
খুব বেশী দিনের কথা নয়...... ভীন গাঁয়ে বাস করতো এক গরীব চাষী আর তাঁর দুই বউ। সারাদিন মাঠে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে চাষী.... মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলায়... তবেইনা দু'বেলা দু'মুঠো ভাত জোটে চাষীর!
একদিন সকালে চাষী গেছে জমিতে হাল চাষ করতে। হঠাৎ লাঙলের ফলা আটকে গেল শক্ত একটা কিছুর সাথে। চাষী অবাক হলো.... মোহরের কলসী নয়তো?! লাঙল ফেলে কোদাল হাতে নিল চাষী। উহু...মোহরের কলসী নয়, মাটি খুঁড়ে বের হলো বড়সড় একটা কাঠের বাক্স... কফিন! কফিনের উপর খোদাই করে লেখা আছে 'গণতন্ত্র'! সামান্য অক্ষরজ্ঞান আছে চাষীর....গণতন্ত্রের নামটা কোথায় যেন শুনেছে শুনেছে মনে হচ্ছে!...'' আহা, বেচারা কবে মারা গেল?!'' গণতন্ত্র শব্দটা পরিচিত হলেও গণতন্ত্রের মানে বোঝার ক্ষমতা নেই চাষীর..... খুব বেশী বোঝার তাগিদও নেই তাঁর! ভাল বীজ, সেচের পানি, সময়মত সার আর ফসলের ন্যায্য দাম পেলেই সে খুশী! .....সেই গতর খাটিয়েই-তো খেতে হবে তাঁকে!

কৌতুহল নিয়ে 'গণতন্ত্রের কফিন'-টা খুললো চাষী! দুমড়ানো মোচড়ানো একটা কংকাল.... শরীর থেকে মাথাটা আলাদা হয়ে আছে! আহারে..... খুব কষ্ট পেয়ে মরেছে বেচারা! কিন্তু একি!....দ্যাখে, কংকালের কপালে লেখা আছে...." তোর কপালে আরও অনেক দুঃখ আছে।" খুব অবাক হয় চাষী.... এত কষ্ট পেয়ে মরার পরও আর কি দুঃখ থাকতে পারে এর কপালে?!... কংকালের মাথার খুলিটা গামছা দিয়ে মুড়িয়ে বাড়ী নিয়ে এলো কৌতুহলী চাষী.... ''দেখি, কপালে আর কি দুঃখ আছে বেচারার!'' বাড়ীর পেছনের ঝোপের মধ্যে গামছা দিয়ে পেঁচিয়ে খুলিটা লুকিয়ে রাখলো সে।

আগেই বলেছি, চাষীর দুই বউ.... হাসু আর পুতুল। দু'জনের মধ্যে দা-কুমড়ো সম্পর্ক! পারলে একজন আরেক জনকে বাড়ী থেকে বের করে দেয় তো.... অন্যজন গ্রেনেড মেরে মেরেই ফেলতে চায় আরেকজনকে। দুই বউকে নিয়ে বড় অশান্তিতে আছে চাষী। দুই বউ-এর কেউ কাউকে বিশ্বাস করেনা। তাইতো কোন বউকে না জানিয়ে বাড়ীর পিছনে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে কংকালের খুলিটা..... আর প্রতিদিন মাঠ থেকে ফিরে সন্ধ্যার পর চুপি চুপি গিয়ে দেখে আসে কংকালের খুলিটার কপালে নতুন কিছু ঘটলো কিনা!

