[বিষয়টি নিয়ে কচলাকচলি বাদ দেয়ার আহবান অনেকে জানিয়েছেন, তারপরেও এ পোস্টখানি দিচ্ছি, আমার অবস্থানের কিছু পরিবর্তন আছে বিধায়। এ শুধু নিজের অবস্থানটিকে পরিষ্কার করার চেষ্টা।]
প্রথমেই স্বীকার করে নিচ্ছি যে, আমার আগের অবস্থান ভুল ছিল। এই ইস্যুতে পক্ষ-বিপক্ষের বিভাজনে প্রথমে এমন ক'জনের পোস্টে ঢু মেরেছিলাম- তাতে মনে হয়েছিল, সংষ্কারের জায়গা থেকেই বিষয়টিকে এরা গ্রহণ করতে পারছে না। ফলে- আমি পিয়ালের পক্ষে দাঁড়িয়ে যাই এবং বলতে থাকি যেকোন জায়গা থেকেই তো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি উঠতে পারে, বেশ্যা পাড়া- পর্ণো সাইট প্রভৃতি থেকে উঠলে সমস্যা কি, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি এতই ঠুনকো যে এর জাত চলে যাবে..... ইত্যাদি। যুক্তি করেছিলাম-
"পর্ণোগ্রাফি- পতিতাবৃত্তি- মিডিয়ায় নারীকে পণ্য হিসাবে উপস্থাপন সমস্তই আমার কাছে একই রকম মনে হয়, এসব পেট্রোন করা সাইটকে আমার ময়লা বলতে কোন আপত্তিও নেই; তবে তার মানে এরকম কখনো মনে করিনা যে, এসবের সাথে যারা যুক্ত তাদের কোন সামাজিক-নাগরিক-রাজনৈতিক জীবন থাকতে পারবে না, অধিকার থাকতে পারবে না; তারা দেশকে ভালোবাসতে পারবে না, রাজাকারদের ঘৃণা করতে পারবে না। এমনটি আসলেই মনে করিনা।"
......
বাঙলার একটা কুত্তাও যদি গোলাম আজমদের মত ছাগলদের পাছায় কামড় দেয়, সেটাই আমাদের লাভ- অন্তত এতে তো কোন ক্ষতি দেখি না।"
কিন্তু এভাবে যুক্তি করতে গিয়ে আসল যে সত্য, সবচেয়ে বড় যুক্তি সেটিই আমি ধরতে পারিনি (আমি দুঃখিত, লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী)। পর্ণো-সাইট কি এমন দাবি উচ্চারণের কোন প্লাটফর্ম হতে পারে আদৌ? এ প্রশ্নটি আমি বলতে গেলে এর আগে পাশ কাটিয়ে গিয়েছি- ভেবেছি সেখানে যারা ভিজিটর তাদেরো তো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাওয়ার অধিকার আছে। অথচ, ভাবিনি- একটি প্লাটফর্মের বিরোধিতা মানেই সেই প্লাটফর্মের সাথে যুক্ত মানুষদের বিরোধিতা নয়। যৌবনযাত্রার ব্যানারে সিগনেচার ক্যাম্পেইনকে অসমর্থন করা মানে যৌবনযাত্রার আশ্রম মামা, থেকে শুরু করে হাজার হাজার মামার ব্যক্তি পর্যায়ে দেশপ্রেম- নাগরিক- সামাজিক- নাগরিক অধিকারের বিরুদ্ধে বলা নয়। এ জায়গাটি আমি আসলেই ধরতে পারিনি আগে। আমি এখন মনে করি- অবশ্যই পর্ণো সাইট এই দাবী উত্থাপনের কোন প্লাটফর্ম হতে পারে না। কারণ অমলকান্তি ও মুনীর উদ্দিন শামীমের ভাষাতেই বলিঃ
