স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে গুম, বন্দুকযুদ্ধের মাধ্যমে হত্যা, ভারতে পাঠানোর মত ঘটনা ঘটেছে। সেই সাথে একটি ঘরের নাম বারবার মিডিয়া গুলোতে উঠে আসে তা হলো 'আয়না ঘর'। সর্বপ্রথম সুইডেন ভিত্তিক নেত্র নিউজে 'আয়না ঘরের' খবর প্রকাশিত হয়।
আয়না ঘর হচ্ছে বিভিন্ন বাহিনীর গোপন বন্দি শালা যেখানে বিভিন্ন অভিযোগে আটক ব্যক্তিদের রাখা হতো। DGFI, RAB, CTC এবং পুলিশ সহ বিভিন্ন বাহিনীর গোপন বন্দিশালায় মানুষ ধরে এনে দিনের পর দিন নির্যাতন করা হতো।অন্তর্বতীকালীন সরকারের কমিশন এখন পর্যন্ত সারাদেশে ২০০ টির বেশি আয়না ঘর সন্ধান পেয়েছে।কমিশন গঠনের পর ৫০০'র বেশি অভিযোগ পাওয়া গেছে যাদের এখনও খুজে পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তি, সেনাবাহিনীর সদস্য, সাধারণ ব্যবসায়ী রয়েছেন। সাধারণত সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বললে, প্রতিপক্ষ, জঙ্গী সন্দেহে তুলে নিয়ে গিয়ে আয়না ঘরে নির্যাতন করা হতো।।পরে গ্রেফতার দেখানো হতো, এনকাউন্টারে দেয়া হত।কমিশন কয়েকটি 'আয়না ঘর' প্রদর্শন করেছেন যেখানে দেয়ালে লিখে সময় হিসাব করে রাখা হয়েছিল। অনেক 'আয়না ঘর' নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে; আলামত সব নষ্ট হয়ে গেছে।
'আয়না ঘর' থেকে এখন পর্যন্ত তিনজন ব্যক্তি মুক্ত হয়েছেন বলে জানা যায়। তারা হলেন: গোলাম আযমের ছেলে আযমী, মীর কাশেম আলীর ছেলে আরমান এবং ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমা। কমিশন আয়নাঘরের সন্ধান পেলেও সেখান থেকে সরজমিনে কাউকে উদ্ধার করতে পারে নি। অসংখ্য মানুষের এখনো হদিশ পাওয়া যায়নি। অভিনেত্রী নওশাবা সোশ্যাল মিডিয়া তে ২০১৮ সালে কোটা আন্দোলনের সময় পুলিশের নির্যাতন ভিডিও শেয়ার দিলে তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। কোনো এক গোপন কুঠুরি তে রাখা হয়েছিল বলে অভিনেত্রী নওশাবা ধারণা করেন। গুজব উঠে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে 'আয়না ঘর' পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে সেটি মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়।
সেপ্টেম্বর মাসে ড. ইউনূস জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ কালে সকল 'আয়না ঘর' বন্ধ করে দেয়ার কথা বলেন। অক্টোবর মাসে সম্প্রতি জাদুঘর হিসাবে ঘোষণা করা গণভবনে স্বৈরাচারের বিভিন্ন স্মৃতি দেখতে যান। সেখানে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর' তৈরির নির্দেশ দেন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম যাতে এসব বিষয় জানতে পারে তার জন্য ব্যবস্থা নিতে বলেন।
আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর' তৈরির বিষয়টি পরিষ্কার নয়। সারা বাংলাদেশে 'আয়না ঘর ' রয়েছে। সেগুলোকে দর্শনীয় স্থান হিসাবে ঘোষণা করলেই হয়ে যেত। মিডিয়ার প্রচারের কারণে বিষয় টি জনমনে তীব্র কৌতুহলের সৃষ্টি করে। ঢাকার মিরপুর ১৪ নম্বর কচুক্ষেতে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার ভবনে 'আয়না ঘর ' দেখতে অসংখ্য মানুষ ভিড় করেছিল। আসল 'আয়না ঘর' সেপ্টেম্বর মাসেই বন্ধ করে দেয়ার কারণ কি? প্রয়োজন হলে যে সব ভবনে 'আয়না ঘর' পাওয়া যাবে তাদের কে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে স্বৈরাচারের নিদর্শন হিসাবে ঘোষণা করা উচিত ছিলো। ঢাকায় গিয়ে কয়জন মানুষ রেপ্লিকা 'আয়না ঘর' দেখবে? স্ব স্ব জেলায় স্বৈরাচারের নিদর্শন আসল 'আয়না ঘর' দেখার ব্যবস্থা করা হউক।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৫১