(প্রাককথনঃ এ বছরের ১৮ মার্চ, আমার লেখালেখির একদশক পূর্ণ হল। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে এর অর্ধেকের বেশি সময় আমি এই ব্লগের সাথে যুক্ত ছিলাম ও আছি। আজ আমার ব্লগে লেখার ছয় বছর পূর্তি। সেই কারণেই আত্মজৈবনিক ও কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধের প্রথম অংশটি আজ দিচ্ছি। বাকি অংশ আগামীত। লেখাটি প্রকাশ হয়েছিল মহাপথ ডট কম এ। আশা করি সকলের ভাল লাগবে)
মনকুঠুরির ঘুলঘুলিতে
মনখারাপের এই পৃথিবীতে আর দশটা মানুষের মত আমিও এনেছিলাম খোলা এক হৃদয়, যার কোলেপিঠে ভাজাপোড়া বেদনার চাষ; আবার উল্টোটার দেখাও মিলত খুব সহজেই। সব মিলে আমি ছিলাম একজন এইটুকু মানুষ, খুব ছোট্ট, সাধারণ- ক্ষুধা লাগলে কাঁদতাম, বিকেল হলে পাড়া বেড়ানো, বাকিদের ক্রীড়াকৌশলের চেয়ে পিছিয়ে থাকা ছোট্ট খোকার নিজেকে অতিক্রমের প্রাণান্ত চেষ্টা, সন্ধ্যায় পড়া না পারলে মা’র বকুনি- বেশ ছিলাম আটপৌরে আমি। দিন গড়াতে লাগল, পড়ালেখার পরিধি বাড়তে লাগল কিন্তু বোঝার, উপলব্ধির তেমন নয়। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত নির্দেশনা মোতাবেক নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে মুখস্থ চলছিল সমান গতিতেই। সমাজ, দর্শন, সাহিত্য, ধর্ম ওগুলো আবার পড়তে হয় নাকি, বুঝতে হয় নাকি ওর মর্মবাণী? এই ভেবে আর মুখস্থের ছাদনাতলায় বসেই চলে আসা তারুণ্য ও যৌবনের সন্ধিক্ষণে। এইটুকু পেলেই তখনকার মায়াঞ্জন মাখা চোখজুড়ে নামত আট কোটি তারার ঝিলিক, সব পেয়ে যাবার আনন্দে। ওই নিয়ে মশগুল মাস কয়েক, যদিও কত কি হারিয়েছি সেটা বুঝে উঠতে সময় লাগেনি একদম। আমি হয়ে গেলাম বিষণ্ন, কান্না হয়ে ঝরা বেদনার অশ্রুটুকু প্রকাশ পাবার আগেই জমে বরফ শীতল হতে লাগল বুকপাঁজরে। ঝুমবেদনায় আমি হাটি, একা একা। বাড়ির সামনে যে পার্কটা, ওতে যে গাছগুলো রোজ দোল খায় আড়বাতাসে, ওদের কানাকানি শোনবার আগ্রহ জাগেনি কখনো কেন জানি। ভেবেছি, বোকা পাতাগুলো জানবে কি করে মনপাখিটার বিষাদপোকার খবর? আমার যে এখন সকাল সন্ধ্যা মিলায় হাওয়ায় দু:খবাড়ির বেদনাইটের সন্ধানে।
বোধহয় ওমসকাল ভালবাসেনি মুখভার আমার বিষাদ লিরিকে ডুবে থাকার এই অসহ্য সুন্দর খেলা। তাই জানলা দিয়ে চেয়ে দেখবার ফাকে এক অদ্ভুত রোদদুপুর ফাগুনের নৈর্ব্যক্তিক সুন্দর নিয়ে হাজির হল। ওই সূর্যরেখায় আকা ছিল মায়াবী আঁচড় কাটার এক অস্ত্র, যার আঁচড়ে শুধু শিল্পই ঝড়ে পড়ে। যার সুরমূর্ছনায়, শব্দব্যঞ্জনায় চিত্র জাগে তুলির পরশ ছাড়াই। সেই অলস দুপুর বলেছিল