অমলকান্তিঃ একটা পর্নোগ্রাফি জিনিসটা আদতে নারীর প্রতি সহিংসতারই প্রকাশ। সেক্ষেত্রে একটা সহিংসতার পাদানিতে দাঁড়িয়ে অন্য একটি সহিংসতার বিচার চাওয়া স্ববিরোধী শুধু নয়, সহিংসতাকে চলমান রাখতেও প্রকারান্তরে মদদ দেয়।
মুনীর উদ্দিন শামিমঃ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিটি মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাগুলোর সাথে সম্পর্কিত। একটি নিপীড়নমুক্ত রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণ নিঃসন্দেহে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা। আমি মনে করি এ চেতনাটি যেকোন পর্ণো সাইটের দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান লক্ষ্যের সাথে বিরোধমূলক। কারণ পর্ণোগ্রাফির ভাষা ও পরিবেশন শতভাগ পুরুষতান্ত্রিক। নারী এখানে মুনাফার উপায়। আর মুনাফা যেখানে দেবতা সেখানে নারী বিষয় নয়, কেবল বস্তু। বস্তু বলে নারীর মর্যাদা, সম্মান এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়। নারীকে অযাচিতভাবে উপস্থাপনা করে বেশি বেশি মুনাফা লাভ। সব চেয়ে বড় কথা যে কথিত সাইটের/সাইটগুলোর কারণে ব্যক্তিগত সম্পর্কে প্রতারিত হয়ে সে প্রতারণা পুনর্বাজারজাত হয়ে একজন নারীর নিপড়ীক হওয়ার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়াগুলো উন্মুক্ত থাকে,.......
নারীর নিপীড়িত হওয়ার পথগুলো খোলা রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অর্জনও কোনভাবেই সম্ভব নয়। এমনকি সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়ে গেলেও। সুতরাং সে নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াও জরুরি। যেমনটি জরুরি যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে।
অমলকান্তির একটি দৃশ্যকল্প দিয়ে বিষয়টি বুঝার চেষ্টা করা যেতে পারেঃ
আসেন একটা দৃশ্য কল্পনা করি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে অনেক বড় একটা মিছিল হইতাছে, সেইখানে সমাজের সকল শ্রেনী পেশার ব্যক্তি ও সংগঠন সামিল আছে। সেই মিছিলে 'যৌবনযাত্রা'র নামে একটা সংগঠন (এই যায়গা টা খিয়াল কৈরা) বিশাল একটা ব্যানার নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে লেখা "একাত্তরে ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমহানির বিচার চাই, যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই" এবং আপনি জানতে পারলেন (দেখলেন) সেই ব্যনারটির একপ্রান্ত ধরে আছে 'সুমন' আর আরেক প্রান্ত 'পিন্টু'। এখন আমার প্রশ্ন আপনে কি যৌবনযাত্রার সেই মিছিলে যোগ দেবেন ? আরেকজন কে যোগ দিতে উৎসাহিত করবেন?
