আমরা জানি বহিশত্রুর মোকাবেলায় আমরা কতোটা পারঙ্গম
আমরা হারতে জানিনা, পরাজয় মানিনা
রণাঙ্গনের ডাক আমাদের রক্তে আন্দোলিত করে বারবার
তবে, রণাঙ্গনের ভয়াবহতা আমাদের আতংকিত করে তোলে
আমাদের নিজেদের হীন আচরণে যখন আমরা প্রিয় দেশটাকে অকার্যকর হিসেবে দুনিয়ার সামনে তুলে ধরি, তখন লালায়িত হয়ে উঠে যুদ্ধবণিক পরাশক্তিগুলো
আমাদেরকে তারা সঠিক পথে ফেরাতে উদার হয়ে উঠে, তাই- সৈন্য-সামন্ত, নৌবহর, যুদ্ধ বিমান প্রেরণে উদগ্রীব হয়ে যায় !
আমাদের নিজেদের দ্বন্দ্ব মেটাতে ভীনদেশী সেনাবাহিনী প্রস্তুত হয়ে যায়,
আমরা বীরের জাতি, আজন্ম যুদ্ধ মিশে আছে যাদের রক্তে- আমরাও ভয় পেয়ে যাই, যখন দেখি- এই যুদ্ধ বনিকরা:
ইরাক, আফগান, ফিলিস্তিন, সিরিয়ার নারী-শিশুদের উপর কেমন উদারতা দেখাচ্ছে। ভয়ে অস্ত্র চালানো এই হাতগুলোও জড়সড়ো হয়ে আসে !
আমরা যুদ্ধ জাতি তাইতো : আমাদের মা-বোন, বৃদ্ধ বাবা, ফুটফুটে শিশুটির কথা চিন্তা করে যুদ্ধকে ঘৃণা করতে চাই
তাইতো-
- আবার দেখতে চাইনা- ভিনদেশী শত্রু সৈন্যের পদভারে প্রকম্পিত আমার দেশের মাটি
- আবার দেখতে চাইনা- গুলি বৃষ্টির তোরে ভেসে যাওয়া আমার বাংলার জনপদ
- আবার দেখতে চাইনা- যুদ্ধ বিমনারে শব্দে প্রশান্ত ঘুমের কোলে থাকা শিশুটির ভয়ানক চিৎকার- সন্তান কোলে নিয়ে ভয়ার্ত মায়ের দ্বিগ্বীদিক ছুটোছুটি
- আবার দেখতে চাইনা- বৃদ্ধ পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ
- আবার দেখতে চাইনা শত্রু সৈন্য দ্বারা নির্যাতিত আমার বোন, তার সারা জীবনের কান্না
হৃদয়ের অব্যক্ত কষ্ঠগুলো :
আমাদের শাসকগোষ্ঠী নিজেদের সাফল্য যেমন ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রচার করতে পারে, তেমনি নিজেদের ব্যর্থতার দায়টা কাঁধে তুলে নেয়না। জনগণ যেটা বলতে চায়, তারা সেটার উল্টো বোঝে। আমাদের সাধারণ জনগণের কাছে জানতে চায়না- তাদের ওয়াদা পালনে তারা কতোটা সফল আর তাইতো উপায় খোঁজে- নিজেদের আজ্ঞাবহ সালিশকারীর মাধ্যমে পুনরায় ক্ষমতা দখলের। তারা নিজেদের আশেপাশে ভিন্নমতের কাউকে দেশ গড়ার কাজে সমকক্ষ মনে করেনা। জনগণ না চাইলেও তারা জনতার খাদেম হতে তৎপর হয়ে যায় ভোটের সময়।
আমাদের জনপ্রতিনিধিদের একাংশ তাদের শাসকগোষ্ঠীর বিরোধী হিসেবে নামকরণ করে নেয়, এদের পূর্ণ ক্ষমতা না হলে তারা জনকল্যাণে সম্পৃক্ত হবার মতো ধৃষ্টতা দেখায় না। সরকারের সহযোগী হবার জন্যে যেই জনগণ তাদের মূল্যায়ন করলো- সেটাকে বুমেরাঙ করে জনতার মুখেই ছুড়ে দেয়
ভাবখানা এমন যে- ঐ ব্যাটাদের মসনদে বসিয়েছো ! এরা এখন তোমাদের উপর ছড়ি ঘোড়াচ্ছে, মজা বোঝ ! আমাদের কেন নির্বাচিত করলেনা ? আমরাতো হতে পারতাম তোমাদের নিঃস্বার্থ খাদেম
