ধর্ম নিরপেক্ষতা খুব বড় একটা বিষয় । ধর্ম নিয়ে হানাহানি এখন প্রতিনিয়ত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
তবে প্রশ্ন এটাই, ধর্ম কাকে বলে? ধর্ম আমাদের কাছে আসলে কি? কোনো বস্তু? যা না হলে একদম মরেই যাবো । নাকি ত্রাসের কোনো বিষয়?
না আসলে তা নয় । প্রত্যেকের নিজস্ব বৈশিষ্টই তার ধর্ম, সে আস্তিক হোক বা নাস্তিক । নাস্তিকতাকে অনেকে ধর্মের বাইরে রাখেন, তার মানে ধর্ম কি কেবলই ঈশ্বরে বিশ্বাসেই আবদ্ধ? যারা এটা করেন তাদের মাথার স্থিরতা নিয়েই সন্দেহ জাগে । আর আরেকপক্ষ আছে, যারা নিজেদের ধর্মের বিপক্ষে সামান্য কিছু শুনলেই গর্দান নিতে আসে, সেটা সঠিক যুক্তি হোক বা না হোক । খুব খারাপ লাগে এই সময়টাতেই । তোমার বিশ্বাস করা জীবন ব্যবস্থা যদি মানবতা বিরোধী হয় তবে তাতে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক । তুমি যুক্তিকে প্রাধান্য দিবে । নিজের মতামতকে নয় । ধর্মকে রক্ষা করা তোমার দায়িত্ব না, ধর্ম আছে, থাকবে । তুমি শুধু নিজের বিশ্বাসের জায়গাটাকে বিশ্লেষণ করে আরো সুন্দর করবে, বিপক্ষ কথার সুন্দর জবাব তৈরি করতে পারো, তাই বলে গর্দান নিতে হবে???
আবার আরেকদিকে, কেউ কেউ ধর্ম বিশ্বাসীদের খ্যাপাতে বা নিচু করতে ছাড়ে না । এসবের কি আদৌ দরকার আছে? তার বিশ্বাস থাকুক না তার কাছে । তাকে বরং তুমি যুক্তি দিতে পারো, খোঁচা নয় । মন মুক্ত হলেই যে অন্যকে বিদ্রুপ করতে হবে তা তো না!
তুমি যতই ধর্ম নিয়ে কথা বলবে তোমাকে ততই কথা শুনতে হবে- এটা ঠিক । তাই বলে নিজের চেতনাকে প্রকাশ না করে বসে থাকা উচিত নয় । প্রকাশ করবে । অবশ্যই প্রকাশ করবে । তাই বলে অন্যেকে নিচু করে নয় বরং যুক্তি সহকারে ।
এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতিবছর দূর্যোগে যত মানুষ মারা যায়, ধর্মীয় হানাহানিতে তার থেকে অনেক বেশি মানুষ মারা যায় । খুব স্বাভাবিক । কারণ ধর্মটা এখন আমাদের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে । কারণ আমরা এখন অন্ধ । প্রথম বিদ্যা আজ ত্রাস, আর দ্বিতীয় বিদ্যা মৃত্যুর পথ । জানি না কবে এসব বন্ধ হবে ।
এসব সম্পর্কে কথা তোলার জন্য বহু 'সত্যশিখা'-কে বারবার কারাগারে যেতে হয়েছে । তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য একজনই, যাকে শুনতে হয়েছে আলেম-ওলামাদের কটুক্তি, এবং সাধু-পুরোহিতদের অভিশাপ । ব্রিটিশরা যখন উপমহাদেশে ধর্ম নিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করার মূল ভূমিকায় অভিনয় করছিলো তখনই এই মহান পুরুষ এসেছিলেন তাদের কাছে 'ভিলেন' চরিত্র হিসেবে । আর তাই জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তাঁকে কষ্ট করতে হয়েছে । তবু সুখের খবর এটাই তাঁকে এদেশের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হয়েছে । আজ তাঁরই জন্মবার্ষিকী । তাঁর আদর্শই প্রতিফলিত হোক এতটুকুনই আশা করবো । ধর্ম হাতিয়ার না হয়ে প্রেরণা হোক, ভালোবাসা হোক ।
আজকের এই দিনে সেই সত্যের গুরুকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি । এবং লেখাগুলো তাঁকে উত্সর্গ করেই লিখছি । শুভ জন্মজয়ন্তী জীবনাদর্শ, পথ চলার অনুপ্রেরণা... শুভ জন্মজয়ন্তী সত্যের গুরু কাজী নজরুল ইসলাম....
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৬ সকাল ৮:৪১