সুন্দর আলোকিত মিষ্টি রোদের বিকেল.......একা একা আবির হাটছিল পথচারীদের জন্য আলাদা করা রাস্তা ধরে। আবাসিক এলাকার রাস্তা। তাই গাড়ির চেয়ে পথচারীদের জন্য রাস্তাটাই বড় বেশী। পাশ দিয়ে গন্ধবিহীন ফুলের গাছ লাগানো। হাটতে হাটতে মনে পড়ে গেল নিজের শহরের কথা। যে বাসাটা তে আবির বড় হয়েছে......সামনের রাস্তা একটু বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যেতো পানিতে। তবে আবির বেশীর ভাগ সময় হাটতো ছাদের ওর নিজের চিলি কোঠায়। সেখান টাও বৃষ্টি এলে পানি জমতো। ওর ভালো লাগত সেই পানিতে হাটতে। সবার সাথে থাকতে ওর ভালো লাগতো না। পড়ায় মন দিতে পারতো না। তাই আব্বু ছাদে ওর জন্য একটা রুম করে দিয়েছিলো। যাতে ওর কোন ডিসর্টাব না হয় তাই ভাড়াটিয়াদের ছাদে যাওয়া বারণ করে দেয়। এ জন্য অনেকে ওদের বাসা ভাড়া নিতে চায় না। কিন্তু আবির এর তাতে কোন মাথা ব্যাথা নাই। নিজের মতো করে থাকে। বাগানে একটা দুটো করে বেশ কিছু ফুলের গাছ লাগিয়েছে। তা দেখে আম্মু আরও কিছু গাছ এনেছে। সারা ছাদ জুড়ে নানা রকমের ফুল এর গাছ। দেখলে যে কারও মন ভরে যাবে।
তিন তলায় নতুন ভাড়াটিয়ে এসেছে। তাদের একমাত্র মেয়ে অনু। ঢাকার ভালো একটা কলেজে পড়ে। একটু চটপটে। একা থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু আব্বুর কড়া নিষেধ ছাদে যাওয়া যাবে না। এই একটা জিনিস ছাড়া সব কিছুই ঠিক আছে এই বাসার। এতো কম ভাড়ায় কই পাওয়া এতো ভালো বাসা। কিন্তুর অনুর তো বাসায় ভালো লাগে না। কলেজ বন্ধ..বাসায় সময় কাটে না। এক বিকেলে মেঘলা বিকেলে অনুর মন খুব খারাপ ছিলো কোন কারনে..........আব্বু বাসায় ছিলো না। এক ছুটে ছাদে চলে গেল। অনু জানতো না ছাদে তার জীবনের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ঘটে যাবে। অপুর্ব একটা ছেলে রেলিং গেসে দাড়িয়ে আছে হাতে বই। মুখে খোচা খোচা দাড়ি। এ যেন ঠিক তার সিনড্রলোর রাজকুমার। আস্তে আস্তে ছাদের এক পাশে দাড়িয়ে অনু আবির কে দেখছিলো .....।
আবির খেয়াল করলো ছাদের অন্য পাশে কে যেন দাড়িয়ে । ডাকতে যাবে এটা বলার জন্য যে ছাদে কে এসেছেন...একটু এগুতেই আবির এর চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। এতো সুন্দর মানুষ হয় কি করে। মেয়েটাকে যেন সৃষ্টিকর্তা তার সব মনোযোগ দিয়ে বানিয়েছেন। কিভাবে তার রুপের বর্ননা করা যায় তা আবির এর জানা নাই। কারণ ও মনে করতে পারছে না যে এতো সুন্দর কাউকে সে দেখেছে আজ অব্দি....
ঐ তো পার্ক দেখা যাচ্ছে। অনু টুশিন কে নিয়ে খেলা করছে। রুবাইয়া অনু ইফতেখার আবির এর স্ত্রী। তাদের এক মাত্র সন্তান টুশিন। আবির এই এলাকাতে আসে ৫ বছর আগে। এখানকার একটা কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে। চার মাস পরে ওর স্ত্রী আসে। এর পর ওরা এই এলাকার বাইরে কোথাও যায় নি। ওদের ২ বছরের ঐ একটা মাত্র ছেলেই। মাঝে মাঝে আবির এর বাবা মা আসে। পাচঁ সাত থেকে চলে যায়। টুশিনের জন্মের সময় এসেছিলো অনুর মা। সবার দোআতে ভালোই তো আছে আবির আর অনুর ছোট্ট সংসার.......।