জন্ম এবং ছেলেবেলা কেটেছে চট্টগ্রামে। থাকতাম চিটাগাং স্টীলমিলের পশ্চিমের কলোনীতে। আমার বাবা স্টীলমিলে চাকরী করতেন। ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান এয়ারফোর্স থেকে সেলফ রিটায়ারমেন্ট নেবার পর এখানে জয়েন করেছিলেন। পরে ১৯৯১ সালে চিটাগাং স্টীলমিল থেকে রিটায়ার করেন। আর্থিক দিকদিয়ে তেমন স্বচ্ছল ছিলোনা আমাদের পরিবার। বাবার চাকরির বেতনে আমাদের ৪ ভাই ২ বোনের সংসার চলত। সবার খরচা যোগাতে বাবাকে হিমসিন খেতে হত প্রায় সময়। বাবা সেজন্য দেখতাম অফিসে ওভারটাইম ডিউটি করতেন। এমনকি মাঝে মাঝে বাসায়ও অফিসের কাজ করতেন বসে বসে। উনি উনার সেকশানের কিছু রোস্টার ফর্ম ফিলাপ করতেন। আমার কাজ ছিল বাবাকে বিভিন্ন গাণিতিক সংখ্যার বানান বলে দেয়া। কাজটা বেশ এনজয় করতাম। বাসার সবার ছোট হবার কারণে বাসায় আমার আদর ছিল সব চেয়ে বেশি। বাবা মা কখনো আমার গায়ে হাত তুলেছেন বলে মনে পড়েনা। আমিই বরং পান থেকে চুন খসলে কান্নাকাটি জুড়ে দিতাম, সাবাইকে জালাতাম। হয়তো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রাচুর্যের ছোঁয়া ছিলনা, যা চাইতাম তা সবসময় পেতামনা, কিন্তু তার পরো ছেলেবেলার দিনগুলোকে খুব মিস করি। যেহেতু কলোনীতে থাকতাম, সমবয়সী খেলার সাথীর অভাব ছিলনা। তখনকার স্কুলগুলোও এখনকার দিনের মত এত বিভিষীকাময় ছিলনা। এখন স্কুলগামী ছোট্ট বাবুগুলোকে দেখলে আতংকে রীতিমত গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে। স্কুলতো নয় যেন ওরা আর্মির কমান্ডো ট্রেনিংয়ে যাচ্ছে। পিঠে বিশাল এক বোঝা, গলায় পানির ফ্লাস্ক। আমরা দলবেঁধে স্কুলে যেতাম পায়ে হেঁটে, বাবা-মা ছাড়া একাই। তখনকার দিনে বাবা-মা, অভিভাবকদেরও বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিয়ে এতটা উদ্বিগ্ন থাকতে হতোনা। এখন কিযে দিনকাল আসলো, ভাবলে কষ্ট বাড়ে। স্কুল চলত বড়জোড় ২ ঘন্টা। সকাল ৮টা থেকে ১০টা। এর পর পুরোদিনটাই কাটত খেলাধুলায়। নাচ, গান শেখা, প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়া এতকিছু তখন ছিলনা। ছেলেবেলাটা কাটিয়েছি খুব সাদামাটা আনন্দঘন পরিবেশে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ৮:৫৯