এখানে সুমন-পিন্টু অনেকটা প্রতিষ্ঠানের মত হয়ে গিয়েছে। আমি এটিকে অন্যভাবে উপস্থাপন করছি:
ধরেন, কোন এলাকায় "ধিকিধিকি" নামে একটি ব্রোথেল গড়ে উঠলো- একটি চক্রের হাত ধরে, যারা দূর-দূরান্ত থেকে নারীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মেয়েদের যোগাড় করতো, এবং এই ব্রোথেলকে কেন্দ্র করে ব্যাপক ব্যবসায়িক লেনদেনের বিষয়ও যুক্ত ছিল।
তো ঘটনা ঘটলো- সে এলাকায় কিছু উদ্যোগী সমাজ সচেতন মানুষ নারী নির্যাতনের (যেমন এসিড সন্ত্রাস- ইভ টিজিং ....) বিরুদ্ধে একটি আন্দোলন গড়ে তুললো। এখন ঐ "ধিকিধিকি" এর পক্ষ থেকেও যদি নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া হয়- তবে সেটি কি সমর্থন যোগ্য হবে? সেটা কি স্যালুট যোগ্য হবে? ধরে নিলাম- ঐ ব্রোথেলে অনেক লোক যায়, যারা ইভ টিজিং বা এসিড সন্ত্রাসের মত নির্যাতনের বিরুদ্ধে মত ধারণ করে; এই মানুষদেরও এই আন্দোলনে অংশ নেয়ার অধিকার আছে- এ যুক্তিতে কি ঐ প্রতিষ্ঠানের প্লাটফর্মে আন্দোলনকে সমর্থন জানাবো? বা ধরলাম, ঐ ব্রোথেল কর্তৃপক্ষ সোশাল নেটওয়ার্ক তৈরীর উদ্দেশ্যে নয়- আসলেই কর্তৃপক্ষের কিছু লোক খুব ভালো মানুষ- এবং তারা এমন নির্যাতনের অবসান চায়, তদুপরি কি তাদের উদ্যোগেই "ধিকিধিকি"র সে আন্দোলনে সামিল হওয়াকে সমর্থন করা কি যাবে?
আমাদের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি কেবল দু-একজনের ফাসীর দাবী নয়, এটি খুব বেশী করে আদর্শিক দাবী- এবং আরেকটি আদর্শিক অবস্থানের মৃত্যুর দাবী। গোলাম আযমদের ফাসী চাই বটে, কিন্তু এসবের সাথে উচ্চারিত-অনুচ্চারিত মূল চাওয়া হচ্ছে- যে রাজনীতি, যে মতবাদিক অবস্থান গোলাম আযমদের যুদ্ধপরাধ সংগঠিত করিয়েছিল তারও কবর চাই। অন্যতম প্রধান যুদ্ধাপরাধ হলো আমাদের নারীর প্রতি সহিংসতা, ফলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাওয়া মানে নারীর প্রতি সহিংস হওয়ার সমস্ত আয়োজনেরও বিরোধিতা করা। ফলে- এ কারণেই কোন পর্ণো সাইটের ব্যানারে এবং উদ্যোগে এমন দাবী উত্থাপন অসমর্থন যোগ্য। পর্ণো সাইটের ভিজিটরেরা নিজস্ব উদ্যোগে এ দাবি করতেই পারে, কিন্তু যখন এমন উদ্যোগ নিয়ে সাইট কর্তৃপক্ষ ভিজিটরদের মাঝে যায়- বা সিগনেচার বা বিভিন্ন রকম উদ্যোগ নিতে থাকে- তখন সেটাকে সমর্থন করার মতো কিছুই থাকে না।
আমি আগের পোস্টে একটি কথা বলেছিলাম। সেটা হচ্ছে- লাভের কথা। এক কুত্তাও যদি গোলাম আযমের পাছায় কামড়ায় তাতেও তো লাভ!- আসলে কথাটি ঠিক বলিনি। আমি অবশ্যই চাই- গোলাম আযমদের পাছায় কামড় বসুক- খুব করেই চাই, কিন্তু অবশ্যই আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে নয়। জামাত-শিবির এদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক চাই, কিন্তু তাকে নিশ্চিহ্ন করতে গিয়ে আওয়ামী পন্থায় খেলাফত মজলিস টাইপের অন্য কোন ইসলামী দলকে চরম শক্তিশালী বানানোকে যেমন সমর্থন করতে পারিনা- এটি তেমন। দরকার হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আরো দশটা বছর পরে হবে, কিন্তু আদর্শকে-মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জলাঞ্জলী দিয়ে নয়....... (জামাত নিশ্চিহ্ন হোক এটা আওয়ামী লীগ মোটেও চায়না, এবং আমি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি আর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের দাবিকে একসূত্রে গাঁথা মনে করি)।
