প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে মোবাইল ফোনের ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে। মোবাইল আজ আর নগরকেন্দ্রিক নয়। গ্রামে-গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে এর ব্যবহার। আর তার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে গেছে মোবাইল ফোন টাওয়ারগুলির সংখ্যা। আর এই টাওয়ারগুলি থেকে বেরিয়ে আসা তড়িৎচুম্বকিয় তরঙ্গ বিপদ ডেকে আনছে মৌমাছিদের জীবনে।
সম্প্রতি ভারতের দক্ষিণে অবস্থিত কেরালা রাজ্যে ক্রমশ বিলীয়মান মৌমাছি পরিবারের ওপর একটি পরীক্ষা চালানো হয়। তাতে দেখা যায়, সে অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান মোবাইল ফোন টাওয়ারগুলিই নাকি তাদের বিলুপ্তির জন্য দায়ী। কারণ, হরেক রকম সেলফোন কোম্পানির লাগানো হাজারো মোবাইল টাওয়ার থেকে বেরুনো ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভস বা তড়িৎচুম্বকিয় তরঙ্গ-এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে কিছুতেই উদ্ধার পাচ্ছে না নিরীহ মৌমাছিরা।
আসলে ঐ টাওয়ারগুলো থেকে নির্গত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভস বা তড়িৎচুম্বকিয় তরঙ্গ খুব দ্রুত মৌমাছিদের দিক নির্ণয় ক্ষমতার ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। অর্থাৎ, মৌমাছি পরিবারে যাদের ওপর ফুলের মধু সংগ্রহের কাজ বর্তায়, তাদের অবস্থান নির্ণয়ের ক্ষমতা লোপ পায় তড়িৎচুম্বকিয় তরঙ্গের প্রভাবে। গবেষক ড. সাইনুদ্দীন পাট্টাত্থী জানান যে, এর ফলে কর্মী মৌমাছিরা পথ হারিয়ে ফেলে। আর বেচারা রাণী মৌমাছি ডিমগুলি নিয়ে একা হয়ে পড়েন। ফলত, মাত্র দশ দিনেই মুষড়ে পড়ে এক-একটা মৌ-উপনিবেশ। ড. পাট্টাত্থী মৌচাক-এর পাশে মোবাইল ফোন রেখে ঘটনাটি খুব সহজেই প্রমাণ করেন।
প্রসঙ্গত, কেরালার প্রায় এক লাখ মানুষের জীবন মধু চাষের সঙ্গে জড়িত। আর সে কারণে, অঞ্চলটির মৌ-কলোনিগুলি ধ্বংস হয়ে গেলে, সেটা যে সেখানকার জনসাধারণের জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটাবে - তা বলাই বাহুল্য। তারওপর, মৌমাছিদের ছাড়া ফুলে-ফুলে পরাগযোগ ও উদ্ভিদজগতের বংশবৃদ্ধিও যে সম্ভব নয়। তাই ড. পাট্টাত্থীর কথায়, মোবাইল ফোন টাওয়ার-এর সংখ্যা আরো বৃদ্ধ করা হলে, অচিরেই লুপ্ত হয়ে যাবে মৌমাছিরা এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে।
তথ্যসূত্র এখানে -