আশীর্বাদ দিয়ে, স্বপ্ন দেখ, ডানা মেলে উড়ে যাও সোনালি পরীর কাছে, যার রূপকথার ঝোলায় আছে তাবৎ দু:খ উপশমের এক প্যান্ডোরার বাক্স। সেই বাক্সের খোঁজে উড়তে উড়তে পার হয়ে গেল দশটি বছর; কোথায় সে জানতে পারিনি একদম। তার ঠিকানা জানবো বলে হলদে পরীর স্মৃতিসাধনায় লিখেছি ডায়েরিতে, হলুদ পার্চমেন্টে, শাদা অফসেটে আর অর্ন্তজালে। মনে পড়ে সেদিনের দু:খ বিলাসী মন, এখন বুঝতে শিখেছে দু:খগুলোকে কি করে পোষ মানাতে হয়; কি করে আনতে হয় বাস্তবতার খেরোখাতায়।
রূপপরীর দেখানো পথে আমি সেদিন থেকেই আঁকতে শুরু করি; শব্দে শব্দে চিত্র। প্রথম প্রথম হত না একদম, বড্ড দুষ্টু শব্দগুলো, কিছুতেই পোষ মানে না। একে গেছি নিরন্তর; কালির ধারায় যখন অক্ষর আর শব্দেরা খেলত আপন মনে তখন আমি শুনতে পেতাম আমার অগ্রাহ্য করা পূর্বকালের দৃশ্যপটের অপার্থিব শব্দরূপ। অনুভব করতে শুরু করলাম বালুর মাঠ দিয়ে রোজ হেটে যাওয়া ছোট্ট আমার পদশব্দ, ডাকাতিয়া নদীর পোয়াতি শরীরের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ, গাছে গাছে পাতাদের শীষ, পাখিদের টুইটকার। গায়ের বাড়িতে কেমন করে জোয়ার এলে পুকুরটা পরিধি বাড়াত, সফেদা গাছ থেকে ফল পাড়লে কেমন শব্দ হত আমার মনে পড়ে যায়। মনে হতে লাগল নতুন এক আমার জন্ম হল। এ জন্মে নিজেকে নিজেই আশিস দেই, আশীর্বাদ করবার মত কেউ ছিল না কাছেপিঠে। কেননা এ আমি কে, তা কেউ জানে নি, জানতেও চায়নি। সেই আমির বেশ ক’বছর হল বয়স, আর শব্দচিত্র গুলো আস্তে আস্তে এখন কথা বলতে শিখছে। আমায় ডাকে বাবা বলে, ঘুমুতে গেলেও ওরা ছেয়ে থাকে ভাবনাডোরে। ওদের আদর করে ঘুম পাড়াই, ভোর হলে টেনে তুলি, সময়ে সময়ে জ্ঞানমন্দির ঘুড়িয়ে আনি। ওদের আজকাল লোকেও ভালবাসতে শুরু করেছে। কেউ কেউ ওদের কবিতা বলে নাম দেয়, ওদের আদর দেয়, ওদের নিয়ে খেলে মনবিলাসের খেলা। এতগুলো বেয়াড়া ছোকরা জন্ম দেবার অপরাধে কেউ কেউ অবশ্য নিন্দেও করে বটে, তবে ওসব গায়ে মাখি না তেমন। যারা বলার তারা বলবেই, আর যারা ভালবাসার, তারা বাসবেই; ও তাদের বলে করাতে হবে না, এ আমি বুঝে গেছি ঢের আগেই। ওসব নিয়ে আজকাল তেমন আর ভাবি না, ভাবি এখন শুধু সেই কুঠুরির কথা, যার ভেতরে রাখা আছে কবিতা লেখার গোপন সূত্রগুলো কিংবা অজানা কোন রসের সন্ধান।
কবিতার সাজমহলে