---------------------
এবারে দু একটি পোস্টের যুক্তিগুলো সম্পর্কে কিছু বলা যাকঃ
সামী মিয়াদাদ বলেছেনঃ একিলিস দুই মাইয়ার মাঝখান থাইকা উইঠা যুদ্ধে গিয়া বিরুদ্ধপক্ষের সবচেয়ে মস্তান যোদ্ধারে এক কোপে ঘায়েল কইরা ফালাইলো। দুই মাইয়ার লগে যৌনকর্মও তার যুদ্ধের স্পৃহারে দমাইতে পারেনাই। একিলিস গ্রীক ইতিহাসের বীরদের আসনে বিরাট আসন নিয়া এখনও বাইচা আছে। সে কয়টা মাইয়ার লগে কয়বার সেক্স করলো এইগুলা কোন বিষয় না। যুদ্ধের ময়দানে কি করলো সেটাই বিবেচ্য।
==>>আগেই বলেছি- যৌবনযাত্রার অমুক মামা- তমুক মামা যৌবনযাত্রায় যাই করুক না কেন, বাস্তব জীবনেও যতজনের সাথে সেক্স করুক না কেন- সে অজুহাতে তার কোন যুদ্ধে অংশ গ্রহণের বিরোধিতা করা হচ্ছে না এখানে। বরং বলা হচ্ছে প্লাটফর্মের অংশগ্রহণের বিরোধিতার কথা। মাগুড়ছড়ার ক্ষতিপূরণের দাবিতে অক্সিডেন্টালের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হচ্ছে। এটাতে কেয়ার্নের যেকোন চাকুরীরত লোক অংশ নিতেই পারে, কিন্তু খোদ কেয়ার্নও যদি এ আন্দোলনে সামিল হতে চায়, তবে কি সেটাকে সমর্থন করা হবে?
যৌনতা মানুষের জীবনে কতখানি স্বাভাবিক একটি বিষয় তার এক লম্বা ফিরিস্তি তুলে ধরে আরাশি বলেছেন, "প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রাপ্তবয়স্ক সাইটে যাওয়া যদি ঠিক থাকে, প্রাপ্তবয়স্কদের একটি আন্দোলন, প্রাপ্তবয়স্কদের একটি সাইট থেকে শুরু হলে ক্ষতি কি? জাত যায় যায় বলে এই কলরোলে মুখোশের আড়ালে মুখ লুকিয়ে রাখার স্ববিরোধীতা কেন ?"
একই ধরণের যুক্তিই অনেকেই করেছেন। প্রশ্ন এসেছে "আপনি কি মাস্টারবেশন করেন না?"... ইত্যাদি।
==>>এ ঘরানার যুক্তি সবচেয়ে বিরক্তিকর। যৌবনযাত্রার ব্যানারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী উত্থাপনকে অসমর্থন করার সমার্থক যেন যৌনতাকেই অস্বীকার করা- এই হলো এ ঘরানার যুক্তির ধরণ। এবং শেষে আবার যৌনতাকে পর্ণোকেন্দ্রিক যৌনতারও সমার্থক বানিয়ে দেয়া হলো! এবং অবাক ব্যাপার হচ্ছে- অনেকে যায়, প্রচুর ভিজিটর পর্ণো ভিজিট করে, এটাকে খুব স্বাভাবিক- এবং "ঠিক" ব্যাপার বলে এনারা রায় দিয়ে দিচ্ছেন! "প্রাপ্তবয়স্ক"দের একটি আন্দোলন "প্রাপ্তবয়স্ক"দের একটি সাইট থেকে শুরু হলে ক্ষতি কি- কথাটিই আপত্তিকর। কেননা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন মোটেই ২য় "প্রাপ্তবয়স্ক" অর্থে প্রাপ্তবয়স্কদের আন্দোলন নয়।
সচলায়তনের অচ্ছুত বলাইয়ের কমেন্টও এখানে এক পোস্টে কপি পেস্ট করা হয়েছে দেখলাম, সেখানে বলা হয়েছেঃ"যৌবনজ্বালা একটি প্রাপ্তবয়স্ক সাইট এখানে আপত্তি? ইন্টারনেট ব্যবহার করে কিন্তু পর্ন দেখে না, এরকম কতভাগ মানুষ আছে? যারা পর্ন দেখে, তারা গণহারে খারাপ লোক? যারা মদ খায়, তারা গণহারে খারাপ লোক? যারা চটি পড়ে, তারা গণহারে খারাপ লোক?
