ডিপ ফেক প্রযুক্তি নিয়ে কিছু বলার আছে বলে মনে করি না। টেকনোলজী বেশ পূরাতন হলেও সম্প্রতি এর নাম-ডাক (হাক-ডাক) বা ব্যবহার বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে।
কয়েকদিন থেকে এদিক সেদিক দেখছি কার যে একটা ভুয়া ভিডিও বের হয়েছে। অন্য একজনের মাথা বাদ দিয়ে তার মাথা জুড়ে দেওয়া হয়েছে। আমি তাকে চিনি না বা তার নাম শুনেছি বলেও মনে পড়ে না। পরে আর একটা নিউজে দেখলাম নায়িকা কাজলেরও নাকি এমন কি একটা ভিডিও বের হয়েছে।
আরও অনেককেই দেখলাম উষ্মা প্রকাশ করতে যে এমন নাকি আরও অনেকের সাথে হতে পারে। এভাবে নাকি আরও খারাপ কিছু বের হতে পারে, ইত্যাদি ইত্যাদি। বিষয়টা বেশ কনসার্নিং, সকলের জন্যই।
এর আগে এই প্রযুক্ত ব্যবহার করে বারাক ওবামার একটা ভিডিও দেখেছিলাম। কয়েকদিন থেকে দেখছি ইলন মাস্কের একটা ভিডিও দিয়ে একদল বিজ্ঞাপন বানিয়েছে, যেটা আদতে ইলনমাস্কের ভিডিও না। হয়ত বিষয়টা নিয়ে আলোচনা শুরু হতে পারে; আবার নাও পারে।
তবে এই প্রযুক্তির নাম কিছু মানুষের নিজের নামে সাফাই গাইবার জন্য ব্যবহার করতে পারে বলে মনে করছি। এবং তা খুব শিগ্রহীই হয়ত আমাদের সামনে আসবে। কেন প্রযুক্তিটির ব্যবহারের কথা না বলৈ "প্রযুক্তির নাম" ব্যবহারের কথা বলছি, ও মানুষ কিভঅবে "প্রযুক্তিটির নাম" ব্যবহার করবে সে বিষয়ে যাওয়ার আগে একটা ঘটনা স্বরণ করিয়ে দেই।
গত কয়েক বছরের মধ্যেই হঠাৎ বাংলাদেশে এক গুজব ছড়িয়ে রাতারাতি ত্রাশ ছড়িয়ে পড়লো মানুষের মনে। "ব্লু হোয়েল" গেম এর নাম। একজন আত্মহত্যা করলো বা হত্যা হলো (ঠিক মনে নেই), তার আত্মীয়া একজন বললো এটা "ব্লু হোয়েল" গেম এর প্রভাব হতে পারে। আর বাংলার সাংবাদিক সকল সেটা নিয়ে নেমে পড়লো।
কম্পিউটার, টেকনোলজি, ইন্টারনেট ইত্যাদি সম্পর্কে সামান্য ধারণা থাকা সত্বে বলছি, বাংলাদেশের ৯৯.৯৯৯৯৯৯% ইউজারই জানে না যে ব্লু হোয়েলে খেলার জন্য যে ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করতে হবে, তা কি করে করা যায়। মূলত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা বড়োজোর টর ব্রাউজার ফ্রিতে ডাউনলোড করে কিছু ব্লকড সাইট ভিজিট টুকুই পারে। এর বাইরে পারা লোক খুব খুব খুব কম। সেহেতু ব্লু হোয়েল এক্সেস তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তবুও, হুজুগেতো গা ভাসাতেই হবে আমাদের!
যাই হোক, বিষয়টা হয়ত একটু পরিস্কার। আমাদের দেশের বেশ কয়েক বছরের ঘটনাচক্র ঘাটলে পাওয়া যায় যে প্রায় প্রতি বছরই কোন না কোন মানুষের ভিডিও লিক হয়, আর সেটা তাদের ক্যারিয়ারের উপর বেশ বাজে প্রভাব ফেলে। এটা নির্দিষ্ট কোন পেশার লোকজনের জন্য না, সবার জন্যই প্রযোজ্য। তবে "ইন্টেনসিটি" কারও জন্য কম কারও জন্য বেশী।
এখন নতুন করে কারও কিছু বের হলে আমরা খুব শীগ্রহীই শুনতে পাবো, এটা আমার ভিডিও না, এটা ডিপ ফেক। আবার দেখা যাবে যারা এসব আজেবাজে জিনিষ বানায়, তারা আসলেই কারও কারও ভুয়া ভিডিও বানাবেই। উভয় পক্ষের জন্যই ডিপ ফেক "সম্ভাবনার নতুন দ্বার" খুলে দিবে বলার অবকাশ রাখে না।
তবে এটি সবার জন্যই পক্ষান্তরে ক্ষতিকর। এটার থেকে বেঁচে থাকার উপায়ও খুব কঠিন।
মূল ছবি (একটু এডিটেড) এর লিংকঃ Rosie Kerr on Unsplash