আজ আমাদের মত পার্থক্য আমাদের কল্যাণে না গিয়ে আমাদের নিঃশেষ করে দিতে চাইছে, আমাদের ক্ষমতায় লোভাতুর করে তুলছে। আমাদের হাতকে নির্যাতকের হাত বানিয়ে দিচ্ছে।
ন্যায়ের হাতকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে দিচ্ছে আমাদের দ্বারস্ত করছে ভীনদেশী সর্বগ্রাসী যুদ্ধবাজ বাহুরজোরে প্রভু বনে যাওয়াদের
পরিত্রাণের জন্যে যে সত্যপন্থীরা কাজ করবে, সেই তরুণ প্রজন্মও পরিণত হচ্ছে এই ক্ষমতালোভীদের ক্রীড়নকে- কৌশলে, ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে অথবা ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থে
আমরা আওয়ামী লীগ- এই দেশেই আমাদের জন্ম, এই দেশের আলো বাতাস আমাদের আপন, এখানে অন্যদেশের তাবেদারী সহ্য করবো কেনো?
আমরা বিএনপি- এই দেশ আমার মা, আমার মাকে নির্যাতকের হাতে তুলে দিতে চাইবো কেনো?
আমরা যারা সমাজতান্ত্রিক- আদর্শ আমাদের রুশ-চীনা, মাও, চে-এর হোক, কিন্তু আমরা আমার দেশে চে-মাও, লেলিনের দেশের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করবে কেনো?
আমরা মুসলিম, ইসলাম আমাদের বিশ্বাস- আরবের নবী মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ আমাদের আদর্শ, তাই বলে আরবীয়-মালেশীয়-পাকি-সুদানীয় কাউকে আমার দেশের শাসনভার নিতে আমন্ত্রণ জানাবো কেনো? আল্লাহ যেই যোগ্যতা ওদের দিয়েছেন সেই একই যোগ্যতার মানুষ আমরা কেনো অন্যের তাবেদার হবো ?
আমার দেশের যারা হিন্দু: তাদেরও আইডেন্টিটি বাংলাদেশী, তাইতো সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুর দেশ বলেই আমার দেশটাকে আমি অস্বীকার করে ভারতের দরদ মনে স্থান দিতে পারিনা
আমার দেশের যারা খৃষ্টান: পাশ্চ্যাত্যের খৃষ্টবাদীদের শাসনপদ্ধতি আমাদের মানতে হবে কেনো? আমরা পাশ্চ্যাত্যপন্থী হতে আগ্রহী নই।
আসলে আমরা কেউই চাইনা-
ভারতের তাবেদার হতে, আমেরিকার আনুগত্য মাথা পেতে নিতে, রাশিয়ার সাথে ক্ষমতার আতাত করতে, সৌদিআরবের নীতিতে দেশ পরিচালনা করতে
আমাদের এটুকুই দোষ, আমরা নিজেদের আদর্শ বিশ্বাসটাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়ে তা জবরদস্তিমূলকভাবে জনতার উপর চাপিয়ে দিতে চাই।
আমরা আশাবাদী, আর যুদ্ধ হবেনা, ভীন দেশি কেউ আক্রমণ করতে সাহস পাবেনা, আমরা পরাশক্তিদের কাছে শির নোয়াবো না !
আমরা নিজেদের ভেতরে কেউ কাউকে পাকি-ভারতী-রুশ-চীনা-আমেরিকার দালাল হিসেবে উপস্থাপন করতে উঠে পড়ে লাগবো না
আমাদের ভেতরে খুটি নাটি দ্বন্দ্ব হবেই, তবে সে ব্যাপারে পরদেশি কাউকে নাক গলাতে দেবোনা।
আমাদের প্রভু আমাদের মনের আকুতি গুলো কবুল করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৫:৪২