: কিয়ামত আসবে। সব কিছুর ফয়সালা তখনই হবে। আপনার অন্ধ বিশ্বাস যদি মিথ্যা হয় তখন আপনার কি করার থাকবে।
: কে বলেছে আপনাকে যে- কিয়ামত আসবে??? কিয়ামত জিনিসটাই বা আসলে কি????
: ভাই আপনার দাদার বাবা মনে হয় জীবিত নাই । আপনাকেও একদিন মরে যেতে হবে আবার একটা কুকুরও একদিন মরে যাবে। আপনি যদি বিবর্তন বিশ্বাস করেন তবে আপনার জীবন আর কুকুরের জীবনের মধ্যে পার্থক্য কি? আপনি কি শুধু ভাগ্যগুনে কুকুর না হয়ে মানুষ হয়ে জন্মেছেন? আপনার জীবন আর কুকুরের জীবনের মধ্যে পার্থক্য টা কি বলবেন ?
: আমার দাদার বাবা, দাদা কেউই জীবিত নন। আমিও একদিন মারা যাবো। তো? এটার সাথে কিয়ামতের সম্পর্ক কি????
বেসিক্যলি আমার জন্ম- মৃত্যুর বায়োলজিকাল প্রসেস আর কুকুরের জন্ম মৃত্যুর প্রসেসের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নাই। কিন্তু জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমার আর একটা কুকুরের জীবন প্রণালী, চলা ফেরা সবকিছুতেই বিস্তর ফারাক। যেমনটা আপনার জন্ম- মৃত্যু প্রসেসের সাথে আমার জন্ম- মৃত্যুর প্রসেসের ফারাক না থাকলেও- আপনার আর আমার জীবন প্রণালী, চলা ফেরা, চিন্তা ভাবনা, কল্পনা সমস্ত কিছুই আলাদা ... তো???
: শুধু কি ভাগ্যগুনে আপনি কুকুর না হয়ে মানুষ হয়ে জন্মেছেন? আরে ভাই মহান আল্লাহ আপনাকে জন্ম দিয়েছে তার সেরা সৃষ্টি হিসাবে । আর আপনি নিজের বিচক্ষনতার দ্বারাই নিজেকে কুকুরের কাছাকাছি নিয়ে গেছেন। এত সুন্দর পৃথীবিটা কি এমনিতেই হয়ে গেছে?
: ভাগ্যগুণ জিনিসটা আবার কিরে ভাই?? জন্মাইছি তো আমার বাপ আর মায়ের মিলনের ফলে। আপনি যেমন জন্মাইছেন আপনার বাপ-মা'র মিলনে। এইখানে কুকুর বিড়াল আসে কোত্থেকে? জন্মের প্রসেস কুকুর বিড়ালের সাথে মিলে গেলে কি সমস্যা??? আপনার মতে আল্লাহও যদি সৃষ্টি করে থাকে- সেই হিসাবেও কি আপনার জন্মের প্রসেস আর কুকুর- বিড়ালের জন্মের প্রসেস এক কি না? নাকি- আপনি মনে করেন, কুকুর বিড়ালরে আল্লা সৃষ্টি করেন নাই- কেবল আপনার মত- বিশ্বাসী বান্দারাই আল্লার নূরানি হাতের সৃষ্টি?