জন্ম আমার শব্দের সাথে সংসারের জন্যে, এ বুঝতে লেগে গেছে অনেকগুলো বছর। তাই বুঝতে যখন পেরেছি কবিতা আমার আর জনমের প্রেমিকা, তখন থেকেই স্বপ্ন দেখে এসেছি কবিতার সাজমহলটা কেমন তা দেখবার। কিন্তু চাইলেই কি আর দেখতে দেবে মহারাণী, ওর যে উপঢৌকন চাই। রক্তজল করা পরিশ্রমের সময়টুকু চাই ওর, একদম অখণ্ড সময়। দিচ্ছি ওকে আমার সবটুকু উজাড় করে, তবুও জানি না কবে শেষ হবে ওর এ অনন্ত উপঢৌকন গ্রহণ। এ যেন পাকুড় তলায় বসে গৌতমের বোধি লাভের তপস্যার মতন, যার ধ্যানমগ্নতার সময় একেবারেই অনির্দিষ্ট। কিন্তু পাটরানী তো জানে সাধনাকাল কতইনা কঠিন, তরুণ ও যুবকের জন্যে ততোধিক। আজকাল মাঝে মাঝেই সাধনাকাল সমাপ্ত হয়েছে ভেবে বন্ধুরা জিজ্ঞেস করে বসে অর্বাচীনের কাছে, বল দেখি কবিতা কি, কি জানলে কবিতার সাথে আট বছরের এই সংসারে? কেমন করে ওদের বলি কবিতা কি, আমার জানা নেই ভাই! আমি খুলে দেখিনি অনাদিকালের রসকুঠুরির ডালা, কি আছে ওর ভিতর যার সুধায় মোহিত বিশ্বজগত। যারা শুনতে আসে কবিতা কি, ওদের শুনিয়ে দেই যারা রসসুধা পান করে কবি নামে খ্যাত হয়েছেন তাদের কথা। ওদের কথা শুনতে বন্ধুরা যেমন ভালবাসে, আমিও তেমনি পাই মহাপুরুষ নাম কীর্তনের পূণ্যময় প্রাপ্তি সুবাস। বন্ধুদের জন্যে আজকে না হয় সেই গল্পই বলি আরেকবার।
পৃথিবীতে কে কোথায় কবে কবিতা নামক শব্দচিত্র আঁকতে শুরু করেন, একেবারেই জানা নেই আমার। সম্ভবত মানুষের সৃষ্টিই একটা ছন্দ, আর তার মুখ থেকে যে বাণী উচ্চারিত হয়, তাই কবিতা। সে কবিতা ছড়ায় অনুরণন বাতাসে ও বৃক্ষে, ধুলো ও জলে, বনে ও পর্বতে। কবিতার ইতিহাস যেটুকু শিখেছি তাই বলি না হয়, আমাদের এই ভারতবর্ষে সংস্কৃত ভাষার (যার থেকে কালক্রমে বাংলা ভাষার জন্ম বলে ধারনা করা হয়) আদি কবি হলেন ঋষি বাল্মিকী। দেবতার আশীর্বাদে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। দুটি মিলনরত ক্রৌঞ্চ বা সারস পাখির একটিকে এক শিকারি শরবিদ্ধ করে মেরে ফেললে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি উচ্চারণ করেন-
’মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগম: শাশ্বতী: সমা:
যত ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধী: কামমোহিতম’
তার এ বাক্য দুটি বা শ্লোকটিই ছিল সংস্কৃত ভাষার প্রথম কাব্য। এ শ্লোকটি রামায়ণের অন্তর্গত। রামায়ণ ছিল মহাকাব্য আর বাল্মীকি ও তার সমসাময়িক কবিদের কবিতা ছিল মুখে মুখে রচিত। যাদেরকে বলা হত চারণ কবি। বীরপুঙ্গবদের বীরত্বের বর্ণনাই ছিল মহাকাব্য যুগের মূল রীতি। এ যুগ চলেছে দীর্ঘদিন। হাজার হাজার বছরের ইতিহাস এই চারণ ভিত্তিক মহাকাব্যের। এর পরে আসে বাংলা ভাষায় কাব্যচর্চার আদি নিদর্শন চর্যাগীতির সময়। এ সময়টা মধ্যযুগের এবং বাংলা ভাষার প্রাচীন যুগ। এ সময়ের বাংলা কাব্যগুলো মূলত ছিল গান এবং তার