কোম্পানীগঞ্জের তালমোহাম্মদ হাটের যুদ্ধঃ
যুদ্ধটি শুরু হয় ২১ নভেম্বর’ ৭১ রাত ৩টা থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত। এই যুদ্ধের মূলপরিকল্পনা করেছিলেন জেলা বি.এল.এফ কমান্ডার মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। তালমোহাম্মদের হাটের গোডাউনে ৩০/৪০ জন মিলিশিয়া ও রাজাকারের একটি ক্যম্প ছিল। এরা সাধারণ লোকজনের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করতো। সদর ও বেগমগঞ্জে ২৭/৩০ জনের ১টি মুক্তিযোদ্ধাদের দল সমংগঠিত হয়ে শত্রুর এই ক্যাম্পের উপর আক্রমণ পরিচালনা করে। যুদ্ধে সদর থানা কমান্ডার সাবেক ডাকসুর সমাজকল্যান বিষয়ক সম্পাদক অহিদুর রহমান (অদু) শহীদ হন। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের সদরে আনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন ডেপুটি কমান্ডার জনাব আবুল কাশেম। এই যুদ্ধে আহত মুক্তিযোদ্ধাদা সোনাপুর এলাকার মাঈনুদ্দিন জাহাঙ্গীর (সদর থানার) যুদ্ধে বীরত্ত্বপূর্ণ অবদান রাখায় পরবর্তী পর্যায়ে বীর প্রতীক পদকে ভূষিত হন।
সদর থানা ওদার হাটের যুদ্ধঃ
দিন এ সময় হলো ৩০ অক্টোবর'৭১ দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। রমজান মাসের ৯ তারিখ দুপুর ১২টায় সি জোনের নেতৃত্বে ওদারহাট পাকবাহিনীর দোসরদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এক যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এই যুদ্ধে মতিন ও হাবিলদার খালেকের টীম সহ প্রায় ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা আক্রমণে অংশগ্রহণ করে। দীর্ঘ ৪ ঘন্টা স্থায়ী এই যুদ্ধে উভয় পক্ষে প্রায় কয়েক হাজার রাউন্ড গুলি বিনিময় করে। বিকেল ৪টায় মুক্তিযোদ্ধাদের ১টি ছোট-দল কৌশলে বিল্ডিং এর দেওয়ালের কাছে ক্রলিং করে পৌছে গ্রেনেড নিক্ষেপের কথা জোরে বললে সঙ্গে সঙ্গে ২৬ জন রাজাকার অস্ত্র উপরে তুলে খোলাজায়গায় দাঁড়িয়ে আত্মসমর্পণ করে। এ অবস্থায় যুদ্ধক্ষেত্রের চারিদিকে ৫/৬ হাজার সাধারণ জনগণ অবস্থান নেয়। বন্দীকৃত ২৬ জন রাজাকারকে আবদুল্যা মিয়ার বাড়ীর সামনে এনে ৩ রাস্তার মোড়ে গুলি করে হত্যা করে লাইন ধরে ফেলে রাখে। এ খবর মাইজদী পি.টি.আই'তে অবস্থানরত পাকবাহিনীর নিকট পৌছলে পরদিন সকাল ১০টায় গাড়ীর বহর নিয়ে পাকবাহিনীর ঘটনাস্থলে পৌছায়। পাকবাহিনীর মেজর গাড়ী থেকে নেমে রাজাকারদের লাইন করা শুয়ে থাকা লাশ দেখে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে কোন অপারেশন না করে মাইজদী চলে আসে।
(চলবে)
► লেখক: সাইফুল আলম জাহাঙ্গীর
সাবেক ইউনিট কমান্ডার, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, নোয়াখালী।
► নোয়াখালী জেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত স্মারক স্বাধীনতা ২০০৩ থেকে নেয়া হয়েছে। প্রকাশকালঃ মার্চ ২০০৩।