দেখেন, আমি জন্মের প্রসেস নিয়ে গর্ব করার কিছু দেখি না। আমি জানি, ঠিক ঐ সময়ে আমার বাপ- মা মিলিত না হইলে, আল্লা হাজার কান্দা কাটি করলেও আমার এই দুনিয়ায় আসা হইত না। যেমনটা, সত্য আপনার জন্মের ক্ষেত্রেও, আপনার পাশের কুকুর- বিলাই এর ক্ষেত্রেও ঘটনাটা এমনই। তবে, মানুষ হিসাবে আলাদা গর্ব যদি করতেই হয়- তবে তা তো- মানুষের কর্মক্ষেত্রের জন্য; কুকুর- বিড়ালের সাথে পার্থক্যের জায়গা যতটুকু- সেইটা তো মানুষের চিন্তা-বুদ্ধি, সৃষ্টিশীলতাই। ফলে, এই জায়গাটা যাদের নাই- তারা নিজেদের যতই সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে তৃপ্তির ঢেকুর তুলুক না কেন, তাদের সাথে আসলে ঐ কুকুর বিলাই এর কোন পার্থক্য নাই।
আর, সুন্দর পৃথিবীটা এমনিতেই হয়ে গেছে। বস্তুর নিয়মে পৃথিবী তৈরির একটা আলোচনা করা যেত, সেটা এখানে আনছি না, কেননা আপনার 'এমনিতে' হওয়া মানে ধরে নিচ্ছি- পৃথিবী তৈরির ক্ষেত্রে কোন উদ্দেশ্য ছিল কি না- আপনি এমনটা জিগেস করতে চেয়েছেন। এর একটাই জবাব- কোন ধরণের কোন উদ্দেশ্য ছিল না। বস্তু জগতের যা কিছু ঘটছে- তার সবই আসলে কোন রকম উদ্দেশ্য ছাড়াই ঘটে, আপনার ভাষায় এমনিতেই ঘটে; এমনিতেই ঘটেছিল- এবং বিশ্বজগত থেকে মানুষ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পরেও এসব ঘটনাসমূহ এমনিতেই ঘটবে- কেবল বলতে পারি- সমস্ত ঘটনাসমূহ সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়মের অধীনেই ঘটে, ঘটছে, ঘটতে থাকবে ...
: আপনার মতে শুন্য থেকে যদি পৃথীবি তৈরি হতে পারে তবে আপনি আপনার বাবা ছাড়া জন্মাতে পারবেন না কেন? আপনি কি জানেন বিগব্যাং থেকে পৃথীবির সৃষ্টি। এ তথ্য আমরা জেনেছি ২০০ বছর আগে আর ১৪০০ বছর আগে তা কোরআনে লেখা আছে। আমি যখন স্কুলে পরতাম তখন জানতাম সূর্য স্থির থাকে কিন্তু এখন জানি সূর্যেরও কক্ষপথ আছে, আর কোরআনে ১৪০০ বছর আগে তা লিখা আছে। আর আপনার বিবর্তন প্রমানিত কোন সত্য নয় যে তা বিশ্বাস করে আপনাকে নাস্তিক হয়ে যেতে হবে। আর ঈসা (আ) কে আল্লাহ পিতা ছাড়া জন্ম দিয়েছিলেন, আপনাকে পারবে না কেন? সূর্য আর পৃথিবীর মত যদি কিছু দিন পর প্রমানিত হয় বিবর্তন মিথ্যা তখন আপনি কি করবেন? আর সবাই যে বিবর্তনের পক্ষে তাও কিন্তু না। আপনি এটা নিশ্চই জানেন।
: শুন্য থেকে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে এমনটা আমি কোথায় বলেছি? দেখেন বস্তু ও শক্তির নিত্যতা সুত্র অনুযায়ী- পৃথিবী, আপনি আমি কেউই শুন্য থেকে আসিনি। বস্তুর এবসলিউট সৃষ্টি বা ধ্বংস বলে কিছু নাই, যা আছে তা হচ্ছে- পরিবর্তন বা রূপান্তর। পৃথিবী আরেকটা ফর্মে ছিল, সেখান থেকে পৃথিবী হয়েছে, শুন্য থেকে নয়। আপনিও শুন্য থেকে আসেন নি, ছিলেন ভ্রুন, তারও আগে ছিল- শুক্রানু ও ডিম্বাণু- ভ্রুনটাও যে ধিরে ধীরে বাড়ল- বা আপনি জন্মের পরের এতটুকু আজ এতবড় হলেন- আপনার কোষগুলো বাড়ল- কোন কিছুই, শুন্য থেকে নয়- আপনার মায়ের খাদ্য, আপনার খাদ্য ..., বাতাসে থাকা অক্সিজেন এমন অনেক কিছুর ভুমিকা আছে- মানে এগুলোই পরিবর্তিত হয়ে আপনারে শরীরটা গঠন করেছে। আপনি মরলেও- নাই হয়ে যাবেন না- প্রতিটা অনু-পরমাণুই টিকে থাকবে, অন্য কোন ফর্মে ...