যদি তা-ই হয়, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। এবং এই মন্তব্যের পরের কথাগুলো পড়ার দরকার নেই।
যদি না হয়, তাহলে যে লোকগুলো একটা সাইটে, একটা ফোরামে সময় কাটায়, তা প্রাপ্তবয়স্ক বিষয় নিয়ে আলাপ করে হোক আর রাজনীতি নিয়ে হোক আর দেশের অর্থনীতি নিয়ে হোক, তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইতে গেলে আমার খারাপ লাগবে কেন?"
==>>যারা পর্ণো দেখে তারা খারাপ কি ভালো এটা প্রশ্ন নয়, তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইতে পারবে না এমনটিও বলা হচ্ছে না- শুধু আপত্তি প্লাটফর্ম কি হবে সেটা নিয়ে। মদ বিরোধী কোন র্যালিতে গ্যালাক্সি বা শাকুরায় যায় এমন লোক অংশগ্রহণ করলে কেউই আপত্তি করবে না, কিন্তু শাকুরা বা গ্যালাক্সি নিজেই যদি এমন মদ বিরোধি র্যালি নামায় তবে সেটার সিরিয়াসনেস কি থাকবে? (অনেকে সেটাকে কমেডি ভাববে, কেউ ভাববে ব্যাটাদের আসল উদ্দেশ্য কি?), বিষয়টা অনেকটা এরকম।
সে লোকগুলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইলে আমার খারাপ লাগে না, বরং ভালোই লাগবে- তবে তাদের ঐ ফোরাম থেকে এ দাবি উচ্চারিত হলে অবশ্যই ভালো লাগবে না।
প্রিয় ব্লগার অপ বাকও তার পোস্টে পর্ণোকে খুব স্বাভাবিক হিসাবে দেখিয়েছেন, জানিয়েছেন বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের দেশে দুধ বেচে মদ খাওয়া লোক আছে, কিন্তু মদ বেচে দুধ খাওয়া লোকের অভাব। হ্যা মানছি এটাই বাস্তবতা, মানছি যে ইন্টারনেট ইউজারদের অধিকাংশই পর্ণো সাইটে ঢু মারে এটাই বাস্তবতা; কিন্তু বাস্তবতার অজুহাতে সেটাকে সমর্থন জানিয়ে যেতে হবে? যৌনতা কি পণ্য হবে? যৌনতা নামক পণ্যটি নিয়ে ব্যবসাকে সহজ-স্বাভাবিক ভাবে গ্রহণ করে যাবো? অপ বাক এক জায়গায় এইডস নিয়ে সচেতনতা মূলক বিজ্ঞাপন, ন্যাপকিন- কনডম- জন্মনিয়ন্ত্রণের পিল এসবের বিজ্ঞাপনের সাথেও তুলনা টেনেছেন। তিনি কি বুঝে শুনে এই তুলনা টেনেছেন? অপ বাক বলেছেন, "এডাল্ট সাইট মানেই নাকি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রকাশের একটা ধরণ। অসংখ্য সমকামী সাইটে পুরুষদের ছবি দেওয়া আছে, মেয়েরাও ন্যাংটা ছেলে দেখছে এডাল্ট সাইটে গিয়ে, এমন কি সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে পর্ণোগ্রাফিক মুভি দেখা মেয়েরও দেখা পাওয়া যায় বাংলাদেশে। পূর্বে যখন ভিডিও সিডির যুগ ছিলো তখনও সেইসব ভিডিওক্যাসেট আর ভিডিও সিডির কাস্টমার হিসেবে মেয়েরাও ছিলো। তারা সবাই সমকামী বলেই নারীদের প্রতি সহিংস আচরণ করতো এমন সরল সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া অসম্ভব। মূলত প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ যেমন নিজের যৌন সঙ্গী বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা রাখে তেমনই সে কিভাবে নিজেকে বিনোদিত করবে সেটা বাছাই করে নেওয়ার অধিকারও সে সংরক্ষণ করে। কেউ যদি পর্ণোগ্রাফিক ছবি দেখে বিনোদিত হতে চায় এবং সে যদি প্রাপ্ত বয়স্ক হয় তবে তাতে কোনো বাধা নেই।"
==>> হুম, কোন কোন নারীও এডাল্ট সাইটে ঢু মারে- এতে কি প্রমাণ হয়? পর্ণো সাইটে যারা ঢু মারে তাদের কত অংশ নারী? গে সমকামীদের পর্ণো কত পার্সেন্ট এবং সেটার ভিজিটর প্রধানত কারা? টোটাল পর্ণো ইণ্ডাস্ট্রিতে একটর আর একট্রেসের পার্সেন্টেস কত? সাইটগুলোতে নারী আর পুরুষ মডেলের ছবি-ভিডিও এর অনুপাত কত? বুবস, পুসি, এস, টিন সেক্স, টিন বুবস, রেপ, ভাবী (পাকি-দেশী-....), আন্টি.... এসবের তুলনায় পুরুষ মডেলের কিছু সার্চ কি ওয়ার্ড কয়টা বলতে পারবেন? এমনকি সমকামী সেক্স এর মধ্যেও লেসবিয়ান ছবি/ভিডিও লাখ লাখ গুন বেশী। আর, সোসাইটা যে মেল ডমিনেন্ট এটা মনে হয় স্বীকার করবেন? বিজ্ঞাপন চিত্র নারী-পুরুষ উভয়েই দেখে, মডেল নারী/পুরুষ উভয়েই হয়- তারপরেও আমরা বলি বিজ্ঞাপনে নারীদেহ পণ্য হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কেন?
যৌবনযাত্রার ব্যাপারে কথা বললে, আরো বেশী করে একথা বলা যাবে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ইন্টারনেট ইউজারদের মধ্যে পুরুষদের হার অনেক বেশী, আবার পুরুষদের মধ্যে পর্ণোতে ঢুকার হার মহিলাদের মধ্যে পর্ণোতে ঢুকার হারের চেয়ে কয়েকগুণ বেশী। যৌবনযাত্রা সকল ইউজারের নিক মামা। মামি নয়। সেখানকার পোস্টগুলোর শিরোনাম- অমুক ভাবী, তমুক আন্টি, হোস্টেলের মেয়েরা কি মজা করে রে, মেইড সার্ভেন্ট, ...... ইত্যাদিকে কি বলা যেতে পারে?