কিন্তু বড় বউ ব্যাপরটা টের পেয়ে গেল একদিন.... ''বাড়ীর পিছনের ঝোপে কিছু একটা লুকিয়ে রেখেছে মিনসে!'' নিশ্চয়ই ছোট বউ আর চাষী মিলে কিছু একটা গভীর ষড়যন্ত্র করছে তাঁর বিরুদ্ধে! ঠিকই ঝোপের ভিতর থেকে খুলিটা খুঁজে বের করলো বড় বউ!.... "মানুষের মাথার খুলি! নিশ্চয়ই আমাকে মেরে ফেলার জন্য কোন যাদু-টোনা করেছে ছোট বউ!''
রাগে বড় বউ প্রথমেই এক বাড়ি মেরে চার টুকরা করলো খুলিটা.... তারপর কোমরে শাড়ী গুঁজে যুদ্ধাংদেহী মূর্তিতে এসে দাঁড়ালো ছোট বউ-এর সামনে.... গামছায় প্যাঁচানো খুলির টুকরাগুলো তখনও তাঁর হাতে.....
''কই গেলি মাগি?! আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র?! আমাকে মেরে ফেলতে 'বান' মারছোস?! তোরে আজ আমি মাইরাই ফ্যালামু!'' ছোট বউ-ও কম যায়না....'' দাঁড়া মাগি, এত ত্যাজ?! আইজ তোর একদিন কি আমার একদিন!'' ব্যাস, দুই বউ-এ লেগে গেল যুদ্ধ! ততক্ষণে ব্যাপারটা পরিস্কার হয়ে গেছে ছোট বউ-এর কাছেও! ছোট বউ-ও নিশ্চিত যে... বড় বউ আর তাঁর স্বামী মিলে তাঁকে মেরে ফেলার জন্য কোন মন্ত্র-টন্ত্র করছে... তা না হলে মানুষের মাথার খুলিটা গামছা দিয়ে পেঁচিয়ে ঠিক তাঁর ঘরের পিছনেই লুকিয়ে রাখা হবে কেন?!
দুই বউ-এ ধ্বস্তাধ্বস্তি... মারামারি... চুল টানাটানি! গামছায় প্যাঁচানো পুটলিটা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করলো ছোট বউ.... কিন্তু ধ্বস্তাধস্তিতে পুটলিটা গিয়ে পড়লো ঢেঁকির গর্তে! ছোট বউ দেখলো... আর নয়, বড় বউ-কে আর সুযোগ দেয়া যায়না!...এই যাদু-টোনা এখনই বিনাশ করতে হবে... ছোট বউ গিয়ে ঢেঁকিতে দিল পাড়! বড় বউ-ও দেখলো এই খুলি-ই তাঁর বিরুদ্ধে সর্বনাশের মূল ষড়যন্ত্র! সে-ও দিল ঢেঁকির আঙলা..... ব্যাস, ঢেঁকির দুই পাড়েই কংকালের খুলি গুড়া গুড়া!

সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরলো চাষী।.... কংকালের খুলিতো অনেক আগেই গুড়া গুড়া.... একবারে ছাতু! দুই বউ নিরন্তর ঝগড়া করেই চলেছে তখনও! ঢেঁকিঘরে গিয়ে কংকালের খুলি আর গামছার পুটলিটার অবস্থা দেখে চাষীর মনটা খু-উ-ব খারাপ হয়ে গেল... ''গণতন্ত্রের কপালে কি এতটাই খারাপ লেখা ছিল!?..... এত দুঃখ ছিল বেচারার কপালে!?'' বিষন্ন মনে কংকালের খুলিটার গুড়াগুলো গামছায় পেঁচিয়ে সে গেল নদীর ধারে.... নদীর জলে ছড়িয়ে দিল গুড়াগুলো.... হাঁটু গেড়ে বসে শ্রদ্ধাভরে প্রার্থনা করলো.... শান্তি পাক বিদেহী আত্মা!
(ইহা একটি শোনা গল্প কাস্টমাইজ করে চালিয়ে দেবার অপপ্রয়াস মাত্র।)
কৈফিয়তনামাঃ অনেকদিন ব্লগে কিছু লেখা হয়না..... একদম সময় করে উঠতে পারিনা।লেখাটা অনেক পুরাতন হলেও..... আমরা এখনও সেই একই সময়ের ঘূর্ণিপাকে আটকা পড়ে আছি।তাই আজ শহীদ নূর হোসেন দিবসে লেখাটা রি-পোস্ট দিলাম। যারা লেখাটা আগেই পড়েছেন...তাদের জন্য রি-পোস্ট নিশ্চয়ই বিরক্তিকর লাগবে, সেইসব বন্ধুদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০০