“বিগব্যাং থেকে পৃথীবির সৃষ্টি”-পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে এমনটা আমার জানা ছিল না। বরং যতটুকু জানি তাতে দেখেছি- বিগব্যাং এরও অনেক পরের ঘটনা হচ্ছে পৃথিবীর পৃথিবী হয়ে উঠা। আর, ১৪০০ বছর আগের কোরআনে কি লেখা আছে, একটু জানাবেন কি? আমার তো মনে হচ্ছে- বিজ্ঞান এবং কোরআন - উভয় বিষয়েই আপনার জ্ঞান পর্যাপ্ত নয়। কোরআনে কোথাও বিগব্যাং এর কিছু নাই। আপনি কোরআনটা আরেকটু ভালো করে পড়ে দেখবেন। বাইবেল- কোরআনে, বেদে/গীতায় পৃথিবী- বিশ্বজগত সৃষ্টির বিষয়ে যা কিছু আছে- বিজ্ঞান তাকে ছুড়ে ফেলেছে অনেক আগেই ...
আপনি যখন স্কুলে পড়তেন তখন জানতেন সূর্য স্থির থাকে আর এখন জানি সূর্যেরও কক্ষপথ আছে!!! তো??? এটা এখনকার স্কুলের বাচ্চারাও এমন করেই জানে- কেননা স্কুলের সৌরজগৎ সংক্রান্ত অধ্যায়ে বলা আছে- সৌরজগতের কেন্দ্রে সূর্য, সূর্য স্থির থাকে- তাকে ঘিরে গ্রহরা ঘুরে, গ্রহকে ঘিরে উপগ্রহরা ঘুরছে। এই স্থির সূর্য কিন্তু সৌরজগতের পারস্পেক্টিভে। কেননা, সৌরজগতের অধিকাংশ ছবিতেই দেখবেন কেবল গ্রহ/ উপগ্রহের কক্ষপথের ছবি থাকে, সূর্যের কক্ষপথ দেখানো থাকে না। এটা আপনার শিক্ষক আপনাকে ক্লিয়ার করতে পারেনি- আর আপনি ভেবেছেন- বিজ্ঞান এটা জানে না।
আবার, ১৪০০ বছর আগে কোরআনে এটা আছে যেটা বলেছেন- সেটা আরেক ধরণের অজ্ঞতা। আয়াতটিতে লেখা আছে- সূর্য ও চন্দ্র ঘুরছে। পৃথিবীর ঘূর্ণন নিয়ে কিন্তু একটাও কথা আপনি পাবেন না। এখন বলেন আমাকে- আজকে আপনি সূর্যের ঘূর্ণন নিয়ে যা জানেন- তা কি কোরআনের বর্ণনার সাথে মেলে? ১ম দিককার মানুষ চাঁদ- সূর্যকেই ঘূর্ণায়মান মনে করতো- ফলে ১৪০০ বছর আগে কোরআনে এটা থাকায় বিশেষত্ব কিছু নাই। বরং, পৃথিবী যে সূর্যের চারদিকে ঘুরে এটা বলতে না পারাটা- এমনকি পৃথিবী যে গোল এটা বলতে না পারাটা আল্লাহর (আমার মতে নবী ও তার সঙ্গী সাথীদের) চরম মুর্খামির উদাহরণ।
আপনার সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং কথাটা হচ্ছেঃ “ঈসা (আ) কে আল্লাহ পিতা ছাড়া জন্ম দিয়ে ছিলেন। আপনাকে পারবে না কেন?” কেন ইন্টারেস্টিং এক্সপ্লেইন করি তাহলে। আপনার আশে পাশের কাউকে দেখেছেন- পিতা ছাড়া, মাতা ছাড়া কেউ জন্ম নিয়েছে? বা, শুক্রানু ও ডিম্বাণু ছাড়া? ধরেন, আপনার পাড়ার একজন মহিলা, যে মহিলার স্বামী-সংসার কখনো আপনার চোখে পড়েনি- তার কোলে হঠাত একটা ফুটফুটে বাচ্চা দেখে আপনি জিগেস করলেন- এর বাবা কে? এবং সেই মহিলাটা বললো- এ ঈশ্বরের পুত্র। আপনি কি বিশ্বাস করবেন?
