক যেভাবে তাঁর কবিতাটি এবং কবি পরিচিতি পাঠিয়েছেন- আমি সেইভাবেই তুলে দিলাম।