ভয়
এখন যেকোন পুরুষ দেখলেই ধর্ষক বলে মনে হয় সাবিনার। বুকের ভেতর ধুকপুক করে, অজানা আতঙ্কে শিউরে ওঠে লোম!সপ্তাহখানেক আগে ওর সাথে কাজ করতো যে সাহাবাণী, কারা যেন নির্মমভাবে ছিড়ে খেয়েছিলো তাকে।বিভৎস সেই লাশ দেখে কয়দিন ঘুমাতে পারেনি সাবিনা।কিন্তু পথ তো চলতে হবে।এদিকে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে, ঠিকঠাক বাড়ি পৌঁছাতে পারবে তো?
গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বার বার ওর মনে হচ্ছিলো, এ পথ দিয়ে, ওর সামনে দিয়ে, যে কয়জন পুরুষ চলে যাচ্ছে এদের প্রত্যেকেই এক একটা ধর্ষক। প্রায় ২০ মিনিট পর গাড়ি এলো।মহিলা সিট খালি নেই তবু গাদাগাদি করে বসার চেষ্টা চলছিলো।ও দঁড়িয়েই রইলো।সাথে সাথে দুটো কম বয়সি ছেলেও উঠলো, ওরা অনেকক্ষণ ধরেই লক্ষ্য করছিলো সাবিনাকে। এসে ওর পাশেই দাঁড়ালো। ছেলেদুটোর চাউনিটা সুবিধার নয়। কেমন বিদঘুটে চোখে তাকাচ্ছে। বাস ভরা মানুষের মাঝেও অস্বস্তির অন্ত রইলো না ওর। যতটা সম্ভব গা না ঘেঁষে দাঁড়ানের চেষ্টা করছিলো প্রাণপণে কিন্তু মনে হলো ছেলেগুলো বড় শয়তান, ইচ্ছে করেই আরো কাছে ঘেঁষে দাঁড়াতে চাইছে আর মনে মনে বলছে-‘ একা তো নাকি? আজ পেয়েছি, পালিয়ে যাবে কোথায়?’ এমন তো কতই ঘটছে আজকাল, রাস্তায় মেয়েদের একা দেখলেই ফলো করে....ছি ছি! আ্ল্লাহ রক্ষা কর আমাকে।তখনি সামনের মোড়ে ছেলেগুলো নেমে গেলো।যেন বিশাল কোন ফাঁড়া থেকে রক্ষা পেলো ও। তবে বিপত্তির আরো আসলটাই বাকি ছিলো কারণ বাসের সবাই প্রায় নেমে গেছে। মহিলা সিট খালি; শুধু ও একা আর আছে দুজন পেসেনজার তাও মাঝবয়েসী লোক। আবার ভয়ে শিউরে উঠলো ও। সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে, বাড়ির মোড়ে যেতে আরো প্রায় আধঘণ্টা লাগবে। ততক্ষণে যদি ড্রাইভার আর হেলপারের লোলুপ দৃষ্টি ওর উপর পড়ে? যদি জানোয়ারগুলো ওকেও রক্ষা না দেয়? চলন্ত গাড়িতে গণধর্ষণ করে ছুঁড়ে ফেলে দেয় রাস্তায়? হতে তো পারেই; রাত হয়ে গেছে অসম্ভব কিছুই নয়। তাহলে কি আজই ও সেই নৃশংসতার শিকার হবে? আজকাল কোন পুরুষেরই জানোয়ার হতে সময় লাগে না। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ গাড়ি থামলো, লোকদুটোও নেমে গেলো। সাবিনা নামতে পারলো না কারণ এখানে নেমেও তেমন লাভ নেই পথ আরও কিছুটা বাকি। গলার কাছে প্রাণ নিয়ে বসে রইলো, মনে মনে দোয়া পড়ছিলো আর ওড়নাটা আরো ভালো করে জড়িয়ে নিচ্ছিলো গায়ে। তবে বোধ হয আজকে দিনটাই ওর খারাপ। হেরপারটা একটা বিশ্রি হাসি দিয়ে বললো ‘কনে যাইবেন’? ও কিছু বললো না, শুধু গলার স্বর শুনে কান্না পেলো ভয়ে। মনে হলো এই বুঝি ঝাঁপিয়ে পড়বে ওর উপর। লোকটা আবার বললো ‘কই যাইবেন? নামবেন না? গাড়ি আর যাইবো না।’ ওর হুঁশ হলো গাড়ি রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। কিছুদূর গেলেই ওদের বস্তি, ওর বাড়ি। উর্দ্ধশ্বাসে নেমে দৌড় দিলো ও। হেলপারটা বিশ্রি দাঁত বের করে হাসতে লাগলো।