প্রাচিন সাহিত্যে এমনটা ভুরি ভুরি পাবেন- বিবাহ বহির্ভূত, স্বামী পরিত্যক্তা, নিঃসঙ্গ নারীমাতারা তাদের সন্তানকে ঈশ্বরের সন্তান হিসাবে পরিচয় দিত। বেশ্যারা তাদের সন্তানকে ঈশ্বরের সন্তান বলতো, মন্দিরের সেবাদাসিরা তাদের সন্তানকে দেবশিশু বলতো, এমনকি ধর্ষিতা নারিরা তাদের সন্তানকে ঈশ্বরের সন্তান পরিচয় দিত। এই মহাদেশের পুরান পড়েন- দেখবেন ইন্দ্র, শিব থেকে শুরু করে দেব, ঋষি-মুনিদের সন্তানের ছড়াছড়ি- একেকজনের বীর্য মাঠে ঘাটে পড়ত আর সন্তান গজায় উঠত- এগুলো আসলে এমন মিথিকাল ফর্ম নিয়েছে- বাস্তব ঘটনা হচ্ছে- সমস্তই হচ্ছে- এই সব সন্তানেরা বাবা-মার স্বাভাবিক সংসার পায় নাই ...
যাই হোক- মুল আলোচনায় আসি, ইসা বা যিশুর বাবা আসলে কে- এ নিয়ে যথেষ্ট গবেষণা হয়েছে, আপনি নেট এ একটু ঘাঁটলেই জানতে পারবেন- মেরির সেই প্রেমিকার নাম কি ..., যীশু ঈশ্বরের পুত্র হিসাবেই পরিচিত ছিল- এবং এর মানে ঐ সময়ের লোকজন না বুঝার কিছু নাই। মুহাম্মদ এসে- সেটাকে পালটিয়ে আরেক রূপ দেয় ... কিছুটা অলৌকিক ভাব নিয়া আসে। তবে আমার মনে হয়, অলৌকিক ভাব আনার চেয়েও পিতৃ পরিচয়হীন তথা ‘জারজ’ সন্তানের প্রতি সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্যতা, এককথায় ঘৃণা বোধই ইসার জন্মের ইতিহাসকে রূপকথা মোড়কদানে ভূমিকা রেখেছে। (স্বয়ং আল্লারেও দেখবেন কোরআনে নবীর শত্রুরে ‘জারজ’ বলে গালি দিতেছে!!)
যদি কিছু দিন পর প্রমানিত হয় বিবর্তন মিথ্যা তখন আমি কি করবো? কখনো যদি প্রমান হয়- বিবর্তনবাদ মিথ্যা, তখন সেই সত্য গ্রহণ করতে আমার সমস্যা হবে বলে মনে হয় না । বিজ্ঞানের মুল কথাই তো হচ্ছে- এটা অনড় কিছু না। ধর্মগ্রন্থের মত অনড় না। আগের জ্ঞানকে চ্যালেঞ্জ করেই একে চলতে হয়। কিন্তু যে মুহূর্ত পর্যন্ত কিছু প্রমানিত না হচ্ছে- তার আগ পর্যন্ত কোন কিছুকে অন্ধভাবে এটা সমর্থন করতে পারে না। আর, বিবর্তন সম্পর্কে জানার আগে থেকেই আমি নাস্তিক। নাস্তিক হওয়ার জন্য বিবর্তনবাদ জানার কোন দরকার দেখি না; আল্লার অস্তিত্বের কোন প্রমান না পাওয়াটাই যথেষ্ট ...
“আর সবাই যে বিবর্তনের পক্ষে তাও কিন্তু না” – এমনটা বলে আসলে কি বুঝাতে চাইলেন- পরিষ্কার হলো না। বিজ্ঞান তো ভাই জাতীয় সংসদ না যে, নির্বাচন/ ভোটের মধ্য দিয়ে চলবে! ফলে, কতজন একে সত্য মনে করে- কে কে একে মানে না- এসবের কোন স্থান বিজ্ঞানে নাই। একটু খোঁজ করলেই জানতে পারবেন যে, বিবর্তনবাদ আজ বিজ্ঞানের একটা স্কুল হিসাবে স্বীকৃত।
(চলমান ...: পাল্টা প্রশ্ন প্রত্যাশিত)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:২৫