রচয়িতা বৌদ্ধ সহজিয়াবৃন্দ। উচ্চবর্ণের হিন্দুরা বাংলা ভাষাকে তখন অচ্ছুতদের ভাষা হিসেবেই দেখত। এই গীতিকাব্যের চর্চা চলেছে বাংলা ভাষার মধ্যযুগেও শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, মঙ্গলকাব্য, পালা ও পুথির চর্চায় বাংলা ভাষার ভিত্তি শক্ত হয়। এ সময়ের বাংলায় অন্ত্যমিল ও ছন্দবদ্ধতাই ছিল মূল বিষয়। যে কারণে বাংলা ভাষার প্রাচীন ও মধ্যযুগে কবিতাকে মূলত পদ্য বলে অভিহিত করা হত।
আধুনিক বাংলা কবিতার জন্ম মধুকবির হাত ধরে যিনি ইউরোপীয় আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন। বলা চলে বাংলা কবিতার খোলনলচে বদলাতে ইউরোপীয় ভাবধারার কবিরাই মূল ভূমিকা পালন করেছেন কালক্রমে। আধুনিক বাংলা কাব্যে মহাকাব্য লিখিত হল অমিত্রাক্ষর ছন্দে, চরণান্তিক অন্ত্যমিলের বাইরেও যে কবিতা লেখা হতে পারে প্রমাণ দিলেন মাইকেল, এর পরে বেশ কিছুদিন মহাকাব্য যুগ। এ যুগ শেষ হল আকাশের রবির মতই উজ্জ্বল এক জ্যোতিষ্ক কবিতা লিখতে এলো বলে। রবি ঠাকুর শুরু করলেন কবিতায় রোম্যান্টিসিজমের যুগ, কালক্রমে যা বিবেচিত বাংলা কবিতায় একক প্রভা প্রদর্শনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সময় হিসেবে। রবির কাছে কবিতা ছিল সুন্দর ও সত্যের গান, আধ্যাত্মবাদের অন্তর্গত শুদ্ধতার প্রতীক। এ সময়ের শেষ ভাগে এলো দ্রোহের বারতা, ভাঙার প্রচেষ্টা। খুব বেশি স্থায়ী হল না নজরুল কাব্যের দ্রোহ স্বত্বা, তবে তা কবিতাকে নতুন কথা বলতে শেখাল। এর পরে এলো ত্রিশের আধুনিকতা, ব্যক্তি ও সমাজের অন্তর্গত অসুস্থতার বয়ানই যখন প্রধান, একাকীত্ব ও নির্জনতাই যখন উপমা, আর উপমাই যখন কবিতা। জীবনানন্দ লিখছেন, হাঁটছেন একা একা কলকাতা, বরিশালের পথে, সুভাষ লিখেছেন কবিতায় রাজনীতির কথা, বুদ্ধবাবু ওসব অগ্রাহ্য করে মেতেছেন নান্দনিকতা ও কাব্য সমালোচনায়। সাতচল্লিশ, সময়টা উত্তাল, হল দেশভাগ- আহসান হাবীব, আবুল হাসানরা লিখছেন বাংলা কবিতার নতুন ঠিকানা রাজধানী ঢাকায়। ত্রিশ থেকে চলতে শুরু করা এ সুর নতুনের, এ সুর নবীনের। কবিতা এখন শুধু গান নয়, এখন অন্ত্যমিল ছাড়াও খুব কবিতা হয়। রবিবলয়ের বাইরে না গেলে কবি নাম কামানো কঠিন, এ সব দেখেছে বাংলা কবিতা ত্রিশ থেকে শুরু করে। পঞ্চাশ ও ষাট, আন্দোলন ও গণবিক্ষোভ ফলাফল একদল রাজনীতি সচেতন কবি-শামসুর রাহমান, নির্মলেন্দু গুন, হুমায়ূন আজাদ লিখে যাচ্ছেন জোরকলমে। যাদের কলমে দেশ, জাতি, স্বাধীনতা, নগর কেন্দ্রিক জীবনের জটিলতা এসেছে অদ্ভুত এক রূপ নিয়ে। আর দলে আছেন নান্দনিকতার কবিরা আল মাহমুদ, আবুল