মেডিকেল এ যেবার কেবল ভর্তি হয়েছি সেবারের কথা।
আমরা ৩ রুমমেট। আমি, সাব্বির আর রকিব। মাশাল্লাহ ৩জন ই পিস। তারমধ্যে রকিব হইলো পুরা মেডিকেল ইতিহাসের অংশ (কেন ও কিভাবে তা বলব, আস্তে আস্তে, ঘটনা তো আর ১টা ২টা না)।
এটা ২০০৫ বা ২০০৬ এর ঘটনা হবে। শবে বরাত এর রাতের কাহিনী। নেক্সড দিন কলেজ বন্ধ। পুরা মৌজ মৌজ ভাব এ আছি ।
হঠাৎ সাব্বির আমারে কয়, "দোস্ত চল একটা কাজ করি"।
সাব্বির এর মুখে এই কথা শুইনাই পেটে মোচড় দিয়া উঠল :-& (কারন তার বুদ্ধিতে লেডিজ হোস্টেলের পিছনের বাগানের আম চুরি করতে যায়া মুখে জুতার কালি মাইখা পরবর্তীতে নিজেরাই নিজেদের ভয় পাইয়া যে চিৎকার টা রকিব দিছিল তা মেডিকেল তো মেডিকেল, পৃথিবীর ইতিহাসের একটা অংশ , সুতরাং সাব্বির এর মাথায় বুদ্ধি আর তাতে নতুন কৈরা ইতিহাসের অংশ হওয়ার অপূর্ব সুযোগ এর সম্ভবনা দেইখা পেটে মোচড় দেযা ছাড়া গত্যন্তরও ছিল না :-& )।
আমি পুরাই কনফিউজড ভঙ্গিতে কইলাম, "অতি সংক্ষেপে বল কি আসছে মাথায়"। :-&
সাব্বির যা কৈল তাতে তো আমার দাঁত বাইর করা হাসি আর দেখে কে?
হালায় পুরা ভিলেনী হাসি দিয়া কয়, "চল রকিবরে ভয় দেখাই" ।
সাব্বির এর মাথা থেইকা নাযিল হওয়া বুদ্ধি! আর তার সাম্ভাব্য পরিনতি অর্ন্তচক্ষু দিয়া দেইখা, আমি তো পুরা গাছ এ । যা হোক খুব দ্রুত কাজ শুরু করলাম।
রুমের পিছনের জানালা দুইটা কম্বল দিয়া পুরা ঢাইকা দিলাম। যাতে কোন আলো না ঢোকে রুমে।
এইবার রকিবের বিছানায় কয়েকটা বালিশ দিয়া তার উপ্রে দিলাম আরেকটা কম্বল। যে, দেখলেই মনে হবে কেউ শুয়ে আছে। আর বালিশের উপরে কঙ্কালের খুলিটা রাখলাম। আর আরেকটু দূরে একটা মোমবাতি জ্বালায় দিলাম।
এরপর নায়ক মহাশয় ঠিক দরজা খুইলা ভিতরে ঢুকলেই যেন একটা ধাক্কা খায় তাই দরজার যাস্ট সামনে রুমের ভিতরে ২টা হাড্ডি ক্রস কৈরা তাগো সামনে আরেকটা খুলি সেট কৈরা পুরা কামাক্ষী স্টাইলে একটা সিটুয়েশন ক্রিয়েট কর্লাম ।
এরপর যুক্তি খাটাইলাম, এই দুই ধাক্কা সামলাইয়া পুলায় যদি বাইচা থাকে তো, কি কর্তে পারে? যা বারৈল আর তার প্রেক্ষিতে আমরা যা করলাম ভাই সেই দৃশ্য এখনো মনে পড়লে হাসতে হাসতে খিল ধৈরা যায় ।
সাব্বির কয়, "দোস্ত, হালায় তো লাইট জ্বালাইবো"। উক্কে, তাইলে লাইট নিয়া কিছু করা যাক।
রুমের লাইট ২টা খুললাম। যাতে রকিব ভয় পাইয়া লাইট জ্বালতে গেলে লাইট না জ্বলে। তারপর হঠাৎ আমার মাথায় একটা বুদ্দি কাজ করল। তা হইলো, ভয় পাইয়া পুলায় যদি লাইট জ্বালাইতে গিয়া দেখে যে, লাইট জ্বলে না, তাইলে পুলা কি করবে? স্বাভাবিকভাবেই বাকি সুইচগুলা টিপবে তাড়াহুড়া কইরা। এইডা ভাইবা আমি তো পুরা আল্লাদে আটখানা। কর্লাম কি, পিছনের ফ্যানটার ব্লেডে হ্যাঙ্গার দিয়া ৩টা পান্জাবী ঝুলায় দিলাম । (ঘটনা কি ঘটবে বুঝতে পারতেছেন?)
এরপর বাইরের করিডোরের লাইট টা স্যান্ডেল ছুইড়া ভাঙলাম । এক ফ্রেন্ডরে ডাইকা সব কৈয়া হাতে তালা ধরায় দিয়া কৈরাম, বাইর থিক্কা দরজায় তালা দিয়া যা গা।
তথাস্তু........................
কাহিনী শুরু হইলো।
গল্পের নায়ক প্রবেশ করলেন রুমে। এই দিকে আমরা মুখে পাউডার মাইখা আলনার পিছনে বইসা ।
রকিব নরমালি গান গাইতে গাইতে দরজা খুইলা ঢুকতেই পায়ে বাড়ি খাইলো সেই কামাক্ষি ইস্টাইলে রাখন হাড্ডিগুলার সাথে ।
পুলায় মেয় বি তখনো কিছু বুঝেনি।
সে তার বেডের দিকে আগাইতে গিয়া বেডের দিক তাকাইয়াই পুরা চুপ (ফিউজ হউয়া গেসিল মেয় বি)। গান বন্ধ হয়্যা গেল। সে তার বেডের দিকে তাকাইয়া যে বিশাল একটা হোচট খাইলো আর তার যে মুখের এক্সপ্রেশনটা হইল!! কি আর কমু !! সিচুয়েশনে নিজেরে কল্পনা করেন, সব কিছু ক্লিয়ার হৈয়া যাইবো। এই দিকে কাহিনী দেইখা আমার আর সাব্বির এর তো হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ ।
রকিব এইবার লাইট দিতে গেল। পুলারে লাইটের দিকে আগাইতে দেইখাই আমার তো সাম্ভাব্য দৃশ্য কল্পনা কৈরা হাসতে হাসতে জান শেষ। বাট শব্দ তো আটকায় রাখতে হচ্ছে। কি যে কষ্ট!!!!!
রকিব সুইচ দিল। লাইট জ্বলে না।
আবারো সে সুইচ দিল। লাইট তো আর জ্বলে না।
পুলায় মেয় বি এবার কনফিউজড খায়া সবগুলা সুইচ'ই দিল অন কৈরা। আর পিছনের ফ্যান ও গেল অন হয়ে। ব্লেড ঘোরার সাথে সাথে পান্জাবী গুলা ঝপঝপ কৈরা রকিবের সামনে আইসা পড়লো।
তারপর...................
আমাদের রকিব উল্টা ঘুইরা "বাবারে" বইলা চিক্কুর দিয়া যে দৌড়টা দিল ..................!!!!
[এইডা রম্য রচনা না রে পাগলা, যাপিত জীবন রচনা। ]
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:২২