সাইপ্রাসের এক স্বর্গীয় আশির্বাদপুষ্ট তরুন ভাস্কর পিগম্যালিয়ন ছিলেন চরম নারী-বিদ্বেষী। তিনি কখনো বিয়ে না করার স্থির সংকল্প করেছিলেন। তিনি নিজেকে বোঝালেন,তার জন্য তার শিল্পকলাই যথেষ্ট অথচতিনি যে মূর্তি নির্মান করলেন এবং যা নির্মানে প্রয়োগ করলেন তার সবটুকু প্রতিভা তা ছিলো এক নারী-মূর্তি। এতদিন যা তিনি মন থেকে এমনকি জীবন থেকেও এত সহজে প্রত্যাখ্যান করেছেন তাকে পুরোপুরি বাতিল করতে পারলেন না, অথবা তিনি এক আদর্শ নারীর রূপ সৃষ্টির প্রয়াস পাচ্ছিলেন এবং মানুষকে দেখাতে চাইলেন, যে নারীকে আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাই তার মাঝে কি কি গুনাবলীর অভাব আছে।
তিমি গভীর অনুরাগে মূর্তিটি নিয়ে কাজ করলেন দীর্ঘদিন ধরে এবং সৃষ্টি করলেন শিল্পকলার এক সুন্দরতম নিদর্শন। তিনি এটি নিয়ে মেতে থাকলেন এবং প্রতিদিন তার আঙুলের শিল্পিত স্পর্শে তা আরো সুন্দর হয়ে উঠতে লাগলো। মর্তলোকে এমন কোনো নারী নেই বা কখনো সৃষ্টি হয়নি এমন কোনো নারী মূর্তি যার সৌন্দর্য এর সাথে তুলনীয় হতে পারে। যখন এর শ্রেষ্ঠত্ব পৌছে গেলো সর্বোচ্চ পর্যায়ে তখন এর স্রষ্ঠার ভাগ্যে ঘটলো এক অদ্ভুত ঘটনা; তিনি প্রেমে পড়লেন ! তিনি গভীর আবেগময় ভাবে প্রেমে পড়লেন তার নিজেরই সৃষ্টিকর্মের ! এর ব্যাখ্যা সুলভ এটি বলা যায় যে মূর্তিটিকে কোনো মূর্তির মতই লাগছিলো না, কেউ চিন্তাও কিরতে পারবে না এটি আইভরি বা পাথরের তৈরি বরং এটিকে উষ্ণ রক্ত মাংসে তৈরি মানুষের মতই লাগছিলো যর শুধু মাত্র নেই শুধু চলনশক্তি। অন্যকে তাচ্ছিল্য প্রদশর্নকারী ঐ যুবকের ক্ষমতা ছিলো এতটাই বিষ্ময়কর !
কিন্তু এর পর থেকেই যে নারী জাতিকে তিনি অবজ্ঞা করেছিলেন তারা তার উপর প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠলো। কোনো প্রাণশীল কুমারীর আশাহত প্রেমিক কখনোই পিগম্যালিয়নের মত অসুখী ছিলো না। তিনি চুম্বন ছড়িয়ে দিলেন তার ঠোঁট দুটিতে কিন্তু সেটি তাকে চুম্বন করতে পারলো না। তিনি অনুরাগের মৃদু স্পর্শ ছড়ালেন তার হাত এবং মুখমন্ডলে- কিন্তু তাদের সাড়া মিললো না তিনি সেটিকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করলেন , সে থেকে গেলো শীতল ও নির্বিকার। কিছুক্ষনের জন্য পিগম্যালিয়ন ভান করতে চেষ্টা করলেন যে সেটি জীবিত যেমনটি করে শিশুরা তাদের খেলনার সাথে। তিনি একে পরাতেন মূল্যবান পরিচ্ছদ সামগ্রী। তিনি এমন সব উপহার সামগ্রী নিয়ে আসতেন যেগুলো পছন্দ করে রক্তমাংসের কুমারীরা। যেমন ছোটো কোনো পাখি বা চমৎকার কোনো ফুল আর স্বপ্ন দেখতেন সে তাকে ধন্যবাদ দিচ্ছে তার এই প্রবল ভালোবাসার জন্য। তিনি রাতে সেটিকে শুইয়ে দিতেন তার শয্যায় এবং তার জন্য সকল আরাম উষ্ণতার ব্যবস্থা করতেন, যেমনটি ছোটো মেয়েরা করে থাকে তাদের পুতুলের জন্য। কিন্তু তিনি তো কোনো শিশু ছিলেন না তাই তিনি এ অভিনয় বেশিদিন চালিয়ে যেতে পারলেন না। অতঃপর তিনি হাল ছেড়ে দিলেন।
এই অনন্য আবেগময় একতরফা প্রেমটি দীর্ঘদিন প্রেমের দেবীর অগচরে থাকলো না। পিগম্যালিয়ন ছিলেন এক নতুন রকমের প্রেমিক এবং আফ্রোদিতি দৃঢ প্রতিজ্ঞ ছিলেন তাকে সাহায্য করতে।
আফ্রোদিতির ভোজন উৎসবটি ছিলো সাইপ্রাসে বিশেষভাবে সম্মানিত। এই বিশেষ উৎসবে পিগম্যালিয়নও ছিলেন। তিনি দেবীকে এটি জিজ্ঞাসা করার দুঃসাহস দেখানেলন যে তিনি তার মুর্তিটির মত কোনো কুমারীকে খুজে পাবেন কিনা, কিন্তু প্রেমের দেবী জানতেন তিনি প্রকৃতপক্ষে কি চাচ্ছিলেন এবং ততমধ্যে তার প্রার্থনা মন্জুর করেছিলেন। পিগম্যালিয়ন ফিরে গেলেন তার গৃহে এবং খুজে পেলেন তার নিজের সৃষ্টিকে যাকে তিনি দিয়েছেন তার হৃদয়। সে দাড়িয়ে ছিলো তার ভিত্তির উপরে যেন এক অপুরপ সুন্দরী। তিনি তাকে ভালোবাসার কোমোল স্পর্শ দিলেন ঠোটে একে দিলেন চুম্বন, স্পর্শ করলেন তার বাহু,কাধ এবং সাথে সাথেই বিলীন হয়ে গেলো সব কঠিনতা। তিনি কৃতজ্ঞ অনুভব করলেম প্রেমের দেবীর প্রতি এবং আনন্দভরে তার প্রেমাস্পদকে জড়িয়ে ধরলেন যার নাম তিনি রেখেছিলেন গ্যালাতিয়া।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:০৩