আর, কোন প্রাপ্তবয়স্ক যদি পর্ণোগ্রাফিক ছবি দেখে বিনোদিত হতে চায়, তবে বাঁধা নেই- এটার মানে যদি বলেন কোন সমস্যা নেই- তবে আমি আপনার সাথে দ্বিমত করি। মানুষের জন্য আমি মানবিক সম্পর্কেই অনেক গুরুত্ব দিতে চাই, এবং যৌনতাকেও মানবিক সম্পর্কের আবর্তে রাখতে আগ্রহী। অন্তত- কোনভাবেই যৌনতা ও মানবিক সম্পর্কগুলোকে পণ্য বানানো সমর্থন করতে পারিনা।
যৌবনযাত্রা সাইটখানির কিছু মিথ্যাচার বা ট্রিকসঃ
সামহোয়ারে মূলত অমি রহমান পিয়াল কিছু তথ্য প্রচার করেছে (আমি বিভ্রান্তও হয়েছিলাম)। তবে পরে দেখি এসব তথ্য যৌবনযাত্রা নিজেও তাদের সাইটে প্রচার করে। পিয়াল যেহেতু সেই সাইটের একজন মডারেটর- ফলে পিয়ালের মিথ্যাচার বা ট্রিকস না বলে সাইটখানার ট্রিকস বলাটাই শ্রেয় মনে হচ্ছেঃ
প্রথমত, এটাকে ফ্যামিলি ফোরাম হিসাবে উপস্থাপনের চেস্টাটি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেস্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।
দ্বিতীয়ত জানান দেয়া হচ্ছে যে, এখানে হিডেন ক্যামেরা, টিন সেক্স এবং রেপ সেক্স নেই। এটা ডাহা মিথ্যা। আমি এমন অনেক ক্লিপ পেয়েছি। পোস্ট এন্ট্রির শিরোনামে "টিন" শব্দ আছে- এমন পোস্ট কম পাওয়া যায় না।
সবশেষে কিছু পর্ণো-পরিসংখ্যানঃ
# ৯৬.৭ বিলিয়ন ডলার বাৎসরিক আয় আসে পর্ণো ইণ্ডাস্ট্রি থেকে।
# যুক্তরাষ্ট্রের বাৎসরিক আয় ১৩.৩৩ বিললিয়ন ডলার।
# বাৎসরিক আয়ের দিক থেকে মিলিতভাবে Microsoft, Google, Amazon, eBay, Yahoo!, Apple, Netflix এবং EarthLink এর চেয়েও পর্ণো ইণ্ডাস্ট্রি বড়।
# যুক্তরাষ্ট্রের বাৎসরিক খাত ওয়ারি পর্ণো আয়ঃ
মুভি বিক্রি ও ভাড়া => $৩.৬২
ইন্টারনেট => $২.৮৪
ক্যাবল (ডিশ) / PPV / মোবাইল / ফোন সেক্স => $২.১৯
এক্সোটিক ড্যান্স ক্লাব => $২.০০
চটি সাহিত্য =>$১.৭৩
ম্যাগাজিন => $০.৯৫
# ৮৯% পর্ণ যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত হয়।
# প্রতি সেকেণ্ডে ৮৯ ডলার ব্যয় করা হয়ে পর্ণে।
# পর্ণো দর্শকদের ৭২% ই পুরুষ।
# প্রতিদিন গড়ে ২৬০ টি নতুন পর্ণো-সাইট তৈরী হয়
# যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৩৯ মিনিটে একটি পর্ণো-ভিডিও তৈরী হয়।
# ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিনের ২৫% সার্চ রিকোয়েস্ট-ই হলো পর্ণো-কেন্দ্রিক
# সবচেয়ে বেশী সার্চ রিকোয়েস্ট sex, এরপরে mp3 এবং তারপরে hotmail
# ইন্টারনেটের যাবতীয় সাইটের ১২% ই হলো পর্ণোগ্রাফিক।
# অবৈধ চাইল্ড পর্ণো সমৃদ্ধ সাইটের সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ
# চাইল্ড/টিন পর্ণো থেকে বছরে ৩ বিলিয়ন ডলার আয় হয়
# প্রথম ইন্টারনেট পর্ণোর সাথে পরিচিত হওয়ার গড় বয়স ১১ বছর।
# ইন্টারনেটে পর্ণোর সর্বাধিক ভোক্তা ১২-১৭ বছর বয়সী গ্রুপ
# সর্বাধিক পর্ণো সার্চ রিকোয়েস্টগুলো হচ্ছেঃ sex, adult dating, adult dvd, sex toys, teen sex, porn, xxx, free porn, anal sex, sex chat, teen porn.........
# প্রতি সেকেণ্ডে ২৮,২৫৮ জন ইউজার পর্ণোগ্রাফি দেখে
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ ভোর ৫:০৪