আজকাল গান লেখা হচ্ছে খুব। ভালোই লাগে। আমার লেখা গান...সজল মামা আর স্বপন আঙ্কেলের সুর...স্টেজে পিচ্চিপাচ্চিরা গাইছে... কেমন জানি বিশিষ্ট গীতিকার টাইপ একটা ভাব আছে। প্রতিটা গানের সময় আবার তোতা আঙ্কেল আমাকে স্টেজের সামনে নিয়ে গিয়ে বলে দেয়- “আমাদের উপস্থাপিকা অনেক গুনে গুনান্বিতা...এখন যে গানটি শুনবেন, এটা তার ই লেখা...” ইত্যাদি ইত্যাদি। মজাই লাগে।
আমার খুব আফসোস ছিল,আমি কখনো সারা রাত জেগে থাকতে পারি নি। এখন অবশ্য আর সেই আফসোস নেই... প্রায় প্রতিটা রাত ই নির্ঘুম যায়। প্রথম যেদিন সারা রাত ছাদে বসে ছিলাম, সেই রাতের শেষে প্রথম সূর্যোদয় দেখে মুগ্ধ হয়ে দৌড়ে রুমে এসে লিখে ফেলেছিলাম-
পাখির ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যায়
মিষ্টি ভোরবেলা
সুনীল আকাশ জুড়ে কেবল
রঙিন আলোর খেলা।।
ফুলের বনে উড়ে বেড়ায়
হাজার মৌমাছি
পাখার রঙে স্বপ্ন রাঙায়
রঙিন প্রজাপতি।
সূর্য্যি মামা দেয় উঁকি
থামিয়ে চাঁদের ভেলা।।
সকালের ওই সোনা রোদে
রঙিন স্বপ্ন ভাসে
গাছের শাখায় পাখির পাখায়
আলোর নাচন হাসে।
ফুলের বাসে মিষ্টি বাতাস
দেয় যে মনে দোলা।।
আম্মু আর সজল মামার এক কোটি বার তাড়া খেয়ে লেখা এই গানটা-
ধানের মাঠে দোল দিয়ে যায়
উদাস দখিন হাওয়া
প্রজাপতি মন চায় এখন
নীল আকাশে হারিয়ে যাওয়া
আর প্রাণ খুলে গান গাওয়া।।
গানের তালে ভাসিয়ে দিয়ে
সুরের হাজার খেয়া
তাড়িয়ে দিল দুঃখ যত
মিষ্টি দখিন হাওয়া
তাক ধিনা ধিন ঢোল বাজিয়ে
আনন্দে ডুব দেয়া।।
গানের তালে গাছের ডালে
দোয়েল শ্যামার মেলা
নীল আকাশে ভেসে চলে
সাদা মেঘের ভেলা
সেই ভেলাতে চড়ে আজ
আকাশে ভেসে যাওয়া।।
আমার ছয় মাস বয়সী মামাতো বোনটা বড় হলে ওকে আমি এই গানটা শেখাবো-
হাম্পটি ডাম্পটি স্যাট অন আ ওয়াল
কানা বগী তুই খাস কি আমায় একটু বল।।
হাট্টিমাটিম পাড়ল ডিম তেপান্তরের মাঠে
খোকন সোনা নাইতে যায় কাজলা দীঘির ঘাটে
খাঁদু দাদুর মাথায় আছে মস্ত একটা টাক
দুধ মাখা ভাত খেয়ে গেল দুষ্টু পাজি কাক।।
কাকের বাসায় ফুটল দেখ কোকিল পাখির ছা
টুনটুনি যে ধরল গান তাক ধিনা ধিন তা
তাইনা দেখে খোকন সোনা হাসল ফোকলা দাঁতে
চাঁদ মামাও দিল হেসে তার সাথে সাথে।।
আমার খালাতো ভাই ধ্রুব(৬) আর সামি(৪),ঢাকার বাসিন্দা। ওদের জন্য এই গানটা-
চাঁদের মা বুড়ি তুমি চরকা কেন কাটো?
আকাশটা জুড়ে কেন বাতি জ্বেলে রাখো?
তোমায় নিয়ে বাবা আমায় গল্প বলে কত
পাশের বাড়ির দিদা নাকি দেখতে তোমার মত
তোমায় আমি দেখিনি আর দেখব না কোনদিন
আমার আকাশ দিল ঢেকে মস্ত ওই বিল্ডিং
আমি আকাশ দেখতে পাই না তুমি জান নাকো??
তবু কেন মিথ্যে গল্পে ভুলিয়ে আমায় রাখো???
তেপান্তরের মাঠে নাকি তোমার আলো বেয়ে
শ্যাওড়া গাছের শাঁকচুন্নি আসতো যে ধেয়ে
আমরা তো কই মাঠ দেখিনা, পাইনা সবুজ ঘাস
ইট বালি আর সিমেন্টে যে করেছে সব নাশ
তবে বুঝি শাঁকচুন্নি আর আসে নাকো??
ও যেন যায় না মরে বাঁচিয়ে ওকে রাখো।।
অবশেষে সাহস করে লিখেই ফেললাম একটা বড়দের গান... কৌশিক গাইলে বেশ হবে...
যতই উড়তে চাক আমার এই মন
কঠিন ব্যস্ততায় বাঁধা পড়েছে জীবন
কী লাভ রেখে খোঁজ কে আছে কেমন।।
আজ সময়ের বড় অভাব তাই
সম্পর্ক গুলোও ফিকে হয়ে যায়
উচ্চাশার পিছে ছুটে মিছে মিছে
আজ তাই বড় বেশি ক্লান্ত এ মন।।
পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মেলাতে বসে
তোমার মুখটা মনে কেন যেন ওঠে ভেসে
অনেক না পাওয়ার মাঝে তুমি একজন
এই বেশ ভালো আছি,ছক বাঁধা জীবন।।
এই গানটা লিখতে গিয়ে একটা ছেলের মুখটা ভেসে উঠল চোখের সামনে... মায়া মায়া দুটো চোখ, এলোমেলো চুল... চোখের কোলে কি পানি জমল নাকি?? নাহ! এই বেশ ভালো আছি, ছক বাঁধা জীবন... কী লাভ রেখে খোঁজ কে আছে কেমন...
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১১ ভোর ৪:২৯