হাসান, শহীদ কাদরী। এরাও কবিতায় মিশিয়েছেন নান্দনিকতা ও গ্রাম বাংলার সৌন্দর্য, আমাদের ক্লেদ ও নাগরিক যন্ত্রণার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। কবিতা এসময়ে এসে প্রচলিত তিন ছন্দ ছেড়ে ধরেছে গদ্যের পথ। মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয় আন্দোলনের সাথে মিশে গিয়ে কবিতা অনেকটাই হয়েছে শ্লোগানময় সত্তরে। আশিতে কবিতার আমার নির্জনতা ও আবিষ্কারের বয়ানের পথে হাটা যার পরিস্ফুটন নব্বইয়ের কবিতায়। এ সময়ের কবিরা পরাবাস্তবতাকে বন্ধু করে নিয়েছেন অন্য যে কোন সময়ের চেয়েও বেশি করে। এ সময়েই কবিতায় আরেকটি ধারা পোক্ত হয়ে উঠেছে যার নাম মুক্তগদ্য। কবিতায় ছন্দ, মাত্রা বিন্যাস নিয়ে ভাবনা আগের থেকে অনেক কমে এসেছে এ সময়ে।
বোঝাই যাচ্ছে কবিতা কী এ প্রশ্নের উত্তর দেবার থেকে বিড়ম্বনা আর নেই। কালের বিচারে কবিতা এমনই একটি শিল্পমাধ্যম যেখানে কাল যা কবিতা মহৎ কবিতা হিসেবে বিবেচিত ছিল, আজ যদি কেউ সেই রীতি মেনে লেখে তবে তা রীতিমত মামুলি কতগুলো বাক্য সমষ্টি হিসেবে গণ্য হতে পারে। বিবর্তন ও পরিবর্তনের ধারাক্রমই কবিতার অন্তিম সত্য। কবিতা মহাকালের মত সত্য, ধ্রুব ও স্থির। আর মহাকাল তাকেই কবিতার বলে বুকে টেনে নেয়, আত্মার আত্মীয় বলে স্বীকৃতি দেয়, যা নিজের সময়কে তুলে ধরে কালের ভেলায় ভাসার যোগ্য হয়ে আসে। যা নিজের সময়ে আনকোরা আবার একই সাথে তীব্র প্রতিক্রিয়া তোলে পাঠকের মনে। কবিতাকে সংজ্ঞায়িত করতে কবিরা নানা আঙ্গিকে চেষ্টা করেছেন। প্রতিক্ষেত্রে দেখা গেছে নতুন ভাবনার জন্ম। কবিতা কখনো উপমার প্রয়োগ, কখনো ছন্দ দোলা, কখনো ভাবের বাহন, কখনো দৃশ্যকল্প বা চিত্ররূপ। কখনো কবিতা মানে জীবনের কথা বলার নতুন মাত্রা, কখনো প্রতিবাদের ভাষা, পর্দা ছেড়ার স্পর্ধা, কখনো শেকল ভাঙার গান। কখনো সুরের ধারা, কখনো বা রসসিক্ত ও সুখপাঠ্য। কিন্তু কোথাও লেখা নেই কবিতার কোন সংজ্ঞা বা সূত্র, যার বিচারে কোন লেখাকে কবিতা বা অকবিতার সংজ্ঞায় ফেলা যায়। অবশ্য ওই রসকুঠুরির বাক্সে কী আছে জানা নেই আমার। তবে এটা জানি, বিশ্বাস করি মন থেকে, কবিতা কবির অন্তরের সত্য, কবির জীবন দর্শন। যে জীবন দর্শন একদম আনকোরা, যে বাণীগুলো আগে কখনো ছিল না, যে প্রকাশভঙ্গী স্তব্ধ, স্তম্ভিত অথবা পুলকিত করে পৃথিবীকে তাকেই বলা যায় কবিতা, যতক্ষণ না জানা যাচ্ছে কাব্যলক্ষ্মীর মনে কি আছে, ততক্ষণ অব্ধি আমি ভেবে নেব এটাই কবিতার সংজ্ঞা, অন্তত আমার কাছে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১৬ রাত ৮:২১